গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১। গোঁসাইদের ছােট ছেলেটির নাম কী?
উত্তর : গোসাইদের ছােট ছেলেটির নাম প্রতাপ !
প্রশ্ন ২। ‘ঝিল্লিরব’ অর্থ কী?
উত্তর : ‘ঝিল্লিরব’ অর্থ ঝিঝি পােকার আওয়াজ বা শব্দে মুখর।
প্রশ্ন ৩। প্রতাপের প্রধান শখ কী ছিল?
উত্তর : প্রতাপের প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা।
প্রশ্ন ৪। সুভা কোথায় বসে থাকত?
উত্তর : সুভা তেঁতুলতলায় বসে থাকত।
প্রশ্ন ৫। সুভার পুরাে নাম কী?
উত্তর : সুভার পুরাে নাম সুভাষিণী।
- বাংলা ১ম পত্রের অন্যান্য গল্প ও কবিতার মূলভাব, জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন, সৃজনশীল প্রশ্ন পেতে ক্লিক করুন,
» সুভা গল্পের সৃজনশীল ও উত্তর
» সুভা গল্পের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ৬। ‘সুভা’ কী জাতীয় রচনা?
উত্তর : ‘সুভা’ ছােট গল্প জাতীয় রচনা।
প্রশ্ন ৭। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম বনফুল।
প্রশ্ন ৮। কে সুভার মর্যাদা বুঝত?
উত্তর : প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।
প্রশ্ন ৯। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : ২৫ শে বৈশাখ ।
প্রশ্ন ১০। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজি কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ১১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহের নাম কী?
উত্তর : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ১২। কোন কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নােবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর : গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন ১৩। এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন কে?
উত্তর : এশীয়দের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন ১৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয় তাঁর কত বছর বয়সে?
উত্তর : ১৫ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন ১৫। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন ১৬। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কত সনে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ১৩৪৮ সনে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রশ্ন ১৭। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজি কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : ১৯৪১ সালে।
প্রশ্ন ১৮। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
প্রশ্ন ১৯। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম কী?
উত্তর : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন ২০। বাণীকণ্ঠের ছােট মেয়ের নাম কী?
উত্তর : সুভাষিণী (সুভা)।
প্রশ্ন ২১। ছােট মেয়েটার নাম সুভাষিণী রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তর : বড় দুই বােনের নামের সাথে মিলের অনুরােধে ছোট মেয়েটির নাম সুভাষিণী রাখা হয়েছিল।
প্রশ্ন ২২। সুভাষিণীকে সবাই সংক্ষেপে কী নামে ডাকত?
উত্তর : সুভাষিণীকে সবাই সংক্ষেপে ‘সুভা’ নামে ডাকত।
প্রশ্ন ২৩। বাণীকন্ঠের বড় মেয়ে দুটির বিয়ে কীভাবে হয়েছে?
উত্তর : দস্তুরমতাে অনুসন্ধান ও অর্থব্যয়ে বাণীকন্ঠের বড় মেয়ে দুটির বিয়ে হয়েছে।
প্রশ্ন ২৪। ছােট মেয়েটি পিতা-মাতার কোন অনুভূতির মতাে বিরাজ করছিল?
উত্তর : ছােট মেয়েটি পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভারের মতাে বিরাজ করছিল।
প্রশ্ন ২৫। সুভা কথা না বলতে পারলেও কী করতে পারত?
উত্তর : সুভা কথা না বলতে পারলেও অনুভব করতে পারত।
প্রশ্ন ২৬। সুভা সবসময় কোন চেষ্টা করত?
উত্তর : সুভা সবসময় নিজেকে সবার কাছ থেকে গােপন করার চেষ্টা করত।
প্রশ্ন ২৭। সুভা কী মনে করত?
উত্তর : সুভা মনে করত তাকে সবাই ভুলে গেলে সে বাঁচে।
প্রশ্ন ২৮। সুভার মা সুভাকে কীভাবে দেখতেন?
উত্তর : সুভার মা সুভাকে তার নিজের ত্রুটিম্বরূপ দেখতেন।
প্রশ্ন ২৯। মায়েরা মেয়েকে কিসের অংশরূপে দেখেন?
উত্তর : মায়েরা মেয়েকে নিজের অংশরূপে দেখেন।
প্রশ্ন ৩০। মেয়ের কোনাে ত্রুটি থাকলে মায়েরা তা কীভাবে দেখেন?
উত্তর : মেয়ের কোনাে ত্রুটি থাকলে মায়েরা নিজের জুটি হিসেবে দেখেন।
প্রশ্ন ৩১। বাণীকণ্ঠ তিন মেয়ের মধ্যে কাকে বেশি ভালােবাসতেন?
উত্তর : বাণীকণ্ঠ তিন মেয়ের মধ্যে সুভাকে বেশি ভালােবাসতেন।
প্রশ্ন ৩২। সুভার মা কী জ্ঞান করে সুভার ওপর বিরক্ত ছিলেন?
উত্তর : সুভার মা নিজের গর্ভের কলঙ্ক জ্ঞান করে সুভার ওপর বিরক্ত ছিলেন।
প্রশ্ন ৩৩। সুভার কথা না থাকলেও কী ছিল?
উত্তর : সুভার কথা না থাকলেও সুদীর্ঘপল্লববিশিষ্ট বড় বড় দুটি কালাে চোখ ছিল।
প্রশ্ন ৩৪। সুভার ওষ্ঠাধর কিসের মতাে কেঁপে উঠত?
উত্তর : সুভার ওষ্ঠাধর কচি কিশলয়ের মতাে কেঁপে উঠত।
প্রশ্ন ৩৫। সুভা কখনাে কখনাে কিসের মতাে চেয়ে থাকত?
উত্তর : সুভা কখনাে কখনাে অস্তমান চন্দ্রের মতাে অনিমেষভাবে চেয়ে থাকত।
প্রশ্ন ৩৬। সুভা অবসর পেলেই কোথায় গিয়ে বসে থাকে?
উত্তর : সুভা অবসর পেলেই নদীতীরে গিয়ে বসে থাকে।
প্রশ্ন ৩৭। গােয়ালের গাভী দুটি সুভার কে?
উত্তর : গােয়ালের গাভী দুটি সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু।
প্রশ্ন ৩৮। সুভা নিয়মিত কয়বার গােয়ালে যেত?
উত্তর : সুভা নিয়মিত তিনবার গােয়ালে যেত।
প্রশ্ন ৩৯। ‘সুভা’ গল্পে কোন তিথির কথা উল্লেখ আছে?
উত্তর : শুক্লা দ্বাদশী।
প্রশ্ন ৪০। সুভার ভাষাবিশিষ্ট জীব সঙ্গী কে?
উত্তর : সুভার ভাষাবিশিষ্ট জীব সঙ্গী প্রতাপ।
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত প্রতাপের কাছে নিজের প্রয়ােজনীয়তা বােঝানাের জন্য।
প্রতাপ যখন ছিপ ফেলে জলের দিকে চেয়ে থাকত তখন সুভা তার কাজে সাহায্য করতে চাইত। সে কাজের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাইত যে এই পৃথিবীতে সেও একজন প্রয়ােজনীয় লােক। অথচ সে কিছুই করতে পারত না। আর এ কারণেই সে বিধাতার কাছে প্রার্থনা করত- যাতে অলৌকিক ক্ষমতাবলে কোনাে একটি কাজ করে সে প্রতাপের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।
প্রশ্ন ২। প্রতাপের প্রতি তার বাবা-মায়ের নিরাশ হওয়ার কারণ কী?
উত্তর : প্রতাপের প্রতি তার বাবা-মায়ের নিরাশ হওয়ার কারণ হলাে- প্রতাপ সংসারের কাজের প্রতি যত্নবান বা মনােযােগী নয়, বরং সে বড় বেশি উদাসীন।
প্রতাপকে তার বাবা-মা সংসারের দায়িত্ব বারবার দিয়ে দেখে যে, সে কোনাে কাজ করতে চায় না, কাজের প্রতি তার কোনাে আগ্রহই নেই। নিতান্ত অকর্মণ্য হয়ে ঘুরে বেড়ানােতেই প্রতাপের বেশি আনন্দ। সে সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। আর বিকেলে নদীর পাড়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরে সময় ব্যয় করে। নিজের কাজের প্রতি তার উৎসাহ নেই। তবে অন্যের কাজের প্রতি তার উৎসাহ ছিল। মূলত প্রতাপের বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেও প্রতাপকে ঘর-সংসারের কাজে মনােযােগী করতে পারেননি বলেই তার প্রতি তারা নিরাশ হয়েছেন।
প্রশ্ন ৩। সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না কেন?
উত্তর : সুভার মনের ভাব তার চোখে ফুটে ওঠে, তাই তার কালাে চোখকে তর্জমা করতে হয় না।
আমরা কথার মধ্য দিয়ে যে ভাষা প্রকাশ করি তা আমাদের নিজের চেষ্টায় গড়ে নিতে হয়। ঠিক কোনােকিছু তর্জমা করার মতাে, যা সবসময় ঠিক হয় না। সুভার বড় বড় কালাে চোখের যে ভাষা, যে উজ্জ্বলতা তাতে অবর্ণনীয় ভাবের প্রকাশ রয়েছে। যার দিকে তাকালে আর কোনাে তর্জমা করার দরকার হয় না। তার চোখ দুটোই কথা বলে। সুভার মনের ভাব তার চোখের উপরে কখনাে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠত, আবার কখনাে স্নানভাবে নিভে আসত। কখনাে চল বিদ্যুতের মতাে, আবার কখনাে ডুবে যাওয়া চাঁদের মতাে হয়ে তার মনের ভাব প্রকাশ করত। সুভার মুখের ভাষা না থাকলেও দৃষ্টির গভীরতা স্পর্শ করা যায়। তাই সুভার কালাে চোখকে তর্জমা করতে হয় না।
প্রশ্ন ৪। সুভা মনে মনে কী কল্পনা করত?
উত্তর : সুভা মনে মনে জলকুমারী হওয়ার কথা কল্পনা করত।
সুভা কল্পনা করত সে যদি জলপরী হতাে, তাহলে জল থেকে উঠে সাপের একটা মণি ঘাটে রেখে আসত প্রতাপ তার তুচ্ছ মাছ ধরা ছেড়ে সাপের মাথার সেই মণি নিয়ে জলে ডুব দিত। তারপর পাতালে গিয়ে দেখত রুপার অট্টালিকার সােনার পালঙ্কে সুভা বসে আছে। সে পাতালপুরীর একমাত্র রাজকন্যা। সে পাতালপুরীর রাজকন্যা না হয়ে ভুল করে বাণীকষ্ঠের পরিবারে জন্ম নিয়েছে। সে মনে মনে এসব বিষয় কল্পনা করত।
প্রশ্ন ৫। “তখন কে জানিত সে বােবা হইবে”- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : সুভার বােবা হওয়া সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে।
‘সুভা’ গল্পের সুভা একটি বােৰা মেয়ে। তিন বােনের মধ্যে সে ছােট। তার বড় দুই বােন সুকেশিনী ও সুহাসিনী কথা বলতে পারে। তাই দুই বােনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয় সুভাষিণী। সুভাষিণী অর্থ যার কথা সুন্দর। সুভাষিণীর যখন জন্ম হয় তখন কেউ জানত না যে সে কথা বলতে পারবে না। আর যে কথা বলতে পারে না, তার নাম সুভাষিণী এই বিষয়টি অনেকটা দুঃখজনক। তাই এখানে লেখক মেয়েটির শারীরিক প্রতিবন্ধিতার সাথে তার নামের যে বৈপরীত্য তা প্রকাশ করতে এমন কথা বলেছেন।
প্রশ্ন ৬। সুভা কেন বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল?
উত্তর : সুভা বােবা হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল।
সুভার বড় দুই বােন সুস্থ ও স্বাভাবিক। তাই তাদেরকে বিয়ে দিতে তার বাবা-মাকে কোনাে সমস্যায় পড়তে হয়নি। অনেক টাকাপয়সা খরচ করে এবং ধুমধাম করে তিনি তাদের বিয়ে দেন। আর সুভা বােবা হওয়ার কারণে তার বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ বােবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটা অন্য দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতাে সহজ কাজ নয়। তাই সুভার বাবা-মা প্রতিনিয়ত এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন এবং সুভার অস্তিত্ব যেন তাদের নীরব হৃদয়ভারের মতো হয়ে অবস্থান করে।
প্রশ্ন ৭। সুভা শিশুকাল থেকেই কী বুঝে নিয়েছিল?
উত্তর : সুভা যে বিধাতার অভিশাপম্বরূপ পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছে সে তা শিশুকাল থেকেই বুঝে নিয়েছিল। সুভা জন্ম থেকেই বােবা। মুখে কথা বলতে না পারলেও তার মাঝে অনুভূতি ছিল। সে তার চারপাশের সবকিছুই অনুভব করত এবং বুঝতে পারত। ছােটবেলা থেকেই তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা হতাে সেগুলাে থেকেই সে বুঝে নিয়েছিল যে, সে বিধাতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে জন্মায়নি। পরিবারের লােকজনের আলােচনার মধ্য থেকেই বুঝে নিয়েছিল যে, সে তার বাবার ঘরে বিধাতার অভিশাপস্বরূপ জন্ম নিয়েছে।
প্রশ্ন ৮। সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ কেমন ছিল?
উত্তর : সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ ছিল বিরক্তিপূর্ণ।
মায়েরা কন্যা-সন্তানকে নিজেদের অংশ মনে করে। মেয়েদের কোনাে অঙ্গ যদি ত্রুটিপূর্ণ থাকে তাহলে মায়েরা তা নিজেদের ত্রুটি হিসেবে ধরে নেয়। সুভা’ গল্পে সুভা জন্ম থেকে বাবা ছিল। তাই মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। এই জুটিকে সুভার মা নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভাকে দেখলে সুভার মা নিজের ত্রুটির কথা স্মরণ করতেন বলে তিনি সুভার ওপরে বিরক্ত ছিলেন।
প্রশ্ন ৯। প্রকৃতি কীভাবে সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল?
উত্তর : প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দ ও কোলাহল দিয়ে প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল।
নদীর কলধ্বনি, পাখির ডাক, মাঝির গান, লােকের কোলাহল ইত্যাদি দিয়ে প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়। সে সময় পেলেই নদীর পাড়ে এসে বসত। তখন প্রকৃতির নানান উপাদান নিজের সমস্ত ভাষা নিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতাে সুভার হৃদয়ে আছড়ে পড়ত। এই ভাষার বিস্তার যেন বিশ্বব্যাপী। এভাবেই প্রকৃতি বিভিন্ন শব্দের মধ্য দিয়ে সুভার ভাষার অভাব পূরণ করেছিল।
প্রশ্ন ১০। সুভার সাথে গাভী দুটির সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল গাভী দুটি।
সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু গাভী দুটি হলাে সর্বশী ও পাঙ্গুলি। এদের সাথে ‘সুভার’ অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সুভা কখন এদের আদর করত এবং কখন ভৎসনা করত– এরা সব বুঝত। সুভা নিয়মিত তিনবার গােয়ালঘরে নিয়ে এদের খোঁজ নিত। এমনকি সুভার মনের ভাষা, মর্মবেদনা এরা বুঝতে পারত। সুভার বাহুতে শিং ঘষে সুভাকে এরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করত। সুভার কথাহীন করুণ সুর এরা ভালাে করে চিনত। সুভাকে এরা বন্ধুই মনে করত।
প্রশ্ন ১১। বিড়ালটি সুভার কাছে গিয়ে কী করত?
উত্তর : বিড়ালটি সুভার কাছে গিয়ে আদর নিত। সুভার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম একটি প্রাণী বিড়াল। সুভা বসে থাকলে বিড়ালটি যখন তখন নিঃসংকোচে এসে তার গরম কোলে বসে সুখনিদ্রার আয়ােজন করত। সুভা গলায় ও পিঠে হাত বুলিয়ে দিলে বিড়ালটির ঘুমিয়ে পড়ত।
প্রশ্ন ১২। প্রতাপ কেমন ছিল?
উত্তর : প্রতাপ নিতান্ত অকর্মণ্য ছিল।
গোঁসাইদের ছােট ছেলে প্রতাপ অকর্মণ্য বলে বাবা-মা তার ওপর থেকে সব রকম আশা ত্যাগ করেছিল। সে তার সংসারের কোনাে কাজে না লাগলেও অন্য সবার সব কাজে লাগত। সে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে পছন্দ করত। গ্রামে দু-চারটে অকর্মণ্য লােক থাকেই যারা সব সময় অন্যের উপকারে লাগে, প্রতাপ ছিল তেমনি একজন পরােপকারী ব্যক্তি।
প্রশ্ন ১৩। সুভা ও প্রতাপের সম্পর্ক কেমন ছিল?
উত্তর : সুভা ছিল প্রতাপের মাছ ধরার সঙ্গী। তাদের সম্পর্ক ভালাে ছিল।
প্রতাপ ছিপ ফেলে মাছ ধরতে খুব পছন্দ করত। তেঁতুলতলায় সুভা বসে থাকত এবং প্রতাপ কিছু দূরে ছিপ ফেলে পানির দিকে তাকিয়ে থাকত। প্রতাপের জন্য সুভা একটি করে পান বানিয়ে নিয়ে যেত। সুভা খুব চেষ্টা করত প্রতাপকে কোনাে একটা কাজে সাহায্য করার জন্য, যেন সে বুঝতে পারে যে সুভাও কারও কাজে লাগতে পারে। প্রতাপ মাছ ধরায় ব্যস্ত থাকলে সুভা মনে মনে অলৌকিক কোনাে ক্ষমতা আশা করত, যেন সে তা দেখে অবাক হয়। সুভার সাথে প্রতাপের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
প্রশ্ন ১৪। পূর্ণিমার রাতে সুভা কী করেছিল?
উত্তর : পূর্ণিমার রাতে সুভা নিজেকে চেনার চেষ্টা করেছিল।
পূর্ণিমার রাতে একবার সুভা দরজা খুলে ভয়ে ভয়ে মুখ বের করে দিয়ে পূর্ণিমা দেখছিল। তার কাছে মনে হয়েছিল এই পূর্ণিমা রাতও যেন তার মতাে একা এবং নির্বাক। সে নিজের অস্তিত্ব এবং নিজের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে অনুভূতি লাভ করে। অনেক কিছু বুঝতে চায়, কথা বলতে চায়, পারে না। চারদিকের সমস্ত নির্জনতা যেন তাকে ছাপিয়ে ওঠে। আর এই নিস্তব্ধ প্রকৃতির মধ্যে একটি মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকে, সুভা সেই বিষয়টিও অনুভব করে।
প্রশ্ন ১৫। প্রতাপের দিকে সুভা কেন মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতাে তাকিয়ে ছিল?
উত্তর : সুভার বর পাওয়া গেছে, সে বিয়ে করে চলে যাবে, বিয়ের পর যেন সুভা তাকে না ভােলে প্রতাপের মুখে এমন কথা শুনে সুভা তার দিকে মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতাে তাকিয়ে ছিল।
প্রতাপ মাছ ধরার সময় সুভা একদিন তার কাছে গেলে প্রতাপ তাকে বলে যে, তার বর খুঁজে পাওয়া গেছে। তার বিয়ে হবে। বিয়ের পর সে যেন সবাইকে ভুলে না যায়। এ কথা শুনে সুভা প্রতাপের দিকে এমনভাবে তাকায়, যেন মর্মবিদ্ধ হরিণী শিকারির দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ সুভা বিয়ের জন্য রাজি ছিল না। প্রতাপের কাছ থেকে কথাটি শুনে তার মােটেই ভালাে লাগেনি। অত্যন্ত কষ্ট পায় বলে সুভা এভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিল।
আরও,
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ সুভা
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ বই পড়া
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ অভাগীর স্বর্গ
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ পল্লিসাহিত্য
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ আম আঁটির ভেঁপু
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ প্রবাস বন্ধু
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ মমতাদি
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ পয়লা বৈশাখ
▶জ্ঞান ও অনুধাবন মূলকঃ একাত্তরের দিনগুলো