প্রশ্ন-১।
১. আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তাে মানুষ নয়- হয়তাে বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তাে ডােরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়;
২. মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই।
ক. বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাকাব্যের নাম কী?
খ. কবি বর প্রার্থনা করেন কেন? ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশের আলােকে ফুটি যেন স্মৃতি-জলে চরণটির ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “দ্বিতীয় কবিতাংশ ও বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মূলসুর একই”- তুমি কি একমত? যুক্তিসহ উত্তর দাও।
১নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাকাব্যের নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
খ। দেশমাতৃকার স্মৃতিতে জেগে থাকার জন্য কবি বর প্রার্থনা করেন।
স্বদেশের প্রতি ভালােবাসা একটি স্বাভাবিক ও চিরন্তন বিষয়। একই ভাবনা থেকে কবি দেশমাতৃকার বন্দনা করেছেন। কবির একান্ত ইচ্ছা, স্বদেশমাতা যেন কবিকে তার হৃদয়ে স্থান দেন। পদ্মফুল- যেমন— সরােবরে ফুটে থাকে, কবিও তেমনি, দেশমাতার স্মৃতিতে ফুটে থাকতে চান। এ কারণেই তিনি বর প্রার্থনা করেন।
গ। উদ্দীপকের প্রথম কবিতাংশে এবং ফুটি যেন স্মৃতি-জলে’ চরণের উভয়ক্ষেত্রে স্মৃতির পাতায় টিকে থাকার আবেদন প্রকাশ পেয়েছে।
প্রদত্ত কবিতাতে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মাতৃভূমিকে অনুরােধ জানিয়েছেন তাকে স্মরণ রাখতে। তিনি স্মৃতি হয়ে বারবার মাতৃভূমির হৃদয়ে থাকতে চান। তিনি জন্মভূমির প্রতি তাই অনুরােধ করেছেন পার্থিব ভাবে নয়, স্মৃতিতে যেন তাকে টিকিয়ে রাখা হয়।
উদ্দীপকের চরণগুলােতে কবি মৃত্যুর পরও মানবমনে বেঁচে থাকার আশা ব্যক্ত করেছেন। নশ্বর পৃথিবীতে কবি নিজেকে নশ্বর জেনেও অবিনশ্বর হয়ে থাকতে চান পৃথিবীর মাঝে। তিনি মানবমনের স্মৃতির মাঝে ঠাই চান তার কাজের বা ভাবের মধ্য দিয়ে। ঠিক মাইকেল মধুসূদন দত্ত যেন উক্ত চরণটির মাধ্যমে একই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।
ঘ। উদ্দীপকের দ্বিতীয় কবিতাংশ ও বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই মাতৃভূমি বাংলার প্রতি ভালােবাসা প্রকাশিত হয়েছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশকে মা রূপে কল্পনা করেছেন। কবির সকল দোষ যেন দেশমাতৃকা ক্ষমা করে দিয়ে তাকে মনে রাখেন, এই প্রার্থনা দেশের প্রতি ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত দ্বিতীয় কবিতাংশের কবি দেশকে ভালােবেসে মৃত্যুর পরও দেশের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে চান। মাতৃভূমির ভালােবাসায় ধন্য হয়ে কবি তাঁর স্মৃতিতে চিরজাগরূক থাকতে আগ্রহী ও ব্যাকুল।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি মৃত্যুর পরও মাতৃভূমির স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চান। নিজ দেশের প্রতি আবেগ ও অনুভূতির প্রকাশই উদ্দীপকের দ্বিতীয় কবিতাংশ ও বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার মূলকথা।
উভয় কবিতাতেই জন্মভূমিকে ভালােবেসে তার স্মৃতিতে অম্লান থাকতে চান কবি। তাইতাে দেশমাতাকেই বিনয়ের সঙ্গে অনুরােধ করা হয়েছে তার স্মৃতিতে একটুখানি ঠাই দেওয়ার জন্যে।
প্রশ্ন ২। হৃদয়ের কোণে পুশি আশ
মানুষের মনে যেন জাগি বারাে মাস
সারাজীবনে রচিত আমারই সৃষ্টি ধন
যেন মানবের উপকারে আসে বারংবার।
ক. কবি দেশমাতৃকার স্মৃতিতে কোন ফুলের মতাে ফুটে থাকার কামনা করেছেন?
খ. “হেন অমরতা আমি, কহ, গাে, শ্যামা জম্মদো’- কবি এ কথা বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি কোন দিক দিয়ে কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপককে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার পরিপূরক বলা যায় না।”—মূল্যায়ন করাে।
২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। কবি দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতাে ফুটে থাকার কামনা করেছেন।
খ। প্রশ্নোত উক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি দেশমাতৃকার কাছে দীনতা প্রকাশ করেছেন।
কবি দেশমাতৃকার স্মৃতিতে নিজেকে অমর করে রাখতে চান। কিন্তু তার ধারণা, এমন কোনাে গুণ তার নেই, যার বলে তিনি অমরত্ব লাভ, করবেন। বিষয়টি উপলদ্ধি করে দেশপ্রেমিক কবি শ্যামল জন্মভূমির
কাছে বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে মাতৃভূমির প্রতি কবির এ জিজ্ঞাসাই প্রকাশিত হয়েছে।
গ। সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে মানুষের মনে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার দিক দিয়ে উদ্দীপকটি ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
জন্মভূমি সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ‘চিরকাল স্বদেশের স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে থাকতে চান। এক্ষেত্রে কেবল মহৎকর্মের মধ্য দিয়েই মানুষ জন্মভূমির স্মৃতিপটে চিরকাল অম্লান হয়ে থাকতে পারে।
উদ্দীপকের কবি তার সৃষ্টিকর্ম দিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চান। মহকর্ম দিয়ে মানুষের কল্যাণ করতে চান তিনি। বলাভূমির প্রতি কবিতায় কবি তার সৃষ্টিশীল লেখনীর মাধ্যমে দেশমাতৃকার স্মৃতিতে পদ্মফুলের মতাে ফুটে থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। এভাবে মানুষের মনে বেঁচে থাকার ইচ্ছে উভয় কবির মনেই ক্রিয়াশীল ছিল। এদিক থেকে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ। “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটিকে বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার পরিপূরক বলা যায় না”- মন্তব্যটি যথার্থ ।
একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক তার দেশকে গভীরভাবে ভালােবাসেন। স্বদেশের মানুষ ও প্রকৃতি তার অতি আপন হয়ে ওঠে। বঙ্গভূমির প্রতি কবিতায় এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান। মানবকল্যাণ সাধনায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান। পক্ষান্তরে, ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় স্বদেশের প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা প্রকাশ পেয়েছে, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি স্বদেশের স্মৃতিতে জেগে থাকার আকুতি প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সেখানে স্বদেশের প্রতি গভীর একাগ্রতা ও শ্রদ্ধাবােধ প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে, উদ্দীপকের কবিতাংশে শুধু মানবপ্রেম ও মানুষের মনে চিরকাল গরুক থাকবার বাসনাই প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেশপ্রেম সেভাবে উপস্থাপিত হয়নি। এক্ষেত্রে উদ্দীপকটি ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার সামগ্রিক ভাবকে প্রকাশ করতে পারেনি। তাই সাদৃশ্য, থাকলেও উদ্দীপককে বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার পরিপূরক বলা যায় না।
প্রশ্ন ৩। মিছা মণি মুক্তা হেম,
স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাহি আর।
সুধাকরে কতাে সুধা, দূর করে তৃষ্ণা ক্ষুধা
স্বদেশের শুভ সমাচার
কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি
বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া।
ক. ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি কোন ধরনের কবিতা?
খ. জীবন-নদের নীর স্থির নয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার যে দিকটি অনুপস্থিত তা ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মূল চেতনা একই ধারায় প্রবাহিত”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি একটি গীতিকবিতা।
খ। মানুষের জীবন নদীর পানির মতােই প্রবহমান ও গতিশীল বলে জীবন নদের নীর স্থির নয়।
নদীর পানি যেমন আপন গতিতে বয়ে চলে মানুষের জীবনও ঠিক তেমনি করেই বয়ে চলে। জীবন কখনাে একই অবস্থায় স্থির হয়ে থাকে না। প্রত্যহ জীবনে ঘটে চলে নানা ঘটনা, উত্থান-পতন। নদীর পানি যেমন বয়ে যেতে যেতে একসময় সাগরে পতিত হয়, তেমনি মানুষের জীবনও চলতে চলতে একসময় মৃত্যুতে গিয়ে শেষ হয়। তাই বলা যায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের জীবন কখনােই স্থির হয়ে থাকে না।
গ। বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রীতির পাশাপাশি স্বদেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকার আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে, যা উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় না।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি একটি দেশপ্রেমমূলক কবিতা। এখানে স্বদেশের প্রতি কবির মমত্ববোেধর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কবি বারবার প্রকাশ করেছেন স্বদেশের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকার তীব্র বাসনা। কবির আকুল আবেদন তিনি পৃথিবীর যে স্থানেই মৃত্যুবরণ করুন না কেন, দেশ ও দেশের মানুষ যেন তাকে ভুলে না যায়।
উদ্দীপকের কবিতাংশেও কবির স্বদেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। দেশপ্রেম কবির কাছে সোনা, মণি, মুক্তার চেয়ে অনেক মূল্যবান। স্বদেশের সুধাতেই কবির হৃদয়তৃষ্ণা দূর হয়। তার কাছে বিদেশের ঐশ্বর্য বা জৌলুস মান। তাই তাে তিনি বিদেশের ঠাকুরের চেয়েও নিজ দেশের কুকুরের প্রতি ভালােবাসা অনুভব করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে, আলােচ্য কবিতায় কবি চেয়েছেন দেশমাতৃকা যেন তার সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাকে চিরকাল হৃদয়ে ধারণ করে রাখে। কবির উক্ত বাসনার মধ্য দিয়ে তার স্বদেশপ্রীতি ফুটে উঠেছে, যা উদ্দীপকের কবিতায়ও লক্ষণীয়। স্বদেশপ্রেমের দিকটি উপস্থিত থাকলেও কবিতায় প্রকাশিত দেশের মানুষের স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকার বাসনার দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
ঘ। উদ্দীপক ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতা উভয় ক্ষেত্রেই স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় স্বদেশের প্রতি কবির শ্রদ্ধা ও একাগ্রতা প্রকটিত হয়েছে। প্রবাসে অবস্থান করলেও কবির হৃদয় দেশের জন্য সর্বদাই কাতর হয়েছে। তিনি চেয়েছেন দেশের মানুষ যেন তাকে কখনাে ভুলে না যায়।
উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি দেশের প্রতি তাঁর মমত্ববােধের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্বদেশপ্রেমের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। স্বদেশের সুধাতেই কবির তৃষ্ণা মেটে। কবির দেশপ্রেম এত প্রবল যে, বিদেশের ঠাকুরের চেয়েও স্বদেশের কুকুরের জন্য তিনি বেশি স্নেহ অনুভব করেন। এদিকে আলােচ্য কবিতায় কবি নানাভাবে প্রকাশ করেছেন দেশের প্রতি তার তীব্র অনুভূতি ও ভালােবাসার কথা।
‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার শুরুতেই কবি স্বদেশকে মা বলে সম্বােধন করেছেন। দেশমাতৃকার সন্তান হিসেবে তিনি মায়ের কাছে জানিয়েছেন তাঁর আকুল আকুতি। কবি প্রবাসে অবস্থান করলেও দেশমাতা যেন তাকে ভুলে না যায়, সেই কামনা করেছেন তিনি। তিনি বিনয়ের সাথে এও জানিয়েছেন, স্মরণীয় হওয়ার মতাে মহৎ গুণ তার না থাকুক তবুও যেন দেশমাতৃকার স্মৃতিতে তিনি ‘অম্লান থাকেন। দেশমাতৃকা তার সব দোষ ক্ষমা করে তাকে যেন হৃদয়ে স্থান দেয়। সেটাই কবির একমাত্র কামনা। ভিন্নরূপে প্রকাশিত হলেও উদ্দীপকেও দেখা যায়; কবির দেশপ্রেমের তীব্র প্রকাশ। তাই বলা যায়,উদ্দীপক ও ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার মূলচেতনা একই ধারায় প্রবাহিত।
প্রশ্ন ৪। “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।”
ক. বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মহাকাব্যের নাম কী?
খ. সেই ধন্য নরকুলে’— বলতে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করাে।
ঘ. উদ্দীপকে ফুটে ওঠা দিকটি ছাড়াও বঙ্গভূমির প্রতি কবিতায় আরও নানা দিকের সমাবেশ ঘটেছে”- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করাে।
৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। বাংলা ভাষার প্রথম মহাকাব্যের নাম ‘মেঘনাদবধ কাব্য’।
খ। প্রশ্নোত উক্তি দ্বারা কবি বােঝাতে চেয়েছেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তখনই স্মরণীয় হয়ে থাকে, যখন মৃত্যুর পর সে সবার মণিকোঠায় অবস্থান করে।
কবি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ যখন করেছেন তখন তার মৃত্যুও অবধারিত। কিন্তু সব মৃত্যু একরকম নয়। কিছু মৃত্যু আছে যা জীবনকে।আরও বেশি স্মরণীয় করে রাখে। মহৎ কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর পরও সাধারণ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকার মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যায়।
গ। উদ্দীপকে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় বর্ণিত স্বদেশপ্রেমের দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি দেশাত্মবােধক কবিতা। এ কবিতায় স্বদেশের প্রতি কবির তীব্র অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। ফুটে উঠেছে দেশের প্রতি তার অকৃতিম শ্রদ্ধা ও মমত্ববােধ।
উদ্দীপকের কবি তার দেশের সবকিছুতেই মুগ্ধ। তার মনে হয়, পৃথিবীর আর কোথাও এমন সুন্দর দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই দেশ যেন সকল দেশের রানি। কবির এ ভাবনা বা অনুভূতির মধ্য দিয়ে মূলত তার প্রগাঢ় দেশপ্রেমই ব্যক্ত হয়েছে। বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় রয়েছে দেশের প্রতি কবির গভীর ভালােবাসার কথা। এ ভালােবাসা থেকেই কবি নিজ দেশকে ‘মা’ বলে সম্বােধন করেছেন। মাতৃভূমি যেন প্রবাসে অবস্থান করা কবিকে ভুলে না যায়। মাতৃভূমির হৃদয়ে স্থান পেলে মরণেও যেন তার ভয় হবে কবির এই যে দেশপ্রেম, এ দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ। বঙ্গভূমির প্রতি কবিতায় কবির স্বদেশের প্রতি গভীর মমত্ববােধের পাশাপাশি মানবহৃদয়ে অমর হওয়ার আকুতি প্রকাশ পেয়েছে।
বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবি জীবনের প্রয়ােজনে প্রবাসে অবস্থান করেছেন। কিন্তু প্রবাসে অবস্থান করলেও তিনি দেশের কথা কখনাে ভুলতে পারেননি। দেশের জন্য তিনি সর্বদাই কাতর হয়েছেন।
উদ্দীপকের কবি নিজ দেশের সৌন্দর্যে অত্যন্ত মুগ্ধ। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না বলেই তার বিশ্বাস। নিজ দেশকে তার সকল দেশের রানি বলে মনে হয়েছে। কবির এই অনুভূতির পেছনে কাজ করেছে প্রগাঢ় দেশপ্রেম। এরকম দেশপ্রেম আলােচ্য কবিতায়ও ফুটে উঠেছে। তবে তার সাথে যােগ হয়েছে আরও কিছু বিষয়।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় কবির প্রগাঢ় দেশপ্রেম ও শ্রদ্ধাবােধ প্রকাশ পেয়েছে। প্রবাসে অবস্থানরত কবি সর্বদাই নিজ দেশকে স্মরণ করেছেন। তিনি দেশকে মা’ বলে সম্বােধন করে বলেছেন, দেশ যেন তার সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে তাঁকে হৃদয়ে স্থান দেয়। তিনি জানেন প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যুর মুখােমুখি হতে হবে একদিন। কিন্তু কবি যদি দেশ ও দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হতে পারেন তবে মৃত্যুকেও তিনি ভয় পাবেন। মানবহৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার কবির যে বাসনা তা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন ৫। কবিগুরু বলেছেন, ‘দেশকে ভালাে না বাসলে তাকে ভালাে করে জানার ধৈর্য থাকে না; তাকে না জানলে তার ভালাে করতে চাইলেও ভালাে করা যায় না। প্রাচীন রােমান কবি ভার্জিল (খ্রিষ্টপূর্ব ৭০—১৯), বলে গেছেন, ‘সে-ই সবচেয়ে সুখী, যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতাে ভালােবাসে।’ কথাটার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় একটি সংস্কৃত প্রবচনেও, যেটাতে বলা হয়েছে, ‘জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরীয়সী’, অর্থাৎ জননী জন্মভূমি স্বর্গের চাইতেও গরীয়ান।
ক. কবি বঙ্গভূমিকে কী বলে সম্বােধন করেছেন?
খ। কবি জন্মভূমির প্রতি মিনতি করেছেন কেন? ব্যাখ্যা করাে।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার ভাবনাগত পার্থক্য তুলে ধরাে? আলােচনা করাে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার কবির ভাবাবেগকে কীভাবে ধারণ করেছে? বিশ্লেষণ করাে।
৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর
ক। কবি বঙ্গভূমিকে মা বলে সম্বােধন করেছেন।
খ। জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালােবাসার কারণে তাকে মনে রাখার উদ্দেশ্যেই কবি জন্মভূমির প্রতি মিনতি করেছেন।
কবি তার জন্মভূমিকে হৃদয় দিয়ে ভালােবাসেন। প্রবাসে থেকেও তিনি জন্মভূমির স্মৃতিকে হৃদয়ে লালন করেছেন। সে ভালােবাসা আর মমত্ববােধ থেকে তিনি স্বদেশের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকতে চান। আর তাই প্রিয় মাতৃভূমি যেন তাকে ভুলে না যায়, সেজন্য কবি জন্মভূমির কাছে মিনতি জানিয়েছেন।
গ। স্বদেশপ্রেম প্রকাশের দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার পার্থক্য রয়েছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি কবিতায় দেশমাতৃকার প্রতি কবি হৃদয়ের গভীর ভালােবাসা প্রকাশিত হয়েছে। আলােচ্য কবিতাটিতে দেশমাতৃকার প্রতি কবির মিনতির মধ্য দিয়ে স্বদেশের প্রতি তার কাতরতা প্রকাশিত হয়েছে। স্বদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালােবাসাই কবিকে মাতৃভূমির জন্য স্নেহকাতর করে তুলেছে।
উদ্দীপকে দেশপ্রেম নিয়ে কয়েকজন মনীষীর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে প্রথমেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, দেশকে ভালােভাবে জানতে বা দেশের কল্যাণে কাজ করার জন্য সর্বাগ্রে দেশকে ভালােবাসতে হবে। অন্যদিকে, রােমান কবি ভার্জিল দেশপ্রেমকে সুখের আকর মনে করেন। সেখানে উল্লিখিত সংস্কৃত প্রবচনটির মর্মার্থও প্রায় একই। পক্ষান্তরে, ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় জন্মভূমি বাংলার প্রতি কবির গভীর বােধ ও ভালােবাসা প্রকাশ পেয়েছে। সে ভালােবাসা থেকেই তাকে ভুলে না যাওয়ার জন্য, জন্মভূমির কাছে মিনতি জানিয়েছেন। আলােচ্য কবিতাটিতে প্রকাশিত কবির এ মনােভাব উদ্দীপকের মনীষীদের বক্তব্যের থেকে ভিন্ন। এদিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
ঘ। বিষয় ভাবনার মধ্য দিয়ে উদ্দীপকটি ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতার কবির ভাবাবেগকে ধারণ করেছে।
‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় জন্মভূমি বাংলার প্রতি কবি তার হৃদয়ানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। এ কবিতায় দেশমাতৃকার কাছে কবির একটাই মিনতি, তিনি যেন দেশমায়ের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকেন। কবির এমন মনােভাবের মধ্য দিয়ে তার দেশাত্মবোেধর পরিচয় মেলে।
উদ্দীপকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ কয়েকজন মনীষীর দেশপ্রেম সম্পর্কিত ভাবনার কথা প্রকাশিত হয়েছে। দেশপ্রেমকে তারা অত্যন্ত মাহাত্ম্যপূর্ণ বলে মনে করেন। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন, দেশের কল্যাণ করতে হলে প্রথমে দেশকে ভালােবাসতে হবে। অন্যদিকে, রােমান কবি ভার্জিলি মনে করেন, দেশকে ভালােবাসার মধ্য দিয়েই সুখ লাভ করা যায়। এছাড়া উল্লিখিত সংস্কৃত প্রবচনটিতেও দেশকে স্বর্গের চেয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা হয়েছে।
বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় বঙ্গভূমির প্রতি কবি হৃদয়ের কাতরতা প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় দেশকে কবি মা হিসেবে কল্পনা করে নিজেকে ভেবেছেন তার সন্তান। কবির প্রত্যাশা মা যেমন সন্তানের দোষ মনে রাখেন না তেমনি দেশমাতৃকাও তাঁর সকল দোষ ক্ষমা করে দেবেন। এমন ভাবাবেগের মধ্য দিয়ে কবির গভীর দেশাত্ববােধের পরিচয় মেলে।
একইভাবে, আলােচ্য উদ্দীপকে কিছুটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে মূলত দেশপ্রেমই প্রাধান্য পেয়েছে। অর্থাৎ উদ্দীপক এবং আলােচ্য কবিতা উভয়ক্ষেত্রেই দেশপ্রেম মূল বিষয়। এদিক থেকে উদ্দীপকটি আলােচ্য কবিতার কবির ভাবাবেগকে ধারণ করেছে।