প্রশ্ন ১। অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে শিক্ষক বলেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেনি। কিছু সংস্কৃত শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়নি। তার অনেক কারণ আছে। সংস্কৃত হলাে মৃতভাষা। সাধারণ মানুষ কথা বলত বিভিন্ন রকম প্রাকৃত ভাষায়। প্রাকৃতের পরবর্তী রূপ অপভ্রংশ। এই অপভ্রংশ থেকে বিভিন্ন ভাষার মতােই বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে। ভাষা পণ্ডিতগণও তাই প্রমাণ করেছেন।
ক. পৃথিবীর আদি ভাষাগােষ্ঠীর নাম কী?
খ. কীভাবে একটি নতুন ভাষার জন্ম হয়?
গ. সংস্কৃতকে মৃত ভাষা বলার কারণ বাংলা ভাষার জন্মকথা প্রবন্ধের আলােকে ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. ভাষা পণ্ডিতগণ কীভাবে বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস প্রমাণ করেছেন? উদ্দীপক ও বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলােকে বিশ্লেষণ করাে।
১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। পৃথিবীর আদি ভাষা গােষ্ঠীর নাম ‘ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাগােষ্ঠী।
খ। ভাষার নানারকম বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন ভাষার জন্ম হয়।
ভাষা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বদলে যায় শব্দ। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত রূপের সঙ্গে মূল ভাষার বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয় এবং জন্ম নেয়।
গ। সংস্কৃতের ব্যবহার কর্মক্ষেত্রে না থাকায় এবং এর প্রচলন ধীরে ধীরে কমতে থাকায় একে মৃত ভাষা বলা হয়েছে।
সংস্কৃত ছিল উঁচু শ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা। সর্বসাধারণের জন্য এ ভাষা প্রচলিত ছিল না। তাছাড়া সংস্কৃত কথ্য ভাষা ছিল না, একে লেখার ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হতাে। তাই মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজে প্রাকৃত ভাষা ব্যবহার করত।
ভাষার ধর্মই হলাে বদলে যাওয়া। মানুষের মুখে মুখে ভাষা বদলে যায়। আর এ পদ্ধতিতেই ভাষা, নতুন রূপ পায়। যদিও মূল ভাষার সাথে নতুন ভাষা পরিবর্তিত ভাষার অনেক মিলই চোখে পড়ে। কিন্তু সংস্কৃত ভাষা যেহেতু সবার ব্যবহারের ভাষা ছিল না তাই এর আবেদনও ছিল সীমাবদ্ধ। এ কারণেই পরিবর্তিত ভাষা বাংলার ওপর সংস্কৃতের চেয়ে প্রাকৃতের প্রভাবই বেশি পাওয়া যায়। পরিবর্তিত কোনাে ভাষার সাথেই সংস্কৃতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পাওয়া যায় না। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের আলােকে তাই বলা যায়, ধীরে ধীরে সংস্কৃতের হারিয়ে যাওয়ার কারণেই সংস্কৃতকে মৃত ভাষা বলা হয়েছে।
ঘ। ভাষা পণ্ডিতগণ খুব যৌক্তিক এবং সুস্পষ্টভাবেই বাংলা ভাষার জন্মের ইতিহাস প্রমাণ করেছেন।
একসময় মনে করা হতাে বাংলা ভাষা এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। তখনকার দিনে সংস্কৃত ছিল উঁচু শ্রেণির মানুষের লেখার ভাষা। সাধারণ মানুষ কথা বলত প্রাকৃত ভাষায়। আর প্রাকৃত ভাষা থেকেই বাংলা ভাষার জন্ম।
উদ্দীপকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ক্লাসে শিক্ষক বলেন, সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেনি। এ ভাষার কিছু শব্দ বাংলায় ব্যবহার হয় বটে কিন্তু সংস্কৃত ভাষা বাংলার আদিরূপ নয়। এ বিষয়ে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। বহু প্রাকৃতের একটির নাম মাগধী প্রাকৃত। জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসনের মতে, মাগধী প্রাকৃতের কোনাে এক পূর্বাঞ্চলীয় রূপ থেকে জন্ম নেয় বাংলা ভাষা। পরে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও বিকাশের বিস্তৃত ইতিহাস পাওয়া যায় ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। তবে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে ব্যাকরণবিদ পাণিনির হাতেই চূড়ান্তভাবে লিপিবদ্ধ হয় বাংলা ভাষার ইতিহাস। তাঁর মতে, প্রাকৃত ভাষাগুলাের শেষ স্তর অপভ্রংশ আর এখান থেকেই জন্ম বাংলা ভাষার। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা। আর ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেন গৌড়ী প্রাকৃতের পরিণত অবস্থা, গৌড়ী অপভ্রংশ থেকেই উৎপত্তি ঘটে বাংলা ভাষার। ভাষা পণ্ডিতগণ, এভাবেই বাংলা ভাষার জন্ম ইতিহাস প্রমাণ করেছেন।
প্রশ্ন ২। তা কাহেরি ঘিনি মেলি আচ্ছ হু কীস।
বেঢ়িল হাক পড়অ চৌদীস ধু
আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।
-চর্যাপদ
আধুনিক বাংলা: কাকে নিয়ে কাকে ছেড়ে আহ কীসে?
চারদিক বেড়িয়ে হাঁক পড়েছে এসে।
আপন মাংসে হরিণ বৈরী।
ক. ভারতীয় আর্যভাষার প্রথম স্তরটির ব্যাপ্তি উল্লেখ করাে?
খ. শত বছর পূর্বেও বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে কারাে স্পষ্ট ধারণা ছিল না কেন? ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপকে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের কোন দিকটি পরিলক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্ৰধর মূলভাবকে আংশিক ধারণ করেহে”—মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ভারতীয় আর্যভাষার প্রথম স্তরটির ব্যাপ্তিকাল খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ।
খ। বাংলা ভাষা নিয়ে প্রয়ােজনীয় গবেষণা না হওয়ায়শত বছর পূর্বেও এ ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে কারাে স্পষ্ট ধারণা ছিল না।
বাংলা ভাষার উৎপত্তি বহুকাল হলেও পূর্বে এ ভাষা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। এর ফলে অনেকেই সংস্কৃত থেকেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করতেন। পরবর্তীতে নানা গবেষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। অর্থাৎ পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়ার কারণেই শত বছর পূর্বেও বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট কোনাে ধারণা ছিল না।
গ। উদ্দীপকে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে উঠে আসা ভাষার বিবর্তনের দিকটি পরিলক্ষিত হয়।’
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার বিবর্তনের নানান দিক নিয়ে আলােচনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার আজকের রূপ পরিগ্রহের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। প্রাবন্ধিক মনে করেন, ‘পরিবর্তনশীলতাই ভাষার নিয়ম। উদ্দীপকে চর্যাপদের একটি পদ তুলে ধরা হয়েছে। এটি বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। তা সত্ত্বেও পদটির ভাষা বর্তমান বাংলা ভাষার চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। এ কারণেই উদ্দীপকে উল্লিখিত চর্যার পদটিকে আধুনিক বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। একইভাবে, বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধেও ভাষার পরিবর্তনশীলতার কথা বলা হয়েছে। প্রাবন্ধিক মনে করেন, প্রবহমান নদীর মতাে পরিবর্তনই ভাষার ধর্ম এবং এর মধ্য দিয়েই ভাষা টিকে থাকে। এভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘকালের ব্যবধানে জন্ম নেয় নতুন ভাষা। উদ্দীপকে উল্লিখিত চর্যাপদের চরণগুলাের সঙ্গে আধুনিক ভাষার ভিন্নতার মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই প্রতিভাত হয়। সে বিবেচনায়, উদ্দীপকে আলােচ্য প্রবন্ধের ভাষার বিবর্তনের দিকটিই উঠে এসেছে।
ঘ। উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের মূলভাবকে আংশিক ধারণ করেছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলােকপাত করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধটিতে প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার দীর্ঘ পথ পরিক্রমার ইতিহাস তুলে ধরে দেখিয়েছেন যে, বিচিত্র বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ ভাষা আজকের রূপ পরিগ্রহ করেছে।
উদ্দীপকে চর্যাপদের কয়েকটি চরণ উদ্ধৃত করে সেগুলাের আধুনিক বাংলা রুপটি তুলে ধরা হয়েছে। হাজার বছর পূর্বের সে পদগুলাের সাথে বর্তমান বাংলা ভাষার পার্থক্য স্পট। কারণ ভাষার পরিবর্তনশীলতা। দীর্ঘকাল ধরে নানাভাবে পরিবর্তন হওয়ার ফলেই চর্যাপদের চরণগুলাের সাথে বর্তমান বাংলা ভাষার এমন পার্থক্য চোখে পড়ে। আলােচ্য প্রবন্ধটিতেও প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার বিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার উৎপত্তির দিকটি তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। আর তা করতে গিয়ে তিনি এ ভাষার ইতিহাস পর্যালােচনা করেছেন। তার মতে, ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের একটি শাখার নাম প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। এর তিনটি স্তর রয়েছে, যার শেষ স্তরটির নাম প্রাকৃত। এই প্রাকৃত ভাষারই কোনাে একটি স্তর থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্ম হয়। উদ্দীপকে চর্যাপদের চরণগুলাের থেকে বর্তমান ভাষার ভিন্নতার মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের বিষয়টি চোখে পড়লেও সেখানে বাংলা ভাষার উৎপত্তির বিষয়ে কোনাে ধারণা পাওয়া যায় না। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোত মন্তব্যটি যথাযথ।
প্রশ্ন ৩। পুন্ড্রনগরে প্রাপ্ত শিলালিপির ভাষাকে আমরা প্রথমত বলব পৌন্ড্র প্রাকৃত ভাষা, দ্বিতীয়ত বলব ভারতীয় প্রাকৃত ভাষা। কারণ পুন্ড্র দেশেই এ ভাষার প্রাচীন প্রত্ন নিদর্শনটি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই আদি থেকে বাংলা ভাষার ধারাকে এভাবে চিহ্নিত করা যায়; পৌন্ড্র প্রাকৃত বা প্রাকৃত, গৌড় প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষা। তথ্যসূত্র: দৈনিক ভোরের কাগজ
ক. ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে কোন অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব?
খ. ভারতীয় আর্যভাষার স্তরগুলাে ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপক এবং বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের মধ্যকার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে উদ্দীপক এবং বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আলােকে তা বিশ্লেষণ করাে।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব।
খ। ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর রয়েছে। ভারতীয় আর্যভাষার প্রথম স্তরটির নাম বৈদিক বা বৈদিক সংস্কৃত।
খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ এ ভাষার কাল। বৈদিক ও সংস্কৃতকে বলা হয় প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা। প্রাকৃত ভাষাগুলােকে বলা হয় মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা। এ প্রাকৃত ভাষাগুলাের শেষ স্তরের নাম অপভ্রংশ, অর্থাৎ যা খুব বিকৃত হয়ে গেছে। বিভিন্ন অপভ্রংশ, থেকেই হয়েছে বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, পাঞ্জাবির মতাে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলাে।
গ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির দিকটি চিহ্নিত করার দিক থেকে উদ্দীপক এবং বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে প্রবান্ধিক বাংলা ভাষার উৎপত্তির দিকটি চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব। এ ভাষাবংশের একটি শাখা হলাে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা, যার তিনটি স্তর রয়েছে। এর শেষ স্তরটির নাম প্রাকৃত। অপভ্রংশ থেকেই বাংলা ভাষাসই আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলাের উদ্ভব।
উদ্দীপকে বাংলা ভাষার উদ্ভবের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পুন্ড্রনগরে যে শিলালিপি পাওয়া যায়, সে শিলালিপি অনুযায়ী পৌন্ড্র প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব। পৌন্ড্র প্রাকৃত থেকে বা প্রাকৃত এবং বঙ্গ প্রাকৃত হয়ে গৌড় প্রাকৃত থেকে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় বাংলা ভাষার।
আলােচ্য প্রবন্ধও এ বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। সেদিক বিবেচনায় বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও এর উৎসধারা ব্যাখ্যায় উদ্দীপক এবং বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ। বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে উদ্দীপক এবং বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে এর ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিকগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মত দিয়েছেন।
উদ্দীপকে বাংলা ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে একটি মত তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে পৌন্ড্র প্রাকৃতের একটি স্তর হলাে গৌড় প্রাকৃত। এই গৌড় প্রাকৃত থেকে উৎপত্তি হয়েছে বাংলা ভাষার। আলােচ্য প্রবন্ধেও বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে পণ্ডিতদের ভিন্ন ভিন্ন মতের কথা বলা হয়েছে।
বাংলা ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষার শব্দের সাদৃশ্য লক্ষ করে একদল লােক মনে রতেন, বাংলা সংস্কৃতের মেয়ে। বহু গবেষণার পর ভাষাতাত্ত্বিকগণ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ‘ভারতীয় আর্যভাষার একটি স্তর হলাে অপভ্রংশ। ভাষাতাত্ত্বিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গৌড়ী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, পূর্ব মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব। অর্থাৎ বাংলা ভাষার উৎপত্তির একেবারে শেষের স্তরে ভাষাতাত্ত্বিকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। তবে বাংলা যে সংস্কৃতের কন্যা নয়— এ বিষয়ে সকলেই একমত।
প্রশ্ন ৪। ভাষা পরিবর্তনের মুখ্য কারণ ধ্বনির পরিবর্তন। অবশ্য ভাষা পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। ভাষা পরিবর্তনের প্রধান কারণ উচ্চারণ ও ধ্বনির পরিবর্তন বা বিকৃতি। ভাষা পরিবর্তনের যে বিভিন্ন কারণ ক্রিয়াশীল সেগুলাে পর্যালােচনার পর ভাষা পরিবর্তনের প্রকৃতিকে দু’দিক থেকে নির্দেশ করা যায় নিয়মিত ও অনিয়মিত পরিবর্তন। যেক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণ সর্বত্র নির্দিষ্টভাবে নির্দেশ করা সম্ভব, সেখানে ভাষা পরিবর্তনের বিষয়টি নির্দিষ্ট ধ্বনি পরিবর্তনরূপে চিহ্নিত করা যায়।
ক। অলৌকিক ইস্টিমার’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কে? n:
খ। এক হাজার বছর পর বাংলা ভাষা ঠিক এমন থাকবে। – কেন? বুঝিয়ে লেখাে।
গ। উদ্দীপকের সঙ্গে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যের দিকটি ব্যাখ্যা করাে।
ঘ। “উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সম্পূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। অলৌকিক ইস্টিমার’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা হুমায়ুন আজাদ।
খ। ভাষার ধর্ম বদলে যাওয়ার দিকটির কথা বােঝাতেই প্রশ্নোত উক্তিটি করা হয়েছে।
ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে এতে যুক্ত হয়, নতুন শব্দ। আবার কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় বিভিন্ন শব্দ। তাই বর্তমানে আমরা যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করছি, তা কয়েকশ বছর পর বদলে যাবে। আবার কয়েকশ বছর আগেও বাংলা ভাষা বর্তমান রূপে ছিল না। এ কথাটি বােঝাতেই প্রশ্নোত্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।
গ। উদ্দীপকের সঙ্গে বাংলা ভাষার জন্মকথা’: প্রবন্ধের ভাষার পরিবর্তনের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। কীভাবে একটি ভাষা কালের বিবর্তনে অন্য রূপ গ্রহণ করে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে প্রবন্ধটিতে। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায় ভাষার ধ্বনি। যার প্রভাব পড়ে শব্দে ও অর্থে। এভাবেই সময়ের সাথে উদ্দীপকে ভাষার পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধ্বনি পরিবর্তন নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। ভাষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধ্বনি। এর পরিবর্তন তাই সরাসরি প্রভাব ফেলে ভাষায় রূপ বদলের ওপর। আলােচ্য প্রবন্ধে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিক থেকে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকটি সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে সাথে বদলায় ভাষা।
ঘ। বিষয়বস্তুর বিস্তারের দিক থেকে উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা প্রবন্ধের সম্পূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না।
‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে আলােচনা করা হয়েছে। সেখানে ভাষা কীভাবে পরিবর্তন হয়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। কীভাবে সময়ের সাথে ভাষার ধ্বনি, শব্দ ও অর্থ পরিবর্তিত হয়ে যায় তাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রবন্ধটিতে।
উদ্দীপকে ভাষা পরিবর্তনের মুখ্য কারণ হিসেবে ধ্বনির পরিবর্তন বিষয়ে আলােকপাত করা হয়েছে। উদ্দীপকের বক্তা মনে করেন, ভাষা পরিবর্তনের প্রধান কারণ উচ্চারণ পদ্ধতি ও ধ্বনির সুতিগত দিকের পরিবর্তন। ভাষার এই পরিবর্তনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, নিয়মিত এবং অনিয়মিত পরিবর্তন। এভাবে ভাষা এক রূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তিত হয়।
উদ্দীপকে কেবল ভাষা পরিবর্তনের পেছনে ধ্বনির ভূমিকা নিয়েই আলােচনা করা হয়েছে। কোনাে নির্দিষ্ট ভাষা বা ভাষার অন্য কোনাে উপাদান নিয়ে আলােচনা করা হয়নি। কিন্তু আলােচ্য প্রবন্ধে শুধু ভাষায় পরিবর্তনই নয়, বাংলা ভাষার উদ্ভব সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। এছাড়া ধ্বনির সাথে শব্দ ও অর্থ বদল নিয়েও আলােচনা করা হয়েছে সেখানে। এ সকল বিষয় উদ্দীপকে উঠে আসেনি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের সম্পূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না”- উক্তিটি যথার্থ।
প্রশ্ন ৫। একটি শিশু জন্মের পর যখন কথা বলতে শুরু করে তারপর থেকে কোনাে নির্দিষ্ট শব্দে সে স্থিত থাকে না। নিত্যনতুন শব্দ বলতে তার ভালাে লাগে। সে আজ বলছে জল, কাল পানি, পরের দিন সলিল। এভাবে সমৃদ্ধ হতে থাকে তাৱ শব্দভাণ্ডার।
ক. বাংলা সংস্কৃতের কেমন মেয়ে?
খ. ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া’- ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপকটি কোন দিক থেকে বাংলা ভাষার জন্মকথা প্রবন্ধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের আংশিক রূপায়ণ মাত্র”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করাে ।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। বাংলা সংস্কৃতের দুষ্টু মেয়ে।
খ। যা ভাষার ধর্মই বদলে যাওয়া বলতে মানুষের মুখে মুখে ভাষার রূপ বদল ঘটার বিষয়টিকে বােঝানাে হয়েছে।
ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল। ভাষা কখনাে এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রবহমান নদীর মতােই তার এগিয়ে চলা। মানুষের মুখে মুখে বদলে যায়। ভাষার ধ্বনি। রূপ বদলে যায় শব্দের এবং বদলে যায় অর্থও। এভাবে
বহুদিন কেটে যাওয়ার পর মনে হয় ভাষাটি একটি নতুন ভাষা হয়ে উঠেছে। এভাবেই ভাষা বদলে যায়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
গ। অন্য ভাষার শব্দভাণ্ডার থেকে শব্দ নিয়ে কোনাে ভাষা সমৃদ্ধ হওয়ার দিক উপস্থাপনের সূত্রে উদ্দীপকটি বাংলা ভাষার জন্মকথা প্রবন্ধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
ভাষা বহুদিনের পথ-পরিক্রমায় সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভাষার শব্দ নানাবিধ কারণে কোনাে ভাষার মধ্যে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে স্থায়ী রূপ লাভ করে এবং ঐ ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়। তেমনিভাবে আমাদের বাংলা ভাষায়ও বিভিন্ন ভাষার শব্দ এসে যােগ হয়েছে।
উদ্দীপকে একটি শিশুর শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে। জন্মের পর শিশু যখন বলতে শুরু করে তারপর থেকে সে নির্দিষ্ট কোনাে শব্দে স্থিত থাকে না। নিত্যনতুন শব্দ বলতে তার ভালাে লাগে। সে আজ বলছে জল, কাল পানি পরের দিন সলিল। এভাবে প্রতিনিয়তই তার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক কোনাে ভাষার উৎপত্তি ও সমৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে কোনাে ভাষার শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তন বা অপরিবর্তিতভাবে অন্য ভাষায়, মিশে যায় এবং তা একসময় স্থায়ীভাবে ঐ ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়। আমাদের বাংলা ভাষায়ও বিভিন্ন ভাষার শব্দ এসে মিশেছে। ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হওয়ার এ প্রক্রিয়ার সাথেই উদ্দীপকটি সংগতিপূর্ণ।
ঘ। উদ্দীপকটি ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াটির ইঙ্গিত প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধের অংশবিশেষকে তুলে ধরেছে, সমগ্র বিষয়বস্তুকে নয়।
ভাষার ধর্মই হলাে পরিবর্তিত হওয়া। আর এ পরিবর্তনের স্রোতে ভেসেই এক ভাষার শব্দ এসে মিশে যায় অন্য কোনাে ভাষায়। এভাবে ঐ ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। আমাদের বাংলাভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে একটি শিশু জন্মের পর যখন কথা বলতে শুরু করে তারপর থেকে শুরু হয় তার বিভিন্ন শব্দ শেখা। এক্ষেত্রে সে নির্দিষ্ট কোনাে শব্দে স্থিত থাকে না। নিত্যনতুন শব্দ বলতে পছন্দ করে। বড়ােদের মুখে বিভিন্ন শব্দ শুনে সে সেগুলাে অনুকরণ করে বলার চেষ্টা করে। আজ বলছে জল, তাে কাল বলছে পানি, আর পরের দিন সালিল। এভাবে সে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শেখে। এভাবে প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ হয় তার শব্দভাণ্ডার।
বাংলা ভাষার জন্মকথা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস তুলে ধরেছেন। নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একটি ভাষা জন্মলাভ করে। নতুন জন্ম নেওয়া ভাষা শিশুর মতােই অল্প শব্দ নিয়ে যাত্রা শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে তার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হতে থাকে। বিভিন্ন ভাষা থেকে আগত শব্দ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হয়ে অথবা অপরিবর্তিতভাবেই ঐ ভাষায় প্রবেশ করে। এভাবেই সমৃদ্ধ হয় ঐ ভাষার শব্দভাণ্ডার। উদ্দীপকেও এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে আলােচ্য প্রবন্ধের বিষয়বস্তু আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত। সেখানে বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস এবং এ সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকের মতবাদ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই আমরা বলতে পারি, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।