বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১।  আলামীন আগস্ট মাসে একটি দেশে বেড়াতে যায়। ঐ সময় সে দেশের উত্তর অংশের তাপমাত্রা ছিল ৩২° সে, এর উপর এবং সেখানে একটি প্রবল নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। বায়ুতে অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকাতে দেশটিতে সারা বছর যে বৃষ্টিপাত হয়।  তার চার ভাগের তিন ভাগই হয় ঐ ঋতুতে।

ক. জলবায়ু কী?

খ. বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি যে অঞ্চলে অবস্থিত এর ভূপ্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।

গ. আলামীনের বেড়াতে যাওয়া সময়ে দেশটিতে যে ঋতু বর্তমান ছিল তার বর্ণনা দাও।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উক্ত ঋতুটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। 

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। একটি বৃহৎ অলব্যাপী আবহাওয়ার উপাদানগুলাের দৈনন্দিন অবস্থার দীর্ঘদিনের গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।

খ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গটি যে অঞ্চলে অবস্থিত সেটি অন্তর্গত। বাংলাদেশের মােট ভূমির প্রায় ১২% এলাকা নিয়ে টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহ গঠিত। প্রায় ২ মিলিয়ন বছরেরও বেশি বৃষ্টিপাতের  আগে হিমালয় পর্বত উথিত হবার সময় এসব পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশ এ অঞলের অন্তর্গত। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলাের গড় উচ্চতা বাংলাদেশের টারশিয়ারি যুগের পাহাড়সমূহের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্বাশালের ৬১০ মিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হচ্ছে- কিও ক্রাডং (বিজয়), যার উচ্চতা ১২৩১ মিটার, এটি বান্দরবান জেলায় অবস্থিত। এসব পাহাড়গুলাে বেলে পাথর, কর্দম ও শেল পাথর দ্বারা গঠিত। 

গ। আলামীনের বেড়াতে যাওয়ার সময়ে দেশটিতে বর্ষাকাল বিদ্যমান ছিল। উদ্দীপকে উল্লিখিত বর্ণনার সাথে উত্তর ভারতের বর্ষাকালের আবহাওয়ার ধরন মিলে যায়।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতে বর্ষাকাল থাকে। জুনের শেষে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থান করায় উত্তর ভারতে উত্তাপের পরিমাণ ৩২° সেলসিয়াস ছেড়ে যায়। দক্ষিণে ক্রমশ তাপমাত্রা কমে ২৭ তে নেমে আসে। অতিরিক্ত তাপে উত্তর ভারতের পাঞ্জাব অঞলে একটি প্রবল শক্তিসম্পন্ন নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। এ বায়ু সমুদ্রের উপর দিয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে বলে এতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে।

হিমালয় ও অন্যান্য উচ্চ পর্বতগাত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে এ বায়ু ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে ভারতের মােট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫% এ ঋতুতেই হয়ে থাকে। উপরিল্লিখিত আলােচনার দ্বারা আলামিনের বেড়াতে যাওয়া দেশটি অর্থাৎ ভারতের বর্ষাকালের বৈশিষ্ট্যই প্রমাণিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।

ঘ। বর্ষাকাল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। বৃষ্টিপাতের ৮০% এ ঋতুতে হয়ে থাকে। এসময় গড় বৃষ্টিপাতের প্রভাবে বর্ষাকালে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের মােট পরিমাণ ১১৯-৩৪০ সে.মি.। বাংলাদেশে বর্ষায় দক্ষিণ-পশ্চিম অয়ন বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এতে বিভিন্ন রকমের ফল ও ফসল প্রচুর জন্মে। অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানিবাহিত পলি বাদাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। মৌসুমি বায়ুর কৃষি জমিগুলাের উর্বরতা বাড়ায়। এতে ফসল ভালাে হয়। নদীপথের নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। ফলে নৌযান চলাচল সহজ হয়। কৃষি জমিতে সেচ কম দিতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়। মৎস্য সম্পদ আহরণের পরিমাণ বাড়ে। ভূগর্ভক্ষ পানির উচ্চতা কিছুটা বাড়ে।

প্রাকৃতিক জলাধারের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ার কারণে মাছের প্রজনন বেশি হয়। নদীভিত্তিক পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটে। প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদিত হয়। চারণভূমিতে গবাদি পশুর জন্য প্রচুর ফসল উৎপন্ন করা যায়। উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে চা-চাষের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় ।বর্ষাকালে খালবিলে পাট পচানাের জন্য পানির পর্যাপ্ততা থাকে। বর্ষা ঋতুতে পেয়ারা, আমড়াসহ প্রচুর দেশীয় ফল জন্মে। বর্ষাকালে রাস্তাঘাটের ধুলােবালি পরিষ্কার হয়ে মনােরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়।



প্রশ্ন ২। এক বিকেলে মাসুদ নদীর ধারে বেড়াতে যায়। সে খুব গরম অনুভব করছিল ও ঘামছিল। তারপর দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশ কালাে মেঘে ঢেকে যায় এবং সেদিক থেকে শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। তার ভাই তমাল লক্ষ করে যদিও জুলাই মাসে সূর্যের তাপ আমাদের দেশে লম্বভাবে পড়ে। তাপমাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না এবং আমরা খুব বেশি গরম অনুভব করি না। সে বলে, “এ সময়টি কৃষির জন্য উপযুক্ত।”

ক. জলবায়ু কাকে বলে?

খ. বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞলে স্বল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে কেন?

গ. মাসুদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের কোন ঋতুটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. তমালের পর্যবেক্ষণে যে ঋতুটি প্রতিফলিত হয়েছে তা চিহ্নিত করে তার মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক। একটি বৃহৎ অলব্যাপী আবহাওয়ার উপাদানগুলাের দৈনন্দিন অবস্থায় দীর্ঘদিনের গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।

খ। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে জীবিকা সংস্থান কষ্টসাধ্য। এসব অঞ্চলে ভালাে রাস্তাঘাট বা রেল যােগাযােগের অভাব রয়েছে। এছাড়াও অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, জীবনধারণের প্রয়ােজনীয় উপকরণসমূহের অভাব, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাব, বনভূমি ও ভূপ্রকৃতিগত কারণে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞলে স্বল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে।

গ। মাসুদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল ঋতুটি প্রতিফলিত হয়েছে।

মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল। এটি বাংলাদেশের উষ্ণতম ঋতু। এ সময় সামুদ্রিক বায়ুর প্রভাবে দেশের দক্ষিণ থেকে, উত্তর দিকের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেশি থাকে। গ্রীষ্মকালে সূর্য উত্তর গােলার্ধের কর্কটক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী হওয়ায় বায়ুর চাপের পরিবর্তন হয় এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। একই সময়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শুষ্ক ও শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। এর ফলে এক ধরনের ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঝড়কে কালবৈশাখী ঝড় বলে। উদ্দীপকের মাসুদ নদীর বেড়াতে গিয়ে খুব গরম অনুভব করছিল ও ঘামছিল। তারপর দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশ কালাে মেঘে ঢেকে যায় এবং সেদিক থেকে শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত হতে শুরু করে। অর্থাৎ মাসুদ গ্রীষ্ম ঋতুর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ তথা উচ্চ তাপমাত্রা ও কালবৈশাখি ঝড় প্রত্যক্ষ করে। অতএব বলা যায় যে, মাসুদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের গ্রীষ্মকাল ঋতুটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। তমালের পর্যবেক্ষণে বর্ষাকাল ঋতুটি প্রতিফলিত হয়েছে।

বাংলাদেশে জুন হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। জুন মাসের, শেষদিকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথে বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয়। এ সময় সূর্য বাংলাদেশের ওপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় এখানে অতিরিক্ত তাপ অনুভূত হওয়ার কথা। কিন্তু এ ঋতুতে অধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে তাপমাত্রা যেরূপ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা সেরূপ বৃদ্ধি পায় না। তমালের পর্যবেক্ষণে উক্ত ঋতুর বৈশিষ্ট্যই ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের মােট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চার ভাগ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালেই হয়ে থাকে। ফলে চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সরবরাহ নিশ্চিত হয়। এছাড়াও প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার ফলে জমিতে পলির আস্তরণ পড়ে যা চাষাবাদের জমিকে খুবই উর্বর করে। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন রকমের ফসল ও ফল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। সর্বোপরি বর্ষাকাল বাংলাদেশের অন্যান্য ঋতুর তুলনায় চাষাবাদের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত সময়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ সেচের পানি, আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কারণে কৃষির জন্য বর্ষাকাল আদর্শ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। সুতরাং উপরিউক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বর্ষা ঋতু নিয়ে তমালের করা মন্তব্যটি সঠিক এবং যথার্থ।



প্রশ্ন ৩। মিঠু তার বন্ধুদের সাথে বিকেলে মাঠে খেলতেছিল। হঠাৎ তারা প্রচণ্ড ঝাকুনি অনুভব করে। ভয়ে সবাই খেলা বন্ধ করে মাঠে বসে পড়ে। এ অবস্থা কিছুক্ষণ স্থায়ী হয়। এতে এলাকার অবকাঠামাের কিছু ক্ষতি হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রশাসনের সাথে যােগাযােগ করে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরােধ জানান।

ক. প্লাইস্টোসিন কাল কী?

খ. জলবায়ুর সাথে মানুষের জীবন-জীবিকা কেন সম্পর্কিত?

গ. মিঠুর দেখা প্রাকৃতিক দুর্যোগটির কারণ ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত দুর্যোগের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে বর্ণিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকা মূল্যায়ন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। আনুমানিক ২৫,০০০ বছর পূর্বের সময়কে প্লাইস্টোসিন কাল বলে।

খ। জলবায়ুর সাথে মানুষের জীবন-জীবিকা গভীরভাবে সম্পর্কিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন-জীবিকায় নানা পরিবর্তন ঘটে। বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফলে বিভিন্ন রকমের ফসল ও ফল প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। আবার শীতকালেও দুপ। তাই বলা যায়, জলবায়ুর সাথে মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পর্কিত।

গ। উদ্দীপকে মিঠুর দেখা প্রাকৃতিক দুর্যোগটি ভূমিকম্প।

সভ্যতায় বহু ধ্বংসলীলার কারণ হিসেবে ভূমিকম্পকে দায়ী করা হয়। যেসব কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে তার অন্যতম হলাে প্লাটনিক প্লেট। পৃথিবীর ব্যবচ্ছেদে দেখা যায় যে, ভূত্বক ৮টি বড় বড় টুকরা এবং ৬টি আলিক টুকরা দ্বারা বিভক্ত। এগুলাে টেকটনিক প্লেট নামে পরিচিত। ভূপৃষ্ঠে যেসব কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হলাে এই প্লেটগুলাের বিভিন্ন রকমের স্থানান্তর বা বিচ্যুতি। এছাড়াও অন্য যেসব কারণ রয়েছে তা হলাে- ভিত্তিশিলা চ্যুতি বা ফাটল বরাবর আকস্মিক ভূআলােড়ন হলে ভূমিকম্প হয়। আগ্নেয়গিরির লাভা প্রচণ্ড শক্তিতে ভূঅভ্যন্তর থেকে বের হয়ে আসার সময়ও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ভূনিম্নস্থ শিলাস্তরে ভারের সামঞ্জস্য রক্ষার্থে ফাটল ও ভাঁজের সৃষ্টির ফলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূআলােড়নের ফলে ভূত্বকের কোনাে স্থানে শিলা ধসে পড়লে বা শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও পাশাপাশি অবস্থানরত দুটি প্লেটের একটি অপরটির সীমানা বরাবর তলদেশে ঢুকে পড়ে অথবা আনুভূমিকভাবে আগে-পিছে ধরে যায়। এ ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।

ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত দুর্যোগ তথা ভূমিকম্পের ঝুঁকি মােকাবিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকা অপরিহার্য।

ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের সহযােগিতার প্রয়ােজন হয়। ভূমিকম্পে আক্রান্তদের আঘাত পরীক্ষা করা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ অন্যান্য কর্মকাণ্ড প্রশাসনের উপস্থিতি প্রয়ােজন। যেমন- পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন পরীক্ষা করা। রেডিও, টেলিভিশন ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম খােলা রাখা, যাতে দুর্যোগ মােকাবিলার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচারিত তথ্য শােনা যায়; বাড়ির দরজা-জানালা খুলে দেওয়া; খালি পায়ে চলাফেরা না করা; লুটতরাজ থেকে সাবধান থাকা; অভিজ্ঞ লােকদের পরামর্শমতাে চলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে প্রশাসন ভূমিকা রাখতে পারে। উদ্দীপকে আমরা লক্ষ করি ভূমিকম্প নামক দুর্যোগে অবকাঠামােগত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রশাসনের সাথে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে। এছাড়াও ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণের জন্য জনপ্রতিনিধির সাথে প্রশাসনিক যােগাযােগ রক্ষা করে কাজ করা অত্যাবশ্যক। এছাড়াও নতুন বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে স্ট্রাকচার ও ডিজাইন করার সময় ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড” এর অনুসরণে বাধ্যবাধকতা; নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থায়িত্ব ও মজবুতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিনিধির একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে ভূমিকম্প নামক দুর্যোগের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকা যথার্থ ছিল বলে আমি মনে করি।



প্রশ্ন ৪। জনাব ‘প’ একজন কৃষি গবেষক। তিনি গবেষণা কাজে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে যান। জুন মাসে প্রচণ্ড উত্তাপ থাকার কথা থাকলেও তা অনুপস্থিত। বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লেও কোনাে কোনাে জায়গায় তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লক্ষ করেন। এ সময়ে তিনি দেশটির পূর্বাংশের উঁচু ভূমিগুলােতে তার গবেষণা কাজ সম্পাদনে আগ্রহী হন।

ক. ভূমিকম্পের কেন্দ্র কাকে বলে?

খ. ‘ভূমিকম্পের প্রকোপ সর্বত্র সমান নয়” – ব্যাখ্যা কর।

গ. জনাব ‘প’ দেশের যে অংশে গবেষণা কাজ করেন তা কোন ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত দেশের। জলবায়ু মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে” – বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ভূঅভ্যন্তরের যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে।

খ। ভূমিকম্পের প্রকোপ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলােকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়। যথা-

১. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশ; 

২. ভূমধ্যসাগরীয় হিমালয় অংশ ও 

৩. মধ্য আটলান্টিক ভারত মহাসাগরীয় শৌলশিরা অংশ। 

১নং অংশেরএলাকায় সবচেয়ে বেশি, ২নং অংশে ১নং এর থেকে কিছু কম এবং ৩নং অংশের অন্তর্গত অংশের কিছু কিছু অংশে ভূমিকম্পের প্রকোপ দেখা যায়। তাই বলা যায়, ভূমিকম্পের প্রকোপ সর্বত্র সমান নয়।

গ। উদ্দীপকে জনাব ‘প তার দেশ তথা বাংলাদেশের যে অংশে গবেষণা।

কাজ করেন তা সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ভূমি নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। সমতল ভূমির উপর দিয়ে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হওয়ার কারণে এখানে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার পানির সঙ্গে পরিবাহিত পলিমাটি সঞ্জিত হয়ে এ প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। উদ্দীপকের জনাব ‘প’ এ প্লাবন সমভূমি অঞলেই তার গবেষণা কাজ করেন। এ প্লাবন সমভূমির আয়তন প্রায় ১,২৪,২৬৬ বর্গকিলােমিটার। সমগ্র সমভূমির মাটির স্তর খুব গভীর এবং ভূমি খুবই উর্বর। সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ স্থান, ঢাকা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলের অংশবিশেষ, কুমিল্লা, নােয়াখালী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা এবং কিশােরগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার পূর্বদিকের সামান্য অংশ নিয়ে এ সমভূমি গঠিত। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্লাবন সমভূমি অঞলে জনাব ‘প’ গবেষণা কাজ করেন।

ঘ। উদ্দীপকে বর্ণিত দেশ তথা বাংলাদেশের জলবায়ু মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। বাংলাদেশের জলবায়ু মােটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন।

মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব এখানে এত অধিক যে, সামগ্রিকভাবে এ জলবায়ু ‘ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু’ নামে পরিচিত। দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশে বছরে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ছয়টি ঋতু দেখা যায়, যেমন- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ঋতুভেদে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য হয়, কিন্তু কখনাে এটি অন্যান্য শীতপ্রধান বা গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতাে চরমভাবাপন্ন হয়।

তবে বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ছয়টি ঋতুকে ৭ প্রধান তিনটি ঋতু হিসেবে দেখানাে যায়। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে শীতকাল। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গােলার্ধে থাকায় বাংলাদেশে এর রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে এবং উত্তাপের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল। এটিই দেশের উষ্ণ ঋতু। আর জুন হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল। জুন মাসের শেষদিকে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে বাংলাদেশে বর্ষাকাল শুরু হয়। বাংলাদেশের বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। পরিশেষে বলা যায়, এদেশের জলবায়ু মানুষের জীবনযাত্রাকে সর্বদাই প্রভাবিত করে।



 

প্রশ্ন ৫।  

দৃশ্যপট-১: মি. লিটকপরিবার নিয়ে কুমিল্লায় থাকেন তিনি এক স্থানে বেড়াতে যান। এখানকার সনাল সারা বছর সবুজ থাকে এবং পাহাড়গুলাে বেলে ও শেল পাথর দ্বারা গঠিত।

দৃশ্যপট-২: সিফাত ফুল থেকে শিক্ষাসফরে নওগার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে বেড়াতে যায়। সেখানকার লালচে মাটি দেখে সে যুদ্ধ হয়।

ক. জলবিদ্যুৎ কী?

খ. মৌসুমি জলবায়ু বলতে কী বােঝায়? ব্যাখ্যা কর।

গ. মি. লিটনের ভ্রমণকৃত অলটি বাংলাদেশের, কোন? ভূপ্রাকৃতিক অঞলকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. মি. লিটনের বসবাসরত ও সিফাতের শিক্ষাসফরের স্থান দুটিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে কি? মতামত দাও।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক। নদী ও জলপ্রপাতের পানির বেগ ব্যবহার করে টার্বাইন যন্ত্রের সাহায্যে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তাকে জলবিদ্যুৎ বলে।

খ। মৌসুমি শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মওসুম থেকে, যার অর্থ হলাে ঋতু। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে যে বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয় তাকে মৌসুমি বায়ু বলে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের ফলে শীত-গ্রীষ্মে ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপের তারতম্য ঘটে। সেজন্য মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয়। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশসহ কর্কটক্রান্তির আশপাশে দেশগুলােতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড গরমের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

গ। মি. লিটনের ভ্রমণকৃত অঞ্চলটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞলকে নির্দেশ করে।

রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশ এরূপ ভূপ্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ-পূর্বাঞলের পাহাড়ি এলাকাগুলাে বেলে পাথর, কর্দম ও শেল পাথর দ্বারা গঠিত। আবার বনভূমির শ্রেণিবিভাগে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞলকে ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পত্রপতনশীল বনভূমি এলাকা হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়। এসব বনভূমির পাতা একত্রে ফোটেও ঝরেও না। ফলে সারাবছর বনগুলাে সবুজ থাকে। উদ্দীপকের মি, লিটন যে স্থানে বেড়াতে গিয়েছেন সেখানকার বনাঞল সারা বছর সবুজ থাকে এবং পাহাড়গুলাে বেলে ও শেল পাথর দ্বারা গঠিত। এরূপ বৈশিষ্ট্য থেকে সহজেই প্রমাণিত হয় যে, উক্ত স্থানটি হলাে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞলের পাহাড়ি অঞল।

ঘ। হ্যা, উদ্দীপকে মি. লিটনের বসবাসরত স্থান ও সিফাতের শিক্ষা সফরের স্থান দুটিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা আছে বলে আমি মনে করি।

মি: লিটন পরিবার নিয়ে কুমিল্লায় থাকেন, যা ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিচারে সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি। আবার সিফাত শিক্ষাসফরে নওগার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে বেড়াতে যায়, যা লালচে মাটির জন্য প্লাইস্টোসিন কালের সােপানসমূহ বা চত্বরভূমির অন্তর্গত। প্লাইস্টোসিন কালের চত্বরভূমি ও সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমির কৃষি উৎপাদনে ভিন্নতা রয়েছে। প্লাইস্টোসিন কালের চত্বরভূমির সৃষ্টি হয়েছে আন্তঃবরফগলা পানিতে প্লাবনের সৃষ্টির মাধ্যমে। এসব এলাকার মাটিতে নুড়ি, বালি ও কংকর মিশ্রিত রয়েছে। ফলে এসব এলাকার মাটি কৃষি উৎপাদনের জন্য খুব বেশি অনুকূল নয় এবং এ কারণে কৃষি উৎপাদন সর্বোচ্চ মাত্রায় অর্জিত হয় না। অপরদিকে, মি. লিটনের বাসভূমি অঞ্চল তথা কুমিল্লা একটি সাম্প্রতিককালের প্লাবন সমভূমি, যা নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ অঞল। এরূপ ভূমিরূপে অসংখ্য নদী প্রবাহিত হওয়ার কারণে বর্ষাকালে বন্যার সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এভাবে বন্যার পানির সাথে পরিবাহিত পলিমাটি সক্রিত হয়ে এরূপ প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। এসব পলিমাটি কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উস্কৃষ্ট হওয়ায় এসব অঞলে কৃষি উৎপাদন অধিক হয়ে থাকে। পলিমাটির উর্বরতায় কৃষিজাত দ্রব্য উৎপাদন অধিক হওয়ায় সহজেই প্লাইস্টোসিন যুগের চত্বরভূমির কৃষি উৎপাদনের সাথে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। পরিশেষে বলতে পারি, মি. লিটনের বসবাসরত ও সিফাতের শিক্ষাসফরের স্থান দুটিতে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।        

Leave a Comment