প্রশ্ন ১। একই অফিসে সমান বেতনে চাকরি করেন জনাব শফিক ও জনাব শাহেদ। অথচ জীবনযাপনে উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শফিক সাহেব তার উপার্জিত অর্থে সংসার চালান; ছেলে মেয়ের লেখাপড়া, ভরণ-পােষণ এবং বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসা করান। তারপরও সুযােগ পেলে দরিদ্র পথশিশুদের সাহায্য করে তাদের মুখে হাসি ফোটান। কিন্তু শাহেদ সাহেবের এ সকল কাজে সময় নেই। অল্প সময়ে তিনি গাড়ি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন। কদিন আগে মাদকবিরােধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ তাকে আটক করে।
ক. সুখী মানুষ’ নাটিকার কবিরাজের মতে কোনটি খুব কঠিন কাজ?
খ. মােড়লের মৃত্যুর ব্যাপারে রহমত খুব উদ্বিগ্ন ছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের জনাব শাহেদের মধ্যে সুখী মানুষ’ নাটিকার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “উদ্দীপকের শফিক সাহেব সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলসুরকেই ধারণ করে আছে”- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করাে।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। সুখী মানুষ’ নাটিকার কবিরাজের মতে সুখী মানুষের জামা সংগ্রহ করা খুব কঠিন কাজ।
খ। মােড়লের প্রতি গভীর আন্তরিকতার কারণে রহমত ডলের মৃত্যুর ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন ছিল।
অনেক দিন থেকেই রহমত মােড়লের চাকর হিসেবে নিয়ােজিত রয়েছে। দীর্ঘদিন একত্রে থাকার কারণে মােড়লের প্রতি তার গভীর আন্তরিকতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই বলা যায়, মােড়লের প্রতি নির্ভরশীলতা ও গভীর আন্তরিকতার কারণেই রহমত মােড়লের মৃত্যুর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল।
গ. উদ্দীপকের জনাব শাহেদের মধ্যে ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়লের অর্থলােলুপ মানসিকতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
মমতাজ উদ্দীন আহমদ রচিত সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল একজন লােভী মানুষ। সম্পদশালী হওয়াই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। মানুষকে নানাভাবে ঠকিয়ে, মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে সে ধনী হয়েছে। নীতিহীন পথে সে সম্পদ উপার্জন করেছে।
উদ্দীপকের শাহেদের মাঝেও আমরা একই মানসিকতার পরিচয় পাই। অনৈতিক উপায়ে অল্পসময়ে সে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে নাটিকার মােড়ল এবং উদ্দীপকের শাহেদ উভয়ই নীতিহীন পথে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অর্থলােলুপ মানসিকতার কারণেই তারা এমনটি করতে পেরেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের জনাব শাহেদের মধ্যে সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়লের মাঝে বিদ্যমান অর্থলিপ্সার দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ। সৎ, পরিশ্রমী ও নির্লোভ মানসিকতার অধিকারী হওয়ায় উদ্দীপকের শফিক সাহেব যেন সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলসুরকেই ধারণ করে আছে।
সুখী মানুষ’ নাটিকায় দেখানাে হয়েছে, অন্যায় ও অনৈতিকভাবে উপার্জিত অর্থবিত্তই মানুষের অশান্তির মূল কারণ। বরং সৎপথে নিজ পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করলেই জীবনে শান্তি মেলে। তাই নীতিহীন পথে সম্পদ উপার্জনের পথ পরিহার করাই উত্তম। নাটিকায় উল্লিখিত সুখী মানুষের পরনে জামা পর্যন্ত ছিল না, সে প্রতিদিন কাঠ কেটে যা পেত তাই দিয়ে জীবন অতিবাহিত করত। আর এ কারণেই তার মনে শান্তি ছিল।
উদ্দীপকের শফিক সাহেব জানতেন অসৎ পথে অর্থ উপার্জনে কোনাে শান্তি নেই। তাই তিনি শত কষ্টেও নিজের সততা, পরিশ্রম ও নীতিকে বিসর্জন দেননি। বরং সৎ পথে পরিশ্রম করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। আর এভাবেই তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করতেন। অপরের বিপদে সাধ্যমতাে সাহায্য করতেন। পরিশেষে বলা যায়, লােভী মানসিকতা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, আর নির্লোভ মানসিকতা মানুষকে দেয় মুক্তির স্বাদ। জীবনে আনে প্রশান্তি। উদ্দীপকের শফিক সাহেবের মাঝে যে সৎ, পরিশ্রমী ও নির্লোভ মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় তা মূলত নাটিকাটির সুখী মানুষের মানসিকতার বাস্তব প্রতিফলন। সুতরাং, “উদ্দীপকের শফিক সাহেব ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলসুরকেই ধারণ করে আছে।” মন্তব্যটি যৌক্তিক।
প্রশ্ন ২। করিমের বেতন তেমন কিছু নয়। নিজের শ্রমের টাকায় যেদিন খাদ্য কিনতে পারে সেদিন খায়, যেদিন পারে না, না খেয়ে থাকে। তবুও সে নিজেকে সুখী মনে করে। কারণ সে বিশ্বাস করে, সম্পদের মধ্যে সুখ নিহিত থাকে না।
ক. মােড়ল কার মুরগি জোর করে জবাই করে খেয়েছে?
খ. সবাই অসুখী কারও সুখ নেই’- ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় কেন এ কথা বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের করিম সুখী মানুষ’ নাটিকার কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের করিমের বিশ্বাসের বিষয়টি ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার আলােকে বিশ্লেষণ করাে।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। মােড়ল হাসুর মুরগি জোর করে জবাই করে খেয়েছে।
খ। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় মানুষের অন্তহীন চাহিদার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মানুষের চাহিদার শেষ নেই। যার সব কিছু আছে সেও আরও বেশি কিছু পেতে চায়। মানুষের মাঝে পরিতৃপ্তিবােধ না থাকায় মানুষ সুখী হতে পারে না। আলােচ্য উক্তিটিতে মানুষের সাধ্যের বাইরে চাহিদা পূরণের জন্য মনে যে অশান্তির সৃষ্টি হয় সেই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
গ। উদ্দীপকের করিম সুখী মানুষ’ নাটিকার সুখী মানুষ চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
যার সম্পদের পরিমাণ যত কম, পৃথিবীতে সে মানুষ হিসেবে তত বেশি সুখী। অনৈতিক পথে অঢেল সম্পদের মালিক হলেও প্রকৃত সুখের নাগাল পাওয়া যায় না।
উদ্দীপকের করিম চরিত্রটির সম্পদ বলতে তেমন কিছুই নেই। নিজের শ্রমে উপার্জনের টাকা দিয়ে খাদ্য কিনতে পারলে খায়, যেদিন পারে না সেদিন না খেয়েই থাকে। অর্থাভাব থাকলেও সে নিজেকে সুখী মনে করে। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকাটিতে এরকমই একটি চরিত্র। সুখী মানুষ সারাদিন বনে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে যা পায় তা দিয়েই সে চাল, ডাল কিনে রান্না করে খায়। খেয়েদেয়ে মনের সুখে গান গাইতে গাইতেই ঘুমিয়ে পড়ে। যেহেতু তার কোনাে সম্পদ নেই। তাই চোরের ভয়ও নেই। সে নিজেকে একজন সুখী মানুষ মনে করে।
তাই বলা যায়, উদ্দীপকের করিম চাহিদার স্বল্পতার দিক দিয়ে আলােচ্য নাটিকার সুখী মানুষ চরিত্রের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
ঘ। সুখী মানুষ’ নাটিকাটিতে সম্পদকেই অশান্তির মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
যারা দিন আনে দিন খায় তাদের অধিক সম্পদ উপার্জনের কোনাে আকাঙ্ক্ষা থাকে না। তাই সম্পদ হ হারানাের কোনাে চিন্তাও তাদের করতে হয় না। তারাই মূলত প্রকৃত সুখের নাগাল পায়। তাদের জীবন হয় চিন্তামুক্ত, নিঝঞাট ও শান্তিপূর্ণ ।
উদ্দীপকের করিমও দিন আনে দিন খায়। উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকার কারণে তার কোনাে অশান্তিও নেই। সে বিশ্বাস করে সম্পদের মধ্যে প্রকৃত সুখ নিহিত থাকে না। সুখী মানুষ’ নাটিকাটিতেও একজন সুখী মানুষকে নাট্যকার উপস্থাপন করেছেন, যার কোনাে অর্থ-সম্পদ নেই। সেও দিন আনে দিন খায়। এ কারণেই সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করে। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় নাট্যকার একজন সুখী মানুষ চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্যকে স্পষ্ট করে তুলেছেন। মােড়লের সুস্থতার জন্য তিনি একজন সুখী মানুষের জামার প্রয়ােজনীয়তা দেখিয়েছেন। যখন একজন সুখী মানুষকে তিনি পাঠকের সামনে হাজির করলেন তখন দেখা গেল সে মানুষটির কোনাে সম্পদ নেই। এমনকি গায়ে দেওয়ার মতাে জামাও নেই। কাঠ কেটে নিজের শ্রমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোনােরকমে সে দিনাতিপাত করে। কোনাে সম্পদ না থাকার কারণে তার চুরি হওয়ারও ভয় নেই। তাই শান্তিতে ঘুমানাের ব্যাপারেও তার কোনাে দুশ্চিন্তা নেই। অর্থাৎ নাট্যকার মনে করেন সম্পদই অশান্তির মূল কারণ।
উদ্দীপকের করিমও একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী একজন মানুষ। সেও মনে করে কেবল সম্পদের মাঝেই সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন ৩। নকুল সাহেব এলাকার চেয়ারম্যান। ক্ষমতাবান হলেও সম্পদের পরিমাণ খুবই কম। সৎপথে তিনি যা উপার্জন করেন তা দিয়েই তার সংসার চলে। এলাকার অসহায় মানুষের পাশে তিনি ছুটে যান সবার আগে। মানুষের বিপদে সহায়তা করে তিনি সুখ অনুভব করেন।
ক. মােড়ল কার মুরগি জোর করে জবাই করে খেয়েছে?
খ, ‘মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না’— ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপকে ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকের নকুল সাহেব এবং সুখী মানুষ’ নাটিকার
সুখী লােক উভয়েই সুখী হলেও দু’জনের সুখের তাৎপর্য ভিন্ন”- মন্তবটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। মােড়ল হাসুর মুরগি জোর করে জবাই করে খেয়েছে।
খ। মানসিক প্রশান্তিই সুস্থ থাকার পূর্বশর্ত একথা বােঝাতে হাসু রহমতকে বলেছিল মনের মধ্যে অশান্তি থাকলে ওষুধে কাজ হয় না।
মােড়লের ব্যারাম ভালাে হবে না কেন তা নিয়ে রহমত হাসুকে বললে, হাসু বলছিল মােড়লের ব্যারাম ভালাে হবে না। কারণ, তার মতে মােড়ল অত্যাচারী, পাপী। সেজন্য মােড়লের মনে অশান্তি। হাসু মনে করে, অশান্তি থাকলে ওষুধেও কাজ হয় না।
গ। উদ্দীপকে ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় উল্লেখিত প্রকৃত সুখের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে
সুবৰ্ণপুরের মােড়ল রােগগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী; তার সুখ বা শান্তি কোনােটাই মানুষের ওপর সারাজীবন নানাভাবে অত্যাচার করে মিথ্যে সুখ লাভ করেছে সে। আজ তার প্রয়ােজন হয়েছে প্রকৃত সুখের। কিন্তু প্রকৃত সুখ তার কাছে অধরা, কারণ তা পেতে হলে মন থেকে সকল লােভ-লালসা পরিত্যাগ করতে হবে।
উদ্দীপকে নকুল সাহেব এলাকার চেয়ারম্যান হলেও তাঁর সম্পদের পরিমাণ খুব কম। সৎপথে তিনি যা উপার্জন করেন তাই দিয়ে তার সংসার চলে যায়। মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে যান| তিনি এবং তাদের সাহায্য করে সুখ লাভ করেন। অর্থাৎ নকুল সাহেব লােভ-লালসা পরিত্যাগ করে অন্যের জীবনকে সুখময় করার মধ্য দিয়ে নিজে সুখ লাভ করেছেন। তাই বলব, নাটিকায় উল্লেখিত প্রকৃত সুখের দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের নকুল সাহেব এবং সুখী মানুষ’ নাটিকার সুখী লােকটির সুখের তাৎপর্য ভিন্ন মন্তব্যটি সত্য।
সুখী মানুষ’ নাটিকায় একজন খুব সাধারণ কাঠুরের জীবনের মধ্যে সুখের প্রকৃত স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থ-সম্পদ-ক্ষমতা যে মানুষকে সুখী করে না তা আমরা এ নাটিকার মাধ্যমে বেশ ভালােভাবেই উপলব্ধি করতে পারি । সমস্ত সম্পদ পরিহার করে কাঠুরিয়া অতি সাধারণ জীবনযাপন করেছে এবং তাতেই সুখ লাভ করেছে।
উদ্দীপকে নাটিকার মতােই প্রকৃত সুখের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। নকুল সাহেব ক্ষমতাবান হলেও খুব কম সম্পদের মালিক। অন্যকে সাহায্য করে তিনি আনন্দ পান এবং মানুষের বিপদে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মানুষকে সাহায্য করেই তিনি সুখ লাভ করেন।
উল্লিখিত আলােচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নাটিকার কাঠুরে অন্যকে সাহায্য করেনি, কিন্তু নিজে অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করে সুখ লাভ করেছে। অন্যদিকে, উদ্দীপকের নকুল সাহেব সীমিত সম্পদের মালিক হয়ে অন্যকে সাহায্য করেছে এবং সুখ লাভ করেছে। সুতরাং দুজনকে আমরা ভিন্ন পরিস্থিতিতে সুখ লাভ করতে দেখি । তাই উভয়ের সুখের তাৎপর্যও ভিন্ন।
প্রশ্ন ৪। আলিপুর গ্রামে সুদের কারবারি করেন রফিক মিয়া। তার বাড়িতে দু’তিনজন সশস্ত্র পাহারাদার। তবুও তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। অতিরিক্ত মানসিক চাপে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ক. ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় দৃশ্য সংখ্যা কয়টি?
খ. অন্যের মনে দুঃখ দিলে কোনােদিন সুখ পাবে না’— কে, কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকের রফিক মিয়া সুখী মানুষ’ নাটিকার কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. সম্পদ নয়, মানসিক প্রশান্তিই সুখের প্রধান নিয়ামক’ – উদ্দীপক ও সুখী মানুষ’ নাটিকার আলােকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করাে।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় দৃশ্য সংখ্যা দুইটি।
খ। মােড়ল অন্যকে কষ্ট দিত এবং অন্যের কষ্টে হাসত বলে হাসু মােড়লকে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।
মােড়ল সবসময় অপরকে কষ্ট দিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেছে। সবাইকে অত্যাচার করত সে, এমনকি হাসুর মুরগিও জবাই করে খেয়েছে সে। তাই যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় যখন সে নিজের জন্য সুখ প্রার্থনা করছিল, তখন হাসু একথা বলেছিল।
গ। সুখী না হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের রফিক মিয়া সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
নৈতিক আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হলেও প্রকৃত সুখ লাভ করা যায় না। ‘সুখী মানুষ’ নাটিকায় এই সত্যটিই প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মােড়লকে একজন লােভী ও স্বার্থপর মানুষ হিসেবে দেখানাে হয়েছে। সম্পদশালী হওয়াই তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু বিপুল পরিমাণ সম্পদ তাকে সুখী করতে পারেনি। উদ্দীপকের রফিক মিয়ার মধ্যেও আমরা এ দিকটি লক্ষ করি।
উদ্দীপকের রফিক মিয়া ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়লের মতােই একজন লােভী মানুষ। মানুষ ঠকিয়ে, সুদের কারবারি করে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিন্তু তার মনে শান্তি নেই। তিনি সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন। দুই-তিনজন সশস্ত্র পাহারা দিয়েও তিনি ঘুমাতে পারেন না। সম্পদই তার জীবনে চরম অশান্তি ডেকে এনেছে। আলােচ্য নাটিকার মােড়লও একই অবস্থার শিকার। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের রফিক মিয়া সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ। সম্পদ নয়, মানসিক প্রশান্তিই সুখের প্রধান নিয়ামক উদ্দীপক ও ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার আলােকে উক্তিটি যথার্থ ।
সম্পদ মানুষকে সুখী করতে পারে না বরং অতিরিক্ত সম্পদ অনেক সময় অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুখী মানুষ’ নাটিকায় মােড়ল চরিত্রের মাধ্যমে নাট্যকার এ বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। এখানে সে অবৈধ পথে প্রচুর সম্পদের মালিক হলেও সুখী হতে পারেনি। উদ্দীপকের রফিক মিয়ার মধ্যেও এ দিকটি লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকের রফিক মিয়া অসৎ পথে সুদের কারবারি করে, মানুষ ঠকিয়ে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছে। কিন্তু এই সম্পদই তাকে অসুখী করে তুলেছে। কেননা, যে সুখের আসায় তিনি সম্পদ গড়ে তুলেছেন, সেই সম্পদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই তিনি ঘুমাতে পারেন না। দুই তিনজন সশস্ত্র পাহারাদার রেখেও তিনি সমস্যা দূর করতে পারছেন না।
উদ্দীপক ও সুখী মানুষ’ নাটিকার আলােচনায় এ কথা স্পষ্ট হয় যে, সম্পদ মানুষকে সুখী করতে পারে না। অর্থ-সম্পদের মাঝে সুখ খুঁজে না পেয়ে উদ্দীপকের রফিক মিয়া ও আলােচ্য নাটিকায় মােড়ল মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলেই শেষ পর্যন্ত তারা সুখের নাগাল পাননি। এক্ষেত্রে তারা সম্পদের পরিবর্তে মানসিক তৃপ্তির লক্ষ্যে মহৎ কাজে আত্মনিয়ােগ করলে প্রকৃত সুখী হতে পারতেন। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।
প্রশ্ন ৫। শাইলক একজন সুদের ব্যবসায়ী। তার কাছে নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা বলতে কিছু নেই। সে চায় শুধু টাকা । বিপদগ্রস্ত মানুষকে সে চড়া সুদে ঋণ দেয়। কেউ সুদ পরিশােধ করতে না পারলে তার খেতের ফসল, গােয়ালের গরু, বসতবাড়ির জায়গা সব হারাতে হয়। একবার এক সৎ ব্যবসায়ী অ্যান্টনিওকে হত্যার চক্রান্তে সে দোষী সাব্যস্ত হয়। আদালত তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে।
ক. সুখী মানুষ’ নাটিকার প্রথম সংলাপটি কার?
খ. আমি আমার সব দিয়ে দেব, আমাকে সুখ এনে
দাও।’- মােড়লের এমন মন্তব্যের কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের শাইলকের মধ্যে আমরা সুখী মানুষ নাটিকার কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করি? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপক এবং সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলভাবকে একসূত্রে গাঁথা যায় কি? তােমার মতামত যুক্তিসহকারে উপস্থাপন করাে।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। সুখী মানুষ’ নাটিকার প্রথম সংলাপটি হাসুর।
খ। অসুখী মােড়ল একটুখানি সুখ লাভের আশায় আলােচ্য মন্তব্য করেছে।
মােড়ল এতদিন মানুষকে ঠকিয়ে, মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। কিন্তু যখন সে অসুস্থ হয় তখন প্রচুর অর্থ খরচ করেও সে আরােগ্য লাভ করতে পারছিল না। তাই অসুখে কাতর হয়ে সে আলােচ্য উক্তিটি করেছিল।
গ। উদ্দীপকের শাইলকের মধ্যে আমরা সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল চরিত্রের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করি।
‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর চরিত্র। সে মানুষকে ঠকিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। মােড়ল অত্যাচারী হওয়ায় কেউ তাকে পছন্দ করে না। কারণ সে লােকের কান্না দেখে হাসে এবং সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে।
উদ্দীপকের শাইলক সুদের ব্যবসায়ী। সে অমানবিক এবং অর্থলােভী। বিপদগ্রস্ত মানুষকে সে চড়া সুদে ঋণ দেয় । যথাসময়ে সেই ঋণ শােধ করতে না পারলে খেতের ফসল, গােয়ালের গরু, বসতবাড়ির জায়গা সব দখল করে নেয়। সুতরাং দেখা যায়, শাইলক ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়লের মতােই নিষ্ঠুর, স্বার্থপর ও অত্যাচারী। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শাইলকের মধ্যে আমরা ‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল চরিত্রের প্রতিচ্ছবি লক্ষ করি।
ঘ। উদ্দীপকটি সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলভাবকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ না করায় তাদের একসূত্রে গাঁথা যায় না।
‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল একজন অত্যাচারী, নিষ্ঠুর ও অর্থলােভী চরিত্র । মানুষকে ঠকিয়ে মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে অর্থের পাহাড় গড়ে তােলায় তার মনে শান্তি নেই। ফলে সে অসুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেয় যে সুখী মানুষের জামা গায়ে দিলে মােড়লের অসুখ ভালাে হয়ে যাবে। অনেক খুঁজে একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেলে দেখা যায় যে, তার কোনাে জামা নেই।
সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলভাব হলাে সুখী হতে হলে সম্পদের প্রয়ােজন নেই, সম্পদ না থাকলেও সুখী হওয়া যায় । উদ্দীপকে একজন সুদের ব্যবসায়ীর কথা বলা হয়েছে। যার নাম শাইলক। তার কাছে নৈতিকতা ও মানবিকতার কোনাে মূল্য নেই। কারণ সে অর্থলােভী। সে বিপদগ্রস্ত মানুষকে চড়া সুদে ঋণ দেয়। যথাসময়ে ঋণ পরিশােধ করতে না পারলে সে ঋণগ্রহীতার খেতের ফসল, গােয়ালের গরু, বসতবাড়ি সব দখল করে নেয়। শাইলক একজন সৎ ব্যবসায়ী অ্যান্টনিওকে হত্যার চক্রান্ত করলে সে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়।
‘সুখী মানুষ’ নাটিকার মােড়ল মানুষ ঠকিয়ে যে সম্পদ গড়ে তােলে তা তার কোনাে কাজে লাগে না। উদ্দীপকের শাইলকের চক্রান্ত ধরা পড়লে তার সম্পদও বাজেয়াপ্ত হয়। পাপের সম্পদ ভােগ করতে না পারার দিকটি ছাড়া সুখী মানুষ’ ও উদ্দীপকের মূলভাবের কোনাে মিল নেই। তাই আমি মনে করি যে, উদ্দীপক এবং সুখী মানুষ’ নাটিকার মূলভাবকে একসূত্রে গাঁথা যায় না।