মংডুর পথে ভ্রমণ কাহিনির সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। রাতুল টেলিভিশনে মণিপুরিদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান দেখেছে। মণিপুরিরা নিজেদের তৈরি অতি সাধারণ পােশাক পরে । পুরুষরা ধুতি, পাঞ্জাবি এবং নারীরা কোমরে পেঁচিয়ে পরার মতাে  এক বিশেষ ধরনের পােশাক পরে। এছাড়া ওরা ওড়না জাতীয় “ইন্নাফি’ নামক পােশাক ও ব্লাউজ পরে। 

ক. ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর দেখতে কেমন?

খ. মংডুর মহিলারা চিরম্বাধীন’- বুঝিয়ে বলাে।

গ. মণিপুরি উপজাতীয় পােশাক ও মিয়ানমারের অধিবাসীদের পােশাকের মধ্যে সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. পরনের পােশাক দেখেই মণিপুরি এবং মংডুর অধিবাসীদের সহজে চেনা যায়’- উক্তিটির তাৎপর্য তুলে ধরাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ভিক্ষুদের পরিধেয় চীবর দেখতে সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতাে। 

খ। মংডুর মহিলারা চিরম্বাধীন’ বলতে তাদের ইচ্ছামতাে পেশা বেছে নেওয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকে বােঝানাে হয়েছে। 

মংডু শহরের মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার মধ্য দিয়ে।  নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তারা শহরের রাস্তাঘাটে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে। তারা রাস্তার মােড়ের পানীয়ের দোকান থেকে শুরু করে হােটেল-রেস্তোরার মালকি হওয়ার সুযােগ লাভ করে। এজন্যই তাদের চিরস্বাধীন বলা 

গ। ঐতিহ্যগত দিক থেকে মণিপুরি উপজাতিদের পােশাক এবং মিয়ানমারের অধিবাসীদের পােশাকের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। 

‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীতে লেখক মিয়ানমারের মংডু শহর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। এখানে লেখক মিয়ানমারের ব্যবস্থা  অধিবাসীদের পােশাক-পরিচ্ছদসহ সংস্কৃতির কথা সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারের অধিবাসীদের সকলেই তাদের ঐতিহ্যবাহী পােশাক লুঙ্গি পরিধানের পাশাপাশি শার্ট, বিভিন্ন ধরনের কোট ও টুপি পরিধান করে।

উদ্দীপকেও মণিপুরি উপজাতিদের পােশাকের কথা বর্ণিত হয়েছে। মণিপুরিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পােশাক পরিধান করে। পুরুষেরা ধুতি, পাঞ্জাবি এবং নারীরা কোমরে পেচানাে বিশেষ এক ধরনের পােশাক পরিধানের পাশাপাশি ওড়না জাতীয় ইন্নাফি’ পরিধান করে। ঠিক  তেমনি মংডুর পথে প্রবন্ধে মিয়ানমারের অধিবাসীরাও তাদের  ঐতিহ্যবাহী পােশাক পরিধান করে। এসব পােশাক মূলত নিজেদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে মণিপুরি উপজাতি এবং মিয়ানমারের অধিবাসীদের পােশাকের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ। মিয়ানমারের অধিবাসীরা প্রায় সকলেই তাদের ঐতিহ্যবাহী সাধারণ পােশাক লুঙ্গি পরিধান করে বলেই তাদের পােশাক দেখেই তাদের সহজেই চেনা যায়।

মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীতে মংডুর লােকদের খাদ্যাভ্যাস, অধিবাসীদের পােশাক-পরিচ্ছদ, ধর্মীয় পরিচয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন। মিয়ানমারের অধিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যকে লালন করে। পােশাকের দিক থেকেও তাদের ঐতিহ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।

উদ্দীপকেও মণিপুরিরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পােশাক পরিধান করে। নিজেদের তৈরি পােশাকই পরে তারা। তাছাড়া পুরুষেরা ধুতি, পাঞ্জাবি এবং নারীরা কোমরে পেচাননা পােশাক পরে। তাদেরপােশাক দেখেই তাদের চিনে নেওয়া যায়।

উদ্দীপকেও মণিপুরি উপজাতিদের যেমন তাদের পােশাক দেখেই চেনা যায়, ‘মংডুর পথে’ বর্ণিত মিয়ানমারের অধিবাসীদেরও তাদের পােশাক দেখেই চেনা যায়। মিয়ানমারের অধিবাসীদের সাধারণ পােশাক লুঙ্গি। ছেলে-মেয়ে, পুরুষ-মহিলা সবারই পােশাক এই ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গি। লুঙ্গি পরিধানের কারণেই তাদের চেনা সহজ হয়। তাছাড়া মেয়েরা ব্লাউজ জাতীয় পােশাক এবং ছেলেরা ভিন্ন ধরনের টুপি, কোট পরিধান করে। সুতরাং, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, পােশাক দেখেই মণিপুরি ও মংডুর অধিবাসীদের সহজে চেনা যায়।

প্রশ্ন ২। রহমান সাহেব পেশায় প্রকৌশলী। দাপ্তরিক কাজে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। সেখানকার পরিকল্পিত রাস্তাঘাট দেখে, অত্যাধুনিক আরামদায়ক গাড়িতে চড়ে তিনি অভিভূত হন। সেখানে একটি বিলাসবহুল সুসজ্জিত হােটেলে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। হােটেলে ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, বলরুমসহ যাবতীয় সুবিধাদি পেয়ে তিনি মুগ্ধ হন।

ক. সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতাে বস্ত্রটির নাম কী?

খ. ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগােড়া এই তিন নিয়ে মিয়ানমার।’- বাক্যটি বুঝিয়ে লেখাে।

গ. উদ্দীপকে হােটেলে রহমান সাহেবের অবস্থা এবং ‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনিতে লেখকের অবস্থার তুলনামূলক আলােচনা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণ কাহিনীর সমগ্র ভাব

প্রকাশ করেনি।”— মূল্যায়ন করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। সেলাইবিহীন লুঙ্গির মতাে বস্তুটির নাম থামি ।

খ। মিয়ানমারের সংস্কৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক আলােচ্য  উক্তিটি করেছেন।

মংডুর অনেক জায়গা ঘুরেও লেখক কারও পরনে প্যান্ট দেখেননি। বর্মিরা সবাই লুঙ্গি পরেছেন। অফিস কাচারিতেও মানুষ লুঙ্গি পরেছে। আবার মিয়ানমারে ফুঙ্গি তথা বৌদ্ধ ভিক্ষুর সংখ্যাও বেশি। বৌদ্ধদের ধর্ম-উপাসনালয় প্যাগােডার সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তাই লেখক বার্মাতে এসবের আধিক্য দেখে বলেছেন ‘লুঙ্গি, ফুঙ্গি ও প্যাগােডা এ তিন নিয়ে মিয়ানমার।

গ। উদ্দীপকে হােটেলে রহমান সাহেবের অবস্থা এবং ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিতে লেখকের অবস্থার মধ্যে সুযােগ-সুবিধাগত বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়।

মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনির লেখক যে হােটেলে রাত্রি যাপন করেন তার অবস্থা খুবই শােচনীয়। আর উদ্দীপকের রহমান সাহেব যে হােটেলে ওঠেন সেটা বিলাসবহুল ও সুসজ্জিত হােটেল। এখানেই তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে।

উদ্দীপকের প্রকৌশলী রহমান সাহেব দাপ্তরিক কাজে সিগাপুরে যান। সেখানে একটি বিলাসবহুল হােটেলে তার থাকার ব্যবস্থা হয়। হােটেলে ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, বলরুমসহ যাবতীয় সুবিধাদি পেয়ে  তিনি মুগ্ধ হন। অন্যদিকে মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীর লেখক যে হােটেলে উঠেছিলেন তার অবস্থা ছিল খুবই শােচনীয়। কাঠের মেঝে, পর্তুগিজরা  কাঠের দেওয়াল, উঁচু-নিচু চষা জমির মতাে বিছানা এবং মশারিতে বিচিত্র ও উৎকট দুর্গন্ধ। লেখকের মতে, সেখানকার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোনাে ভদ্রলােক সেখানে থাকাটা অসম্ভব বলেই মনে করবেন। 

অথচ উদ্দীপকের রহমান সাহেব এমন একটি হােটেলে উঠেন যেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযােগ-সুবিধা বিদ্যমান। এদিক দিয়ে উদ্দীপকের রহমান সাহেবের সাথে ‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনির লেখকের অবস্থার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ। উদ্দীপকে ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনীর একটি দিককে ধারণ করলেও সমগ্র ভাব প্রকাশ করেনি।

মংডুর পথে রচনাটি একটি ভ্রমণকাহিনি। এখানে লেখক দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। এখানে লেখকের হােটেলে রাত্রি যাপন ছাড়াও মংডুর মানুষের আচার-সংস্কৃতির বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু উদ্দীপকে কেবল রহমান সাহেবের  হােটেলে রাত্রি যাপনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকের রহমান সাহেব একজন প্রকৌশলী। তিনি দাপ্তরিক  কাজে সিঙ্গাপুরে যান। সেখানকার পরিকল্পিত রাস্তাঘাট দেখে, আরামদায়ক গাড়িতে চড়ে বিলাসবহুল হােটেলে থাকার অভিজ্ঞতা  ব্যক্ত হয়েছে। এই হােটেলে ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, বলরুমসহ যাবতীয় সুবিধাদি পেয়ে তিনি মুগ্ধ হন।

‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিতে লেখকের হােটেলে রাত্রি যাপন ছাড়াও মংডু সফরের সকল বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। অথচ উদ্দীপকে কেবল রহমান সাহেবের সিঙ্গাপুরে বিলাসবহুল হােটেলে রাত্রি  যাপনের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। মংডুর পথে রচনায় যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলাে উদ্দীপকে অনুপস্থিত। এই রচনায় লেখকের হােটেলে রাত্রিযাপন ছাড়াও মংডুর মানুষের পােশাক-পরিচ্ছদ,  খাদ্যাভ্যাস, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। কিন্তু উদ্দীপকে এগুলাে আসেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির সমগ্র ভাব প্রকাশ করেনি।

 

প্রশ্ন ৩।  রাচি থেকে পালামৌ যেতে যেতে যখন দূর থেকে পালামৌ দেখা যায়, তখন মনে হয় যেন মাটিতে মেঘ করেছে। এ দৃশ্য এতই মনোেহর যে, ভুলবার নয়। পালামৌ প্রবেশ করতে দেখা যায় নদী, গ্রাম, অসংখ্য পাহাড়, পাহাড়ের পর পাহাড় আবার পাহাড়। এ যেন বিচলিত নদীর সংখ্যাতীত তরঙ্গ।

ক. প্যাগােডা কী?

খ. লেখকের মুখ, চোখ, কান- ও হৃদয় আনন্দ আবেগে উপচে পড়ল কেন?

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মংডুর পথে ভ্রমণ কাহিনীর বৈসাদৃশ্য দেখাও।

ঘ.“উদ্দীপক ও মংডুর পথে উভয় কাহিনীতেই প্রকাশ পেয়েছে পর্যটকের উচ্ছাস।”- মন্তব্যটি বিচার করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। প্যাগােডা হল বৌদ্ধমন্দির।

খ। নতুন সংস্কৃতির মাঝে এসে নতুন কিছু জানার আনন্দেই লেখকের মুখ, চোখ, কান ও হৃদয় আনন্দ আবেগে উপচে পড়ল ।

মংডু আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সীমান্তবর্তী একটা শহর। এ শহরের সাথে আমাদের দেশের মানুষের একটা সম্পর্ক রয়েছে। তারপরও মিয়ানমার সম্পূর্ণ আলাদা সাংস্কৃতিক একটি জাতি। এই নতুনকে জানতে পারবে এরূপ অনুভূতির কারণে লেখকের হৃদয় আবেগে উপচে পড়ল।

গ। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাথে ‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীর  বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষকে মুগ্ধ করে। উদ্দীপকেও  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি লেখকের মুগ্ধতার বিষয়টি ফুটে  উঠেছে। কিন্তু মংডুর পথে’ ভ্রমণ কাহিনিতে লেখক মায়ানমারের মংডু শহর ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

উদ্দীপকে ‘পালামৌ’ পরগনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি উঠে এসেছে। এখানে লেখকের অভিজ্ঞতায় স্থান পেয়েছে পালামৌ এর নদ-নদী, গ্রাম ও অসংখ্য পাহাড়। পাহাড়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী লেখক বলেছেন, এ যেন বিচলিত নদীর সংখ্যাতীত লেখক তরঙ্গ। উদ্দীপকে ‘পালামৌ’ পরগনার সৌন্দর্য ছাড়া সেখানকার জনজীবন সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়না । কিন্তু ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনিতে মংডুর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়াও জনজীবন থেকে  সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ বিষয়টিই উদ্দীপক ও আলােচ্য রচনার মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে।

ঘ। উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ উভয় কাহিনিতেই প্রকাশ পেয়েছে পর্যটকের উচ্ছ্বাস- মন্তব্যটি যথার্থ।

মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনিতে লেখক মায়ানমারের মংডু শহর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। এখানে লেখক মংডুর মানুষের পােশাক, পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। আর উদ্দীপকে পালামৌ-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা এসেছে।

উদ্দীপকে লেখক পালামৌ শহরে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। পালামৌ’ এর নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গ্রাম সবকিছু লেখককে মুগ্ধ করে। পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লেখক বলেছেন এ যেন বিচলিত নদীর সংখ্যাতীত তরঙ্গ মংডুর পথে ভ্রমণ কাহিনিতে লেখক মংডু শহরের ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। একইভাবে উদ্দীপকের লেখকও ‘পালামৌ” শহর ঘুরতে যান। তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই তিনি উদ্দীপকটিতে তুলে ধরেছেন। তারই অংশ হিসেবে উদ্দীপকে পালামৌ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনােজ্ঞ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ উদ্দীপক এবং আলােচ্য রচনায় লেখকদ্বয় তাদের আনন্দদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপক ও মংডুর পথে উভয় কাহিনীতেই প্রকাশ পেয়েছে পর্যটকের উচ্ছাস’-মন্তব্যটি যথার্থ।

 

প্রশ্ন ৪। প্রশ্ন ৬ রনির মনে প্রশ্ন জাগে নেপালিদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। নেপাল প্রবাসী মামা তাকে জানান, নেপালি খাদ্য দুত রান্না করা যায় এবং খেতে দারুণ সুস্বাদু, ‘গােড্রোক টিডাে’ নেপালের একটি জনপ্রিয় খাবার যা গম ও সবুজ সবজি এবং ভুট্টা দিয়ে তৈরি। নেপালি শিশুরা ‘ভেজিটেবল টুম্পা’ নামে খাদ্য খেতে পছন্দ করে। এছাড়া ‘আলু টমা’ তাদের একটি ব্যতিক্রমধর্মী খাবার।

ক. মংডু কোথায় অবস্থিত?

খ. মংডুতে মহিলারা চির স্বাধীন কেন?

গ. উদ্দীপকের মন্তব্য কীভাবে ‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?

ঘ. ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে’ উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ ভ্রমণকাহিনির আলােকে বিশ্লেষণ করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। মংডু মিয়ানমারের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত।

খ। মংডুর মেয়েদের পছন্দমতাে পেশা বেছে নেওয়া এবং চলাফেরার স্বাধীনতা থাকায় তাদেরকে চিরম্বাধীন বলা হয়েছে।

মংডু শহরের মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার মধ্য দিয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তারা শহরের রাস্তাঘাটে অবাধে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। রাস্তার মােড়ের পানের দোকান থেকে শুরু করে হােটেল-রেস্তোরার মালকিন হওয়ার সুযােগও তারা লাভ করে। আর এজন্যই তাদেরকে চিরস্বাধীন বলা হয়েছে।

গ। স্বতন্ত্র খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে উদ্দীপকের মন্তব্য ‘মংডুর পথে’  ভ্রমণকাহিনীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

জগতে নানা জাত-সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এক এক সম্প্রদায়ের আচার-সংস্কৃতি এক এক রকম। প্রত্যেক জাতির পােশাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে যেগুলাে তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। ঠিক তেমনিভাবে উদ্দীপকের নেপালিরা এবং আলােচ্য ভ্রমণকাহিনীতে মংডুর অধিবাসীরা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের  অধিকারী।

উদ্দীপকে নেপালিয়ানদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। রনির মনে নেপালিয়ানদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন জাগলেও তার নেপাল প্রবাসী মামা রনির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে  নেপালি খাদ্যের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, নেপালি খাদ্য দ্রুত রান্না করা যায় এবং খেতেও দারুণ সুস্বাদু হয়। গােড্রোক-টিডাে’ নামক খাবারটি নেপালের একটি জনপ্রিয় খাবার যা গম ও  সবুজ সবজি এবং ভুট্টা দিয়ে তৈরি হয়। আবার নেপালি শিশুরা  ভেজিটেবল টুম্পা’ নামক খাদ্য খেতে বেশ পছন্দ করে। এছাড়াও ‘আলু টমা তাদের একটি ব্যতিক্রমধর্মী খাবার। ‘মংডুর পথে  ভ্রমণকাহিনীতেও মিয়ানমারের খাদ্যাভ্যাসের বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন- পােড়া লঙ্কা ভর্তা তার সাথে কচি লেবুপাতা, নুডলস, পােড়া লঙ্কাগুঁড়া, তেঁতুলের টক, কলার ঘােড় দিয়ে তৈরি সবজি স্যুপ, ডিমসেদ্ধ এগুলাে মিয়ানমারের প্রচলিত খাবার। তাদের এ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের খাবার তাদের ঐতিহ্যকে বহন করে।

আবার উদ্দীপকের নেপালিদের স্বতন্ত্র খাবার তাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আছে। এভাবে খাদ্যাভাসের স্বাতন্ত্রের দিক উদ্দীপকের নেপালীদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কিত মন্তব্যটি ‘মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের ভিন্নতা  রয়েছে।

বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর মধ্যে যেমন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে ঠিক  তেমনিভাবে ভিন্নতা রয়েছে খাদ্যাভ্যাসেও। এক জাতির খাদ্যাভ্যাসের সাথে অন্যজাতির খাদ্যাভ্যাস মেলে না। তেমনিভাবে মিয়ানমারের জনগােষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ও স্বতন্ত্র খাদ্যাভ্যাস।

উদ্দীপকের রনির মনে নেপালের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন জাগে । তার  সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় সে তার নেপাল প্রবাসী মামার কাছে। | মামা তাকে নেপালের খাদ্যের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানান। মামা  বলেন, নেপালি খাদ্য রান্না করতে কম সময় লাগলেও তা খেতে দারুণ সুস্বাদু। গেড্রোক টিডাে নেপালের একটি জনপ্রিয় খাবার নেপালি শিশুরা ভেজিটেবল টুম্পা’ নামক খাদ্য পছন্দ করে। 

মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীতে লেখক মিয়ানমারবাসীর অন্যান্য  পরিচয়ের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের পরিচয়ও তুলে ধরেছেন। মিয়ানমারের খাবারগুলাের মধ্যে রয়েছে পােড়া লঙ্কা ভর্তা, লুডলস,  তেতুলের টক, কলার থােড় দিয়ে তৈরি সবজি স্যুপ, ডিমসেদ্ধ ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য সবজি আবার উদ্দীপকের নেপালিদেরও রয়েছে স্বতন্ত্র খাদ্যাভ্যাস। এগুলাে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের খাদ্যাভ্যাস একরকম আবার ভারতের খাদ্যাভ্যাস অন্যরকম। সুতরাং আমরা বলতে পারি, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে’- উক্তিটি যথার্থ।

 

প্রশ্ন ৫। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান, রামগড় এলাকার চাকমা, কুকি ও মুরং মেয়েরা এবং সিলেটের মাছিমপুর অঞ্চলের মণিপুরি মেয়েরা তাদের নিজেদের এবং পুরুষদের পরিধেয় বস্ত্র বুনে থাকে। এ কাপড়গুলাে সাধারণত মােটা ও টেকসই হয়। নকশা, রং ও বুনন কৌশল সবই তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী হয়। মেয়েরা কোমর ঢাকা ব্লাউজ ও লুঙ্গির মতাে কাপড় পরিধান করে। 

ক. ‘ম্রাউক-উ’ কোথায়?

খ. লেখক হােটেলে রাত কীভাবে কাটিয়েছিলেন?

গ. মংডুর পথে’ রচনার কোন বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকে ও ‘মংডুর পথে’ রচনার উদ্দেশ্য বিভিন্ন দেশের প্রতি আগ্রহ ও ভালােবাসা সৃষ্টি করা।”- উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ম্রাউক-উ’ আরাকান রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজধানী।

খ। লেখক হােটেলে অত্যন্ত শােচনীয়ভাবে রাত কাটিয়েছিলেন।

লেখক মংডুতে যে হােটেলটি খুঁজে পেয়েছিলেন সেটি বেড়ার ঘরের মতাে। কাঠের মেঝে, কাঠের নড়বড়ে দেয়াল। বিছানায় তােশক যেন উঁচু-নিচু চষা জমির মতাে। মশারিতে বিচিত্র ও বিপরীতধর্মী নানা রকম উকট দুর্গন্ধ। মাথার উপর ফ্যান আছে, কিন্তু রাত নয়টার পর বিদ্যুৎ থাকে না। আবার রাতে বাতিও থাকে না। এ ধরনের অনুন্নত ও অস্বাস্থ্যকর হােটেলে লেখককে অনেক কষ্ট করে রাত কাটাতে হয়েছে।

গ। মংডুর পথে’ রচনায় একটি জাতিগােষ্ঠীর স্বতন্ত্র পােশাকপরিচ্ছদের পরিচয় পাওয়া যায় যা উদ্দীপকেও প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রত্যেকটি জাতিগােষ্ঠীর রয়েছে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি। পােশাক-পরিচ্ছদও সংস্কৃতির একটি অংশ। উদ্দীপকে এবং আলােচ্য রচনায় সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে পােশাকপরিচ্ছদের বর্ণনা এসেছে।

উদ্দীপকে ক্ষুদ্র জাতিগােষ্ঠীর পােশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, বান্দরবান ও রামগড় এলাকার চাকমা কুকি ও মুরং মেয়েরা এবং সিলেটের মাছিমপুর অঞ্চলের মণিপুরি মেয়েরা তাদের নিজেদের এবং পুরুষদের পরিধেয় বস্ত্র বুনে থাকে। এ কাপড়গুলাে সাধারণত মােটা ও টেকসই হয়। নকশা, রং ও বুনন কৌশল সবই তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী হয়। মেয়েরা কোমর ঢাকা ব্লাউজ ও লুঙ্গির মতাে কাপড় পরিধান করে। মংডুর পথে রচনায়ও লেখক মিয়ানমারের জনগণের পােশাক পরিচ্ছদের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। মিয়ানমারের ছেলে-বুড়াে, যুবক-যুবতী,  হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবাই লুঙ্গি পরে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা চীবর পরেন। বর্মি নারীরা ‘থামি’ নামের এক  ধরনের সেলাইবিহীন লুঙ্গি পরেন। এ পােশাকগুলাে তারা  নিজেরাই তৈরি করে। যা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ বৈশিষ্ট্যই ‘মংডুর পথে’ রচনা ও উদ্দীপকে একইভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। নানা জাতিগােষ্ঠীর সংস্কৃতি তুলে ধরে উদ্দীপক ও ‘মংডুর পথে’ রচনা বিভিন্ন দেশের প্রতি আমাদের।আগ্রহ ও ভালােবাসা সৃষ্টি করেছে।

অজানাকে জানার কৌতূহল মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। উদ্দীপক মিয়ানমার  ও মংডুর পথে’ রচনা অজানা, অচেনা অঞ্চলের ইতিহাস ও একটা সংস্কৃতিকে তুলে ধরে আমাদের মনে ঐসব দেশের প্রতি আগ্রহ ও ভালােবাসা সৃষ্টি করেছে।

উদ্দীপকে রাঙামাটি, বান্দরবান এবং রামগড় এলাকার ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পােশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা এসেছে। সিলেটের মাছিমপুরের মণিপুরিদের পােশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনাও আমরা দেখতে পাই আলােচ্য উদ্দীপকে। এসব নৃগােষ্ঠীর মেয়েরা তাদের নিজেদের এবং পুরুষদের পরিধেয় বস্ত্র বুনে থাকে। তাদের নিজেদের হাতে তৈরি এ কাপড়গুলাে সাধারণত মােটা ও টেকসই হয়। নকশা,রং ও বুনন কৌশল সবই তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী হয়। মেয়েরা কোমর ঢাকা ব্লাউজ ও লুঙ্গির মতাে কাপড় পরিধান করে। এ কাপড়গুলাে তাদের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

মংডুর পথে ভ্রমণকাহিনীতে লেখক আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমার ভ্রমণের নানা অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছে রচনায়। লেখক মিয়ানমারের মানুষের পােশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যবসা-বাণিজ্য, ধর্ম, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তুলে পােশাক  ধরেছেন। তাই এ রচনাটি পড়লে আমরা ঐ দেশের অর্থনীতি,  জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির রূপ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবাে। ওই দেশ সম্পর্কে আমাদের মনে আগ্রহ ও ভালােবাসা সঞ্চারিত হবে। উদ্দীপকেও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর সংস্কৃতির বর্ণনা এসেছে। যা আমাদের মনে ঐ অঞ্চল এবং ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের  সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

Leave a Comment