স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর       

প্রশ্ন ১। বাংলাদেশের শাসনকাল ১৯৭২ হতে ১৯৭৫ সাল অনুসারে একটি তথ্যচিত্রে দেখানাে হয়েছে, শাসকপ্রধান জনাব ‘ক’ তার সময়টিতে প্রথমত একটি দলিল প্রণয়নে মনােনিবেশ করেন। এর যেকোনাে ধারা লঙ্ঘন করা অপরাধ। দ্বিতীয়ত তিনি দেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে একটি দল গঠন করেন। তৃতীয়ত তিনি দেশের জন্য একটি নীতি প্রণয়ন করেন যার ফলে অনেক দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

ক. মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

খ. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ কীভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনেছে? ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে তথ্যচিত্রে প্রথমত উক্ত শাসন আমলের কোন কাজের ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকে জনাব ক-এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদক্ষেপ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য যথার্থ ছিল”- তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সঠিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশি-বিদেশি জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করা।

খ। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়নের ফলে বিভিন্নভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। সৃজনশীল পদ্ধতির মূল্যায়ন ব্যবস্থা, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি এ শিক্ষানীতির বৈশিষ্ট্য। এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়েছে, ভর্তি ও পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সফলতা পেয়েছে, যা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রগতিশীল ও যুগােপযােগী করে তুলেছে। এভাবেই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সূচিত করেছে।

গ। উদ্দীপকের তথ্যচিত্রে প্রথমত যে কাজের ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলাে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন।

পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে গড়ে তুলতে মনােনিবেশ করেন। দেশে ফেরার পরদিন অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম সংবিধান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। এ আদেশের ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠিত হয় এবং ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে দ্রুততম সময়ে সংবিধান রচিত হয়। সংবিধান হলাে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, যা সারাদেশে সবার জন্য সমভাবে প্রযােজ্য। সংবিধানের যেকোনাে ধারা লক্ষ্মন করলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, ১৯৭২ হতে ১৯৭৫, শাসনামলের প্রথমেই প্রধান শাসক জনাব ‘ক’ একটি দলিল প্রণয়নে মনােনিবেশ করেন যার যে কোনাে ধারা লঙ্ঘন করা অপরাধ। ইঙ্গিতপূর্ণ ‘ক’ শাসক কার্যত ১৯৭২-১৯৭৫ সময়ের প্রধান শাসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই এদেশের সর্বোচ্চ দলিল তথা সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। বাংলাদেশের সংবিধান এদেশের সর্বোচ্চ আইনি দলিল। আর এভাবেই উল্লিখিত শাসনামলে জনাব ‘ক’-এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিফলন ঘটিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাসকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শুরুতে প্রথমত যে কাজের ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলাে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন।

ঘ। হ্যা, উদ্দীপকে জনাব ‘ক’ এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদক্ষেপ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য যথার্থ ছিল- প্রশ্নের মন্তব্যটির সাথে আমি একমত।

উদ্দীপকের তথ্যচিত্রে জনাব ‘ক’ এর উল্লিখিত শাসনামলের দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলকে চিহ্নিত করা য়েছে। ইঙ্গিতপূর্ণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি ও, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং বন্যায় দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্যোৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। এছাড়া আরও বিভিন্ন কারণ যেমন- দুর্নীতি, মজুদদারি প্রভৃতি কারণে এদেশের মানুষ দারুণভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। বঙ্গবন্ধুরমসরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও শােষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করে। দ্বিতীয় বিপ্লব খ্যাত এ উদ্যোগ গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গৃহীত হয়েছিল। আবার, আলােচ্য তৃতীয় পদক্ষেপটিও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য যথার্থ ছিল। বঙ্গবন্ধু বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলভাবে’ধরে রাখতে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়” ঘােষণা করেন, ফলে স্বল্প

সময়ের মধ্যে ১৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে দেয়। সােভিয়েত ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করাসহ নানাভাবে সহযােগিতার হাত সম্প্রসারণ করে। অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশও খাদ্যদ্রব্য ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসে যা সদ্য স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখে। এভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি সদ্য স্বাধীন দেশকে বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মাঝেও এগিয়ে নিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য। সেই সময়ের দাবি ছিল। আর তাই উক্ত পদক্ষেপদ্বয় যথার্থ ছিল এবং এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যের সাথে আমি একমত পােষণ করি।



প্রশ্ন ২।

তথ্য-১ : আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় লােকজন ঢায় দেশটি দক্ষিণীয় অত্যাচারী শাসকদের হাত থেকে মুক্ত হােক। তাই কয়েকটি দল দেশটিতে জনগণের চেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করে।

তথ্য-২: ‘B’ সাহেব নিজেকে ধন্য মনে করেন এজন্য যে ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও বিশ্ব জনমত সৃষ্টিকারী সরকারের তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

ক.বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি কী?

খ. গণমাধ্যম মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে ভূমিকা রেখেছিল? ব্যাখ্যা কর।

গ. তথ্য-১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোন শ্রেণিকে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘B’ সাহেবের সরকারই ছিল মুক্তিযােদ্ধা বাহিনী তৈরির উদ্যোক্তা”- মতামত দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হলাে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়।”

খ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

সংবাদপত্র ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করেন। পরে এটি মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবােধক গান, মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বগাথা, রণাঙ্গনের নানা ঘটনা ইত্যাদি দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস যুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করেছে গণমাধ্যম। এছাড়া মুজিবনগর সরকারের প্রচার সেলের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত পত্রিকা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গ। তথ্য-১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দলকে নির্দেশ করছে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান রাজনৈতিক দল হলাে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক নেতৃত্বই মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। যেমনটি তথ্য-১-এ দেখা যায়। আফ্রিকার উত্তরাঞলীয় লােকজনকে মুক্ত করতে সেখানকার কয়েকটি দল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তদ্রুপ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় আওয়ামী লীগ ছাড়াও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে- ন্যাপ’ (ভাসানী), ন্যাপ (মােজাফফর), কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় কংগ্রেস ইত্যাদি। এসব দলের নেতা ও কর্মীরা অনেকেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের অগ্রণী ভূমিকা মহান মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছিল। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায়, তথ্য-১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দলের প্রতিই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে।

ঘ। ‘B’ সাহেবের সরকারই ছিল মুক্তিযােদ্ধা বাহিনী তৈরির উদ্যোক্তা-প্রশ্নোক্ত উক্তিটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আলােকে যথার্থ।

তথ্য-২-এ ‘B’ দ্বারা মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ করা হয়েছে। ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সামরিক, বেসামরিক জনগণকে নিয়ে একটি মুক্তিযােদ্ধা বাহিনী গড়ে তােলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। উক্ত সরকার বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১১ জন সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করেছিল। এছাড়া বেশকিছু সাব-সেক্টর এবং

তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠিত হয়। এসব বাহিনীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তা, সেনা সদস্য, পুলিশ, ইপিআর, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যগণ যােগদান করেন। প্রতিটি “সেক্টরেই, নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যােদ্ধা ছিলেন। এরা মুক্তিযােদ্ধা বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত ছিলেন। এসব বাহিনীতে দেশের ছাত্র, যুবক, নারী, কৃষক, রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে যােদ্ধাগণ দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সামরিক ছাউনি বা আস্তানায় হামলা চালায়। মুক্তিযুদ্ধে সরকারের অধীন বিভিন্ন বাহিনী ছাড়াও বেশ কয়েকটি সামরিক বাহিনী দেশের অভ্যন্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে উঠেছিল। এসব সংগঠন স্থানীয়ভাবে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এক্ষেত্রে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর কথা উল্লেখ করা যায়। পরিশেষে বলা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযােদ্ধাগণ মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে দেশকে পাকিস্তানিদের দখলমুক্ত করার জন্য রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছে। তাই উত্ত অস্থায়ী সরকারকেই মুক্তিযােদ্ধা বাহিনী তৈরির উদ্যোক্তা বলা সমীচীন।



প্রশ্ন ৩। মুক্তিযােদ্ধা জনাব ‘P’ যুদ্ধের শুরুতে গঠিত একটি সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তার নাতির সাথে কথা বলছিলেন। যুদ্ধকালীন তিনি পার্শ্ববর্তী দেশের একটি শহরে উত্ত সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, “উক্ত সরকার গঠনে একটি দল এককভাবে পূর্বেকার কিছু দাবি আদায় এবং পরবর্তীতে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে।”

ক. মুক্তিযুদ্ধকালীন চরমপত্র’ কী?

খ. বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রায় ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব ‘P’ যে, সরকারের কথাবলেছেন তার কাঠামাে ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জনাব ‘P’-এর শেষােত কথাটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর। 

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হলাে চরমপত্র।

খ। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হয়েছিল। সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক ধারা চালু হয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। দেশে অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, পত্রপত্রিকার ওপর থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার ইত্যাদি ব্যবস্থা হয়। তাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রায় ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব ‘P’ যে সরকারের কথা বলেছেন তা হলাে মুজিবনগর সরকার।

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। উদ্দীপকে মুক্তিযােদ্ধা জনাব ‘P’ তার নাতিকে এ সরকারের কথাই বলেছেন। এ সরকারের কাঠামাে ছিল নিম্নরূপ

১. রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

২. উপ-রাষ্ট্রপতি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম (বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি)।

৩. প্রধানমন্ত্রী : তাজউদ্দীন আহমদ।

৪. অর্থমন্ত্রী : এম, মনসুর আলী।

৫. স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী : এ. এইচ, এম, কামারুজ্জামান।

৬. পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী : খন্দকার মােশতাক আহমেদ।

এছাড়াও ঐ সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। ৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন- মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ, কমরেড মণি সিং, শ্ৰী মনােরঞ্জন ধর, তাজউদ্দীন আহমদ ও খন্দকার মােশতাক আহমেদ। মুজিবনগর সরকারের এ কাঠামােতেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে দেশ পরিচালিত হয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকে জনাব ‘P’ মুজিবনগর সরকার গঠনে আওয়ামী লীগ নামক দলটির ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

১৯৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুথানের ফলে আইয়ুব খানের পদত্যাগের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন ঘােষণা দিলে আওয়ামী লীগ ১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ আওয়ামী লীগ মােট ১৬৭টি আসন লাভ করে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আবার পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের সংরক্ষিত ১০টি মহিলা আসনসহ মােট ৩০০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন ও ৬ দফার পক্ষে গণরায় লাভ করে। তাই মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। উদ্দীপকে জনাব ‘P’ মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকার কথা বলেছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বই মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে। আওয়ামী লীগ পূর্ববাংলার জনগণকে স্বাধিকার আন্দোলনে সংগঠিত করে এবং জনগণকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে সকল মুক্তিকামী মানুষকে সাথে নিয়ে মুজিবনগর সরকারের দিক নির্দেশনায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন করে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে জনাব ‘P’-এর শেষােন্ত উক্তিটি যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।



প্রশ্ন ৪।

১ম অংশ : সামির বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন। তার মা মুক্তিযােদ্ধাদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি আহত মুক্তিযোেদ্ধাদের সেনাও করতেন।

২য় অংশ ; একটা দেশ স্বাধীন হবার পর দেশটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বকেয়া সুদসহ কৃষি জমির খাজনা মওকুফ করে দেন। এজন্য তিনি নতুন এক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

ক. ‘অপারেশন সার্চলাইট’ কাকে বলে?

খ. ‘মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল কেন?

গ. উদ্দীপকের ২য় অংশে কোন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।’

ঘ. “স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে সামির মায়ের মতাে অনেকের ভূমিকাই ছিল তাৎপর্যপূর্ণ” – উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার যে নীলনক্সা তৈরি করেছিল তাকে অপরারেশন সার্চলাইট বলে।

খ। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠন করার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

গ। উদ্দীপকের ২য় অংশে দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিয়েই শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমল। একে একে বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে কার্যকারী সব পরিকল্পনা হাতে নেন। মুক্তিযুদ্ধের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও, তেলের মূল্যবৃদ্ধি পায়। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে বন্যায় দেশে খাদ্যোৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হয়। এসবের ফলে দেশে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি দেশের অভ্যন্তরে মজুদদার, দুর্নীতিবাজ এবং যড়যন্ত্রকারী গােষ্ঠী তৎপর হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শােষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করে। গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু নতুন একটি ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন। এটিকে জাতির জনক ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বকেয়া সুদসহ কৃষি জমির খাজনাও মওকুফ করে দেন। অতএব একবাক্যে, বলা যায়, উদ্দীপকের ২য় অংশে দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচির কথাই বলা হয়েছে।

ঘ। স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে উদ্দীপকে সামির মায়ের মতাে অনেকের ভূমিকাই ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আলােকে প্রশ্নোক্ত এ উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র-ছাত্রী, পেশাজীবী, নারী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। উদ্দীপকের ১ম অংশে মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকার দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল গৌরবােজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের মার্চের প্রথম থেকেই দেশের প্রতিটি অঞলে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়, তাতে নারীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। মুক্তিযােদ্ধা শিবিরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অস্ত্রচালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। অপরদিকে সহযােদ্ধা হিসেবে আহত মুক্তিযােদ্ধাদের সেবা-শুশ্রষা, মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয়দান ও তথ্য সরবরাহ করে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এদেশের অগণিত নারী মুক্তিসেনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ধর্ষিত হন প্রায় তিন লাখ মা-বােন। তাঁরাও মুক্তিযােদ্ধাদের সহযাত্রী। তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিভাবে তাদের বীরাঙ্গনা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালে তাঁদের মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরিশেযে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক হয়েছে বলা যায়।



প্রশ্ন ৫।

দৃশ্যকল্প-১: জেনারেল ‘x’ রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে ‘Y’ দেশে সামরিক আইন জারি করেন। তার শাসনামলে, সংবিধান স্থগিত করেন। তিনি সুদীর্ঘ শাসনকালে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ দেশের যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন। তিনি জোটবদ্ধ আন্দোলনের মুখে পরিশেষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

দৃশ্যকল্প-২ : যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর এক ঘােষণায় বলেন, “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়”।

ক. দ্বিতীয় বিপ্লব কী?

খ. সার্বজনীন ভােটাধিকার বলতে কী বােঝায়? ব্যাখ্যা কর।

গ. দৃশ্যকল্প-১ এ ‘Y’ দেশে জনাব ‘x’ এর শাসন পাঠ্যপুস্তকের কোন শাসকের শাসনামলের প্রতিচ্ছবি? বর্ণনা কর।

ঘ. স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রাপ্তি ও সাফল্যের ক্ষেত্রে দৃশ্যকল্প-২-এর উক্তিটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শােষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচিই হলাে দ্বিতীয় বিপ্লব।

খ। সার্বজনীন ভােটাধিকার হলাে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ভােটদানের স্বীকৃত অধিকার। অতীতে কেবল লিঙ্গ ও শ্রেণিভেদে ভােটদানের অধিকার স্বীকৃত ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে জাতি-বর্ণ-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়ষ্ক যেকোনাে নাগরিক ভােটাধিকার লাভ করেন। ভােট প্রদানের অধিকার সবার জন্য প্রযােজ্য হওয়া-ই হলাে সার্বজনীন ভােটাধিকার।

গ।  দৃশ্যকল্প-১ এ ‘Y’ দেশে জনাব,x’-এর শাসন পাঠ্যপুস্তকের জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের প্রতিচ্ছবি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু বিচারপতি সাত্তারের দুর্বল নেতৃত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অর্থনৈতিক সংকট, কারণ দেখিয়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রক্তপাতহীন অ্যুত্থানের মাধ্যমে সাত্তার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি দেশের সংবিধান স্থগিত করেন ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। প্রধান সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি প্রায় ৯ বছর সামরিক শাসন বলবৎ রাখেন। এ সময় দেশ জুড়ে সামরিক ও স্বৈরশাসন বিরােধী আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ দেশের যােগাযােগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। বহুদলীয় জোটের কর্মসূচিতে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

উদ্দীপকে ‘Y’ রাষ্ট্রের জেনারেল ‘x’-এর সামরিক আইন জারি ও জেনারেল এরশাদের শাসনামলের ন্যায় ‘x’-এর শাসনামলেও সংবিধান স্থগিত ও রাস্তাঘাট নির্মাণের বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। সর্বোপরি উভয়ের পরিণতিও একই সূত্রে গাঁথা। তাই বলা যায় যে, বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে উদ্দীপকের ‘Y’রাষ্ট্রের জেনারেল x এর মাঝে ।

ঘ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রাপ্তি ও সাফল্যের ক্ষেত্রে দৃশ্যকল্প২-এর উক্তিটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

দৃশ্যকল্প-২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষিত বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিটি তথা, “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়”- উক্তিটির উল্লেখ রয়েছে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পদার্পণ করেই বঙ্গবন্ধু ঘােষণা করেন যে, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে, কারও প্রতি বৈরী আচরণ সমর্থন করবে না। তার এ বক্তব্যে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশের গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি – পায়। আর বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের আশা ব্যক্ত করায় শান্তিকামী দেশগুলাে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ১৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সােভিয়েত ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করাসহ নানাভাবে সহযােগিতার হাত সম্প্রসারণ করে।

অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলােও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে খাদ্যদ্রব্য ও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। এভাবে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পাওয়া ও অন্যান্য দেশকে, বন্ধুভাবাপন্ন করে পাশে পাওয়ার পিছনে নিঃসন্দেহে দেশের পররাষ্ট্রনীতির অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিশেষ গােষ্ঠীকেন্দ্রিক বা স্বার্থকেন্দ্রিক হলে স্বীকৃতি ও অসংখ্য রাষ্ট্রের সহযােগিতা কোনােটাই এত দ্রুত সময়ে অর্জন করা সম্ভব হতাে না। এই উন্মুক্ত, সরল ও উদার পররাষ্ট্র নীতির ফলেই বিশ্ব দরবারে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু থেকে অদ্যবধি সুন্দরভাবে প্রশংসিত হয়ে আসছে। তাই অনেক শত্রুভাবাপন্ন রাষ্ট্রও বাংলাদেশের বন্দুতে পরিণত হয়ে এদেশের সাফল্যের অংশীদার হতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর অমর বাণীর্টি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

Leave a Comment