প্রশ্ন ১। কে সমাজকর্মকে কলা, বিজ্ঞান ও পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন?
উত্তরঃ রেক্স এ. স্কিডমাের ও মিল্টন জি, থ্যাকারি সমাজকর্মকে কলা বিজ্ঞান ও পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রশ্ন ২। সক্ষমকারী প্রক্রিয়া কী?
উত্তরঃ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সমস্যা মােকাবিলায় দক্ষ করে তােলার প্রক্রিয়াকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয় ।
প্রশ্ন ৩। সমাজকর্ম কী?
উত্তরঃ সমাজকর্ম হচ্ছে সমস্যা সমাধানের আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন ৪। সমাজকর্মকে কোন ধরনের বিজ্ঞান বলা হয়?
উত্তরঃ সমাজকর্মকে অনুশীলনধর্মী সামাজিক বিজ্ঞান বলা হয় ।
প্রশ্ন ৫। সমাজকর্মের সবেচেয়ে গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞাটি কে প্রদান করেছেন?
উত্তরঃ সমাজকর্মের সবচেয়ে গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার।
প্রশ্ন ৬। সমাজকর্ম প্রত্যয়টির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তরঃ সমাজকর্ম প্রত্যয়টির ইংরেজি প্রতিশব্দ Social Work.
প্রশ্ন ৭। সমাজকর্ম কী ধরনের পেশা?
উত্তরঃ সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নির্ভর একটি সাহায্যকারী পেশা।
প্রশ্ন ৮। সমাজকর্ম ধারণার ওপর একজন সমাজবিজ্ঞানী প্রদত্ত সংজ্ঞা লিখ।
উত্তরঃ ডব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্মের সংজ্ঞায় বলেন, ‘সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক দক্ষতাসম্পন্ন এমন একটি পেশাদার সেবাকর্ম যা ব্যক্তিকে একক বা দলীয়ভাবে সামাজিক ও ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি ও স্বাধীনতা লাভে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৯। সামাজিক কার্যক্রম কী?
উত্তরঃ সামাজিক কার্যক্রম হলাে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার জন্য সুসংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টা।
প্রশ্ন ১০। Introduction to Social Welfare গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তরঃ Introduction to social Welfare গ্রন্থটির লেখক ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার।
প্রশ্ন ১১। W.A. Friedlander রচিত গ্রন্থের নাম কী?
উত্তরঃ W.A. Friedlander এর রচিত গ্রন্থের নাম হলাে ‘Introduction to Social Welfare’।
প্রশ্ন ১২। কোন বিপ্লবের ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী শহরায়ন ও নগরায়ণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে?
উত্তরঃ শিল্প বিপ্লবের ফলস্বরূপ বিশ্বব্যাপী শহরায়ন ও নগরায়ণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্ন ১৩। সমাজকল্যাণের সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোনটি?
উত্তরঃ সমাজকল্যাণের সমস্যা সমাধানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হলাে সমাজকর্ম।
প্রশ্ন ১৪। সক্ষমকারী প্রক্রিয়া কোনটি?
উত্তরঃ সমাজকর্মকে সক্ষমকারী প্রক্রিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন ১৫। সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতি তিনটি। এগুলাে হলাে—ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি সমাজকর্ম।
প্রশ্ন ১৬। IFSw-এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তরঃ IFSW-এর পূর্ণরূপ— International Federation of Social Workers.
প্রশ্ন ১৭। NASW এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তরঃ NASW এর পূর্ণরূপ— National Association of Social Workers.
প্রশ্ন ১। সমাজকর্ম শিক্ষার কয়টি অংশ ও কী কী?
উত্তরঃ সমাজকর্ম শিক্ষার ৩টি অংশ রয়েছে।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সমাজকর্ম শিক্ষার এই শ্রেণি বিভাগ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমটি হলাে তত্ত্বীয় জ্ঞান। দ্বিতীয়টি হলাে অনুকল্প নির্ভর জ্ঞান যা পরবর্তীতে তাত্ত্বিক জ্ঞানে পরিণত হয়। তৃতীয়টি হলাে অনুমান নির্ভর জ্ঞান এ জ্ঞান প্রথমে অনুকল্প নির্ভর জ্ঞান এবং পরে তাত্ত্বিক জ্ঞানে পরিণত হয়।
প্রশ্ন ২। পেশাদার সমাজকর্মীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ সামাজিক সমস্যা সমাধানে একজন পেশাদার সমাজকর্মীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাজকর্ম সংঘের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে পেশাদার সমাজকর্মীদের তিনটি মৌলিক ভূমিকা পালনের কথা বলা হয়। মানবিক ও গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে মানবজাতির কল্যাণ সাধন করা এর অন্যতম। এছাড়া সমাজকর্মের পেশাগত জ্ঞানের বাস্তবায়ন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সব স্তরের মানুষের উন্নয়ন সাধনের জন্য সম্পদের সদ্ব্যবহারের নিশ্চয়তা বিধান করাও পেশাদার সমাজকর্মীর ভূমিকার মধ্যে পড়ে।
প্রশ্ন ৩। সমাজকর্ম পেশার লক্ষ্য কী?
উত্তরঃ সমাজকর্ম পেশায় লক্ষ্য হলাে সমাজজীবনের জটিল সমস্যা দূর করে কাঙ্ক্ষিত ও গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
সমাজকর্ম সমাজের সব মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এছাড়া মানুষের সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সমাজকর্ম বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে। জনগণের মধ্যে তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে।
প্রশ্ন ৪। সমাজের অসহায় মানুষকে সমাজকর্ম কেন সাহায্য করে?
উত্তরঃ অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থ-মনাে-সামাজিক সমস্যার সমাধান এবং তাদেরকে উন্নয়নের স্রোতধারায় যুক্ত করতে সমাজকর্ম সাহায্য করে।
সমাজ বা রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া জনগােষ্ঠীর উন্নয়নে এ পেশার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কেননা রাষ্ট্রের একটি বড় অংশ যদি নানামুখী সমস্যায় বিপর্যস্ত থাকে তবে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সমাজকর্ম নিজস্ব পদ্ধতি ও কৌশল অনুসরণের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য সাহায্য প্রক্রিয়া চালায় ।
প্রশ্ন ৫। সমাজকর্মের ২টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখপূর্বক সংক্ষেপে আলােচনা কর।
উত্তরঃ সমাজকর্মের দুইটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলাে সামাজিক ভূমিকার উন্নয়ন এবং জনকল্যাণ।
আর্থ-সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিকসহ বহুমুখী সমস্যার কারণে মানুষ নিজ নিজ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। সমাজকর্ম বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়ােগ করে তার উন্নয়ন সাধন করে। নানা পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়ােগে সমাজকর্ম মূলত জনকল্যাণে কাজ করে। আর্তপীড়িতের সহায়তা চিকিৎসা সেবা, অপরাধী সেবা, মাদকাসক্তি সেবা সমাজকর্মের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রশ্ন ৬। সমাজকর্ম কীভাবে মানুষকে সাহায্য করে?
উত্তরঃ সমাজকর্ম নিজস্ব পদ্ধতি ও কৌশলের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে নিজের সমস্যা মােকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠতে সাহায্য করে।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে স্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে। পেশাগত কাঠামাের মধ্যে থেকে সমাজকর্ম এভাবেই সমস্যা সমাধান মানুষকে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৭। ‘পদৈত্য’ বলতে কী বােঝ?
উত্তরঃ পদৈত্য বলতে ১৯৪২ সালে পেশকৃত বিভারিজ রিপাের্টে উল্লিখিত পাঁচটি সমস্যা- অভাব, রােগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে বােঝায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধজনিত আর্থ-সামাজিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা মােকাবিলার লক্ষ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ স্যার উইলিয়াম বিভারিজ একটি সামাজিক নিরাপত্তা রিপোর্ট পেশ করেন। এই রিপাের্টে তিনি পাঁচটি সমস্যা চিহ্নিত করেন। তৎকালীন দারিদ্র্যপীড়িত ইংল্যান্ডের সমাজজীবনকে এই পাঁচটি সমস্যা অক্টোপাসের মতাে আঁকড়ে রেখেছিল। এই সমস্যাগুলােই পদৈত্য নামে পরিচিতি পায়।
প্রশ্ন ৮। সমাজকর্মের একটি লক্ষ্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলাে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা।
সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া। এটি সাহায্যার্থী তথা ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে। সেই সাথে দৈহিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে সাহায্যার্থীকে মঙ্গলজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে সর্বতােভাবে সহায়তা করে। অর্থাৎ সমাজকর্মের মূল লক্ষ্যই হলাে মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন। আর এ লক্ষ্য অর্জন করতে সমাজকর্ম নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।
প্রশ্ন ৯। সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য প্রদান করে বলে সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয় ।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মােকাবিলা করতে সক্ষম হয়। পেশাগত কাঠামাের মধ্যে থেকে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে এরূপ সহায়তা দিয়ে থাকে। এজন্যই এটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে পরিচিত।
প্রশ্ন ১০। ‘সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান’- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ সমাজকর্ম হচ্ছে সমস্যা সমাধানের আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সেবামূলক ব্যবহারিক বিজ্ঞান।
সমাজকর্ম মানুষকে মনাে-সামাজিক ভূমিকা পালনে একটি কার্যকর পর্যায়ে উপনীত করে সেইসাথে এটি মানুষের কল্যাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থবহ সামাজিক পরিবর্তন আনয়নে সহায়তা করে। সমাজকর্ম মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়ােগিক জ্ঞান, কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়ােগ করে। ফলে সমাজকর্মকে ব্যবহারিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রশ্ন ১১। সমাজকর্ম বলতে কী বােঝ?
উত্তরঃ বিষয় হিসেবে সামাজিক বিজ্ঞানের একটি ফলিত রূপ হচ্ছে সমাজকর্ম।
সমাজকর্ম হচ্ছে পেশাদার ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত বিজ্ঞান ও কলাভিত্তিক এমন একটি সাহায্যকারী পেশা যা সমাজস্থ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির নিজস্ব সম্পদ ও অন্তর্নিহিত শক্তিকে ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে স্বাবলম্বী করে তােলার প্রচেষ্টা চালায়। সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির সাহায্যে সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন।
প্রশ্ন ১২। ‘সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলাে সামাজিক সচেতনতা’-ব্যাখ্যা করাে।
উত্তরঃ সামাজিক সচেতনতা সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মানুষের অজ্ঞতা, নিরক্ষরতা, অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব সামাজিক উন্নয়নে বড় বাধা। সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন সাধিত হয়। কিন্তু জনগণ অসচেতন হলে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপক সমস্যা হয়। তাই, সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলাে সামাজিক সচেতনতা।
প্রশ্ন ১৩। সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী?
উত্তরঃ বর্তমান জটিল ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বহুমুখী আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধান এবং সামাজিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্য সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজন রয়েছে।
সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিল সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরােধ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়ােজন বিশেষ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যােগ্যতাসম্পন্ন সমাজকর্মী। পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন সমাজকর্মী ছাড়া বর্তমান সমাজের জটিল সমস্যার সমাধান আশা করা যায় না। তাই পেশাগত সমাজকর্মী তৈরির মাধ্যমে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।
প্রশ্ন ১৪। সমাজকর্মের গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা লিখ।
উত্তরঃ সমাজকর্মের একটি সর্বজনীন গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে International Federation of Social Workers (IFSW) সংজ্ঞাটিতে বলা হয়, সমাজকর্ম হলাে একটি অনুশীলনধর্মী পেশা ও একাডেমিক বিষয় যা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন, সামাজিক সংযােগ এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা লাভে সচেষ্ট। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, যৌথ দায়িত্ব এবং বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নীতি সমাজকর্মের কেন্দ্রীয় বিষয়।
প্রশ্ন ১৫। ডব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্মকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন?
উত্তরঃ ডব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্মকে বৈজ্ঞানিকভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
জার্মান আইনজ্ঞ ও শিক্ষক ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার সমাজকর্মকে মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতা ভিত্তিক পেশাদার সেবাকর্ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে এ পেশা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এককভাবে বা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ১৬। সামাজিক নীতি কী?
উত্তরঃ সামাজিক নীতি (Social Policy) হলাে সেসব প্রতিষ্ঠিত আইন, প্রশাসনিক বিধান ও সংস্থা পরিচালনার মূলনীতি, কার্যপ্রক্রিয়া ও কার্যসম্পাদনের উপায় যা জনগণের সামাজিক কল্যাণকে প্রভাবিত করে।
সরকার বা এর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান জনগণের সেবা ও উপার্জনের সুযােগ-সুবিধা সৃষ্টির জন্য যে কর্মপন্থা গ্রহণ করে সেগুলােকে সামাজিক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এগুলাের মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সর্বাধিক আর্থ-সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিরসনে সামাজিক নীতিগুলাে আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন- শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যনীতি, জনসংখ্যানীতি ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৭। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সমস্যা মােকাবিলায় সমাজকর্মের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ পরিবর্তনশীল বিশ্বে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা মােকাবিলায় সমাজকর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।
শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ব্যাপক প্রভাবের ফলে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সবক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট পারিবারিক ভাঙন, সামাজিক সম্পর্কের শিথিলতা, মূল্যবােধের অবক্ষয়, আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি সমাজকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বের এসব সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক ও প্রক্রিয়াভিত্তিক সেবা ব্যবস্থা হিসেবে সমাজকর্ম ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন ১৮। আত্মকর্মসংস্থান বলতে কী বােঝ?
উত্তরঃ আত্মকর্মসংস্থান বা Self-employment বলতে নিজের উপার্জনের ব্যবস্থা নিজেই করাকে বােঝায়।
ব্যাপক অর্থে আত্মকর্মসংস্থান বলতে জীবিকা অর্জনে প্রচলিত কোনাে পদ্ধতি অবলম্বন না করে স্ব-উদ্যোগে কর্মের সৃষ্টি করাকে বােঝায়। এক্ষেত্রে বিশেষ জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ অর্জনের প্রয়ােজন হয়। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলােতে বেকারত্ব দূর করায় এটি খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে। হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, নার্সারি ও সামাজিক বনায়ন, যন্ত্রপাতি মেরামতের দোকান দেওয়া প্রভৃতি আত্মকর্মসংস্থানের উদাহরণ।
প্রশ্ন ১৯। সমস্যার স্থায়ী সমাধান বলতে কী বােঝ?
উত্তরঃ সমস্যার স্থায়ী সমাধান বলতে সমস্যার কার্যকরী সমাধানকে বােঝায়।
সমাজকর্ম যে কোনাে সমস্যার সাময়িক সমাধানে বিশ্বাস করে না। তাই যে কোনাে আর্থ-মনাে-সামাজিক সমস্যার কার্যকরি সমাধানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজকর্ম ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা এমনভাবে সহায়তা করে যাতে সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে সমাধান হয়। এর ফলে সমস্যাটির পুনরায় উদ্ভব ঘটে না।
প্রশ্ন ২০। সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয় কেন?
উত্তরঃ ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে বলে সমাজকর্মকে সাহায্যকারী পেশা বলা হয় ।
সমাজকর্ম বর্তমান বিশ্বে একটি মানবসেবামূলক সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে এমনভাবে সহায়তা করে যেন তারা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মােকাবিলা করতে সক্ষম হয়। পেশাগত কাঠামাের মধ্যে থেকে সমাজকর্ম সমস্যা সমাধানে ধরনের সহায়তা দেয়। এজন্যই এটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে পরিচিত।