আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আজকের পোস্টে আমরা হার্টে রিং কেন পড়ানো হয়? সে সম্পর্কে জানবো।
এবং রিং আসলে কি এবং এটা কেন ব্যবহার করা হয় এসব নিয়ে বিস্তারিত জানব।
রিং কি?
~ রিং হচ্ছে একটা মেটালিক টিউব যেটা ব্লক হওয়া রক্তনালিতে পড়িয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। যাতে আমাদের বুকে হওয়া ব্যাথা কমে আসে।
রিংয়ের প্রকার ভেদঃ
সারা দুনিয়াতে দুই ধরণের রিং পাওয়া যায়।
১. Drug Eluting Stent: Drug Eluting Stent ওষুধ মিশ্রিত
২. Bare Metal Stent: Bare Metal Stent হচ্ছে ওষুধ মিশ্রিত ছাড়া।
সারা পৃথিবীতে ২০০০ সালের আগে Bare Metal Stent ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে Drug Eluting Stent ব্যবহার করা হয়।
রিংয়ের জেনারেশনঃ
রিং বা স্টেন্টয়ের বিভিন্ন জেনারেশন রয়েছে।
- First Generation: First Generation Stent গুলো হচ্ছে সাইফাস এবং টেক্সাস যেগুলো ২০০০ সালের দিকে আমাদের দেশে এভেইলেবল ছিলো কিন্তু বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে না।
- Second Generation: এই জেনারেশনের স্টেন্ট আমেরিকাতে তৈরি করদ হয় এবং আমাদের দেশে তৈরি করা সম্ভব নয় জন্য বাহির থেকে ইমপোর্ট করা হয়ে থাকে।
- Third Generation: এগুলো ইউরোপ থেকে আসে। ক্রিয়েট, কমবোপ্লাস ইত্যাদি।
রিং নিয়ে আরও বিস্তারিতঃ
কারও রক্তনালি ব্লক হলে তার নালিতে এইসব রিং পড়ানো হয় রোগীর পরিবারকে দেখিয়ে এবং তাদের অনুমতি নিয়ে।
আপনারা হয়তো জানেন আমাদের রক্ত নালি তিন প্রকার। LAD, LCX, RCA।
এই রক্তনালিগুলো যদি ৭০% ব্লক হয়, তাহলে তাদেরকে দেখিয়ে হার্টে রিং পড়ানোর সাজেশন দেওয়া হয়।
কারও একটা রক্ত নালি ব্লক হলে একটা রিং পড়ানো হয়, কারও দুইটা ব্লক হলে দুইটা রিং পড়ানো হয় আবার কারও তিনটারও প্রয়োজন হয়।
তবে প্রয়োজন ছাড়া রিং পড়ানো হয় না। অবশ্যই প্রয়োজনে রিং পড়ানো হয়।
হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সময় ক্রিটিকাল অবস্থায় যদি ডাক্তার মনে করেন যে এখন একটা রিং পড়িয়ে অবস্থা ভালো করা সম্ভব। তাহলে ডাক্তার একটি রিং এখন পড়িয়ে বাকিগুলো পড়ে পড়ানো হয়।
তবে অনেকেই কমপ্লেইন্ট করেন যে একসাথে কেন রিং গুলো পড়ানো হলো না?!
তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায়, রোগীর স্বার্থেই প্রথমে একটি রিং পড়ানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে বাকি রিং গুলো পড়ানো হয়।
যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে হার্টে রিং পড়ানো বেশ সমস্যার। কারণ বাংলাদেশে যে রিং ব্যবহার হয় তা কিডনিতে ইফেক্ট ফেলে অনেক সময়।
তাই প্রথমে একটি রিং এবং পরবর্তীতে বাকি রিংগুলো পড়ানো হয়ে থাকে। যাতে কিডনির উপরে কোন ইফেক্ট না পড়ে।
রিং নিয়ে ভুল ধারণাঃ
রিং পড়ালেই সব সমস্যা সমাধানঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা মনে করেন হার্টে একবার রিং পড়ালে রোগীর আর কোন সমস্যা নেই, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং পেশিগুলো ঠিক ভাবে কাজ করবে।
এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। রিং পড়ানো হলে রক্তপেশি স্বাভাবিক হয়ে রক্তচলাচল করলেও, রিং যেমন আশীর্বাদ ঠিক তেমনি অভিশাপও।
রিং যেহেতু মেটাল, তাই এটি পড়ানো হলে এটি আপনার বডির সাথে কতটুকু এডজাস্ট করবে তা একমাত্র আপনার বডিই বলতে পারে।
গাড়ি কেনার পর যেমন তার সার্ভিস করতে হয় ঠিক মতো, ঠিক তেমনি রিং পড়ানোর পর আপনাকে রিংয়ের খেয়াল নিতে হবে।
ডাক্তার রিং পড়ানোর পর আপনাকে নিয়মিত ঔষুধ খেতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। এছাড়াও আপনি ধুমপান করে থাকলে, ধুমপান ছেড়ে দিতে হবে, চর্বি জাতীয় খাবার ত্যাগ করতে হবে।
আপনার ডায়াবেটিস থাকলে সেইটা কন্ট্রোলে রাখতে হবে। ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে রাখতে হবে। আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেইটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। শুধুমাত্র রিং পড়ালেই চলবে না, আপনাকে সেইটার মেইনটেইনও করতে হবে।
আপনি সবকিছু মেইনটেইন করার পরই বলতে পারেন আপনার রিং সচল থাকবে। এরপর আরো কিছু কারণে ব্লক হতে পারে। ডাক্তাররা একে বলে In Stent Restonosis যেটা সাধারণত ছয় মাস পর হয়ে থাকে।
রিংয়ে চর্বি জমে গেলে রোগী পুনরায় আগের সমস্যায় ভুগতে থাকে। অর্থাৎ সে আবার তার বুকে ব্যাথা অনুভব করে এবং পরবর্তীতে বিশ্রাম নিলে সেই ব্যাথা আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
পূর্বেই বলা হয়েছে মানুষের রক্ত নালি তিনটি। একটা ব্লক হওয়ার পর এবং রিং পড়ানোর পর বাকি দুইটা যে ব্লক হবে না তার কোন শিওরিটি নেই।
সেই জন্য ডাক্তাররা চান Dual Antiplatelet Therapy গ্রহণ করেন আগেই। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করে সুস্থ লাইফ পার করবেন।
রিংয়ে মরিচা ধরা এবং নড়ে যাওয়াঃ
অনেকে প্রশ্ন করে বসেন যে রক্তনালিতে মেটাল বসানো হয়েছ, এটি কি কখনো নড়ে যাবে? বা কখনো মরিচা পড়বে কি না!
অনেকে নামাজে সিজদা দিতে চান না। বলেন যে নড়া চড়া করলে হার্টের রিং নড়ে যেতে পারে।
তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারগণ বলতে চান, হার্টের রিং নড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এটি বেলুন ফুলিয়ে ফিক্সড করে রাখা হয়েছে এবং আপনি Dual Antiplatelet Therapy খাচ্ছেন।
আপনি হার্টে রিং পড়িয়ে বাইক চালাতে পারবেন, ফ্লাই করতে পারবেন, সাতার কাটতে পারবেন, রেগুলার এক্সেসাইস করতে পারবেন কোন সমস্যা নাই।
রিংয়ের খরচঃ
আমি আগেও বলেছি বাংলাদেশে দুই ধরনের রিং পাওয়া যায়। ১. আমেরিকান এবং ২. ইউরোপীয়ান
- আমেরিকান রিংয়ের তিনটি প্রকার রয়েছে। 1st Generation Price ~ 72 Thousand Tk, 2nd Generation Price ~ 108 Thousand Tk and 3rd Or Newer Generation Price ~ 150 Thousand Tk. এগুলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য।
- ইউরোপীয়ান রিংয়ের প্রাইস (+-) 70 Thousand Tk.
বাংলাদেশে ইন্ডিয়া বা চায়না থেকে কোন রিং ইমপোর্ট করে না। শুধুমাত্র আমেরিকা এবং ইউরোপ থেকে করো থাকে।
রিংয়ের খরচের সাথে রিংয়ের সার্ভিসের কোন সম্পর্ক নেই। আপনি দামি রিং লাগিয়ে যদি মেইনটেইন না করেন, তাহলে ওই রিং কোন কাজেই আসবে না।
শেষ কথাঃ হার্টের রক্তনালী কিন্তু আবার ব্লক হতে পারে। এর থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারেন শুধুমাত্র আপনি নিজে।
নিয়মিত মেইনটেইন করা, হেলথি খাবার গ্রহণ করা, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করে চলার মাধ্যমে আপনি এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
আশা করি সঠিক ভাবে চললে আপনার রিং ঠিক থাকবে এবং আপনি অনেক দিন সুস্থ ভাবে চলতে পারবেন।
Thank you for your help ☺️
এমনকি একটি শিশু এই রোবট সাহায্যে আজ $100 করতে জানেন কিভাবে. https://riz.bode-roesch.de/riz