অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। বিকেলবেলা বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলছিল সাকিব। হঠাৎ তারা দেখে মাঠের একপ্রান্তে নর্দমায় একটি কুকুরছানা হাবুডুবু খাচ্ছে, প্রাণপণ চেষ্টা করছে নর্দমা থেকে উপরে উঠার। সাকিবরা সবাই মিলে ছানাটিকে তুলে পরিষ্কার করে। সাকিব পরম স্নেহে ছানাটিকে একটি শুকনাে কাপড়ে জড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। মৃতপ্রায় কুকুরছানাটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। সাকিব তার নাম দেয় ডন। কিন্তু বাড়ির কাজের লােক আয়নাল মিয়া ছানাটিকে খেতে দিতে এবং পরিষ্কার করতে ভীষণ বিরক্ত। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয়— ছানাটিকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসতে। আজ সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, আর ডনকে মনে হয় তাদের পরিবারেরই একজন।

ক. দেওঘরে বেড়াতে আসা পীড়িতদের মধ্যে কাদের সংখ্যাই বেশি ছিল?

খ. আতিথ্যের মর্যাদা লজ্জন’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের আয়নালমিয়ার মাধ্যমে ‘অতিথির স্মৃতি গল্পের যে দিকটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ, “উদ্দীপকের সাকিব যেন অতিথির স্মৃতি। লেখকের অনুভূতিরই ধারক’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। দেওঘরে বেড়াতে আসা পীড়িতদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি ছিল।

খ। ‘আতিথ্যের মর্যাদা লজ্জন’ বলতে বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতিথির দীর্ঘ সময় অবস্থান করাকে বােঝানাে হয়েছে।

কুকুরটির সঙ্গে লেখকের সখ্য হওয়ার পরের দিন কুকুরটি লেখকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে। কিন্তু এরপরও কুকুরটি ওই বাড়িতে অবস্থান করে। বাড়িতে অতিথির এরূপ দীর্ঘ সময় অবস্থান মূলত আতিথ্যের লঙ্ন। সাধারণ বিচারে কুকুরটি এ মর্যাদা লঙ্ন করেছে। তাই বলা যায়, ‘আতিথ্যের মর্যাদা লজ্ঞান’ বলতে বাড়িতে কুকুরটির এই দীর্ঘসময় অবস্থান করাকেই বােঝানাে হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের আয়নাল মিয়ার মাধ্যমে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌয়ের মাঝে বিদ্যমান প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে উল্লিখিত মালি-বৌ কুকুরটিকে সহ্য করতে পারত না। নিজের খাবারে কুকুরটি ভাগ বসিয়েছে মনে করে সে তাকে তাড়িয়ে দিত। লেখকের বাড়িতে প্রতিদিন অনেক খাবার বেঁচে গেলেও মালি-বৌ লেখকের অতিথিরূপী কুকুরকে সেখান থেকে কিছু অংশ খেতে না দিয়ে বরং তাকে প্রায়ই তাড়িয়ে দিত। উদ্দীপকের আয়নাল মিয়ার মাঝেও আমরা প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটি লক্ষ করি। আয়নাল মিয়া সাকিবদের বাড়ির কাজের লােক। খেলতে গিয়ে সাকিব একটি বিপদগ্রস্ত কুকুরছানাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু আয়নাল মিয়া কুকুরছানাটির প্রতি যত্ন করতে ও তাকে খেতে দিতে বিরক্তবােধ করে। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে কুকুরটিকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসতে। আয়নাল মিয়ার এই মানসিকতা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌয়ের মাঝে বিদ্যমান প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের সাকিবের মাঝে প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার দিকটি প্রকাশ পাওয়ায় সাকিবকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিরই ধারক বলা যায়।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মাঝে প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। রাস্তার একটি কুকুরকে তিনি অতিথির মর্যাদা দান করেন। একসময় কুকুরটির প্রতি তিনি মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন। কুকুরটির সঙ্গে অসুস্থ লেখকের কয়েকদিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে এক মমত্বের সম্পর্ক।

উদ্দীপকের সাকিবের মাঝেও আমরা প্রাণীর প্রতিসহানুভূতিশীল হওয়ার দিকটি লক্ষ করি। সে একদিন বিকেলবেলা ফুটবল খেলতে গিয়ে এক বিপদগ্রস্ত কুকুরছানাকে পরম যত্নে বাড়িতে নিয়ে আসে। একসময় কুকুরটিকে সে তার পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে।

উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, উদ্দীপকের সাকিব এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক উভয়ের মাঝেই আমরা প্রাণীর প্রতি মমত্ববােধের দিকটি দেখতে পাই। গল্পে লেখক যেমন একটি রাস্তার কুকুরকে অতিথির মর্যাদা দেন এবং মায়ায় জড়িয়ে পড়েন, তেমনি উদ্দীপকের সাকিবও বিপদগ্রস্ত কুকুরকে দেখে এক অজানা মায়ার জড়িয়ে পড়ে। উভয়ের মাঝে আমরা একই অনুভূতির প্রকাশ দেখতে পাই। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের সাকিব যেন ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিরই ধারক।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

প্রশ্ন ২। একদিন সিদ্ধার্থ নামে এক ব্যক্তি বিশাল অরণ্যে বসেছিলেন। এমন সময় একটি তীরবিদ্ধ বুনােহাঁস তার পায়ের কাছে এসে পড়ল। বুনােহাঁসটির ক্ষতস্থান থেকে দরদর করে রক্ত ঝরছিল। তা দেখে সিদ্ধার্থের মন করুণায় বিগলিত হলাে। তিনি পরমস্নেহে বুনাে হাঁসটির দেহ থেকে তীরটি খুলে গভীর সহানুভূতির সাথে তার পরিচর্যা করতে লাগলেন। পরে সুস্থ করে তিনি, হাঁসটিকে আকাশে উড়িয়ে দিলেন। 

ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম কী ছিল?

খ. চাকররা বাড়তি খাবারগুলাে মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী কেন?

গ. উদ্দীপকে ‘বুনােহাঁসটির প্রতি সিদ্ধার্থের সেবায় অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতির একই ধারায় উৎসারিত” – বিশ্লেষণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম ছিল ইউক্যালিপটাস।

খ। মালিনীর বয়স কম, দেখতে ভালাে হওয়ার কারণে চাকররা বাড়তি খাবারগুলাে মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অতিথি ছিল একটি কুকুর। বাড়ির অবশিষ্ট খাবার লেখকের অতিথি কুকুরকে দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও চাকররা তা করত না। চাকরদের দরদ মালিনীর প্রতি বেশি ছিল। কেননা, তার বয়স ছিল কম সে দেখতে ভালাে ছিল এবং খাওয়া সম্বন্ধে নির্বিকারচিত্ত। তাই চাকররা বাড়তি খাবারগুলাে মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী ছিল।

গ। উদ্দীপকে বুনােহাঁসের প্রতি সিদ্ধার্থের সেবায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি কুকুরের প্রতি লেখকের স্নেহপ্রীতি প্রকাশের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের কদিনের পরিচয়ে মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি লেখকের স্নেহপ্রীতির প্রকাশ নানাভাবে লক্ষ করা যায়। এমনকি দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় লেখক প্রাণীটির কথা ভেবে ব্যথিত হন।

উদ্দীপকে সিদ্ধার্থের মাঝে বুনােহাঁসের প্রতি ভালােবাসা লক্ষ্য করা যায় । বিশাল অরণ্যে অবস্থানকালে একটি তীরবিদ্ধ বুনােহাঁস দেখতে পেয়ে গভীর সহানুভূতির সাথে তার পরিচর্যা করে। এমনকি হাঁসটিকে সুস্থ করে আকাশে উড়িয়ে দেয়। যেমনটি দেখা যায়, আলােচ্য গল্পের লেখকের আচরণে। গল্পের কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বাড়িতে থাকতে দেন এবং অবশিষ্ট খাবার খেতে দেন। কুকুরটির প্রতি আন্তরিক ভালােবাসা ও মমতা অনুভব করেন। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রাণীর প্রতি লেখকের সহানুভূতির দিকটি উদ্দীপকের বুনােহাঁসের প্রতি সিদ্ধার্থের সেবার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। অবলা প্রাণীর প্রতি ভালােবাসার দিক থেকে উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতির এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।

অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের গভীর সম্পর্ক রচিত হয়েছে। লেখক দেওঘরে এসেছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। এখানে একটি পথের কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটিকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নেন। উদ্দীপকে বর্ণিত সিদ্ধার্থ অরণ্যে বসে থাকাকালে একটি তীরবিদ্ধ বুনােহাঁস দেখতে পায়। হাঁসটি ভীষণভাবে আহত ছিল। এ অবস্থায় সিদ্ধার্থের মাঝে হাঁসটিকে সেবা করার মনােবৃত্তি জেগে ওঠে। হাঁসটিকে পরম যত্নে সুস্থ করে তােলে এবং আকাশে উড়িয়ে দেয় পরমুহূর্তে। এভাবেই অবলা একটি প্রাণীর প্রতি সিদ্ধার্থের ভালােবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

উদ্দীপকে সিদ্ধার্থের অনভূতি এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই। কেননা, অবলা প্রাণীর প্রতি উভয়ের ভালােবাসা প্রকাশ পেয়েছে। ভালােবাসার তাগিদ থেকেই পথের কুকুরের সাথে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং খাবার খেতে দেন। উদ্দীপকের সিদ্ধার্থও আহত হাঁসের পরিচর্যা করে তাকে সুস্থ করে তােলেন। নিরীহ প্রাণীর প্রতি ভালােবাসা প্রকাশের দিক থেকে লেখক ও উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি অভিন্ন। কেননা, উভয়েই পরম প্রীতিতে প্রাণীর সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে তুলে। এসব দিক থেকে এ কথা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি আর অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।

প্রশ্ন ৩। পােষা টিয়া মিঠুকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় অমল। দুটি প্রাণীতে মম তার মাখামাখি । বিদ্যালয়ে গিয়েও মিঠুকে নিয়ে তার ভাবনার অন্ত নেই। বাড়ি এসে নিজ হাতে তাকে খাওয়ায়। মিঠুও তার কাঁধে বসে আনন্দে গেয়ে যায়। ই-টি-ই…।

ক. ‘বেরিবেরি’ কী?

খ. অতিথি কিছুতে ভেতরে ঢােকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের অমল এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।”- উক্তিটির যথার্থতা বিচার করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘বেরিবেরি’ শােথ জাতীয় রােগ, যাতে হাত-পা ফুলে যায় ।

খ। নতুন পরিচয়ের সংকোচ কাটাতে না পেরে অতিথি ভেতরে ঢােকার ভরসা পেল না ।

লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে পথ চলতে গিয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পথে লেখক প্রাণীটির সঙ্গে অনেক কথা বলেন, সেও লেজ নেড়ে নেড়ে জবাব দেয়। কিন্তু বাড়ি পৌছে গেট খুলে ভেতরে ডাকলে কুকুরটি দাঁড়িয়ে থাকে, ভেতরে ঢুকতে সাহস পায়। মূলত অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকেই তার সে সাহস হয় না।

গ| পােষা প্রাণীর সাথে মানুষের ভালােবাসার সম্পর্কের দিক দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।

মানুষ যদি অবলা প্রাণীকে ভালােবাসে এবং যত্ন করে তাহলে এ প্রাণীর কাছ থেকেও সে একই আচরণ পেতে পারে। বিভিন্ন কাজের সময় পােষা প্রাণী পাশে থেকে একজন মানুষের মতােই আনন্দ দেয়।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখক দেওঘরে বেড়াতে গেলে একটি কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এ প্রাণীটি যেমন লেখকের মনে আনন্দ দেয় তেমনি উদ্দীপকেও অমল একটি টিয়া পাখিকে যত্ন করে মনে নির্মল আনন্দ খুঁজে পায়। মিঠুর কাঁধের ওপর টিয়া পাখি বসে গানের সুর তােলে। এটি যেন ভালােবাসার প্রতিদান দেওয়ার উদাহরণ। একইভাবে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেজ নেড়ে কুকুরটি লেখকের সাথে ভাব বিনিময়ে করে। সুতরাং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মানুষ ও প্রাণীর মমত্ববােধের দিকটিই সাদৃশ্যপূর্ণভাবে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

ঘ। উদ্দীপকে অমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের জীবপ্রেম তাদের অভিন্ন মানবিক অনুভূতিকে প্রকাশ করে।

বাড়ির অবলা প্রাণী তুচ্ছ জীব হলেও এদের প্রতি মমত্ববােধের মন সবার থাকে না। উৎকৃষ্ট মননের একজন মানুষ এসব তুচ্ছ প্রাণীর মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নিতে পারে।

উদ্দীপকে অমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতির মধ্যে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানসিকতাই প্রকাশ পায়। আলােচ্য গল্পে দেখা যায়, লেখক অবলা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার মাঝে মনের আনন্দ খুঁজে পায়। এর মাধ্যমে সে আনন্দ ছাড়া অন্য কিছু খোঁজে না। একইভাবে পােষা প্রাণীর যত্ন নিতে গিয়ে অমলের ভাবনার অন্ত থাকে না। এটি তার নির্মল ভালােবাসারই প্রকাশ যাতে কোনাে প্রতিদানের প্রত্যাশা তার নেই। জীবের প্রতি নির্মল ভালােবাসার মানসিকতা থাকার কারণেই গল্পের লেখক ও উদ্দীপকের বিমলের আচরণে জীবপ্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের বিমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের জীবপ্রেম তাদের অনুভূতিকে অভিন্ন রূপে তুলে ধরেছে।

প্রশ্ন ৪। মিসেস নুরুন্নাহার একটি সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছােট পুত্রকে হারিয়ে, ইদানীং খুবই বিষগ্ন থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শে বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য তার বড় ছেলে তাকে কক্সবাজারে বেড়াতে নিয়ে আসে। মিসেস নুরুন্নাহার হােটেলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন জেলেদের মাছ ধরা দেখেন, সমুদ্রের বিশালতা, গাংচিল আর নানা বয়সী পর্যটকদের দেখে তার সময় কাটে।

ক. এক জোড়া বেনে-বৌ পাখি কোন গাছের ডালে বসত?

খ. অল্প বয়সী একদল মেয়েকে বেরিবেরির আসামি বলা হয়েছে কেনো?

গ. উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের সাথে অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের কোন দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল উপজীব্য নয়— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। এক জোড়া বেনে-বৌ পাখি ইউক্যালিপটাস গাছের ডালে বসত।

খ। ফুলে যাওয়া পা ঢাকার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখে বেরিবেরি রােগে আক্রান্ত একদল মেয়েকে লেখক ‘বেরিবেরির আসামি’ বলেছেন।

বেরিবেরি হলাে শােথ জাতীয় রােগ। এ রােগ হলে হাত-পা ফুলে যায়। লেখকের বাড়ির সামনে দিয়ে বেরিবেরিতে আক্রান্ত একদল অল্পবয়সী মেয়ে যাতায়াত করত। ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে গরমের দিনেও তারা আঁটসাট করে মােজা পড়ত। তাদের এমন দুর্দশার কথা বােঝাতেই আলােচ্য গল্পে তাদের ‘বেরিবেরির আসামি’ বলা হয়েছে।

গ। ডাক্তারের পরামর্শে হাওয়া বদল করতে আসার দিক থেকে উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য রয়েছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের দেওঘর ভ্রমণকালীন এক কুকুরের সাথে তার সখ্যতার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। গল্পে ডাক্তারের পরামর্শে সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে লেখক দেওঘরে যান এবং সেখানে অবস্থান করেন। আলােচ্য উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের ভ্রমণও ডাক্তারের পরামর্শ মতােই হয়েছিল। উদ্দীপনে মিসেস নুরুন্নাহার এক বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন হন। তার চোখের সামনে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছােট ছেলের মৃত্যু হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান তিনি। অকালে স্বামী ও পুত্র হারানাের শােক কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না তিনি। আর তাই মন ভালাে করতে ডাক্তারের পরামর্শ মতাে তার বড় ছেলে তাকে কক্সবাজার নিয়ে আসে। একইভাবে আলােচ্য গল্পের লেখকও সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই দেওঘরে, বেড়াতে আসেন। এদিক থেকে উদ্দীপকের নুরুন্নাহারের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের ভ্রমণের সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর একটি প্রাণীর প্রতি লেখকের গভীর মমত্ব ও সহানুভূতির পরিচয় ফুটে উঠেছে।

আলােচ্য গল্পের লেখক সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে দেওঘর এসেছিলেন। একদিন বাড়ি ফেরার পথে একটি কুকুরের সান্নিধ্যে এসে কুকুরটি সাথে সখ্য গড়ে ওঠে তার। কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদা দেন এবং নানাভাবে যত্ন করেন। প্রতিদানে কুকুরটিও তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। তাই বাড়ি ফেরার সময় কুকুরটিকে ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় দগ্ধ হন লেখক।

উদ্দীপকে মিসেস নুরুন্নাহারের জীবনের এক দুঃখময় ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে। চোখের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছােট ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাক্তার তাকে ঘুরে আসার পরামর্শ দেন। এ কারণে বড় ছেলের সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন তিনি। কিন্তু সেখানেও তার বেদনাবিধুর মন সারাক্ষণ উদাসীন থাকে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি লেখকের সঙ্গে অতিথি কুকুরটির সম্পর্ককে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। সেখানে কুকুরটির প্রতি লেখকের মমত্ববােধ ও সহানুভূতিশীলতাই প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে এ ধরনের কোনাে অনুভূতির বর্ণনা নেই। সেখানে মিসেস নুরুন্নাহারের স্বামী ও পুত্র হারানাে দুঃখময় ঘটনার কথাই বর্ণিত হয়েছে, যা আলােচ্য গল্পের ঘটনা থেকে অনেকটাই আলাদা। সেদিক বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

প্রশ্ন ৫। আসমা কয়েকটি হাঁস কিনে বাড়িতে নিয়ে আসে। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁসগুলাের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন সকালে সে দেখে হাঁসগুলাে ঘরের মধ্যে মরে আছে। তা দেখে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং পাগলের মতাে হয়ে যায়।

ক. সবচেয়ে ভােরে ওঠে কোন পাখি?

খ. লেখক কেন বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পেলেন?

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য নিরূপণ করাে।

ঘ. উদ্দীপকের আসমা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের ভাবগত সাদৃশ্য থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। সবচেয়ে ভােরে ওঠে দোয়েল পাখি।

খ। অতিথির প্রতি মমতার টান সৃষ্টি হওয়ায় লেখক তাকে ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

চিকিৎসকের কথামতাে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে এসে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটিকে তিনি অতিথি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কুকুরটি হয়ে উঠেছিল তার একাকী জীবনের সঙ্গী। ফলে সেখান থেকে চলে আসার সময় কুকুরটিকে ছেড়ে আসতে লেখক কষ্ট অনুভব করছিলেন। আর তাই ট্রেন ছেড়ে দিলেও লেখক বাড়ি ফেরার আগ্রহ মনের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

গ। উদ্দীপকের প্রাণীর প্রতি ভালােবাসা প্রদর্শনের দিকটির সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কথক বিকেলবেলা বাইরে হাঁটতে বের হলে ফিরে আসার পথে একটি কুকুর তার পিছু নেয়। কথক তাকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে এনে খাবার খেতে দেন। এরপর থেকে কথক বাইরে গেলে প্রতিদিনই কুকুরটি তাঁর সঙ্গী হয়। এমনকি কথুকের বিদায়বেলাতেও কুকুরটি তাঁর সঙ্গে স্টেশনে আসে। কথকও মমতার সঙ্গে তার এই স্মৃতি রােমন্থন করেন এবং অতিথির প্রতি তার প্রবল স্নেহ প্রকাশ পায়। উদ্দীপকের আসমা কয়েকটি হাঁস কিনে আনে। সে হাঁসগুলােকে খুব ভালােবাসে। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁসগুলাের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু একদিন সকালে হাঁসগুলাের মরে পড়ে থাকা দেখে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার আদরের হাঁসগুলাের মরে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে না। তাই বলা যায়, পােষা প্রাণীর প্রতি ভালােবাসা প্রদর্শনের দিকটি উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি অবহেলিত প্রাণীর প্রতি কথকের

মমতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, যা উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে

সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

ঘ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বায়ু পরিবর্তন করতে এসে কথকের সঙ্গে হঠাৎ করেই একটি কুকুরের দেখা হয়। অতিথি হিসেবে কুকুরটিকে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন। চাকরকে বলে তাকে খাবার দেওয়া ও তার প্রতি লক্ষ রাখার মাধ্যমে কথকের সঙ্গে অতিথির একটা সখ্য গড়ে ওঠে। বিদায়বেলায় সবার মতাে অতিথি কুকুরটিও কথককে বিদায় জানাতে আসে। আর এই স্মৃতিগুলােই পরবর্তীতে কথকের মনে কাতরতা সৃষ্টি করে।

উদ্দীপকে আসমার মধ্যেও কথকের মতাে পােষা প্রাণীর প্রতি ভালােবাসার পরিচয় পাওয়া যায়। সে কয়েকটি হাঁস কিনে আনে পােষার জন্য। অল্প দিনের মধ্যেই তাদের প্রতি তার অকৃত্রিম মমতা সৃষ্টি হয় । কিন্তু একদিন সকালে সে দেখতে পায় হাঁসগুলাে মরে পড়ে আছে। এই শশাকে আসমা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারণ হাঁসগুলােকে সে সত্যিই ভালােবেসেছিল।

উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয় পর্যালােচনা করে বলা যায়, উদ্দীপকের আসমা গল্পের কথকের মতােই প্রাণীর প্রতি স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তবে কথক দেওঘর ঘুরতে এসে অবহেলিত এক কুকুরের সাথে সখ্য গড়ে তােলেন যেখানে উদ্দীপকের পােষ্য প্রাণী ছিল কয়েকটি হাঁস। অতিথির প্রতি গল্পকথকের সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে ভালােবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আর হাঁসগুলাের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আসমার। কথকের বিদায়ের দিন কুকুরটিও স্টেশনে আসে তাঁকে বিদায় জানাতে, কিন্তু আসমার হাঁসগুলাে মারা যায়। 

সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীর প্রতি স্নেহের দিকটি প্রকাশ পেলেও প্রেক্ষাপটটি ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রশ্ন ৬। একদিন কক্সবাজার সৈকতে আছড়ে পড়ে প্রায় ত্রিশটির মতাে বিরল প্রজাতির ডলফিন। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা মিলে ডলফিনগুলােকে পুনরায় সমুদ্রে নামানাের চেষ্টা করে। একে একে সবগুলাে ডলফিনকে তারা জীবিত অবস্থায় পানিতে নামাতে পারে। এ কাজটি করতে পেরে ওরা প্রত্যেকেই খুব আনন্দিত এবং এলাকাবাসীর কাছেও প্রশংসিত হয়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের এমন ভালাে কাজের জন্য পুরস্কৃত করে।

ক. লেখকের বিকেলটা কোথায় কাটত?

খ. বিদায় নেবার দিন এসে পড়লেও নানা ছলে লেখক দিন-দুই অপেক্ষা করলেন কেন?

গ. উদ্দীপকের আব্দুর রহমান এবং তার বন্ধুদের কার্যক্রমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকটিতে চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও পরিণতির ভিন্নতা লক্ষণীয়।”- মন্তব্যটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলােকে মূল্যায়ন করাে।

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। লেখকের বিকেলটা কাটত গেটের বাইরে পথের ধারে বসে।

খ। অতিথির প্রতি মমতার টান কাটাতে না পেরে লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে দিন-দুই অপেক্ষা করেন।

চিকিৎসকের পরামর্শ বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়ে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটিকে তিনি অতিথি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কুকুরটির সঙ্গে তাঁর ভালাে একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে চলে আসার সময় হলেও লেখক প্রাণীটিকে ছেড়ে আসতে কষ্ট অনুভব করছিলেন। এজন্যই দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা ছলে লেখক দিন-দুই অপেক্ষা করেন।

গ। উদ্দীপকের আব্দুর রহমান এবং তার বন্ধুদের কার্যক্রমে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীদের প্রতি মানুষের মমত্ববােধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক অসুস্থ হয়ে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে বেড়াতে যান। সেখানে বেড়ানাের সময় একটি কুকুর লেখকের পেছন পেছন চলতে থাকে। বাড়ি নিয়ে গিয়ে লেখক কুকুরটিকে খেতে দেন এবং সব সময় খোঁজখবর নেন। লেখক এখানে দেখিয়েছেন মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

উদ্দীপকে কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক ডলফিনের প্রতি মমত্ববােধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতে প্রায় ত্রিশটি ডলফিন আছড়ে পড়ে। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা মিলে সেগুলােকে সমুদ্রে নামিয়ে দেয়। এই কাজটি করতে পেরে তারা খুব খুশি হয় এবং এলাকাবাসীও তাদের প্রশংসা করে। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের এমন ভালাে কাজের জন্য পুরস্কৃত করে। উদ্দীপকে প্রাণীদের প্রতি আব্দুর রহমান তার বন্ধুদের মমত্ববােধ প্রকাশিত হয়েছে। অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও একটি কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববােধ প্রকাশিত হয়েছে।

সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের কার্যক্রমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীদের প্রতি মমত্ববােধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ। অতিথির স্মৃতি’ গল্প ও উদ্দীপকে প্রাণীদের প্রতি মমত্ববােধের চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও উভয় রচনার মধ্যে পরিণতির ভিন্নতা আছে।

“অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাথে কিছুদিনের পরিচয়ে একটি কুকুরের মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক তার ভ্রমণসঙ্গী করে নেয় কুকুরটিকে। এমনকি তার খাওয়ার বন্দোবস্তও করেন। কিন্তু বাড়ির মালি-বৌ কুকুরটিকে খেতে না দিয়ে নিজেই সব খাবার নিয়ে যায় এবং কুকুরটিকে তাড়িয়ে দেয়। কুকুরটির প্রতি মমতা থাকলেও লেখককে একদিন কুকুরটিকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। কিছু মানুষ জীবের প্রতি মমতায় সিক্ত হতে পারে। আবার কিছু মানুষ নির্মমও হতে পারে। এই বিষয়টিই আলােচ্য গল্পে প্রকাশ করা হয়েছে।

উদ্দীপকে দেখানাে হয়েছে ত্রিশটি বিরল প্রজাতির ডলফিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়েছে। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা ডলফিনগুলােকে পুনরায় সমুদ্রে নামিয়ে দেয়। এ কাজটি করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত হয়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদেরকে পুরস্কৃত করেন।

উদ্দীপকের আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের কার্যক্রমে কেবল প্রাণীদের প্রতি মমত্ববােধই প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি তাদের কাজের জন্য তারা পুরস্কৃতও হয়। কিন্তু অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কুকুরটিকে বাড়ির চাকর ও মালিনী কর্তৃক অবহেলিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে কুকরিটির একমাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী লেখকও জীবনের প্রয়ােজনে কুকুরটিকে ফেলে চলে যান। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও পরিণতির ভিন্নতা লক্ষণীয়।

প্রশ্ন ৭। লােপা কবুতর খুব ভালােবাসে। তার দুটো কবুতর আছে। একটির নাম হীরা, অন্যটির নাম মানিক। হীরা-মানিক বলে ডাকলেই উড়ে এসে লােপার মাথায় বসে বাক-বাকুম’ শব্দ করে। নিজের হাতে ওদের খাইয়ে দেয় লােপা। লােপার মা বলে,  “কবুতর নিয়ে এত বাড়াবাড়ি আমার ভালাে লাগে না।” মার কথা শুনে চুপ করে থাকে লােপা।

ক. পাণ্ডুর’ শব্দের অর্থ কী?

খ. লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখাে। 

গ. উদ্দীপকের লােপার মধ্যে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই।” উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।

৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘পাণ্ডুর’ শব্দের অর্থ— ফ্যাকাশে।

খ। লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক রােগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা করেও কোনােরকম সুস্থতা বােধ করছিলেন না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে গিয়েছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। কেননা আবহাওয়া শরীর ও মনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক প্রশান্তি ও রােগমুক্তির জন্য লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন।

গ| ভিন্ন প্রাণীর প্রতি মমত্ববােধের দিক থেকে উদ্দীপকের লােপার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকের চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়।

মানুষ স্বভাবতই প্রকৃতিপরায়ণ। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষে মানুষে যেমন প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনি প্রকৃতির ভিন্ন জীবের প্রতিও মানুষের স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। এমন বাস্তব চিত্র দেখা যায়, উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে।

উদ্দীপকের লােপা প্রকৃতি জগতের ভিন্ন প্রাণীকে ভালােবাসে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকও ভিন্ন প্রাণীকে ভালােবাসেন। লােপা কবুতরকে খুব ভালােবাসে। হীরা ও মানিক নামের দুটো কবুতরকে সে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। তার পােষা কবুতর দুটিকে নাম ধরে ডাকলেই তারা তার মাথায় বসে বাক-বাকুম শব্দ করে। লােপার খুব ভালাে লাগে। কিন্তু লােপার মা এসব পছন্দ না করলেও লােপা নীরবেই কবুতরগুলােকে ভালােবেসে যায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও দেখি, কথকের সঙ্গে একটি কুকুরের খুব ভাব হয়। কুকুরটি প্রতিদিন বিকেলবেলায় তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়। কথকও কুকুরটিকে নিজ বাসায় নিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেন। যদিও বাসায় চাকরচাকরানিরা তা পছন্দ করে না। তবুও কথক কুকুরটির সঙ্গ ত্যাগ করেন না। কুকুরটিও গল্প কথককে ভুলতে পারে না। মানুষ ছাড়াও ভিন্ন প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম মমত্বের সম্পর্কের কারণে উদ্দীপকের লােপার মধ্যে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকের চরিত্রটি সার্থকভাবে খুঁজে পাওয়া যায়।

ঘ। প্রকৃতি জগতের ভিন্ন জীবের প্রতি মানুষের স্নেহ-প্রীতি ও সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব সমভাবে প্রবাহিত।

প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। মানুষ প্রকৃতির গাছপালাকে ভালােবাসে। প্রকৃতির ভিন্ন জগতের জীবকেও ভালােবাসে, পােষ মানায়। কোনাে কারণে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে বেদনাবােধ করে। এমন চেতনার প্রকাশ দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে।

উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব ভিন্ন প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম দরদ ও ভালােবাসা। উদ্দীপকের লােপা দুটি কবুতর পােষে। হীরা ও মানিক নামের কবুতর দুটিকে সে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। কবুতর দুটিকে সে প্রাণ দিয়ে ভালােবাসে। তার মা এতে বিরক্তি প্রকাশ করলেও সে ভিন্ন জাতের প্রাণীকে নীরবে ভালােবেসে যায়। উদ্দীপকের গল্পকথকও প্রকৃতিজগতের ভিন্ন প্রাণীর প্রতি পরম স্নেহগত প্রাণ। দেওঘরে থাকাকালে একটি কুকুরের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটি প্রতিদিন বিকেলে তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়। তিনিও কুকুরটিকে ভালােবেসে নিজ বাসায় নিয়ে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেন। যদিও বাসার চাকর-ভৃত্যরা তা পছন্দ করত না। তারা কুকুরটিকে মেরে তাড়িয়ে দিলেও প্রতিদিন কথককে সঙ্গ দিতে আসত। কথক দেওঘর থেকে নেওয়ার সময় কুকুরটির বিচ্ছেদ বেদনায় কাতর হন। ভিন্নপ্রাণীর প্রতি স্নেহ-মমতার ধরন ও প্রেক্ষাপট লাদা হলেও উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দুটি পােষা কবুতর ও একটি অতিথি প্রাণী কুকুরের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম দরদ প্রকাশ পেয়েছে। তাই বিষয় আঙ্গিক ভিন্ন হলেও বলা যায়, প্রকৃতিজগতের ভিন্ন পাখি ও পশুর প্রতি মানুষের মমত্ববােধই উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব। এদিক বিবেচনার প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি যথার্থ।

Leave a Comment