নবম দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞানের জীব প্রযুক্তি অধ্যায়ের জ্ঞান ও অনুধাবন মূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। এক্সপ্লান্ট কী?

উছর : টিস্যু কালচারের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের যে অংশ পৃথক করে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাই এক্সপ্লান্ট।

প্রশ্ন ২। CysE কী?

উত্তর : CysE হলাে একটি ব্যাকটেরিয়াল জিন যা ভেড়ার পশমের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তর করা হয়।

প্রশ্ন ৩। টিস্যু কী?

উত্তর : একই বা বিভিন্ন প্রকারের একগুচ্ছ কোষ একত্রিত হয়ে যদি একই কাজ করে এবং তাদের উৎপত্তিও যদি অভিন্ন হয় তখন তাদের টিস্যু বলে । 

প্রশ্ন ৪। GMO কী?

উত্তর : জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির মাধ্যমে DNA এর কাঙ্ক্ষিত অংশ ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষে, উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে উদ্ভিদে স্থানান্তরের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জীবকে বলা হয় GMO (Genetically Modified Organism)।

প্রশ্ন ৫। টিস্যু কালচার কী?

উত্তর : বিচ্ছিন্ন কোন টিস্যু সম্পূর্ণ জীবানুমুক্ত অবস্থায় পুষ্টি মাধ্যমে আবাদ করে পূর্ণাঙ্গ চারা উদ্ভিদ সৃষ্টি করাকে টিস্যু কালচার বলে।

প্রশ্ন ৬। জীব প্রযুক্তি বলতে কী বুঝ?

উত্তর : যে প্রযুক্তি প্রয়ােগ করে কোনাে জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে নতুন কোনাে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের উদ্ভাবন বা সেই জীব থেকে প্রক্রিয়াজাত বা উপজাত দ্রব্য প্রস্তুত করা হয় সেই তাদের প্রযুক্তিই জীব প্রযুক্তি ।

প্রশ্ন ৭। TMGMV কী?

উত্তর : TMGMV-এর পূর্ণরূপ হলো- Tobacco Mild Green Mosaic Virus ।

প্রশ্ন ৮। প্লাজমিড কী?

উত্তর : ক্রোমোেসােম বহির্ভূত বৃত্তাকার DNA অণু হচ্ছে প্লাজমিড

প্রশ্ন ৯। রেসট্রিকশন এনজাইম কী?

উত্তর : যে এনজাইম প্রয়ােগ করে DNA অণুর সুনির্দিষ্ট অংশ কর্তন প্রশ্ন  করা যায় তাই রেস্ট্রিকশন এনজাইম। 

প্রশ্ন ১০। অটোক্লেভ কী?

উত্তর : অটোক্লেভ হলাে একটি যন্ত্র । যেখানে ১২১°সে. তাপমাত্রায় রেখল ১৫ Ib/sq. inch চাপে ২০ মিনিট রেখে টিস্যুকালচারের আবাদ মাধ্যমকে জীবাণুমুক্ত রাখা হয়। 

প্রশ্ন ১১। জোজোবা কী?

উত্তর : জোজোবা মরুভূমির একটি উদ্ভিদ।

প্রশ্ন ১২। এক্সপ্লান্ট কী?

উত্তর : টিস্যু কালচারের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের যে অংশ পৃথক করে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাকে এক্সপ্ল্যান্ট বলে।

প্রশ্ন ১৩। Biotechnology পূর্বে কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর : Biotechnology পূর্বে Bioengineering নামে পরিচিত ছিল।

প্রশ্ন ১৪। Biotechnology কাকে বলে?

উত্তর : কল্যাণের উদ্দেশ্যে জৈবনিক প্রতিনিধিদের যেমন- অণুজীব বা কোষীয় উপাদানের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারকে জীবপ্রযুক্তি বা Biotechnology বলে। 

প্রশ্ন ১৫। Restriction এনজাইমের কাজ কী?

উত্তর : Restriction এনজাইমের কাজ হলাে DNA কে ছেদন করা।

প্রশ্ন ১৬। ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ কাকে বলে?

উত্তর : জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে জিনের স্থানান্তর ঘটিয়ে যেসব উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয় তাদের ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলে।

 

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

 

প্রশ্ন ১। টিস্যু কালচার বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : বিচ্ছিন্ন কোন টিস্যু সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় পুষ্টি মাধ্যমে আবাদ  করে পূর্ণাঙ্গ চারা উদ্ভিদ সৃষ্টি করাকে টিস্যু কালচার বলে। টিস্যু কালচার প্রয়ােগ করে ইতােমধ্যে দেশি ও বিদেশি অর্কিডের চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অনেক রােগ প্রতিরােধী ও অধিক উৎপাদনশীল কলার চারা, বেলের চারা, কাঁঠালের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।

প্রশ্ন ২। জীবপ্রযুক্তি বলতে কী বুঝায়?

উত্তর : জীবপ্রযুক্তি Biology এবং Technology শব্দ দুটির সমন্বয়ে গঠিত। Biology শব্দের অর্থ জীব সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান এবং Technology শব্দের অর্থ প্রযুক্তি। অর্থাৎ Biology এবং Technology-র আন্তঃসম্পর্কিত বিষয়ই হলাে জীবপ্রযুক্তি। জীবপ্রযুক্তি প্রয়ােগ করে কোনাে  জীবকোষ, অণুজীব বা তার অংশবিশেষ ব্যবহার করে নতুন কোনাে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব (উদ্ভিদ বা প্রাণী বা অণুজীব) এর উদ্ভাবন করা হয়। জীবপ্রযুক্তির অনেক পদ্ধতির মধ্যে বর্তমানে টিস্যু কালচার ও জিন প্রকৌশল পদ্ধতি কৃষি উন্নয়ন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রশ্ন ৩। আবাদ মাধ্যম বলতে কি বুঝায়?

উত্তর : উদ্ভিদ টিস্যুকে কালচার করার জন্য প্রাথমিকভাবে যে মিডিয়াম বা মাধ্যম তৈরি করা করা হয় তাকে আবাদ মাধ্যম বলে। অ্যাগার অ্যাগার, খনিজ লবণ, ভিটামিন, চিনি, ফাইটোহরমােন ইত্যাদির  মাধ্যমে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়। এতে উদ্ভিদ বৃদ্ধির প্রয়ােজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে।

প্রশ্ন ৪। Cys E ও Cys M ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তর করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : Cys E ও Cys M ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তর করা হয়েছে কারণ— Cys B ও Cys M ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তরের ফলে ভেড়ার পশমের পরিমাণ ও গুণগত মানের বৃদ্ধি ঘটবে।

প্রশ্ন ৫। জীবাণুমুক্ত আবাদ মাধ্যম বলতে কী বুঝ?

উত্তর : জীবাণুমুক্ত আবাদ মাধ্যম বলতে বুঝায় আবাদ মাধ্যমকে কাচের পাত্রে (টেস্টটিউব, কনিক্যাল ফ্লাস্ক) নিয়ে তুলা বা প্লাস্টিকের ঢাকনা দিয়ে মুখবন্ধ করে অটোক্লেভ যন্ত্রে ১২১° সে. তাপমাত্রায় রেখে, ১৫ 1b/sa.inch চাপে ২০ মিনিট রেখে জীবাণুমুক্ত করা। জীবাণুমুক্ত তরল আবাদকে ঠান্ডা ও জমাট বাঁধার পর এক্সপ্লান্টগুলােকে এর মধ্যে স্থাপন করা। তারপর কাচের পাত্রের মুখ বন্ধ করে নির্দিষ্ট আলাে ও তাপমাত্রা (২৫ + ২° সে.) সম্পন্ন নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বর্ধনের জন্য রাখা হয়। এভাবে যে আবাদ মাধ্যম তৈরী করা হয় তাকে জীবাণুমুক্ত আবাদ মাধ্যম বলে ।

প্রশ্ন ৬। কৃষিক্ষেত্রে টিস্যু কালচারের ভূমিকা লিখ?

উত্তর : কৃষি ক্ষেত্রে টিস্যুকালচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে যেসব ফসলের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব নয় তাদের চারা পাওয়া যায়। তাছাড়া টিস্যু কালচারের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক চারা পাওয়া যায়। যা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে কৃষকদের ফসল চাষে সাহায্য করে। তাছাড়া আলুর রােগমুক্ত চারা উৎপাদনে অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রে টিস্যু কালচারের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রশ্ন ৭। ToMV, TMV, TMGMV, PRSV কী?

উত্তর : ToMv হলাে- টমেটো মােজাইক ভাইরাস।

TMV হলাে – টোবাকো মােজাইক ভাইরাস।

TMGMV হলাে- টোবাকো মাইল্ড গ্রিন মােজাইক ভাইরাস।

PRSv হলাে – পেপের রিং স্পট ভাইরাস।

প্রশ্ন ৮। CysE ও CysM কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর : CysE এবং CysM হল ব্যাকটেরিয়ার দুটি জিন যা, ভেড়ার পশমের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং এর গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য ভেড়ার জিনােমে স্থানান্তর করা হয়। আর এ স্থানান্তর মূলত DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়।

প্রশ্ন ৯। কীভাবে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়?

উত্তর : টিস্যু কালচারের জন্য আবাদ মাধ্যম প্রয়ােজন। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পুষ্টি, ভিটামিন, ফাইটোহরমােন, সুক্রোজ এবং প্রায় কঠিন মাধ্যম তৈরির জন্য জমাট বাঁধার উপাদান যেমন অ্যাগার প্রভৃতি সঠিক মাত্রায় মিশিয়ে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়।

প্রশ্ন ১০। GE বলতে কী বোেঝ?

উত্তর : জিন প্রকৌশলের মধ্যে এর কাঙ্ক্ষিত অংশ ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষ, উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে, প্রাণী থেকে উদ্ভিদে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এ জীবকে GE (Genetically Engineered) বলে। এর মাধ্যমে target জিন নির্বাচন করা যায়।

প্রশ্ন ১১। গবাদি পশুতে Protein C জিন স্থানান্তর করা হয়েছে কেন?

উত্তর : গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য Protein c জিন স্থানান্তর করা হয়েছে।

প্রশ্ন ১২। আগাছা সহিষ্ণু জাত ক্যানােলা উদ্ভাবন করা হয় কিভাবে?

উত্তর : এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে বিজ্ঞানীরা আগাছা সহিষ্ণু জিন ক্যানােলাতে স্থানান্তর করে আগাছা সহিষ্ণু জাত ক্যানােলা উদ্ভাবন করা হয়েছে। 

 

অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর

 

প্রশ্ন ১। কীভাবে আবাদ মাধ্যম তৈরি করা হয়?

উত্তর : উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পুষ্টি, ভিটামিন, ফাইটোহরমােন, সুক্রোজ এবং প্রায় কঠিন মাধ্যমে তৈরির জন্য জমাট যেমন-  বাঁধার উপাদান, যেমন- অ্যাগার প্রভৃতি সঠিক মাত্রায় মিশিয়ে আবাদ হয়েছে মাধ্যম তৈরি করা হয়।

প্রশ্ন ২। টিস্যু কালচার বলতে কী বােঝ?

উত্তর : একটি টিস্যুকে জীবাণুমুক্ত পুষ্টিবর্ধক কোনাে মিডিয়ামে বর্ধিতকরণ প্রক্রিয়াই হলাে টিস্যু কালচার। টিস্যু কালচার উদ্ভিদবিজ্ঞানের একটি অপেক্ষাকৃত নতুন শাখা । উদ্ভিদ টিস্যুকালচারে উদ্ভিদের কোনাে বিচ্ছিন্ন অংশ বা অঙ্গবিশেষ যেমন পরাগরেণু, শীর্ষ বা পার্শ্বমুকুল, পর্ব, মূলাংশ ইত্যাদিকে কোনাে নির্দিষ্ট পুষ্টিবর্ধক মিডিয়ামে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় কালচার করা হয়।

প্রশ্ন ৩। এক্সপ্ল্যান্ট কী?

উত্তর : টিস্যুকালচারের উদ্দেশ্যে উদ্ভিদের যে অংশ পৃথক করে নিয়ে ব্যবহার করা হয় তাকে এক্সপ্লান্ট (Explent) বলে। উন্নত গুণসম্পন্ন, স্বাস্থ্যবান ও রােগমুক্ত উদ্ভিদকে এক্সপ্লান্টের জন্য নির্বাচন করা হয়। 

প্রশ্ন ৪। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারি কী?

উত্তর : জীব প্রযুক্তির বিশেষ রূপ হিসেবে কোষকেন্দ্রের জিনকণার পরিবর্তন ঘটিয়ে জীবদেহের গুণগত রূপান্তর ঘটানােই হলাে জিন প্রকৌশল বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। অথবা, নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনাে জীবের পরিবর্তন ঘটানােই হলাে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।

প্রশ্ন ৫। ট্রান্সজেনিক কী?

উত্তর : জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে DNA-এর কাঙ্ক্ষিত অংশ থেকে প্রাপ্ত নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবকে ট্রান্সজেনিক বলা হয় । একে GMO (Genetically Modified Organism) বলে।

 

প্রশ্ন ৬। উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নতজাত উদ্ভাবনে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ভূমিকা উল্লেখ কর।

উত্তর : উদ্ভিদ প্রজনন ও উন্নতজাত উদ্ভাবনে টিস্যু কালচার প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। টিস্যু কালচার প্রযুক্তির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আজকাল উদ্ভিদ প্রজননের ক্ষেত্রে এবং উন্নত জাত উদ্ভাবনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে এবং এক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমে উদ্ভিদাংশ থেকে কম সময়ের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অসংখ্য চারা সৃষ্টি করা যায়। সহজেই রােগমুক্ত, বিশেষ করে ভাইরাস মুক্ত চারা উৎপাদন করা যায়। ঋতুভিত্তিক চারা উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। স্বল্প সময়ে কম জায়গার মধ্যে যথেষ্ট সংখ্যক চারা উৎপাদনের সুবিধা থাকায় চারা মজুদের সমস্যা এড়ানাে যায়। যেসব উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে না। সেগুলাের চারাপ্রাপ্তি ও স্বল্প ব্যয়ে দ্রুত সতেজ তাবস্থায় স্থানান্তর করা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করতে টিস্যু কালচার নির্ভরযােগ্য প্রযুক্তি হিসেবে স্বীকৃত। যেসব ভূণে শস্যকলা থাকে না যেসব ভূণ কালচার করে সরাসরি উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়, যে সকল উদ্ভিদে যৌনজনন অনুপস্থিত অথবা প্রাকৃতিকভাবে জননের হার কম তাদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যায়। নতুন প্রকৃতির উদ্ভিদ উদ্ভাবনে টিস্যু কালচার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উড়ােজাহাজ, রকেট প্রভৃতি ভারী ইঞ্জিন চালানাের জন্য এক রকমের তিমি মাছের তেলের প্রয়ােজন হয়। এ তিমি মাছ ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র জোজোবা নামক গাছ হতে নিষ্কাশিত তেল বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এ গাছ এক বিশেষ মরুভূমির পরিবেশ ছাড়া জন্মায় না এবং এদের বংশবৃদ্ধিও অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ। টিস্যুকালচারের মাধ্যমে এ গাছের দ্রুত বংশবৃদ্ধি করাই কেবল সম্ভব হয়নি, একে ভারতবর্ষের জলবায়ু উপযােগী করে তােলা হয়েছে। বাংলাদেশে টিস্যুকালচারের মাধ্যমে ইতােমধ্যে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে যেমন— বিভিন্ন প্রকার দেশি ও বিদেশি অর্কিডের চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। রােগ প্রতিরােধী এবং অধিক উৎপাদনশীল কলার চারা, বেলের চারা, কাঁঠালের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, লিলি প্রভৃতি ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। কদম, জারুল, ইপিল-ইপিল, বকফুল, সেগুন, নিম প্রভৃতি কাঠ উৎপাদনকারী বৃক্ষের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। বিভিন্ন ডাল জাতীয় শস্য বাদাম ও পাটের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। টিস্যু কালচার প্রয়ােগ করে আলুর রােগমুক্ত চারা এবং বীজ মাইক্রোটিউবার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।

 

প্রশ্ন ২। শস্য উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভূমিকা আলােচনা কর?

উত্তর : শস্য উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিয়ারিং-এর ভূমিকা নিচে আলােচনাকরা হলােঃ

১.জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি হলাে সর্বাধুনিক জীব প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলাে নতুন ও উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীব সৃষ্টি যা দ্বারা মানুষ সর্বোত্তমভাবে লাভবান হতে পারে। এ প্রযুক্তির জিনকণার মাধ্যমে ইতােমধ্যেই লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

২. এ প্রযুক্তির সাহায্যে ক্ষতিকর পােকামাকর প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন-বিটি ভূট্টা, বিটি তুলা, বিটি ধান ইত্যাদি। এসব ফসল লেপিডােপটে এবং কলিওপটেরা বর্গের অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরােধক্ষম। উল্লেখ্য

Bacillus thuringiensis (Bt) নামক ব্যাকটেরিয়ার জিন শস্যে প্রবেশ করানাের কারণে কৌলিগতভাবে পরিবর্তিত শস্যসমূহকে Bt Corn, Bt Cotton ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

৩. এ প্রযুক্তির সাহায্যে ভাইরাস প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন- ভাইরাস কোট প্রােটিনে জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে টমেটো মােজাইক ভাইরাস, টোবাকো মােজাইক ভাইরাস এবং টোবাকো মাইল্ড গ্রিন মােজাইক ভাইরাস প্রতিরােধী ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। রিং স্পট ভাইরাস প্রতিরােধে সক্ষম পেঁপের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। লেটব্লাইট ছত্রাক প্রতিরােধী জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে লেট ব্লাইট প্রতিরােধী গােল আলুর জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা চলেছে।

৪. জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আগাছানাশক রাসায়নিক পদার্থের বিরুদ্ধে সহনশীলতাসম্পন্ন ভূট্টা, তুলা ইত্যাদি ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

৫. এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে বিজ্ঞানীরা আগাছা সহিষ্ণু জিন টমেটোতে স্থানান্তর করে আগাছা, সহিষ্ণু টমেটো জাত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

৬. জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে একই উদ্ভিদে একাধিক বৈশিষ্ট্য অনুপ্রবেশ করানাে যায়। বাণিজ্যিকভাবে এখন এ ধরনের ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ সহজলভ্য হয়েছে। যেমন- তুলা এবং ভূট্টার মধ্যে একইসাথে আগাছা সহিষ্ণু এবং পােকামাকড় প্রতিরােধী বৈশিষ্ট্য অনুপ্রবেশ করানাে হয়েছে।

৭. জিনগত রূপান্তরের মাধ্যমে ফসলের পুষ্টিমান উন্নয়ন করা হয়েছে। যেমন- ধানে ভিটামিন-এ তথা বিটা-ক্যারােটিন জিন স্থানান্তর করা হয়েছে। ধানের লৌহ/আয়রন যােগ করারও প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। লবণাক্ততা এবং খরা সহনশীল জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।

Leave a Comment