বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। প্রচণ্ড বন্যায় ডুবে যায় টাঙ্গাইলের ব্যাপক অঞ্চল। অনেকেরই  ঘর-বাড়ি ডুবে যায়। নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে অগণিত মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এমনি একটা পরিবার নৌকায় চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে। তীব্র  স্রোতের টানে নৌকাটি উল্টে গেলে সবাই সাঁতার কেটে উঠে এলেও জলে ডুবে যায় একটি শিশু। বড় মিয়া নামের এক যুবক এ দৃশ্য দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার করেন শিশুটিকে। কূলে উঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ডাক্তার এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন বড় মিয়া আর বেঁচে নেই

ক. রণবীর চৌহান কে ছিলেন?

খ. বড়ই কঠিন জীবন দেওয়া যে জীবন নেওয়ার চেয়ে’— কেন?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়ার আচরণে ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতার একটা বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটলেও সমভাব ধারণ করে না’ যুক্তিসহ বুঝিয়ে লেখাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর 

ক। রণবীর চৌহান ছিলেন এক স্বদেশপ্রেমিক রাজপুত যুবক।

খ। কোনাে মানুষকে হত্যা করা যতটা কঠিন তার জীবন রক্ষা করা এর চেয়েও অনেক বেশি কঠিন।

কোনাে মানুষকে হত্যা করা সহজসাধ্য বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রেই হত্যাকারীকে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। তবে কোনাে মানুষের প্রাণ বাঁচানাে আরও কঠিন। প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের থাকলেও প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা কারাে নেই। তাছাড়া কারাে প্রাণ বাঁচানাের জন্য যেমন মানসিকতার প্রয়ােজন হয় তা খুব বেশি মানুষের মাঝে লক্ষ করা যায় না। তাই জীবন কেড়ে নেওয়া যত কঠিন জীবন দান করা তার চেয়েও বেশি কঠিন।

গ। উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়ার আচরণে বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় কালিদাস রায় মুঘল বাদশাহ বাবুরের মানবপ্রেমের কথা তুলে ধরেছেন। এক মেথরের শিশুকে বাঁচানাের জন্য তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেন। মত্ত হাতির কবল থেকে শিশুটির জীবন রক্ষা করেন তিনি।

উদ্দীপকে বর্ণিত বড় মিয়া একজন মহৎপ্রাণ মানুষ। স্রোতের তােড়ে ডুবে যাওয়া অসহায় শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে উদ্ধার করতে সমর্থ হলেও নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সম্রাট বাবুরের মতােই উদ্দীপকের বড় মিয়াও মহানুভবতার অনুপম দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন।

ঘ। উদ্দীপকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার একটি বিশেষদিক ফুটে উঠলেও কবিতা ও উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট এক নয়, ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় কালিদাস রায় মুঘল সাম্রাজ্যের মহান শাসক বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরে বাবুর প্রজাদের মন জয় করতে ব্রতী হন। এই লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে দিল্লীর পথে পথে ঘুরে বেড়াতে থাকেন তিনি।

উদ্দীপকে বড় মিয়া নামক এক নিঃস্বার্থ মানসিকতার ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া শিশুটিকে বাচাতে তিনি নিজের জীবনের পরােয়া করেননি। শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনের বিনিময়ে শিশুটিকে বাঁচাতে সক্ষম হন তিনি।

বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় সম্রাট হিসেবে বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে তার আদর্শ ও মানবিক মূল্যবােধও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনার মাধ্যমে আমরা কেবল বড় মিয়ার উদার মানসিকতারই প্রমাণ পাই। আলােচ্য কবিতায় ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের গােড়াপত্তনের ইতিহাস এবং বাবুরের সংগ্রামী অভিযাত্রার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এ ধরনের কোনাে প্রসঙ্গ উদ্দীপকে নেই। কবিতায় বাবুরের যে মহত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় তার সঙ্গে উদ্দীপকের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক। কিন্তু উদ্দীপকের ঘটনায় তেমন কোনাে বিশেষ পটভূমির ইঙ্গিত নেই। তাই সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথাযথ। 



প্রশ্ন ২। বাচিতে চাই না আর জীবন আমার সঁপিলাম, 

পীর, পুত পদে আপনার। 

ইব্রাহিমের গুপ্তঘাতক আমি ছাড়া কেউ নয়,

ঐ অসিখানা এ বুকে হানুন সত্যের, হােক জয়।

ক. বাবুর-এর আসল নাম কী?

খ. সঁপিনু জীবন, করুণ এখন দণ্ডবিধান মাের।’- উক্তিটি কার, কেন?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ইব্রাহিমের গুপ্তঘাতকের সাথে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত রাজপুত বীরের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকটি বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার সমগ্র ভাব প্রকাশে কতটুকু সক্ষম তা যুক্তি সহকারে বুঝিয়ে বল।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। বাবুর-এর আসল নাম জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ।

খ। সম্রাট বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় পেয়ে রণবীর চৌহান তার কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রশ্নোত উক্তিটি করেন।

রণবীর চৌহান নিজ জাতির পরাজয়ের প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য বাবুরকে হত্যা করতে চান। এজন্য তিনি দিল্লির পথে পথে বাবুরের সন্ধান করতে থাকেন। এ সময় তিনি দেখতে পান, পর্যটকবেশী বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে থাকা একটি মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন। রাজপুত যুবক রণবীর চৌহান বাবুরের এই মহত্ত্বে বিস্মিত হন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং প্রশ্নোত্ত উক্তিটি দ্বারা নিজের অপরাধের শাস্তি পেতে চান।

গ। উদ্দীপকে বর্ণিত গুপ্তঘাতক ও বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত দুজনেই মহৎ ব্যক্তিত্বের কাছে নিজেদের জীবন সঁপে দিয়েছেন রাজপুত বীর। 

‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত সম্রাট বাবুরের উত্থানকে কোনাে ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না রাজপুতগণ। রাজপুত বীর তরুণ রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দিল্লীর রাজপথে ঘুরছিলেন। কিন্তু বাবুরের মহানুভবতার পরিচয় তার মনের পরিবর্তন ঘটায়। বাদশাহ বাবুরের কাছে পরিচয় প্রকাশ করে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

উদ্দীপকে বর্ণিত গুপ্তঘাতক নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। মহৎ ব্যক্তির কাছে নিজের জীবন সমর্পণ করেছে। বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় বর্ণিত গুপ্তঘাতক একইভাবে নতি স্বীকার করে বাদশাহ বাবুরের কাছে। সুতরাং, এদিক থেকে চরিত্র দুটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। উদ্দীপকটি বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার আংশিক ভাবের ধারক।

কালিদাস রায় বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বাদশাহ বাবুরের মহানুভবতার কথা তুলে ধরেছেন। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবুর। রাজ্য বিজয়ের পর সাধারণ জনগণের হৃদয় জয়ের প্রতি মনােযােগী হন তিনি। কিন্তু প্রতিশােধপরায়ণ রাজপুতগণ তাঁকে শাসক হিসেবে মেনে নিল না। রাজপুত বীর রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যার উদ্দেশ্যে দিল্লীতে আসেন। এ সময় এক মেথর শিশুকে বাঁচাতে বাদশাহ বাবুরের জীবন বাজি রাখার দৃশ্য দেখে বিস্মিত হন তিনি। বাবুরের পায়ে পড়ে তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন।

উদ্দীপকে এক গুপ্তঘাতকের আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে। নিজের অপরাধ স্বীকার করে সে সত্যের জয় নিশ্চিত করতে বলেছে। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার বর্ণনার সাথে এ দিকটিই কেবল মিলে যায়। কিন্তু কবিতার মতাে বিস্তৃত পটভূমি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে। বাদশাহ বাবুরের রাজ্য জয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি দিল্লীর রাজপথে ছদ্মবেশে বের হন। আবার রণবীর চৌহান ও বাবুরের মধ্যকার বিরােধ এবং মানবিক অনুভূতির জাগরণের পেছনেও রয়েছে একই পরিপ্রেক্ষিত। সেই সাথে বাবুরের আদর্শ ও মানবপ্রেমের অনন্য বৈশিষ্ট্যের প্রমাণও কবিতায় বিদ্যমান। কিন্তু উদ্দীপকের কবিতাংশে এমন কোনাে বিষয়ের উল্লেখ নেই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সমগ্রভাব প্রকাশ পায়নি।



প্রশ্ন ৩। পুত্র হত্যাকারীকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে আসছেন ইউসুফ। হঠাৎ করে এক পথিক এসে আশ্রয় নেন ইউসুফের কাছে। পরে  ঘটনাচক্রে পথিক নিজেই ইউসুফকে জানাল যে, সে-ই তার পুত্র ইব্রাহিমের গুপ্তঘাতক। এ কথা শােনার পর ইউসুফ আগন্তুক হত্যাকারীকে ক্ষমা করে  দিলেন এবং তার আস্তাবলের একটি শক্তিশালী ঘােড়ায় উঠিয়ে রাজ্য থেকে দূরদেশে পাঠিয়ে দিলেন।

ক. ‘গুপ্ত কৃপাণ কী?

খ. মাটির দখলই খাটি জয় নয়’— বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? 

গ. উদ্দীপকের পথিকের সাথে বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার যে  চরিত্রের মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তা আলােচনা করাে। 

ঘ. “উদ্দীপকের ইউসুফ যেন বাবুরের মহত্ব’ কবিতার সম্রাট বাবুরের যথার্থ প্রতিনিধি।”- বিশ্লেষণ করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘গুপ্ত কৃপাণ’ হলাে লুকানাে তলােয়ার।

খ। রাজ্য দখলের পাশাপাশি রাজ্যের জনগণের হৃদয় জয় করার ভেতরই রাজার ক্ষমতার স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।

সম্রাট বাবুর পানিপথ প্রান্তরে পাঠান বাদশা ইব্রাহিম লােদিকে পরাজিত ও হত্যা করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম সিং যুদ্ধ ঘােষণা করলেন। সংগ্রাম সিংয়ের সাথে খানুয়ার প্রান্তরে বাবুরের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে সংগ্রাম সিংয়ের পতন ঘটে, গােটা ভারত বাবুরের শাসনাধীন হয়ে পড়ে। বাবুর বুঝতে পারে রাজ্য দখল তথা দেশের মাটি দখল করেই দেশের সুশাসন ও ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় না। দেশের জনগণের মন জয় করে রাজ্যশাসন করাই সমীচীন। প্রশ্নোত্ত চরণে এ কথাই বােঝানাে হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের হত্যাকারী বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় রণবীর চৌহানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় রাজপুত রণবীর চৌহান প্রতিহিংসাবশত বাবুরকে হত্যা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ছদ্মবেশী বাবুর রণবীরের উদ্দেশ্যের কথা জানতে পারেন। কিন্তু রণবীর বাবুরের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করে দেন।

উদ্দীপকের ঘাতকও নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। উদ্দীপকে ইউসুফের পুত্র ইব্রাহিমকে হত্যা করে এক গুপ্তঘাতক। ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে পুত্র হত্যাকারীকে অনুসন্ধান করে আসছেন। কিন্তু হত্যাকারী নিজেই এসে তাকে জানায় যে, সে-ই ইব্রাহিমকে হত্যা করেছে। এ কথা জানার পর ইউসুফ আগন্তুক হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেন এবং সবচেয়ে বলবান ঘােড়ায় উঠিয়ে দূর দেশে পাঠিয়ে দেন।

‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতাও দেখা যায়, রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যা করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু একসময় বাবুরের মহত্ত্বের পরিচয় পেয়ে সে বাবুরের নিকট নিজের অপরাধ স্বীকার করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করে নিজের দেহরক্ষী নিযুক্ত করেন। এদিক দিয়ে উদ্দীপকের গুপ্তঘাতকের সাথে বাবুরের মহত্ব কবিতার রণবীর চৌহানের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। ক্ষমাশীলতার মহান দৃষ্টান্ত উপস্থাপনে উদ্দীপকের ইউসুফ এবং ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার বাবুর একই চেতনার প্রতিভূ ক্ষমাই মহত্ত্বের লক্ষণ। অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে তাকে ক্ষমা করলে অপরাধী অনুতপ্ত হয় এবং নিজেকে শােধরানাের সুযােগ পায় ।

উদ্দীপকের ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে তার পুত্রের হত্যাকারীকে খুঁজে বেড়ান। তিনি পুত্র হত্যার প্রতিশােধ নিতে চান হত্যাকারীকে নিজ হাতে শাস্তি দিয়ে। অথচ সেই হত্যাকারী নিজেই ইউসুফকে জানায় সে-ই তার পুত্রের হত্যাকারী। এ কথা শােনার পর মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ইউসুফ পুত্রের ঘাতককে ক্ষমা করে দেন এবং তাকে সবচেয়ে বলবান ঘােড়ায় চড়িয়ে দূর দেশে পাঠিয়ে দেন। বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুরকে হত্যা করতে দিল্লির পথে পথে ঘুরে বেড়ায় রাজপুত চৌহান।

কিন্তু প্রচার প্রতি বাবুরের ভালােবাসা ও মহত্ব দেখে চৌহান নিজ অপরাধ স্বীকার করে বাবুরের কাছে ক্ষমা চায়। মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করে নিজ দেহরক্ষী নিযুক্ত করেন। ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় ক্ষমাশীলতার দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায় । উদ্দীপকের ইউসুফও পুত্রের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে নিরাপদে দূর দেশে পাঠিয়ে দেন। এক্ষেত্রে ইউসুফ এবং আলােচ্য কবিতার বাবুর উভয়ই ক্ষমাশীলতার মহান দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। এদিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপকের ইউসুফ এবং ‘বাবুরের মহত্ত্ব কবিতার বাবুর একই চেতনার প্রতিভূ।



প্রশ্ন ৪। সৎভাই রাকিবকে কখনােই আপন ভাবতে পারেনি আনিস। পিতা মারা গেলে সে রাকিবকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে। একদিন আনিস পিতার নামে জাল ‘উইল বানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশের হাতে আটক ভাইকে সব জেনে-শুনেই রাকিব ছাড়িয়ে আনে এবং সব সম্পত্তি আনিসকে লিখে দেয়। আনিস রাকিবের এ আচরণে বিস্মিত হয় এবং তার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে।

ক. কোন যুদ্ধে সংগ্রাম সিং-এর পতন হয়?

খ. ‘মাটির দখলই খাটি জয় নয়’- চরণটি বুঝিয়ে লেখাে।

গ. উদ্দীপকের আনিস চরিত্রটি বাবুরের মহত্ব’ কবিতার কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায় কি? তােমার মতের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করাে। 

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। খানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিং-এর পতন হয় ।

খ। রাজ্য দখলের পাশাপাশি রাজ্যের জনগণের হৃদয় জয় করার ভেতরই রাজার ক্ষমতার স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।

সম্রাট বাবুর পানিপথ প্রান্তরে পাঠান বাদশা ইব্রাহিম লােদিকে পরাজিত ও হত্যা করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম সিং যুদ্ধ ঘােষণা করলেন। সংগ্রাম সিংয়ের সাথে খানুয়ার প্রান্তরে বাবুরের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে সংগ্রাম সিংয়ের পতন ঘটে, গােটা ভারত বাবুরের শাসনাধীন হয়ে পড়ে। বাবুর বুঝতে পারে রাজ্য দখল তথা দেশের মাটি দখল করেই দেশের সুশাসন ও ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় না। দেশের জনগণের মন জয় করে রাজ্যশাসন করাই সমীচীন। প্রশ্নোত্ত চরণে এ কথাই বােঝানাে হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের আনিস চরিত্রটির মানসিক পরিবর্তনের দিকটি তাকে ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতার রণবীর চৌহানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।

কালিদাস রচিত ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় যুদ্ধে পরাজিত রাজপুত রণবীর চৌহান প্রতিহিংসাবশত সম্রাট বাবুরকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বাবুর নিজের জীবনের মায়া না করে যখন পাগলা হাতির কবল থেকে এক মেথর শিশুকে রক্ষা করেন তখন ঘাতক রাজপুত নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং অনুতপ্ত হয়। বাবুরের মহানুভবতায় বিস্মিত হয়ে রণবীর চৌহান তার কাছে ক্ষমা চায়। মহানুভব বাবুর তাকে ক্ষমা করে দেন এবং নিজের দেহরক্ষী নিয়ােগ করেন।

উদ্দীপকের আনিস তার সৎভাই রাকিবকে ভালােবাসতে পারেনি। আর তাই ভাইকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে জাল উইল বানাতে চেষ্টা করেছে এবং পরিণতিতে পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে। কিন্তু যে ভাইকে সে ঠকাতে চেয়েছিল সেই রাকিবই তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে এবং সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। আনিস তার ভাইয়ের এমন আচরণে বিস্মত হয় এবং তার আচরণের পরিবর্তন হয়। বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায়ও সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ঘটনার অবতারণা হয়েছে। সেখানে রণবীর চৌহান যাকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর ছিল সেই সম্রাট বাবুরের মহত্ত দেখে তার মানসিক পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং’ উদ্দীপকের আনিস এবং ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় রণবীর চৌহানের নিজেদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য, অনুতপ্ত হওয়ার দিকটি তাদের দুজনকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।

ঘ। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায়।

কালিদাস রায় রচিত বাবুরের মহত্ত্ব কবিতায় সম্রাট বাবুরের মহানুভবতা বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধে পরাজিত চিতােরের এক তরুণ রাজপুত রণবীর চৌহান প্রতিশােধের মােহে অন্ধ হয়ে বাবুরকে হত্যা করতে চায়। কিন্তু বাবুরের নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে মেথর শিশুকে উদ্ধার করতে দেখে সে অত্যন্ত বিস্মিত হয়। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজের অপরাধ স্বীকার করে । মহৎপ্রাণ বাবুর তাকে ক্ষমা করে দেন।

উদ্দীপকে বর্ণিত রাকিব চরিত্রে উঠে এসেছে মহত্ত্ব ও মানবিক মূল্যবোেধ। তার যে ভাই তাকে সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল সেই ডাইকেই সে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছে এবং ভাইকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। তার এমন আচরণ লােভী ভাইকে বিস্মিত করেছে। আর তাই সে অনুতপ্ত হয়ে নিজের মানসিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পরােপকার ও ক্ষমা করার মহৎ গুণগুলাে মানবজীবনকে সার্থক করে তােলে। উদ্দীপকের রাকিব তার লােভী ভাইকে ক্ষমা ও সম্পদ দান করার মাধ্যমে যে মহত্ব দেখিয়েছে; তা ইতিহাসে বিরল। সে চাইলেই তার ভাইকে শাস্তি দিতে পারত কিন্তু মানবিক মূল্যবােধের কারণে সে তা করেনি। তার মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে আনিস.তার ভুল বুঝতে পারে। ‘বাবুরের মন্ত্র’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের ক্ষমা করার এমনি এক মহৎ ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। উদ্দীপক এবং বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতা পড়ে আমরা তাদের মহানুভবতা সম্পর্কে অবহিত হতে পারি এবং তাদের মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবিক মূল্যবােধসম্পন্ন আদর্শ জীবন গড়তে পারি। সুতরাং, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে উদ্দীপকের রাকিবকে বাবুর চরিত্রের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায়।



প্রশ্ন ৫। 

উদ্দীপক-১: থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় কোচসহ তেরাে জন কিশাের ফুটবলার আটকা পড়লে সে দেশের অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর ডুবুরি সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে তাদের খোঁজ করে খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহ করেন। ফিরে আসার সময় সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হলে গুহার মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার দুঃসাহসিক এ অভিযানে ১৩ জন মানুষের জীবন রক্ষা পায়।

উদ্দীপক-২: সুবর্ণপুর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার তার যােগ্যতাবলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে মেয়র এভাবে এখন তিনি জাতীয় সংসদের একজন সম্মানিত সদস্য। জনগণ তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলে তিনি মনে করেন দেশ ও জনগণের জন্য তাকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

ক. বাবুরের ছদ্মবেশে রাজপথে ঘােরার কারণ কী?

খ. রণবীর চৌহানের প্রতিহিংসার অন্ধ মােহের ঘাের কেটে যায় কেন? ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপক-১-এ বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুর চরিত্রের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে, তা বর্ণনা করাে।

ঘ. উদ্দীপক-২-এর ওয়ার্ড মেম্বার কি সম্রাট বাবুরের সার্থক প্রতিনিধি? তােমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজ চোখে অবলােকন করার জন্য বাবুর রাজপথে ছদ্মবেশে ঘুরেছিলেন।

খ। বাবুরের মহানুভবতা দেখে রণবীর চৌহানের প্রতিহিংসার অন্ধ মােহের ঘাের কেটে যায়।

রণবীর চৌহান বাবুরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দিল্লীর রাজপথেঘুরছিলেন। এমন সময় তিনি বাবুরকে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে থাকা এক মেথর শিশুকে উদ্ধার করতে দেখেন। বাবুরের এমন মহানুভবতা দেখে রণবীর চৌহানের প্রতিহিংসার অন্ধ মােহের ঘাের কেটে যায়।

গ। উদ্দীপক-১-এ বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত সম্রাট বাবুরের মহানুভবতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় মুঘল সম্রাট বাবুরের মহৎ আদর্শের দিকগুলাে চিত্রিত হয়েছে। সম্রাট বাবুর শুধু বিজয়ী বীরই ছিলেন না, ছিলেন মহানুভবতার এক জ্বলন্ত নিদর্শন। আর তাই তাে তিনি এক মেথর শিশুকে বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন।

উদ্দীপক-১-এ বর্ণিত নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ডুবুরি গুহায় আটকে পড়া কিশাের ফুটবলারদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি কিশােরদের কাছে খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহ করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, গুহা থেকে ফিরে আসার সময় সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার এ মহৎ অবদানের ফলেই রক্ষা পেয়েছিল খুদে ফুটবলাররা। এদিকে আলােচ্য কবিতার বাবুর সম্রাট হয়েও এক পথশিশুর জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। মত্ত হাতির আক্রমণে সবাই যখন পালিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনিই ঝাপিয়ে পড়ে রক্ষা করেছিলেন হাতির পায়ে পিষ্ঠপ্রায় শিশুটিকে। বাবুরের এ মহানুভবতার দিকটিই উদ্দীপক-১-এ ফুটে উঠেছে।

ঘ। ‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় সম্রাট বাবুরের যে মহৎ আদর্শ ফুটে উঠেছে সে তুলনায় উদ্দীপক-২-এর মেম্বারকে তার সার্থক প্রতিনিধি বলা যায় না।

‘বাবুরের মহত্ব’ কবিতায় বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে এক মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন। কবিতাটিতে মুঘল সম্রাট বাবুর চরিত্রের মানবিক দিকগুলাের উন্মােচন ঘটেছে। বিজয়ী এক শাসকের মহৎ আদর্শের পরিচয় ফুটে উঠেছে কবিতাটিতে।

উদ্দীপক-২-এ সুবর্ণপুর গ্রামের এক সময়ের ওয়ার্ড মেম্বারের কথা বলা হয়েছে। তিনি নিজ যােগ্যতাবলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-পরবর্তীতে মেয়র এবং এক পর্যায়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। জনগণ তার প্রশংসায় পশমুখ হলেও তিনি মনে করেন দেশ ও জনগণের জন্য তার এখনাে অনেক কিছু করার বাকি।

‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় বর্ণিত মুঘল সম্রাট বাবুর প্রজাসাধারণের খোজ খবর নিতে দিল্লির রাজপথে বেরিয়েছিলেন। এমন সময় পথে এক পাগলা হাতির আক্রমণ ঘটলে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাতির পায়ে পিষ্টপ্রায় এক শিশুকে উদ্ধার করেন। এমনকি তাকে হত্যা করতে আসা রাজপুত যুবক রণবীর চৌহান অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে তাকেও তিনি ক্ষমা করে দেন। উপরন্তু প্রাণবধ করতে আসা যুবককে নিজ দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত করে তিনি ক্ষমাশীলতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

উদ্দীপক-২-এ এক জনদরদি প্রশাসকের কথা বলা হলেও তার চরিত্রে বাবুরের ন্যায় মহানুভব ও ক্ষমাশীল রূপটির পরিচয় মেলেনি। তাই তামেক সম্রাট বাবুরের সার্থক প্রতিনিধি বলা যায় না।

Leave a Comment