প্রার্থনা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। তুলি দুই হাত, করি মােনাজাত

হে রহিম রহমান

কত সুন্দর করিয়া ধরণী

মােদের করেছ দান।

গাছে ফুল, ফল, নদী ভরা জল।

পাখির কণ্ঠে গান

সকলি তােমার দান। 

ক. কায়কোবাদ রচিত বিখ্যাত মহাকাব্যের নাম কী?

খ. সদা আত্মহারা তব গুণগানে’— কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে ‘প্রার্থনা কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকটি প্রার্থনা’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করে কি? তােমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। কায়কোবাদ রচিত বিখ্যাত মহাকাব্যের নাম ‘মহাশ্মশান’।

খ। সদা আত্মহারা তব গুণগানে’- উক্তিটিতে মূলত পাখির গুঞ্জনকে স্রষ্টার গুণগান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কবি প্রকৃতির মাঝে স্রষ্টার উপস্থিতি তীব্রভাবে উপলব্ধি করেন। ফুল-ফল, তরু-লতা-জল যেন প্রভুর মূর্তিমান দানের প্রতীক হয়ে ওঠে তার কল্পনায়। তার কাছে মনে হয় সমগ্র সৃষ্টি যেন স্রষ্টার প্রার্থনায় নিমগ্ন। তাকে ভুলে থাকলে মনে অবসাদ তৈরি হয় । জগতে স্রষ্টার মহিমার কোনাে অন্ত নেই। তাই প্রকৃতি যেন স্রষ্টার গুণগানে আত্মহারা ।

গ। প্রার্থনা কবিতায় সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করার দিকটি ফুটে উঠেছে।

কায়কোবাদ রচিত প্রার্থনা’ কবিতায় স্রষ্টার অপার মহিমার কথা প্রকাশ পেয়েছে। তার করুণাতেই সংসারের প্রতিটি জীব প্রাণ ধারণ করে আছে। সৃষ্টির মধ্য দিয়েই যেন স্রষ্টার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সৃষ্টির মধ্যে মহীয়ান স্রষ্টা মিশে একাকার হয়ে আছেন। কবি মনে করেন, জগতের যত ফুল-ফল, তরু-লতাজল সবকিছুই স্রষ্টার দান। এই উপলব্ধির মধ্য দিয়ে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। একইভাবে প্রার্থনা কবিতায় আমরা লক্ষ করি বসন্তের বাতাস কবির কাছে স্রষ্টার নিশ্বাস; জগতের আয়ু তার স্নেহকণা হয়ে ওঠে। অর্থাৎ এখানেও সৃষ্টিতে স্রষ্টা একাকার। তাই বলা যায়, স্রষ্টাকে উপলব্দির এ দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে প্রার্থনা কবিতার সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ। উদ্দীপকে প্রার্থনা’ কবিতার স্রষ্টার মহিমাকে শ্রদ্ধাভরে প্রকাশ করা হয়েছে।

সুন্দর এই পৃথিবীর একজন সর্বশক্তিমান স্রষ্টা রয়েছেন। স্রষ্টা সবসময় মানুষের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছেন। মানুষও তার কর্মকাণ্ডে যদি স্রষ্টাকে স্মরণ করে তাহলে তিনি সাড়া দেন।

‘প্রার্থনা কবিতার কবি তাই সৃষ্টিকর্তার বন্দনা করে তার কাছে শক্তি ও সাহস প্রার্থনা করেছেন। উদ্দীপকে স্রষ্টার প্রতি অফুরন্ত বিশ্বাস প্রকাশিত হয়েছে। এই পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহর মহিমাকে স্বীকার করা হয়েছে পরম শ্রদ্ধাভরে। সৃষ্টিকর্তার দয়ার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রার্থনা’ কবিতার বক্তব্য আরও বিস্তৃত।

‘প্রার্থনা’ কবিতার মূল বিষয় মূলত স্রষ্টার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। কবি তাঁর দারিদ্র্য, দুঃখ ও বিপদে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনায় নত হন। এছাড়া প্রার্থনা’ কবিতায় দেখা যায়, সমগ্র বিশ্বসৃষ্টি স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ উপস্থিত। কবি স্রষ্টার মহিমাকে স্মরণ করে তার কাছে পথ চলার প্রেরণা প্রার্থনা করেছেন; কিন্তু উদ্দীপকে এই সবগুলাে বিষয় উঠে আসেনি। স্রষ্টার সৃষ্টির মহিমাই উদ্দীপকের একমাত্র উপজীব্য। উদ্দীপকটি তাই প্রার্থনা কবিতার সমগ্রভাবের প্রকাশক নয় ।



প্রশ্ন ২। অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি

বিচার দিনের স্বামী

যত গুণ গান হে চির মহান

তােমারই অন্তর্যামী।

ক. ‘প্রার্থনা’ কবিতার উৎস কী?

খ. তব স্নেহ কণা জগতের আয়ু’ – কথাটি ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপক ও প্রার্থনা’ কবিতার মিল দেখাও।

ঘ. ‘স্রষ্টা অনন্ত অসীম ও প্রেমময়’– উদ্দীপক ও প্রার্থনা কবিতার আলােকে কথাটি বিশ্লেষণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। প্রার্থনা’ কবিতাটি কবি কায়কোবাদের ‘অশ্রুমালা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ। পৃথিবীর স্থায়িত্ব যে অপার করুণার আধার মহান আল্লাহর দয়ার ওপর নির্ভরশীলতা বােঝাতে আলােচ্য পংক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।

পৃথিবীর সবকিছু মহান স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণে। মানুষ, প্রকৃতি তথা সৃষ্টিকুলের কোনাে কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয়। তাই স্রষ্টার স্নেহ-করুণার ওপরই নির্ভর করছে জগত সংসারে টিকে থাকা আর থাকা।

গ। স্রষ্টার গুণগান ও অসীম ক্ষমতা প্রকাশের দিক থেকে উদ্দীপক ও প্রার্থনা’ কবিতার মিল রয়েছে।

‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে তার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-শান্তিতে সবসময় তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে শক্তি কামনা করেছেন। উদ্দীপকেও অনন্ত অসীম সত্তার গুণগান গেয়ে তাঁর কাছে কবি নিজেকে নিবেদন করেছেন। উদ্দীপকে মহান স্রষ্টাকে বিচার দিনের স্বামী বলে তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সার্বভৌম সত্তার অধিকারী স্রষ্টা সবার অন্তরে তৃবস্থান করেন। এমন শক্তিমান স্রষ্টার দয়া ও করুণা তিনি কামনা করেন। প্রার্থনা কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার শক্তি ও সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে পরমভক্তিভরে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানান, তিনি যেন বিপদে-আপদে তাকে শক্তি দান করেন। এভাবে উদ্দীপক ও আলােচ্য কবিতায় মহান স্রষ্টার অসীম ক্ষমতার গুণগান গেয়ে তার করুণা লাভের আরাধনা করা হয়েছে।

ঘ। উদ্দীপক ও প্রার্থনা’ কবিতার উভয় স্থানে মহান সৃষ্টিকর্তার শক্তিমত্তা ও প্রেমময় সত্তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। স্রষ্টার গুণগান গেয়ে, তার শক্তিমত্তাকে স্বীকার করে একান্ত প্রার্থনার মাধ্যমে স্রষ্টার দয়া ও সান্নিধ্য লাভের আকুল আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে প্রার্থনা’ কবিতায়।

উদ্দীপকের কবিতাংশে বিশ্বস্রষ্টার গুণগান করা হয়েছে। তিনি অনন্ত, অসীম সত্তা, তিনি প্রেমময় এবং বিচার দিনের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। তিনি মানুষের অন্তরের খবর রাখেন। সমস্ত গুণগান তাই তারই জন্য নিবেদিত। প্রার্থনা কবিতায় কবি কায়কোবাদ স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বলেছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, সর্বাবস্থায় তিনি বিধাতার কাছেই শক্তি কামনা করেছেন। স্রষ্টার শক্তি ও সৃষ্টিশীলতা অপার, অসীম। তিনি আদি, অনন্ত, দয়াময় ও প্রেমময়। তাঁর কাছেই সবকিছু সমর্পণ করা যায় । নিবেদন করা যায় মনের আকুল আকুতি। কেবল তার আরাধনা করেই দেহে ও মনে শক্তি সার করা যায়। ভক্তিভরে কেবল তাঁরই গুণগান করা যায় এবং সমস্ত কল্যাণ লাভের জন্য প্রার্থনা করা যায়। কারণ তিনি অনন্ত অসীম ও প্রেমময় সত্তা। এমন আত্মবিশ্বাস ও আত্মচেতনার উন্মেষ ঘটেছে উদ্দীপক ও প্রার্থনা’, কবিতায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।



প্রশ্ন ৩।

যে ভুলে তােমারে ভুলে।

হীরা ফেলে কাচ তুলে

ভিখারি সেজেছি আমি

আমার সে ভুল, প্রভু,

তুমি ভেঙে দাও।

ক. প্রার্থনা’ কবিতাটি কোন কাব্য থেকে সংকলিত?

খ. তুমি মাের পথের সম্বল বলতে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকটিতে প্রার্থনা কবিতার যেভাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. ‘প্রার্থনা কবিতায় প্রকাশিত কবির অনুভূতির একটি খণ্ডচিত্র উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে- মন্তব্যটির সাথে কি তুমি একমত? মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি ‘অশ্রুমালা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ। স্রষ্টাকে কবি তাঁর শেষ ভরসা বােঝাতে আলােচ্য উক্তিটি করেছেন।

পথের সম্বল বলতে বােঝায় পথ চলার অবলম্বন। স্রষ্টাকে কবি তাঁর জীবনের পথ চলার বড় সহায় বা অবলম্বন মনে করেন। কারণ স্রষ্টা সর্বশক্তিমান। তাঁর করুণায় জগৎ গতিশীল। ফলে তার সহায়তা ছাড়া। সফল হতে পারে না। জীবনে বন্ধুর পথ সফলভাবে পাড়ি দিতে হলে স্রষ্টাকে স্মরণ করতে হয়। এ বিশ্বাস থেকেই কবি স্রষ্টাকে তার পথের সম্বল বলে অভিহিত করেছেন।

গ। স্রষ্টার কাছে সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করার দিকটি উদ্দীপকটিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। এই স্রষ্টার গুণগান গাওয়া মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। আবার অনেক সময় ভুল করে স্রষ্টার নির্দেশিত পথ থেকে বিমুখ হলেও সেই ভুলের জন্য স্রষ্টার কাছেই ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।

উদ্দীপকের কবিতাংশে সষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। ভুল করে যদি স্রষ্টার পথ থেকে মানুষ বিচ্যুত হয় তাহলে সে স্রষ্টার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়। নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্রষ্টার নিকট মাথা নত করে ক্ষমা ও সাহায্য চাওয়া যথার্থ মানুষের কাজ। প্রার্থনা কবিতায় কবি স্রষ্টার মহিমা প্রকাশ করার পাশাপাশি তাঁর কাছে প্রার্থনা করেছেন একাগ্র চিত্তে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্রষ্টার কাছে সেই ভুল সংশােধনের জন্য সাহায্যও চেয়েছেন কবি। উদ্দীপকে স্রষ্টার নিকট সাহায্য চাওয়ার এই দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা ও সাহায্য চাওয়ার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে যা প্রার্থনা’ কবিতার খণ্ডাংশকে ধারণ করে ।

অনন্ত অসীম বিচারদিনের মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা। তার কাছে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার শক্তি প্রার্থনা করা হয়েছে। ভুল করলেও তার কাছেই ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেকোনাে বিপদে তার নিকট শক্তি কামনা করা হয়েছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে একজন কবি হৃদয়ের আকুতি ও অনুশােচনা। নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্রষ্টার কাছে নিজেকে সমর্পণ এবং ভুল পথ থেকে সরে আসার জন্য তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। উদ্দীপকের এই বক্তব্য প্রার্থনা’ কবিতার সাথে কিছুটা সঙ্গতিপূর্ণ।

‘প্রার্থনা কবিতায় স্রষ্টার অপর মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়েছে। কবি ভক্তিভরে চোখের জলে নিজেকে স্রষ্টার কাছে নিবেদন করেন। কবি বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সব সময় বিধাতার কাছে করুণা ও শক্তি কামনা করেছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকের বক্তব্য সীমিত। যেখানে স্রষ্টার অফুরন্ত দয়ায় জগতের সবকিছু চলছে সে কথা উদ্দীপকে উল্লেখ নেই। শুধু রিক্ত হস্তে পরম ভক্তি ভরে স্রষ্টার কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিষয়টি উল্লেখ আছে। তাই বলা যায়- ‘প্রার্থনা’ কবিতায় প্রকাশিত কবির অনুভূতির একটি খণ্ডচিত্র উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে- মন্তব্যটি। উল্লিখিত আলােচনার প্রেক্ষিতে যুক্তিযুক্ত।



প্রশ্ন-৪।  আলম সাহেব ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে লঞ্চে করে গ্রামের বাড়ি রওনা দিলেন। লঞটি যখন মেঘনা নদীর মাঝামাঝি ঠিক সেই সময়, কালবৈশাখীর তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। পরিবারের সবাই আলম সাহেবকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ শুরু করে। তখন আলম সাহেব বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখাে, তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় আলম সাহেব নিরাপদে বাড়ি ফিরলেন । 

ক. ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?

খ. তরুলতা শিরে, তােমারি প্রসাদ লেখাে।

গ. উদ্দীপকের আলম সাহেবের মধ্যে প্রার্থনা’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করে।

ঘ. উদ্দীপকটি যেন প্রার্থনা কবিতার কবির কাঙ্খিত ফল।- উক্তিটি কবিতার আলােকে মূল্যায়ন করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘প্রার্থনা’ কবিতাটি ‘অশ্রুমালা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ। গাছপালা তরুলতা সকল কিছুতেই স্রষ্টার অনুগ্রহ বিরাজমানআলােচ্য উক্তিটি দ্বারা একথাটিই বােঝানাে হয়েছে।

স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়েই আত্মপ্রকাশ করেন। জগতের অনন্ত সুন্দর সৃষ্টির দিকে তাকালে স্রষ্টাকে অস্বীকার করার উপায় থাকে না। গাছ-পালা, তরুলতা সব কিছুতেই সষ্টার অনুগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। কেননা, স্রষ্টার অনুগ্রহ ও অপার করুণা লাভ করেই বিশ্ব সংসারে প্রতিটি জীব প্রাণ ধারণ করে আছে। এই বিষয়টি বােঝাতেই আলােচ্য উক্তিটি ব্যবহৃত হয়েছে।

গ। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করার দিকটি উদ্দীপকের আলম সাহেবের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

যারা ধর্মপরায়ণ মানুষ তাঁরা সকল কাজে সষ্টার প্রতি আস্থা রাখেন। তারা বিশ্বাস করেন জগতের সবকিছু স্রষ্টার অধীন এবং সবকিছুই স্রষ্টাকে স্মরণ করে। বিপদে-আপদে কেবল স্রষ্টাই তাদের শেষ ভরসা।

উদ্দীপকের আলম সাহেব সষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাসী একজন মানুষ। তার বিশ্বাস সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যেমন বিপদ দিতেও পারেন আবার তিনি বিপদ থেকে উদ্ধারও করতে পারেন । একারণেই তিনি পরিবারসহ কালবৈশাখীর তাণ্ডবের শিকার হলে সকলকে আর্তনাদ না করে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখতে বলেন। এবং স্রষ্টার অশেষ কৃপায় তারা নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন। প্রার্থনা কবিতায়ও কবি সবকিছুতেই স্রষ্টার উপর ভরসা রাখার কথা বলেছেন। তার মতে, স্রষ্টার দয়া ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও চলতে পারি না। তাই সুখে-দুঃখে, শয়নে-স্বপনে স্রষ্টাই আমাদের ভরসা। আলােচ্য কবিতার স্রষ্টার প্রতি এই নির্ভরশীলতার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপকের আলম সাহেবের মধ্যে।

ঘ। উদ্দীপকে যেমন সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখার কথা বলা হয়েছে, তেমনি প্রার্থনা কবিতার কবিও একই আহ্বান জানিয়েছেন।

মানুষ স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি। স্রষ্টার দয়া ও অনুগ্রহেই মানুষ বেঁচে আছে। তাই সর্বদা স্রষ্টার নিকট প্রার্থনার মাধ্যমেই মানবের সকল দুঃখ-বেদনার মুক্তি সম্ভব ।

উদ্দীপকের আলম সাহেব ধৈর্যশীল এবং স্রষ্টার উপর সর্বদা নির্ভরশীল। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে করে বাড়ি যাওয়ার সময় কালবৈশাখীর তাণ্ডবে পড়েন। এতে তিনি ধৈর্য হারা হননি এবং আর্তনাদও করেননি বরং নিজে স্রষ্টার উপর ভরসা রেখেছেন এবং পরিবারের সদস্যদেরও ভরসা রাখতে বলেছেন।

তার বিশ্বাস ছিল এই বিপদে কেবল আল্লাহই তাদের রক্ষা করতে পারেন। অবশেষে তিনি নিরাপদেই বাড়ি ফিরলেন। প্রার্থনা কবিতার কবিও সব কিছুতে স্রষ্টার উপর ভরসা রাখার কথা জানান।

‘প্রার্থনা’ কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সবকিছুতেই তিনি স্রষ্টার কাছে শক্তি কামনা করেছেন। এছাড়াও তিনি দেখিয়েছেন জগতের সবকিছুই তার অনুগ্রহে টিকে আছে। তাই তাঁর কাছেই সকল সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। স্রষ্টার নিকট সাহায্য চাওয়ায় কবির এই স্রষ্টা নির্ভরশীলতার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে উদ্দীপকের বর্ণনায় । অতএব, আমরা উল্লিখিত আলােচনা শেষে বলতে পারি- “উদ্দীপকটি যেন ‘প্রার্থনা’ কবিতার কবির কাঙ্ক্ষিত ফল।”- উক্তিটি যথার্থ ।



প্রশ্ন ৫। করিম মােল্লা নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করেন- “হে সর্বশক্তিমান, আমি গরিব অসহায়। কিন্তু তােমাকে কখনাে ভুলিনি। আমাকে তুমি রহম করাে। নিশ্চয়ই তুমি অন্তর্যামী।’ 

ক. কায়কোবাদের আসল নাম কী?

খ. না জানি ভকতি, নাহি জানি স্তুতি’ – কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকটি কীভাবে প্রার্থনা’ কবিতার সঙ্গে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. ‘নিশ্চয়ই তুমি অন্তর্যামী’— প্রার্থনা’ কবিতার আলােকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। কায়কোবাদের আসল নাম মুহম্মদ কাজেম আল কুরায়শী।

খ। না জানি ভকতি, নাহি জানি স্তুতি’- উক্তিটির মূলে রয়েছে কবির নিজের অসহায়ত্ব ও ক্ষুদ্রতাবােধ।

কবি সর্বশক্তিমান স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। তিনি স্রষ্টার জন্য হৃদয়ে অশেষ ভক্তি ও শ্রদ্ধা অনুভব করেন। কিন্তু তা প্রকাশ করার মতাে ভাষা তিনি খুঁজে পান না। স্রষ্টাকে যতটা স্তুতি করা দরকার ততটা করার মতাে ক্ষমতাও তার নেই। কিন্তু হৃদয়ে অনুভব করেন তার অশেষ মহত্ত্ব। ফলে প্রকাশ করার দীনতা হেতু তিনি উপযুক্ত উক্তিটি করেছেন।

গ। সর্বশক্তিমান স্রষ্টার নিকট অকৃপণ আত্মসমর্পণের দিক থেকে উদ্দীপকটি প্রার্থনা’ কবিতার সাথে সম্পর্কিত।

মানবজীবনে স্রষ্টার উপস্থিতি গভীর ও ব্যাপক। তাঁর প্রতি আস্থা স্থাপন করে মানুষ সহজে জীবনের দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে পারে। ফলে কারাে কারাে জীবনে স্রষ্টাকে পাওয়ার ধনাই বড় হয়ে ওঠে।

উদ্দীপকের করিম মােল্লা নামাজ শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করেন এবং বলেন যে তিনি সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করেন। তিনি নিজের অসহায়ত্ব স্বীকার করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এতে প্রতিফলিত হয়েছে তার নিজস্ব বিশ্বাস ও মনােভজি । অন্যদিকে প্রার্থনা কবিতায়ও কবি বলেছেন যে, তিনি দরিদ্র নিঃসম্বল। স্রষ্টাকে কীভাবে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে হয় তা তিনি জানেন না। তিনি কেবল চোখের জলে নিজেকে স্রষ্টার কাছে নিবেদন করেন। স্রষ্টার প্রতি এই আন্তরিক বিশ্বাসই উদ্দীপকের করিম মােল্লা ও প্রার্থনা’ কবিতার কবির বােধকে সম্পর্কিত করে তুলেছে। এদিক থেকে উদ্দীপকটি প্রার্থনা কবিতার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।

ঘ। “নিশ্চয়ই তুমি অন্তর্যামী” ‘প্রার্থনা’ কবিতার আলােকে উক্তিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

সৃষ্টিকর্তা যেন সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন তাঁর অনন্ত ও অপরিসীম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। যেহেতু তিনি এই জগৎ সংসারের নিয়ন্তা, তাই তিনি মানুষের খবরা-খবরও জানেন।

উদ্দীপকের করিম মােল্লা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি সর্বদা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন। কারণ স্রষ্টা সর্বশক্তিমান, সমগ্র জগতের নিয়ন্ত্রক। যদিও করিম মােল্লা দরিদ্র ও অসহায়, তবুও তিনি স্রষ্টাকে কখনাে ভােলেন নি। তিনি স্রষ্টার নিকট রহমত প্রার্থনা করেন যেন তার জীবনযন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হয়।

প্রার্থনা’ কবিতায় কবি স্রষ্টার অপার মহিমার কথা বর্ণনা করে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানিয়েছেন। কবি বিপদে-আপদে, সুখেশান্তিতে সব সময় স্রষ্টার কাছ থেকে শক্তি কামনা করেছেন। কেননা কবি জানেন স্রষ্টা সর্বশক্তিমান ও অন্তর্যামী। তিনি মানুষের অন্তরের কথাও জানেন। দারিদ্র্যের পেষণে কিংবা বিপদের সময়ে কবি যেমন স্রষ্টাকেই বড় সহায় মনে করেন, তেমনি উদ্দীপকের করিম মােল্লাও সর্বদা স্রষ্টাকে স্মরণ করেন। তিনি যেহেতু গরিব ও অসহায় তাই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার অনুগ্রহ কামনা করেছেন। কেননা তিনি জানেন স্রষ্টা অন্তর্যামী, এদিক থেকে বলা যায়, নিশ্চয়ই তুমি অন্তর্যামী- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘প্রার্থনা’ কবিতার আলােকে তাৎপর্যবহ।     

Leave a Comment