(১৭টি পয়েন্ট) ‘অধ্যবসায়’ রচনা – জেএসসি, এসএসসি, এইচ এস সি

অধ্যবসায় রচনা

ভূমিকাঃ- মানব জীবন গতিময়। চলার পথে মানুষকে অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। প্রকৃত পক্ষে সগ্রামদীপ্ত জীবনই আসল জীবন। কোন কাজ একবার না পারলে সাফল্য লাভের জন্য বারবার ধৈর্য এবং মনােবলের সঙ্গে তা করার নামই হলাে অধ্যবসায়। বিজয়ীর বেশ ধারনে প্রয়ােজন অধ্যবসায় সংগ্রাম ও উদ্যোগ। কারণ অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই জীবনের সকল বাধা পেরিয়ে উন্নতির সূর্ণসােপানে অবস্থান করা সম্ভব।

অধ্যবসায় কিঃ- ‘অধ্যবসায়’ শব্দের অর্থ অবিরাম সাধনা। কোনাে কাজে সফল হওয়ার জন্যে মানুষের ক্রমাগত যে চেষ্টা তার নামই অধ্যবসায়। মানব চরিত্রের যেসব গুন জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে অধ্যবসায় তার মধ্যে অন্যতম।
এ অনন্য গুনের সাহায্যে অসাধ্য সাধন করা যায়। প্রকৃতপক্ষে অধ্যবসায় হলাে এক ধরনের মানসিক বল। যার মানসিক বল যত বেশি, সে তত বেশি অধ্যবসায়ী। পরাজয় কখনও অধ্যবসায়ীর পথে বাধা হতে পারে না।

অধ্যবসায়ের স্বরূপঃ- প্রকৃতির পানে একটু সচেতনভাবে দৃষ্টি নিবন্ধ করলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি অধ্যবসায়ের স্বরূপ আসলে কি ; কঠিন অধ্যবসায়ের ফলে বীজ থেকে অংকুরােদগম হয়ে তা মাটির বুক বিদীর্ন করে আলাের রাজ্যে মাথা তুলে দাঁড়ায়। দিনে দিনে প্রতিকুল পরিবেশের সংগে সংগ্রাম করে ক্রমেই বড় হয়ে পুর্ন বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়। অধ্যবসায়ী বলেই এ পৃথিবীর তৃণলতা, বৃক্ষরাজি, পশুপাখি তার স্বীয় অস্তিত্ব টিকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তাই প্রকৃতির মধ্যে ছড়িয়ে আছে। অধ্যবসায়ের প্রকৃত শিক্ষা।

অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তাঃ- জগতে কোনাে কাজ চেষ্টা বা উদ্যম ব্যতীরেকে সম্পন্ন হয় না, তাই কবি বলেছেন –

‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও, হেরি দীর্ঘ পথ
উদ্যম বিহনে কার পুরে মনােরথ ?

মানব জীবনের প্রত্যেক কাজেই বাধা বিপত্তি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সে ভয়ে ভীতু হলে চলবে না। বরং মনে রাখতে হবে , Failure is the pillar of success. ব্যর্থতাই সফলতার স্তম্ভ। ব্যর্থতা থেকে প্রচেষ্টার শুরণ, আর সফলতার মাধ্যমে তা সমাপ্ত হয়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির নিকট ব্যর্থতা বা অসম্ভব বলে কিছু নেই। অধ্যবসায় দ্বারা মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। কারণ আত্মপ্রতিষ্ঠার সর্বোকৃষ্ট পন্থাই হচ্ছে অধ্যবসায়।

অধ্যবসায় ও সাফল্যঃ- অধ্যবসায় ও সাফল্য মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কারণ যেখানে অধ্যবসায়, সেখানেই সাফল্য। অধ্যবসায় ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। ব্যর্থতায় নিরাশ না হয়ে যারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, তারা স্বক্ষেত্রে সাফলের স্বাক্ষর রেখেছেন।
ডালটন স্পষ্টই বলেছেন, লােকে আমাকে প্রতিভাবান বলে , কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীয়তাঃ- অধ্যবসায় সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ছাত্রজীবনে । ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় পরস্পর সম্পূরক। বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ন নয়। অলস কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্রছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনােনিবেশ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও , তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ- অধ্যবসায় ব্যক্তিজীবনে সফলতা আনায়ন করে। ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে প্রয়ােজন কাজের আগ্রহ, বুদ্ধিমত্তার প্রয়ােগ ও সুদৃঢ় সংকল্প। জীবনে কোনাে কিছুই সহজলভ্য নয় বলে কোনাে উপকরন প্রস্তুত থাকে না। ব্যক্তির যােগ্যতা ও কঠিন অধ্যবসায়ের দ্বারা এসব সংগ্রহ করতে হয়।

মানবজীবনে অধ্যবসায়ঃ- অধ্যবসায় মানব জীবনের এক মহতী শক্তি । জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে প্রয়ােজন সাহস ও অধ্যবসায়। এ শক্তিই মানুষের এক মহৎ চারিত্রিক লক্ষন। দুর্বলচিত্তের মানুষ কখনও অধ্যবসায়ী হতে পারে না। সৃষ্টির আদি থেকে সকল প্রতিকুলতাকে জয় করার পেছনে আছে অধ্যাবসায়। নিরন্তর অনুশীলনই এ বৃত্তির বিকাশ সাধিত হয়।

মানব সভ্যতায় অধ্যবসায়ঃ- এক সময় আমাদের মত মানুষকে বর্বর অসভ্য বলা হত। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা আধুনিক সভ্যতার যুগের অধিবাসী। সে অসভ্য বর্বর জাতি থেকে সভ্য হতে আমাদের অনেক যুগ লেগে গেছে। এ দীর্ঘ যুগ পরিক্রমায় মানুষ বসে থাকে নি। চেষ্টা করেছে এ পর্যায়ে আসার জন্য। সফল হয়েছে তাদের প্রচেষ্টা। তারা একমাত্র অধ্যবসায়ীর গুনেই মানবজাতিকে উপহার দিয়েছে এক স্বর্ণযুগ।

বিজ্ঞানের আবিষ্কারে অধ্যবসায়ঃ- পৃথিবীর প্রতিটি বৈজ্ঞানিকের আবিস্কারের পশ্চাতে রয়েছে অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল ভূমিকা। মানুষ বিদ্যুৎ আবিস্কার করে দুর করেছে আঁধার, বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করেছে চন্দ্রবিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ যুগান্তরের সাধনা – তার অবিরাম অধ্যবসায় ।




জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ঃ- ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত হয় সমাজ এবং গােটা সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হল রাষ্ট্র। জাতীয় জীবন তথা রাষ্ট্রীয় কাঠামাের সার্বিক উন্নতির পুর্বশর্ত হচ্ছে অধ্যবসায়। ব্যক্তিজীবনে যেমন অধ্যবসায়ের প্রয়ােজনীতা রয়েছে, ঠিক তেমনি জাতীয় জীবনেও অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বর্তমান। যে জাতি অলস, সাধনাবিমুখ ও উদ্যমহীন সে জাতি প্রতিযােগীতামূলক পৃথিবীতে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। পৃথিবীতে অনেক জাতি যেমন – জাপান , কোরিয়া প্রভৃতি দেশের সম্পদের অভাব সত্ত্বেও শুধুমাত্র অধ্যবসায়ের গুনেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছে।

অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠিঃ পরাজিত হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া কোন সুবিচকের কাজ নয়। যিনি বিফলতার তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে অধ্যবসায়ের সাথে কার্যে অগ্রসর হন, সাফলতা তার জন্য সুনিশ্চিত। অবিচলিত পরিশ্রম দ্বারাই সফলতার লক্ষ্যে পৌঁছানাে সম্ভব। তাই বলা যায়, একমাত্র অধ্যবসায়ই মানবজীবনে সোঁনালী অধ্যায় সুচনা করতে পারে ।

অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্বঃ- উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছেছে। জাপান,কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা প্রভৃতি দেশ কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের গুনেই উন্নতির শীর্ষস্থানেই অবস্থান করছে। একনিষ্ঠ ভাবে জাতীয় স্বার্থ সাধনের জন্য সর্বশক্তি নিয়ে সবাই আত্মনিয়ােগ করলেই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জন করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের ফল জাতীয় জীবনের বৃহত্তর কল্যানে আসে।

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ ও দৃষ্টান্তঃ- জীবন সংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে অধ্যবসায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবন কর্মের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন অপুর্ব নিদর্শন । শুধু অধ্যবসায়ের গুনেই রবীন্দ্রনাথ , নজরুল , প্রমুখ মনীষীগন বিশ্বখ্যাত হয়ে আছেন। অধ্যবসায়ের আর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে • স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রস। এক মাকড়সার বার বার ব্যর্থ চেষ্টার পর তার সফলতা দেখে ইংল্যান্ডের রাজা সপ্তম এডওয়ার্ডের সাথে সপ্তমবারের যুদ্ধে জয়লাভ করেন।
নেপােলিয়ন বােনাপার্ড তার কর্মকান্ডে অপুর্ব নিদর্শন রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন,

Impossible is a word which is only found in the dictionary of a fool.

উপসংহারঃ- আমাদেরকে হতে হবে কঠোর অধ্যবসায়ী। যখনই কোনাে ব্যর্থতা, কোন দুঃখ , কোন বিপদ এসে আমাদের জীবনকে বিষাদ করে তােলে , তখনই অধ্যবসায়ী মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের কথা স্মরন করে তাদের আদর্শ অনুকরন করা উচিত।
মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন, যার অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী । সুতরাং অধ্যবসায়ই হলাে জীবনের মূলমন্ত্র।

Leave a Comment