মানবধর্ম কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। বামুন শূদ্র বৃহৎ ক্ষুদ্র

কৃত্রিম ভেদ ধূলায় লােট।

রাগে অনুরাগে নিদিত জাগে

আসল মানুষ প্রকট হয়,

বর্ণে বর্ণে নাইরে বিশেষ

নিখিল জগৎ ব্রহ্মময়।

বংশে বংশে নাহিকো তফাত

বনেদি কে আর গর-বনেদি।

ক. লালন শাহ কী ধরনের কবি?

খ. লালন কয়, জেতের কী রূপ, দেখলাম না এ নজরে’- এ কথা দ্বারা কী বোেঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে—তা- উদ্দীপকের  ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘মানবধম কবিতার মূল সুর একই”- উক্তিটির  যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। লালন শাহ একজন মরমি কবি।

খ। প্রশ্নোত্ত চরণটির মাধ্যমে কবি জাতিবৈষম্যের নিরর্থকতাকে তুলে ধরেছেন।

আমাদের সমাজে ধর্ম ও জাতের নামে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা হয়। কবি এমন ভেদাভেদে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন, মানুষের একটাই পরিচয় আর তা হলাে- সে মানুষ। এ কারণেই জন্ম বা মৃত্যুর সময় জাত বিভাজন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। প্রশ্নোত চরণটিতে কবির এই উপলদ্ধির দিকটিই ফুটে উঠেছে।

গ। উদ্দীপকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে।

মানবধর্ম কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উথাপন করেছেন। তার কাছে জাতিগত বা ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে মনুষ্যত্ববােধই বড়। এই মনুষ্যত্ববােধই মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে এবং সবার কাছে গ্রহণযােগ্য করে তােলে। 

উদ্দীপকের কবিতাংশে মানুষ পরিচয়ের ভিত্তিতে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে এক করে দেখা হয়েছে। কবি মনে করেন, ধর্ম ও জাতিগত পরিচয় আপেক্ষিক। মানবতাবােধই মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। তা ছাড়া আমাদের সবার ওপরই স্রষ্টার সমান অনুগ্রহ রয়েছে। তাই সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের নিরিখে মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি অর্থহীন। একইভাবে মানবধর্ম’ কবিতাতেও কবি মানুষের মাঝে বিরাজমান সামাজিক বিভাজনকে অস্বীকার করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মানবতাবােধই এর কারণ। সে বিবেচনায়, উদ্দীপকে আলােচ্য কবিতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাই ফুটে উঠেছে।

ঘ। উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলসুর একই”- মন্তব্যটি যথার্থ।

মানবধর্মী কবিতায় কবি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। এ কবিতায় কবি মানুষের মাঝে বিরাজমান ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের নিরর্থকতাকে তুলে ধরেছেন। কবি মনে করেন ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয় নয়, মনুষ্য ধর্মই মূলকথা।

উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির অসাম্প্রদায়িক মনােভাব প্রকাশিত হয়েছে। আলােচ্য কবিতাংশটির কবি সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিচয়কে গুরুত্বহীন মনে করেন। তার দৃষ্টিতে সমাজে বিরাজমান এসব বৈষম্য কৃত্রিম। বস্তুত, মানবিক দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে কোনাে ভেদাভেদ নেই, ভেদাভেদ নেই আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশেও। উদ্দীপকের কবিতাংশে প্রকাশিত এই বােধটি আলােচ্য কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে।

‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি জাতি বা সম্প্রদায়গত পরিচয়ে বিশ্বাস করেন না। মনুষ্যত্বই তার কাছে বড়। এ কারণে মানুষে মানুষে তিনি বিভেদ করেন না। একইভাবে উদ্দীপকের কবিতাংশের কবিও অসাম্প্রদায়িক মনােভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আলােচ্য কবিতাংশটিতে তাই কবি ব্রাহ্মণ, শূদ্র, বৃহৎ বা ক্ষুদ্রে তফাত করেন না বলে মত প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ মানবিকবােধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা আলােচ্য কবিতা এবং উদ্দীপকের মূলসুর। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

 

প্রশ্ন ২। মহাত্মা গান্ধী অহিংস আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাত-ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব মানুষকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন। মানুষকে তিনি সবার উপরে স্থান দিতেন। তাই তিনি মানবতাবাদী মহান নেতা।

ক. জগৎ জুড়ে লােকে কী নিয়ে গৌরব করে?

খ. তসবি’ ও ‘মালা’ দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায় না, কেন?

গ. উদ্দীপকের সাথে মানবধর্মী কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক বিচার করাে।

ঘ. “উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর চেতনা যেন মানবধর্ম’ কবিতার কবির চেতনারই অনুরূপ” -এ বক্তব্যের সত্যতা নিরূপণ করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। জিগৎ জুড়ে লােকে জাত নিয়ে গৌরব করে।

খ। মানুষ জন্ম ও মৃত্যুর সময় তসবি ও মালা ধারণ করে আসে না বলে, তা দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায়না।

‘মানবধর্মী কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাত-পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, মানুষ বৃথাই জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। পৃথিবীতে কেউ তসবি, কেউ মালা ধারণ করে জাতের ভিন্নতা নির্ণয়ের চেষ্টা করে। আদতে জন্ম ও মৃত্যুর সময় কেউ তসবি ও মালা ধারণ করে আসে । তাই তসবি ও মালা দিয়ে জাত ভিন্ন করা যায় না।

গ। মানুষকে সবার ওপরে স্থান দেওয়ার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের সাথে মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।

‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন ফকির মানুষের জাতভেদে বিশ্বাসী ছিলেন। তার কাছে মানুষের জাত-পরিচয়ের চেয়ে মানুষ পরিচয়ই বড়। কে কোন ধর্মের, কে কোন বর্ণের তাকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন না। মনুষ্যধৰ্মই তার কাছে মূলকথা। জাত ও ধর্মভেদের ভিন্নতায় তিনি বিশ্বাস করতেন না। সব মানুষই তাই লালনের কাছে সমান। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটিই আলােচ্য কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।

উদ্দীপকে মহাত্মা গান্ধী অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। তিনি জাতধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সব মানুষকেই আপন করে নিয়েছিলেন। তার কাছে মানুষের জাত-পরিচয়: বড় ছিল না। মানুষকেই তিনি সবার ওপরে স্থান দিতেন। মহাত্মা গান্ধীর এই মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক দিকটি মানবধর্ম’ কবিতার কবির মাঝেও দৃশ্যমান। আর এ দিকটিই উদ্দীপকের সাথে কবিতার সাদৃশ্য রচনা করেছে।

ঘ। উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধী এবং “মানবধর্ম’ কবিতারমকবি মানুষের জাতভেদে বিশ্বাসী না থাকার কারণে প্রশ্নোত মন্তব্যটি যথার্থ।

‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি মানুষের জাতপাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মানুষের মানুষ পরিচয়টাকেই মুখ্য মনে করতেন। তাঁর কাছে মানুষের জাত-ধর্মের কোনাে মূল্য নেই। কেননা, মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুর সময় কোনাে জাত থাকে না। লালন ফকির তাই মনুষ্য ধর্মকেই মুখ্য বলে বিবেচনা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে কবির অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকটি প্রকট হয়ে উঠেছে।

ঘ। উদ্দীপকে মহাত্মা গান্ধীর কাছে মানুষের সাম্প্রদায়িক দিকটি মুখ্য নয়।

তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর সে কারণেই তিনি সব ধর্মের মানুষকে আপন করে নিতে পেরেছিলেন। তিনি মানুষকে সবার ওপরে স্থান দিতেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনার লালন করেছেন বলেই তার কাছে মানুষ পরিচয়টাই আসল।

মানবধর্ম’ কবিতার লালন ফকির যেমন মনুষ্যধর্মকেই প্রধান মনে করেছেন, উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীও তেমনি মনুষ্যধর্মকেই প্রধান মনে করেন। তাঁরা জাতপাতের উর্ধ্বে মানুষকেই আপন করে নিতে চেয়েছেন। ধর্ম-বর্ণের বেড়াজালে আবদ্ধ না থেকে তাঁরা উভয়ই মানবতাবাদী চেতনাকে ধারণ করেছেন। সার্বিক বিচারে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর চেতনা যেন ‘মানবধর্ম’ কবিতার লালন অসাম্প্রদায়িক চেতনারই প্রতিফলন।

প্রশ্ন ৩। দৃশ্যকল্প-১ঃগাহি সাম্যের গানযেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে, সব বাধা-ব্যবধান

যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রিশ্চান।

দৃশ্যকল্প-২: নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয়

সেই আশরাফ জীবন যার পুণ্য কর্মময়।

ক. লালন শাহ্ কার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন?

খ. লালন জাত নিয়ে প্রশ্ন করতে বারণ করেছেন কেন?

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর ভাবার্থ মানবধর্ম’ কবিতার সাথে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এর বিষয়বস্তু যেন কবির প্রত্যাশাই পূরণ করেছে বিশ্লেষণ করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। লালন শাহ সাধক সিরাজ সাই বা সিরাজ শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

খ। মানুষের প্রকৃত পরিচয় জাতপাতের ওপর নির্ভর করে না বলে লালন জাত নিয়ে প্রশ্ন করতে বারণ করেছেন।

লালন তার জাত সম্পর্কে অজ্ঞ; নিজের জাত কী তা তিনি জানেন না। তবে জাত যে মানুষের মধ্যে কৃত্রিম বিভেদ সৃষ্টি করে, তা তিনি ভালাে করেই জানেন। তিনি মনে করেন, মনুষ্যত্বই মানুষের সবচেয়ে বড়াে পরিচয়। তাই তিনি জাত নিয়ে প্রশ্ন করতে বারণ করেছেন।

গ। মানবসত্তার শ্রেষ্ঠত্বের দিকটি ফুটিয়ে তােলার দিক থেকে দৃশ্যকল্প-১ এর ভাবার্থ মানবধর্ম’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

আলােচ্য কবিতায় লালন শাহ মনে করেন, ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ পরিচয়টাই সবচেয়ে বড়াে। মানবতার বিচারে সকল মানুষ সমান। তাই জাত ধর্ম নিয়ে অযথা বাড়াবাড়ি বা মিথ্যে গর্ব দৃশ্যকল্প-১ এ কবি মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘােষণা করতে প্রয়াসী হয়েছেন। কবি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজের প্রত্যাশা করেছেন। কবি মনে করেন, মানুষের চেয়ে বড়াে আর কিছুই নেই। দেশ-কাল-পাত্র-ধর্ম বড়াে কথা নয়, মানবধর্মই সর্বশ্রেষ্ঠ মানবধর্ম’ কবিতার কবিও মনুষ্যধর্মে বিশ্বাসী। লালন বলেছেন, লালনকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। মানবসত্তার শ্রেষ্ঠত্বের এই দিকটি উদ্দীপকেরও মূলকথা। অর্থাৎ মানবধম কবিতায় বর্ণিত জাতিভেদের কি ছাপিয়ে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে অভিন্ন মানবসত্তার জয়গান।

ঘ। দৃশ্যকল্প-২ এর বিষয়বস্তু যেন কবির প্রত্যাশাই পূরণ করেছেমন্তব্যটি যথার্থ।

‘মানবধর্মী কবিতায় কবি লালন শাহ মনুষ্যধর্মের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর কাছে জাত-ধর্ম, উঁচু-নিচুর কোনাে ভেদাভেদ নেই। মানুষ পরিচয়কেই তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছেন। তার কাছে সকল ধর্মের উর্ধ্বে কেবল একটাই ধর্ম আর তা হলাে মানবধর্ম।

দৃশ্যকল্প-২ এ কবি বলেছেন, বংশ পরিচয় বাহ্যিক। বংশ পরিচয় কখনাে মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না; বরং পূণ্য কর্মময় জীবনই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিতে পারে। মূলত কবি ধনী-দরিদ্র, উঁচুনিচুর প্রভেদের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেননি। মানবধর্মকেই তিনি বড়াে করে দেখেছেন। মানবধর্ম’ কবিতায় কবি মনুষ্যত্বের কথা বলেছেন। তাঁর কাছে মনুষ্যধৰ্মই হলাে প্রকৃত ধর্ম। মানুষ জাত ও ধর্মভেদে যে ভিন্নতার কথা বলে, লালন তা বিশ্বাস করেন না। উচ্চ মানবিকবােধ থেকে তিনি সকল মানুষকে একই পরিচয়ে দেখেছেন। দৃশ্যকল্প ২-এর কবিও মানুষকে মানুষ হিসেবে আরােপিত উচু-নিচু, ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ কবির কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। সকল মানুষ সমান— এই মর্মবাণীই ধ্বনিত হয়েছে দৃশ্যকল্প-২ এবং আলােচ্য কবিতায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

 

প্রশ্ন ৪। মার্গারেট ম্যাতিউ প্যারিসের অধিবাসী। খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও সব ধর্মের মানুষের সাথেই তিনি প্রাণ খুলে মেশেন। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানােকেই তিনি মানুষের ধর্ম বলে জানেন। তাঁর কাছে সাদাকালাে, ধনী-দরিদ্রের কোনাে পার্থক্য নেই। মানুষের সেবা করতে পারলে তিনি নিজেকে খুব সুখী মনে করেন।

ক. কবি লালন শাহ্ কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?

খ. জগৎ বেড়ে জেতের কথা বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. মানবধম কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. ‘মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে কি? যুক্তিপূর্ণ মতামত দাও।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। কবি লালন শাহ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।

খ। আলােচ্য পঙক্তি দ্বারা কবি জগৎ জুড়ে জাত-ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করার দিকটি নির্দেশ করেছেন।

জগতে মানুষ জাত-ধর্মের দিকটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সমাজে জাত-ধর্মের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি ও ধর্ম তৈরি হয়েছে। একই সাথে সৃষ্টি করে শ্রেণিবৈষম্যও। জাতের ভিত্তিতে কেউ নিজেকে উঁচু ভাবে। আবার কাউকে করে তুচ্ছজ্ঞান কবির প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা এ বিষয়টি বােঝানাে হয়েছে। এ জাত-ধর্মের উর্ধ্বে মনুষ্যত্ববােধকে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে মানবধর্ম কবিতা ও উদ্দীপকের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।

গ। মানবধর্ম কবিতায় মরমি কবি লালন শাহ মনুষ্যধর্মের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তার কাছে জাত-ধর্মের কোনাে বিশেষ গুরুত্ব নেই। মানুষ পরিচয়কেই তিনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ জাতির ধর্ম, গােত্র, শ্রেণি বা পেশা নির্বিশেষে সকল মানুষই শ্রদ্ধা ও সম্মান পাওয়ার যােগ্য।

উদ্দীপকের মার্গারেট মতিউ একজন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি। কিন্তু তিনি সব ধর্মের মানুষের সাথেই প্রাণ । মানুষের জাত-ধর্ম, উঁচু-নিচু ভেদাভেদ তার কাছে কোনাে গুরুত্বই বহন করে না। তিনি জাতি-ধর্ম-শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়ান। মনুষ্যত্ববােধের এই বিষয়টিও রয়েছে কবি লালন শাহ জাত ও ধর্মভেদে মানুষের ভিন্নতায় বিশ্বাস করেন না। তাই ধর্ম-জাতিভেদে কারাে উঁচু কারাে নিচু হওয়ার বিষয়টি তার কাছে অর্থহীন। মনুষ্যত্ববােধই তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বের বিষয়, যা উদ্দীপকেও দৃশ্যমান।

ঘ। বিষয় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উদ্দীপকে মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশিত হয়নি।

মানবধর্ম’ কবিতায় মানবতার জয়গান করা হয়েছে। মানুষ পরিচয়কেই এখানে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছে। কবির কাছে জাত-ধর্মের পরিচয় কোনাে গুরুত্বই বহন করে না। তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের পরিবর্তে মানবধর্মের কথা বলেছেন।

উদ্দীপকে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী মার্গারেট ম্যাতিউর কথা বলা হয়েছে। তিনি খ্রিষ্টান হলেও সব ধর্মের মানুষের সাথেই প্রাণ খুলে মেশেন। সাদাকালাে, ধনী-দরিদ্র পরিচয়ের উর্ধে গিয়ে মানুষের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ান। জাত-ধর্মের উর্ধ্বে মানবতাকে স্থান দেওয়ার দিকটি আলােচ্য কবিতায় উঠে এসেছে। তবে এটিই কবিতার একমাত্র দিক নয় ।

‘মানবধর্ম’ কবিতায় মরমি কবি লালন শাহের অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী মনােভাবের প্রকাশ ঘটেছে। একই সাথে এখানে ফুটে উঠেছে সমাজের মানুষের প্রচলিত জাত-ধর্মের ধারণা ও হীন মানসিকতা। কবির কাছে আতখুলে মেশেন আলােচ্য কবিতায় ধর্ম কোনাে গুরুত্বই বহন করে না, মনুষ্য ধর্মই তার মূল ধর্ম। লালন যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন একই জল গর্তে গেলে কূপজল হয় আর গায় গেলে গাজল হয়। শুধু পাত্রের ভিন্নতা এদের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করেছে, মূলত তা একই। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। তাই লালন শাহ্ মনে করেন, কথিত ধর্মের উর্ধ্বে গিয়ে মানবতাবাদকে মানুষের মূল ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জাত-ধর্ম বিষয়ে সমাজের মানুষের এই যে

মানসিকতা তা উদ্দীপকের ক্ষুদ্র পরিসরে উঠে আসেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি মানবধর্ম’ কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ করতে পারেনি।

 

প্রশ্ন ৫। মধ্যবিত্ত পরিবারের যােগেন সন্তানের জন্মদিনে গ্রামের, অন্যান্যদের সাথে বিত্তশালী রূপেশ বাবুকেও নিমন্ত্রণ করেন। নিমন্ত্রণে এসে রূপেশ বাবু দেখেন মালিনী শােডা দুই হাতে মসলা বাটছে। এ দৃশ্য দেখে না খেয়ে তিনি জরুরি কাজের কথা বলে বাড়ি চলে যান। তার এ আচরণে উপস্থিত সকলেই মর্মাহত হন।

ক. লালন শাহের গুরু কে ছিলেন?

খ. কূপজল ও গগাজল কীভাবে অভিন্ন সত্তা? বুঝিয়ে লেখাে

গ. উদ্দীপকে রূপেশবাবুর আচরণে ‘মানবধর্ম কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. মালিনী শােভার মতাে মানুষের মূল্যায়নের জন্য মানবধর্ম কবিতার বক্তব্যের যথার্থতা বিচার করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। লালন শাহের গুরু ছিলেন সিরাজ সাঁই।

খ। কূপজল ও গজল উভয়ই অভিন্ন সত্তা কারণ জল হলাে উভয়েরই মূল উপাদান।

জল কূপে থাকলে তাকে মানুষ কূপজল বলে এবং জল গঙ্গায় থাকলে তাকে গঙ্গাজল বা পবিত্র জল বিবেচনা করে। কিন্তু কূপজল ও গাজলের উপাদান এক অর্থাৎ তা হলাে জল। এখানে কেবল জলের আধারের ভিন্নতা। তাই জাত-পাত-বর্ণ সবকিছুকে ছাপিয়ে জলের পরিচয়ই বড় কারণ কূপজল ও গজল উভয়ের মূল উপাদান জল তাই দুটি অভিন্ন সত্তা।

গ। উদ্দীপকে রূপেশ বাবুর আচরণে ‘মানবধর্ম’ কবিতার জাত-পাতের ভেদাভেদের দিকটি ফুটে উঠেছে।

মানবধর্ম’ কবিতায় লালন শাহ বলেছেন তিনি কোনাে জাত-ধর্মে বিশ্বাসী নন। তার কাছে মনুষ্য ধর্মই হলাে প্রধান ধর্ম। জন্ম বা মৃত্যুকালে মানুষের কোনাে জাত থাকে না তেমনি জীবদ্দশায় এবং সামাজিক জীবনেও কোনাে জাত-পাতে ভেদাভেদ থাকতে পারে না। তিনি কোনাে ধর্মকে এককভাবে বিশ্বাস করেননি। তার মতে একটাই ধর্ম আছে তাহলাে মানবধর্ম।

উদ্দীপকে মধ্যবিত্ত পরিবারের যােগেন সন্তানের জন্মদিনে গ্রামের অন্যদের সাথে বিত্তশালী রূপেশবাবুকেও নিমন্ত্রণ করেন। অনুষ্ঠানে এসে রূপেশবাবু মালিনী শােভাকে দুই হাতে মশলা বাটতে দেখেন। এ দৃশ্য দেখে না খেয়ে জরুরি কাজের অজুহাত দেখিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। তার এমন আচরণে সকলেই মর্মাহত হন। মানবধর্ম’ কবিতায় এমন জাত-পাতের বৈষম্যকে কৰি অস্বীকার করেছেন। মানবধর্ম’ কবিতায় উল্লিখিত জাত-পাতের ব্যবধানের দিকটি উদ্দীপকের রূপেশ বাবুর আচরণে ফুটে উঠেছে।

ঘ। মালিনী শােভা নিচু শ্রেণির হলেও যােগেন তাকে মূল্যায়ন করেছে যা মানবধর্ম’ কবিতার অন্তর্নিহিত বিষয়।

লালন শাহ, ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের প্রকৃত মানবিকতার দিকটি তুলে ধরেছেন। তার মতে কালাে, ধলা, তসবি আর মালা দেখে মানুষকে আলাদা করা যায় না। কেননা পৃথিবীতে কেউ জাতের চিহ্ন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেনি।

উদ্দীপকের মালিনী শােভা নিচু জাতের হতে পারে কিন্তু তার গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় সে মানুষ। যােগেনের সন্তানের জন্মদিনে সে মশলা বাটার দায়িত্ব পায়। নিচুজাতের হলেও তার মশলা বাটার দিকটি তাকে মানুষ হিসেবে পরিচয়ের বিষয়টি প্রকাশ করেছে।

উদ্দীপকের যােগেন মালিনী শােভাকে মূল্যায়ন করেছে। সে নিচুশ্রেণির বলে যােগেন তাকে অবহেলা করেনি। লালন শাহ মানবধর্মী কবিতায় এই একই কথা বলেছেন। তিনি পৃথিবীতে মানুষে মানুষে শ্রেণিভেদের কথা বিশ্বাস করেননি। তিনি বলেছেন মানুষ এক জাতি। তাই বলা যায়, মালিনী শােভার মানুষ হিসেবে মূল্যায়নে মানবধর্ম’ কবিতার বক্তব্যের যথার্থতা ফুটে উঠেছে।      

Leave a Comment