ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। ঐতিহ্যবাহী ফুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহানা তার বিদ্যালয়ের সুনাম নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারটি তাকে ভীষণ পীড়া দেয়। বিষয়টি শ্রেণিশিক্ষককে জানালে তিনি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রয়ােজনীয়তার ওপর উদ্দীপনামূলক এক বক্তৃতা করেন এবং ছুটির পর সবাইকে থাকতে বলেন। চরম উত্তেজনা নিয়ে সবাই অপেক্ষা করে, কিন্তু স্যারের দেখা নেই। খোজ নিয়ে জানা গেল— তিনি বাসায় চলে গেছেন। শাহানা মর্মাহত হয় এবং বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে। পরদিন পরিকল্পনামাফিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে সে কয়েকটি দলে ভাগ করে এবং ছুটির পর পালাক্রমে এক একটি দল শ্রেণিকক্ষটি পরিষ্কার করতে শুরু করে। তারা শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে বিভিন্ন মনীষীর ছবি টানিয়ে দেয়। ফলে শ্রেণিকক্ষটি আকর্ষণীয় ও পাঠের উপযােগী হয়ে ওঠে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহানাদেরকে ভীষণ প্রশংসা করেন এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন।

ক. ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’ কথাটির অর্থ কী?

খ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ‘পুষ্পবিহীন সৌরভ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে

ঘ. “শ্রেণিশিক্ষক নন, শাহানাই কাজী নজরুল ইসলামের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব”- ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলােকে মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। দশচক্রে ভগবান ভূত’ কথাটির অর্থ— দশজনের চক্রান্তে সাধুও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে, অর্থাৎ বহুলােকের ষড়যন্ত্রে অসম্ভবও সম্ভব।

খ। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ‘পুষ্পবিহীন সৌরভ’ বলতে বােঝানাে হয়েছে— ভাব আবেগনির্ভর অবাস্তব উচ্ছ্বাসমাত্র।

মানুষকে জাগিয়ে তােলার ক্ষেত্রে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে তা যদি কাজের সঙ্গে গেঁথে দেওয়া না যায় তাহলে তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আবার কোনাে কাজের জন্য যে যে পরিমাণ ভাব প্রয়ােজন তার চেয়ে বেশি হলেও তা বিফলে যায়। তাই কেবল ভাবে আচ্ছন্ন হলেই চলবে না, তাকে কাজের সঙ্গেও সম্পৃক্ত করতে হবে। আত্মশক্তি অর্জনে ভাব ও কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন অপরিহার্য। অর্থাৎ ভাব হলাে এমন জিনিস যা চোখে দেখা যাবে না কিন্তু তার সৌরভ অনুভব করা যাবে। সুতরাং ‘ভাব ও কাজ প্রবন্ধে পুষ্পবিহীন সৌরভ বলতে ভাবের এই আবেগনির্ভর অবাস্তব উচ্ছ্বাসকেই বােঝানাে হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়হীনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখকের মতে, ভাব মানুষের জাগরণের উপকরণ। মানুষের মনকে জাগিয়ে তুলতে গেলে ভাবের প্রয়ােজন হয়। আর সেই মানুষকে তার নিজের, পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের ও জাতির জন্য যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হলে তাকে অবশ্যই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে মানুষকে ভাব দিয়ে জাগিয়ে কর্ম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়সাধন করতে হবে। কাউকে অযথা ভাবে মাতােয়ারা করা যাবে না, কারণ তাতে স্পিরিট নষ্ট হয়। উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়ােজনীয়তার ওপর বক্তৃতা দিয়ে তাদের ভাবে মশগুল করে ফেলে। তাদের মধ্যে যখন কাজ করার জন্য চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন স্কুলশিক্ষকও বাড়ি চলে যায়। এতে এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের মধ্যে ভাব ও কাজের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় না, যা স্পিরিটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়হীনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ভাবের সঙ্গে কাজের সমন্বয় সাধনের যে গুরুত্বের কথ বলেছেন তা উদ্দীপকের শাহানার মধ্যে ফুটে ওঠায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ভাবের উচ্ছ্বাসে উদ্বেল হওয়া নয়, ভাবের সঙ্গে পরিকল্পিত কর্মশক্তি ও বাস্তব উদ্যোগের প্রয়ােজন সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি মনে করেন ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তােলা যায়, কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে কোনাে ভালাে উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রবন্ধটিতে লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভারে সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

উদ্দীপকের শাহানা উপলব্ধি করে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়ােজনীয়তা। এ বিষয়ে সে শ্রেণিশিক্ষকের সাথে কথা বলে। কিন্তু শ্রেণিশিক্ষক যখন তার বক্তব্য অনুযায়ী কাজ না করে বাড়ি চলে যায় তখন সে মর্মাহত হলেও বিষয়টি নিয়ে নিজের পরিকল্পনামতাে কাজ করে শ্রেণিকক্ষের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনে। উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের শাহানা কাজী নজরুল ইসলামের দেখানাে পথে চলেছে। অর্থাৎ ভাব ও কাজের সমন্বয় সাধন করেছে। কিন্তু শ্রেণিশিক্ষক সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই বলা যায়, শ্রেণিশিক্ষক নন, শাহানাই কাজী নজরুল ইসলামের কাক্ষিত ব্যক্তিত্ব’- ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলােকে মন্তব্যটি যথার্থ ।

প্রশ্ন ২। কাজ নয়, কথায় আশরাফ হােসেনের জুড়ি মেলা ভার। মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করাই তার কাজ। লােকজন প্রথম প্রথম উৎসাহিত বােধ করলেও কথাসর্বস্ততার জন্য কেউ-ই এখন আর তার ডাকে সাড়া দেয় না।

ক. ‘লা-পরােয়া’ শব্দের অর্থ কী?

খ. দশচক্রে ভগবান ভূত’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যগত দিকটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. আশরাফ হােসেনের ডাকে লােকজনের সাড়া না দেওয়ার কারণ ‘ভাব ও কাজ” প্রবন্ধের আলােকে বিশ্লেষণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘লা-পরােয়া’ শব্দের অর্থ গ্রাহ্য না করা।

খ। দশজনের চক্রান্তে সাধু ব্যক্তিও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে বােঝাতে প্রাবন্ধিক উক্ত প্রবাদটির ব্যবহার করেছেন।

সমাজের মানুষ হুজুগের বশে অনেক সময়ই ভুলকে সঠিক ভেবে গ্রহণ করে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে কোনাে ব্যক্তিসমষ্টি সাধু ব্যক্তিকেও অসাধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মানুষের হুজুগে স্বভাবের সুযােগ নিয়ে সবাই মিলে অপপ্রচার চালিয়ে সেটিকে তারা বাস্তবরূপও দিতে চায়। অনেকের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে অসম্ভবও সম্ভব হয়— এটিই আলােচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।

গ। উদ্দীপকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবগত দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

মনের চিন্তা ও পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করলে সফল হওয়া যায় । সারাদিন চিন্তা করেও যদি কাজে নামা না যায় তাহলে তা অলীক কল্পনা হিসেবে পরিগণিত হয়। এরূপ লােকের কথা কেউ শােনে।

উদ্দীপকে আশরাফ হােসেনকে দেখা যায় সে কথা সর্বস্ব মানুষ। তার কথার সাথে কাজের মিল নেই। সে তার কথা অনুসারে কাজ করায় মানুষ বিশেষ উপকৃত হয় না। তাই তারা আশরাফের কথায় সাড়া দেয় না। ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও বলা হয়েছে যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব আছে তবে শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কাজ হয় না। সুতরাং উদ্দীপকে ভাব সর্বস্ব আশরাফকে দিয়ে কোনাে কাজ হয়নি। এটি প্রমাণ করে যে, উদ্দীপকের মূল বিষয়ের সাথে ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবগত বিষয়ের সাদৃশ্য আছে।

ঘ। ভাব ও কাজের মধ্যে মিল না থাকায় উদ্দীপকে আশরাফ হােসেনের ডাকে লােকজন সাড়া দেয়নি।

ভাব দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করলেই মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। এ জন্য কর্মশক্তি ও উদ্যোগের প্রয়ােজন। এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে ভালাে উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

উদ্দীপকে আশরাফ সাহেব সুন্দর কথার মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। এটি তার একটি প্রশংসনীয় কাজ হলেও এ দ্বারা কোনাে মহৎ কাজ পরিপূর্ণ হয়ে যায় না। তাকে কথার সাথে কাজের সমন্বয় ঘটাতে হতো। এটি করতে পারলেই ‘ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু যেমন ফুটে উঠত তেমনি মানুষ উপকৃত হয়ে তার ডাকে সাড়া দিত।

উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে আশরাফের কাজ ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবসর্বস্ব বিষয় যা বাস্তবধর্মী নয় । এ জন্য আশরাফের ডাকে লােকজন সাড়া দেয়নি।

 

প্রশ্ন ৩। জনাব ইসলাম বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গরবি-দুঃখী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর সহায়তা করেন গােপনে। লােক দেখানাে কোনাে কিছু করাকে তিনি অপছন্দ করেন। অথচ তার পাশের প্রতিবেশী মজিবর শুধু ভাবেন তিনি সহায়তা করবেন কিন্তু তা কার্যে পরিণত করেন না। 

ক. কত বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনায় ছেদ ঘটে?

খ. ভাবকে ‘অবাস্তব উচ্ছাস’ বলার কারণ কী?

গ. উদ্দীপকের জনাব ইসলামের কর্মকাণ্ড ভাব ও কাজ প্রবন্ধের আলােকে বিশ্লেষণ করাে।

ঘ. উদ্দীপকের মজিবর ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কোন দিককে প্রতিনিধত্ব করে? মূল্যায়ন করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। তেতাল্লিশ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনায় ছেদ ঘটে।

খ। মনের কল্পনা থেকে সাময়িক উত্তেজনা প্রকাশ করে বলেই ভাবকে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলা হয়েছে।

মানুষের মন স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ ও স্বপ্নবিলাসী। এই কল্পনা মানুষের মধ্যে সাময়িক একটি প্রণােদনা সৃষ্টি করে। লেখক এই প্রণােদনাকেই বলেছেন ভাব; যা পরিপূর্ণ হয় কাজের মাধ্যমে। কাজ বিহীন ভাবের কোনাে বাস্তবিক স্থান নেই। সে কারণে লেখক একে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলেছেন।

গ। ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের বক্তব্য অনুসারে উদ্দীপকের জনাব ইসলাম ভাবকে কর্মে রূপ দিতে সমর্থ হয়।

ভাব ছাড়া মানুষের আত্মা জাগে না। কিন্তু ভাবের দাস হয়ে পড়লে মানুষের কর্মশক্তি হারিয়ে যায়। সে কারণে লেখক মানুষকে কর্মের দাস হতে বলেছেন। মনের ভাবকে কর্মের মাধ্যমে সামনে তুলে না ধরলে তার বাস্তবিক কোনাে মূল্য থাকে না বলেই লেখক মনে করেন।

উদ্দীপকে জনাব ইসলাম খুব অল্প পরিকল্পনা করেন। কিন্তু যতটুকু তিনি ভাবেন, সবটুকুকেই কর্মে রূপ দেন। অর্থাৎ জনাব ইসলাম ভাব ও কাজের মধ্যে দূরত্ব দূর করে সুন্বয় সাধন করতে পেরেছেন। সে কারণে তাঁর মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে কর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের মজিবর ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবের নিয়ন্ত্রণহীনতার দিককে প্রতিনিধিত্ব করে।

কাজী নজরুল ইসলাম ‘ভাব ও কাজ নিবন্ধে মানুষকে লাগামহীনভাবে কল্পনাবিলাসী হতে নিষেধ করেছেন। সেই সাথে সঠিক পরিকল্পনার ওপরও জোর দিয়েছেন। তা না হলে মানুষ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং অযাচিতভাবে নিজের শক্তিকে নষ্ট করে।

উদ্দীপকে নজরুলের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে। মজিবর সারাদিন নানা ধরনের কাজের পরিকল্পনা করেও বাস্তবিক প্রয়ােগে অসমর্থ হয়। কিন্তু জনাব ইসলাম খুব অল্প পরিকল্পনা করেও সফলতা লাভ করেন। কারণ তাঁর ভাব ও কর্মের মধ্যে একটা সমন্বয় রয়েছে।

উদ্দিষ্ট আলােচনার শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের মজিবর কল্পনাবিলাসী এবং দক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণে অপটু। তাই সে নানা পরিকল্পনা করেও সফলভাবে কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। এক্ষেত্রে মজিবর তার আত্মার শক্তিকে প্রতিনিয়তই নষ্ট করছে। কারণ ভাবের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও অদক্ষ পরিকল্পনা মানুষের আত্মার শক্তি নষ্ট করে। উদ্দীপকের মজিবরের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে বলেই আমি মনে করি।

প্রশ্ন ৪। আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে

কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?

হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান

তােমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।

ক. যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে চাবেন তাকে কেমন হতে হবে?

খ. গরমাগরম কার্যসিদ্ধি’ বলতে লেখক বুঝিয়েছেন?

গ. উদ্দীপকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকে উল্লিখিত ছেলেটির পণই ‘ভাব ও কাজ প্রবন্ধের লেখকের আহ্বানে ধ্বনিত হয়েছে”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে।

খ। গরমাগরম কার্যসিদ্ধি বলতে লেখক তাৎক্ষণিকভাবে কাজ আদায় করে নেওয়াকে বুঝিয়েছেন।

‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে নজরুল ভাব ও কাজে সমান তৎপরতার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভাব আত্মশক্তি হিসেবে কাজ করে, তাই ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়ােগ করতে বলেছেন। তাছাড়া শুধু ভাব দিয়ে কাজ আদায় করতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারণ বিলম্ব হলে সে কাজ পরে আদায় নাও হতে পারে।

গ। উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বর্ণিত ভাবকে কাজে পরিণত করার আহ্বানের প্রসঙ্গকে নির্দেশ করে।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ভাব ও কাজের পারস্পরিক সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কেবল ভাবাবেগকে সম্বল করে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না। তাই ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কর্মে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি এমন ছেলের প্রত্যাশা করেছেন, যারা কথার চেয়ে কাজে বেশি বড় হবে। কেননা, কথার মধ্য দিয়ে। সফলতা অর্জন করা যায় না। কাজের সুষ্ঠু প্রয়ােগের মাধ্যমে প্রকৃত সফলতা অর্জিত হয়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনের জন্য ভাব ও কাজ এ দুয়ের মাঝে যােগসূত্র স্থাপনের কথা বলেছেন। ভাব জিনিসটা অবাস্তব উচ্ছ্বাস হলেও কাজের স্পৃহা সৃষ্টিতে এর দরকার আছে। উদ্দীপকেও কবি, ভাবের চেয়ে কাজে বেশি বড় হতে বলেছেন। অর্থাৎ সেখানে ভাব ও কাজের উপযুক্ত সমন্বয়ের কথা বলেছেন কবি। এতেই প্রকৃত সফলতা নিহিত। আর এটিই উদ্দীপকের সঙ্গে ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক

ঘ। “উদ্দীপকের উল্লিখিত ছেলেটির পণই ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধলেখকের আহ্বানে ধ্বনিত হয়েছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।

‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম কর্মী, ভাবুক ও ত্যাগীর স্বরূপ নির্ণয় করেছেন। ভাবাবিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই কর্মী নন, আবার কর্মী মাত্রই ত্যাগী নন। এ তিনের সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়েই একজন আদর্শ মানুষ গড়ে ওঠে বলে লেখক মনে করেন। এ নিবন্ধে তিনি আত্মশক্তিতে বলীয়ান এ কারণে মানুষেরই সন্ধান করেছেন।

উদ্দীপকে এমন এক ছেলের কথা বলা হয়েছে যে কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে। অর্থাৎ ভাবাবিষ্ট না হয়ে সত্যিকারের কর্মী হয়ে উঠবে। নজরুল কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ হওয়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা ছেলেটির সংকল্পের মধ্য দিয়েই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।

উদ্দিষ্ট আলােচনা থেকে দেখা যায় যে, উদ্দীপকের ছেলেটি কর্মের মধ্য দিয়ে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে চেয়েছে। নজরুল এরকম মানুষেরই সন্ধান করেছেন তাঁর প্রবন্ধে। তাই কর্মী হওয়ার ওপর তিনি অধিক গুরুত্বারােপ করেছেন। উদ্দীপকে বর্ণিত ছেলেটির ভূমিকাও কর্মী হিসেবে। এ বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

প্রশ্ন ৫। বন্ধু-বান্ধবকে সােহেল প্রায়ই বলে জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পাবে। এরপর বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশােনা করে একদিন সে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হবে। মেডিকেল থেকে পাস করে বড় ডাক্তার হিসেবে সারা দেশে নিজেকে এক নামে পরিচিত করে তুলবে। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য যেরূপ পড়াশােনা করা দরকার সােহেল তা করে না। অথচ জিপিএ-৫ এর স্বপ্নে সে বিভাের।

      

Leave a Comment