স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। পেশাজীবী কারা?
উত্তর : সাধারণ অর্থে যারা বিভিন্ন পেশায় নিয়ােজিত তারাই হলেন পেশাজীবী। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রযুক্তিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
প্রশ্ন ২। মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর : মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সঠিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশি-বিদেশি জনমত গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করা।
প্রশ্ন ৩। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি কী?
উত্তর : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি হলাে “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়।”
প্রশ্ন ৪। মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘চরমপত্র’ কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হলাে চরমপত্র।
প্রশ্ন ৫। দ্বিতীয় বিপ্লব কী?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গণমানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ) নামক একটি ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন, যা “দ্বিতীয় বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ৬। অপারেশন সার্চলাইট’ কাকে বলে?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী বাঙালির নৃশংস ত্যাকান্ড পরিচালনার যে নীলনক্সা তৈরি করেছিল তাকে অপরারেশন সার্চলাইট বলে।
প্রশ্ন ৭। জাতীয় শিশুনীতি-২০১১’-এর একটি নীতি লেখ।
উত্তর : জাতীয় শিশু নীতি ২০১১-এর একটি নীতি হলাে- “১৮ বছরের কম বয়সী সকল ব্যক্তিই শিশু।
প্রশ্ন ৮। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কী?
উত্তর : ১৫ আগস্টসহ বর্বরােচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না মর্মে যে আইন প্রণীত হয়েছিল তাই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।
প্রশ্ন ৯। অপারেশন সার্চলাইট কী?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম গণহত্যাকে অপরেশন সার্চলাইট বলে।
প্রশ্ন ১০। বাকশাল কী?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শশাষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করে।
প্রশ্ন ১১। গণযুদ্ধ কাকে বলে?
উত্তর : যে যুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করে তাকে গণযুদ্ধ বলে।
প্রশ্ন ১২। মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর : মুজিবনগর সরকারের অর্থমূন্ত্রী ছিলেন এম মনসুর আলী।
প্রশ্ন ১৩। যৌথ কমান্ড কী?
উত্তর : যৌথ কমান্ড হলাে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাহিনী।
প্রশ্ন ১৪। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘােষণাটি লেখ।
উত্তর : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘােষণাটি ছিল-‘ সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’।
প্রশ্ন ১৫। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কত তারিখে ভারত থেকে ঢাকা আসে?
উত্তর : স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তারিখে ভারত থেকে ঢাকা আসে।
প্রশ্ন ১৬। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কে ছিলেন?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ১৭। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি কারা?
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ।
প্রশ্ন ১৮। স্বাধীনতা ঘােষণার সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটির নাম কী ছিল?
উত্তর : স্বাধীনতা ঘােষণার সময় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটির নাম ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
প্রশ্ন ১৯। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর : মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
প্রশ্ন ২০। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কত শতাংশ ছিল?
উত্তর : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ।
প্রশ্ন ২১। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ২২। কত সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-এর সদস্য হয়?
উত্তর : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথ-এর সদস্য হয়।
প্রশ্ন ২৩। পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু মােট কত বছর জেলখানায় ছিলেন?
উত্তর : পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু মােট ১২ বছর জেলখানায় ছিলেন।
প্রশ্ন ২৪। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়নের কমিটির প্রধান কে ছিলেন?
উত্তর : ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ছিলেন ড. কামাল হােসেন।
প্রশ্ন ২৫। চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়?
উত্তর : চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়।
প্রশ্ন ২৬। ১৭ মার্চ ১৯৭১ ‘অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার নীলনকশা তৈরি করে কে?
উত্তর : ১৭ মার্চ, ১৯৭১ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বা বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার নীলনকশা তৈরি করে।
প্রশ্ন ২৭। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ কখন গঠিত হয়?
উত্তর : রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে গঠিত হয়।
প্রশ্ন ২৮। কারা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি সেক্টরেই নিয়মিত সেনা, গেরিলা ও সাধারণ যােদ্ধ ছিল; তারা মুক্তিযােদ্ধা বা মুক্তিফৌজ নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্ন ২১। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ছিলেন কর্নেল (অব.) মােঃ আতাউল গনী ওসমানী (এমএজি ওসমানী)।
প্রশ্ন ৩০। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে কত তারিখ?
উত্তর : মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল।
প্রশ্ন ৩১। বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয় কবে?
উত্তর : বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
প্রশ্ন ৩২। জর্জ হ্যারিসন কে ছিলেন?
উত্তর : জর্জ হ্যারিসন লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী সংগীত শিল্পী ছিলেন যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সমর্থনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর আয়ােজক ও গায়ক।
প্রশ্ন ৩৩। কে ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করেন?
উত্তর : ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন।
প্রশ্ন ৩৪। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা কোনটি?
উত্তর : বাংলাদেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান।
প্রশ্ন ৩৫। কোন নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়েছিল?
উত্তর : সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’- এ নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩৬। রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম কী?
উত্তর : রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম সােহরাওয়ার্দী উদ্যান।
প্রশ্ন ৩৭। মুজিবনগর সরকারের কতটি মন্ত্রণালয় ছিল?
উত্তর : মুজিবনগর সরকারের ১২টি বিভাগ বা মন্ত্রণালয় ছিল।
প্রশ্ন ৩৮। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল কী?
উত্তর : রাষ্ট্রের দলিল হলাে সংবিধান।
প্রশ্ন ৩৯। মুজিবনগর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : বর্তমান মেহেরপুর জেলায় মুজিবনগর অবস্থিত।
প্রশ্ন ৪০। বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় কত সালে?
উত্তর : বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে।
প্রশ্ন ৪১। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন কখন আহ্বান করা হয়?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।
প্রশ্ন ৪২। অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে কখন, সারাদেশে হরতাল পালিত হয়?
উত্তর : অধিবেশন স্থগিত ঘােষণার প্রতিবাদে ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হয়।
প্রশ্ন ৪৩। শেখ মুজিবুর রহমান কখন ঐতিহাসিক ভাষণ দেন?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
প্রশ্ন ৪৪। ৭ মার্চের ভাষণ থেকে বাঙালিরা কী নির্দেশনা পায়?
উত্তর : ৭ মার্চের ভাষণ থেকে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা পায়’।
প্রশ্ন ৪৫। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’বক্তব্যটি কার?
উত্তর : ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম-বক্তব্যটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
প্রশ্ন ৪৬। বঙ্গবন্ধু কোন ভাষণে স্বাধীনতার ঘােষণা দেন?
উত্তর : ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা দেন।
প্রশ্ন ৪৭। কখন অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়?
উত্তর : ২৫ মার্চ রাত্বে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম গণহত্যা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়।
প্রশ্ন ৪৮। কোন রাত্রিকে কালাে রাত্রি বলা হয়?
উত্তর : ২৫ মার্চ রাত্রিকে কালাে রাত্রি বলা হয়।
প্রশ্ন ৪৯। কে বাংলার স্বাধীনতা ঘােষণা করেন?
উত্তর : ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা দেন।
প্রশ্ন ৫০। পশ্চিম পাকিস্তান কত বছর যাবৎ পূর্ব বাংলাকে শােষণ করে?
উত্তর : পশ্চিম পাকিস্তান প্রায় ২৪ বছর যাবৎ পূর্ব বাংলাকে শােষণ করে।
প্রশ্ন ৫১। মুজিবনগর সরকারের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করা ছিল মুজিবনগর সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন ৫২। মুজিবনগর সরকার কাদের নিয়ে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেন?
উত্তর : মুজিবনগর সরকার বাঙালি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেন।
প্রশ্ন ৫৩। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির নাম কী?
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি হলাে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ।
প্রশ্ন ৫৪। কখন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়।
প্রশ্ন ৫৫। ১৯৭১ সালে পেশাজীবীগণ কিসে অংশগ্রহণ করে?
উত্তর : ১৯৭১ সালে পেশাজীবীগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন ৫৬। পাকসেনাদের কর্তৃক বাংলাদেশে প্রায় কত নারী ধর্ষিত হয়?
উত্তর : পাকসেনাদের কর্তৃক বাংলাদেশে প্রায় তিন লক্ষ নারী ধর্ষিত হয়।
প্রশ্ন ৫৭। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব কে দেন?
উত্তর : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ৫৮। ছাত্রলীগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ৫৯। ছয় দফা কর্মসূচি কত সালে ঘােষণা করা হয়?
উত্তর : ১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘােষণা করা হয়।
প্রশ্ন ৬০। বাংলাদেশ কখন চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে?
উত্তর : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে।
প্রশ্ন ৬১। বঙ্গবন্ধু কখন ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন?
উত্তর : ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ নামে একটি আদেশ জারি করেন।
প্রশ্ন ৬২। বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন ৬৩। বাংলাদেশ কখন জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে?
উত্তর : বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।
প্রশ্ন ৬৪। বাংলাদেশের সংবিধান কোন সালে রচিত হয়?
উত্তর : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়।
প্রশ্ন ৬৫। ১৯৭২ সালের সংবিধান কোন ধরনের সংবিধান?
উত্তর : ১৯৭২ সালের সংবিধান একটি লিখিত সংবিধান।
প্রশ্ন ৬৬। জাতীয় শােক দিবস কোন তারিখ?
উত্তর : ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় শােক দিবস।
প্রশ্ন ৬৭। কবে খন্দকার মােশতাক ক্ষমতা দখল করেন?
উত্তর : ১৫ আগস্ট খন্দকার মােশতাক ক্ষমতা দখল করেন।
প্রশ্ন ৬৮। জেনারেল জিয়াউর রহমান কখন হা-না ভােটের আয়ােজন করেন?
উত্তর : ১৯৭৭ সালের ৩০ মে জেনারেল জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতা বৈধকরণের লক্ষ্যে হা-না ভােটের আয়ােজন করেন।
প্রশ্ন.৬৯। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কখন নিহত হন?
উত্তর : ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন।
প্রশ্ন ৭০। জেনারেল এরশাদ কখন রাষ্ট্রপতি হন?
উত্তর : ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন।
স্বাধীন বাংলাদেশ অধ্যায়ের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ২০। অসহযােগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত চলমান অসহযােগ আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম পর্ব। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হওয়া ন্যায়সংগত হলেও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করেন এবং ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘােষণা করেন। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় হরতালের ডাক দেন। মূলত ১ মার্চ থেকেই পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে অসহযােগ আন্দোলন শুরু হয়।
প্রশ্ন ২১। ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচিকে ব্যর্থ করে রাজনৈতিক গতিপথকে উল্টো দিকে ঘুরানােই ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য।
একটি আধুনিক ও শশাষণ, দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লর কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখনই ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকারীরা বুঝতে পেরেছিল মুক্তিযুদ্ধের মতাে এ কর্মসূচিও সফল হবে। এ হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশে পাকিস্তানি ভাবধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়।
প্রশ্ন ২২। ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন”-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘােষণার বাংলা অনুবাদ- “ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, ‘আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন…” – বঙ্গবন্ধুর এ উক্তি দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি স্বাধীনতার ঘােষক। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পশ্চিমা গােষ্ঠী তাকে গ্রেপ্তার করে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকে স্তিমিত করে, দিতে চাইবেন। তাই তিনি উক্ত ঘােষণা দ্বারা বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার বার্তা দিয়ে যান এবং এ ঘােষণায় বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে মহান স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন ২৩। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশ্বজনমত গড়ে তােলার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকা রাখে?
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রথমে পূর্ব বাংলার জনগণ স্বাধিকার আন্দোলনে সংগঠিত হয়। আর এ দলই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের লক্ষ্যে মুজিবনগর সরকার গঠন করে। এ সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বিশেষ দূত নিয়োগ দেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব নেতৃত্ব ও জনমতের সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করেন। সে সময়কার রাজনৈতিক নেতারা তাদের কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছিল। তারা দেশে-বিদেশে মিটিং, মিডিয়া ও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্বজনমত গড়ে তােলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রশ্ন ২৪। ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ নামে একটি আদেশ জারি করেন। এ আদেশ বলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য বলে পরিগণিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে দেশের জন্য প্রয়ােজনীয় আইনকানুন পাস ও কার্যকর করা সম্ভব হয়। একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকরী সংবিধান প্রণয়ন করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে গণপরিষদ আদেশ জারি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় এটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
প্রশ্ন ২৫। দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচির প্রয়ােজন হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : শশাষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লব কর্মসূচি প্রয়ােজন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত তখন ১৯৭৩-৭৪ সালের বন্যার ফলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়। দেশের অভ্যন্তরে মজুদদার, দুর্নীতিবাজ এবং ষড়যন্ত্রকারী গােষ্ঠী তৎপর হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শশাষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে দেশের নতুন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়, যা দ্বিতীয় বিপ্লব নামে অভিহিত হয়।
প্রশ্ন ২৬। মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কাঠামাে কী ছিল?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের ধনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন এ এইচ এম কামারুজ্জামান। উক্ত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী ছিলেন খন্দকার মােশতাক আহমেদ। তাছাড়া মুজিবনগর সরকারের ৬ (ছয়) সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ ছিল।
প্রশ্ন ২৭। মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান উল্লেখ কর।
উত্তর : প্রবাসী বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সাহায্য-সহযােগিতা করেন। বিভিন্ন দেশে তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ে পার্লামেন্ট সদস্যদের নিকট ছুটে গিয়েছেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় প্রতিনিধি দল প্রেরণ করেছেন, পাকিস্তানকে অস্ত্ৰগােলাবারুদ সরবরাহ না করতে সরকারের নিকট আবেদন করেছেন। এক্ষেত্রে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে তারা কাজ করেছেন।
প্রশ্ন ২৮। বীরাঙ্গনা’ উপাধিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল গৌরবােজ্জ্বল। মুক্তিযােদ্ধা। শিবিরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অস্ত্রচালনা ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্তু পাকসেনা কর্তৃক ধর্ষিত হয় প্রায় তিন লক্ষ নারী। তারাও মুক্তিযােদ্ধাদের সহযাত্রী এবং তাদের ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৬ সালে বীরঙ্গনা নারীদের মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রশ্ন ২৯। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের মূল নিয়ামক শক্তি ছিল জনগণ। তথাপি যুদ্ধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল খুবই প্রশংসনীয়। পত্রপত্রিকার লেখা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে খবর পাঠ, দেশাত্মবােধক গান, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান, কবিতা পাঠ, নাটক, কথিকা, এম, আর আক্তার মুকুলের অত্যন্ত জনপ্রিয় চরমপত্র’ অনুষ্ঠান এবং জল্লাদের দরবার’ ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এসব রণক্ষেত্রে মুক্তিযােদ্ধাদের মানসিক ও নৈতিক বল ধরে রাখতে সহায়তা করছে, সাহস জুগিয়েছে, জনগণকে শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্দমনীয় করেছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
প্রশ্ন ৩০। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতারের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারের শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীরা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু করেন। পরে এটি মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংবাদ, দেশাত্মবােধক গান, মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্ব গাথা, রণাঙ্গনের নানা ঘটনা ইত্যাদি দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস যুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করে। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৩১। মুক্তিযােদ্ধাদের ঋণ কোনােদিন শােধ হবে না কেন?
উত্তর : বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ, যে দেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণের ত্যাগ ও অংশগ্রহণে, মাবােনের লুষ্ঠিত ইজ্জত, ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদানে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তার ঋণ কোনােদিন শােধ হওয়ার নয়। বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের ঋণ কোনাে কিছুর বিনিময়ে, কোনােদিন কেউ শশাধ করতে পারবে না।
প্রশ্ন ৩২। মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
বাংলাদেশ হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ, যেদেশে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার যে ডাক দেন এবং ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার যে ঘােষণা প্রদান করেন ১৬ ডিসেম্বর তা বাস্তবে পূর্ণতা পায়। মুক্তিযুদ্ধের ফলেই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, যা বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৩২। মুক্তিযুদ্ধে পেশাজীবী মানুষের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালালে বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। বাঙালি ছাত্রজনতা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনীর সদস্য, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি; মাঝি সবাই দেশকে স্বাধীন করার সংগ্রামে আত্মনিয়ােগ করে। স্বাধীনতার এ যুদ্ধে সব শ্রেণি পেশার মানুষই কমবেশি আহত-নিহত হন। তাই এ যুদ্ধকে বলা হয় গণযুদ্ধ।
প্রশ্ন ৩৩। ছয় দফার প্রথম দফাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পেশকৃত ৬ দফার প্রথম দফায় বলা হয়েছে- ‘ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করে পাকিস্তানকে একটি সত্যিকার ফেডারেশন রূপে গড়তে হবে। তাতে পার্লামেন্টারি সরকার থাকবে।ৃসকল নির্বাচন সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের সরাসরি ভােট দ্বারা অনুষ্ঠিত হবে। আইনসভাসমূহের সার্বভৌমত্ব থাকবে।
প্রশ্ন ৩৪। মুক্তিযুদ্ধে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
উত্তর : জর্জ হ্যারিসন ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ গান গেয়ে জাগিয়েছিলেন গােটা বিশ্বকে। হ্যারিসন সেদিন অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তার গানের কনসার্টের মাধ্যমে। তিনি তার বিবেকী শিল্পী সত্তাকে মানবতার কল্যাণে, মুক্তি সংগ্রামের সপক্ষে নিবেদিত করেছিলেন সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। বিশ্ববাসী এ কনসার্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল পাকবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা। তাই মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের ভূমিকা চিরস্মরণীয়।
প্রশ্ন ৩৫। স্বাধীন বাংলাদেশের অ্যুদয়ের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। ভুট্টো ঢাকায় অধিবেশনে যােগদান করতে অস্বীকার করেন, অন্যান্য সদস্যদেরও হুমকি প্রদান করেন। এসবই ছিল ভুট্টো-ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্রের ফল। ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ ভুট্টোর ঘোষণাকে অজুহাত দেখিয়ে ৩ মার্চের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘােষণা করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কোনাে প্রকার আলােচনা না করে অধিবেশন স্থগিত করায় পূর্ববাংলার জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ফলে সকল সরকারি কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। হরতাল চলাকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গুলিতে বহুলােক হতাহত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযােগ আন্দোলনের ডাক দেন। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা ঘােষণা এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভুদয় ঘটে।
প্রশ্ন ৩৬। “ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালিদের কাছে অমর হয়ে থাকবে।” – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর শােষণ-শাসন, বনার ইতিহাস, নির্বাচনে জয়ের পর বাঙালির সাথে প্রতারণা ও বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরেন। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এ ভাষণ এক স্মরণীয় দলিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ঐতিহাসিক ভাষণের নজির আছে ৭ মার্চের ভাষণ তার মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষের নিকট এ ভাষণ অমর হয়ে থাকবে।
প্রশ্ন ৩৭। মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনা, সুসংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। ঐদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘােষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা আদেশ’ বা স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘােষণা। মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিবনগরে (মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে), সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়।
প্রশ্ন ৩৮। মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী ন্যাপ) মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মােজাফফর ন্যাপ) অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মনি সিং, জাতীয় কংগ্রেসের শ্রী মনােরঞ্জন ধর, তাজউদ্দীন আহমদ (বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী) ও খন্দকার মােশতাক আহমেদ (বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী)কে নিয়ে মােট ৬ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়।
প্রশ্ন ৩৯। মুক্তিযুদ্ধে জনসাধারণের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর : সাধারণ জনগণের সাহায্য-সহযােগিতা ও স্বাধীনতার প্রতি ঐকান্তিক আকাক্ষার ফলেই মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক দোসর ব্যতীত সবাই কোনাে না কোনােভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। সাধারণ মানুষ মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, শত্রুর অবস্থান ও চলাচলের তথ্য দিয়েছে, খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করেছে, সেবা দিয়েছে ও খবরাখবর সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর জনগণও এতে অংশগ্রহণ করে। অনেকে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহিদের মধ্যে সাধারণ মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। এদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীন মানচিত্র, লাল-সবুজ পতাকা।
প্রশ্ন ৪০। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সারাজীবনের কর্মকাণ্ড, আন্দোলন-সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালির জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে। এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ‘৪৮ ও ‘৫২-র ভাষা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দিদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে তার কণ্ঠ ছিল সর্বদা সােচ্চার। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরােধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি পেশ ও ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন বিজয়, ১৯৭১ সালের অসহযােগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘােষণা ও স্বাধীনতা অর্জনে একচ্ছত্র ভূমিকা পালন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ৪১। মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন আহমদ-এর ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর : মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত মুজিবনগর সরকারের (১০ এপ্রিল, ১৯৭১) তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল তিনি বেতার ভাষণে মুজিবনগর সরকার গঠনের কথা প্রচার করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির তিনি আহ্বায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত।
প্রশ্ন ৪২। মুক্তিযুদ্ধে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর : সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও সফল করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ও পরিচালক ছিলেন।
প্রশ্ন ৪৩। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সমর্থন জানায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালােরাত্রির বীভৎস হত্যাকাণ্ড ও পরবর্তী নয় মাস ধরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যে নারকীয় গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, ভারত তা বিশ্ববাসীর নিকট সার্থকভাবে তুলে ধরে। এর ফলে বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হয়। লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয়, মুক্তিযােদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, অস্ত্র সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চালায়। ভারত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী ‘যৌথ কমান্ড’ গড়ে তােলে। যৌথ বাহিনীর তীব্র আক্রমণের ফলে ৯৩ হাজার পাক সেনা নিঃশর্তে যৌথ কমান্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ভারতের বহু সৈন্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারায়।
প্রশ্ন ৪৪। মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন সরকার ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের কার্যকলাপের প্রতি সমর্থন প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। উদ্দেশ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধের তীব্র গতিকে থামিয়ে দেওয়া এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত তাদের সপ্তম নৌবহরকে বাংলাদেশ অভিমুখে প্রেরণ করে। তবে মার্কিন জনগণ, প্রচার মাধ্যম, কংগ্রেসের অনেক সদস্য বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সােচ্চার ছিল। এ প্রসঙ্গে সিনেটের এডওয়ার্ড কেনেডির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
প্রশ্ন ৪৫। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির বর্ণনা দাও।
উত্তর : পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, ঢাকায় পদার্পণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাস করে, কারও প্রতি বৈরী আচরণ সমর্থন করবে না। তিনি ঘােষণা করেন যে, সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’- এ নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হবে। তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান এবং পুনর্গঠনে সহযােগিতা প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরােধ করেন। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ১৪০টি দেশ বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সােভিয়েত ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করাসহ নানাভাবে সহযােগিতা প্রদান করে। অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলােও খাদ্যদ্রব্য, ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।
প্রশ্ন ৪৬। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্য হয়। ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। বঙ্গবন্ধু সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় প্রথম ভাষণ প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। বিশ্বশান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করে। বাংলাদেশ তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদা লাভ করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের হাল ধরতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যেও স্বল্প সময়ে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন ৪৭। ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম’ – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতীয় জীবনে ঘটে এক জঘন্য, নির্মম, নিষ্ঠুর নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
খুব ভােরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী ও উচ্ছল সেনা অফিসার বিদেশি মদদে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজ বাসায় পরিবারের উপস্থিত সকল সদস্য ও নিকট আত্মীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ১০ বছরের নিষ্পাপ শিশু রাসেলও।
প্রশ্ন ৪৮। ১৯৭৫ সালের জেল হত্যার বর্ণনা দাও।
উত্তর : ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে একদল সশস্ত্র সেনাসদস্য প্রবেশ করে সেখানে বন্দী অবস্থায় থাকা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা যথাক্রমে- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান-কে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সংঘটিত হয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আর একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড দেশের জনগণ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এ ঘটনা মােশতাকের পতন ত্বরান্বিত করে। খুনিরা দেশত্যাগে বাধ্য হয়। এ হত্যাকাণ্ড ছিল ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত, স্বাধীনতা বিরােধী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গােষ্ঠীর সম্মিলিত ষড়যন্ত্র ও নীলনকশার বাস্তবায়ন। উভয় হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ ধ্বংস, দেশকে নেতৃত্বশূন্য এবং পাকিস্তানি ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড একই গােষ্ঠী সংঘটিত করে।
প্রশ্ন ৪৯। জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক বাহিনীর একজন মেজর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণা তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মােশতাক সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি পদে নিজেকে অধিষ্ঠিত করে। ২৪ আগস্ট সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ পদে জিয়াউর রহমানকে নিযুক্ত করেন। ৩ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানে খন্দকার মােশতাকের পতন ঘটে এবং জিয়াউর রহমান গৃহবন্দী হন। ৭ নভেম্বর পাল্টা সেনা অভ্যুত্থান ঘটে এবং জিয়াউর রহমান মুক্ত হয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এস.এম. সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। কিন্তু ১৯৭৬ সালের ৩০ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল নিজেকে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত করেন।
প্রশ্ন ৫০। জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলের পটভূমি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ১৯৮১ সালের ৩০ মে জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এসময় সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ ছিলেন হুসেইন মােহাম্মদ এরশাদ। একই বছর ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিচারপতি আবদুস সাত্তার জয়লাভ করেন। কিন্তু বিচারপতি সাত্তারের দুর্বল নেতৃত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণ দেখিয়ে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল হুসেইন মােহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রক্তপাতহীন এক অভূত্থানের মাধ্যমে সাত্তার সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতায় এসেই সংবিধান স্থগিত করেন, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আহসান উদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করা হয়। সামরিক বাহিনী প্রধান এরশাদ সামরিক আইন প্রশাসক হন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট আহসান উদ্দিনকে সরিয়ে এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হন।