বঙ্গবাণী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর : ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন ২। কবি আবদুল হাকিম কোন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : কবি আবদুল হাকিম সুধারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ৩। কবি কাদের জন্মপরিচয় নিয়ে দ্বিধান্বিত?
উত্তর : বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে বাংলা ভাষাকে যারা হিংসা করে কবি তাদের জন্মপরিচয় নিয়ে দ্বিধান্বিত।
প্রশ্ন ৪। মানুষের সব ভাষা বােঝেন কে?
উত্তর: সৃষ্টিকর্তা মানুষের সব ভাষা বােঝেন।
প্রশ্ন ৫। ‘আপে’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘আপে’ শব্দটির অর্থ স্বয়ং বা আপনি।
প্রশ্ন ৬। মধ্যযুগের অন্যতম কবি কে?
উত্তর : মধ্যযুগের অন্যতম কবি হলেন আবদুল হাকিম।
প্রশ্ন ৭। আবদুল হাকিম কোন যুগের অন্যতম প্রধান কবি?
উত্তর : আবদুল হাকিম মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান কবি।
প্রশ্ন ৮। ‘ছিফত’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘ছিফত’ শব্দটির অর্থ গুণ।
প্রশ্ন ৯। কবি কাদের বিদেশ যেতে বলেছেন?
উত্তর : কবি তাদের বিদেশ যেতে বলেছেন দেশি ভাষার প্রতি যাদের অনুরাগ নেই ।
প্রশ্ন ১০। সৃষ্টিকর্তা কোন কোন ভাষা বুঝতে পারেন?
উত্তর : সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর সব ভাষাই বুঝতে পারেন।
প্রশ্ন ১১। কবি কাদের জন্মপরিচয় নিয়ে সন্দিহান?
উত্তর : যারা বাংলাদেশে জন্মে বাংলা ভাষাকে হিংসা করে তাদের জন্মপরিচয় নিয়ে কবি সন্দিহান।
প্রশ্ন ১২। মাতৃভাষা কী?
উত্তর : শিশু প্রথম মায়ের মুখ থেকে যে ভাষায় কথা বলতে শেখে তা-ই তার মাতৃভাষা ।
প্রশ্ন ১৩। প্রভু কোন বাক্য বােঝেন?
উত্তর : প্রভু সব দেশের সব বাক্য বােঝেন।
প্রশ্ন ১৪। ‘হিংসে’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর : ‘হিংসে’ শব্দটির অর্থ বিদ্বেষ পােষণ করে।
প্রশ্ন ১৫। আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি কবির কী নেই?
উত্তর : আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি কবির রাগ বা দ্বেষ নেই।
বঙ্গবাণী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জনা – বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর :
যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন ॥ – চরণের মধ্য দিয়ে কবি স্রষ্টা যে সব ভাষা বুঝতে পারেন সেই বিষয়টি প্রকাশ করেছেন।
কবি আবদুল হাকিম ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় নিজের মাতৃভাষা বাংলার কথা বলেছেন। তিনি নিজের দেশি ভাষার প্রতি মমতা ও ভালােবাসা ব্যক্ত করেছেন। কবিতাটিতে কবি বলেছেন, প্রত্যেক দেশের মানুষের নিজস্ব মাতৃভাষা রয়েছে। মানুষ যে যে ভাষায় কথা বলে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে, স্রষ্টা মানুষের সেসব ভাষা বুঝতে পারেন। প্রশ্নোক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে স্রষ্টার সব ভাষা বােঝার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন ২। “দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায় ॥”- কবি একথা কাদের সম্পর্কে বলেছেন?
উত্তর : কবি আলােচ্য কথাটি মাতৃভাষাবিদ্বেষীদের সম্পর্কে বলেছেন।
কবি আবদুল হাকিম ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি সতেরাে শতকে রচনা করেন। তখন এক শ্রেণির মানুষ নিজের ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তারা নিজের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কেও সন্দিহান ছিল। ফলে তারা স্বদেশ, স্বভাষা ছেড়ে বিদেশি ভাষায় কাব্যসাহিত্য সৃষ্টি এবং ভাব বিনিময়ে আগ্রহ দেখাত। শেকড়হীন পরগাছা স্বভাবের এসব সংকীর্ণমণা লােকের প্রতি কবি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাই যাদের মাতৃভাষায় অবজ্ঞা তাদের সম্পর্কে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন ৩। “আরবি-ফারসি-হিন্দে নাই দুই মত” – কথাগুলাে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ব্যক্ত করার পাশাপাশি আরবি-ফারসি ভাষার প্রতিও যে তার কোনাে রাগ-বিদ্বেষ নেই সে কথা বলেছেন।
আরবি-ফারসি ভাষায় আল্লাহ ও মহানবির গুণগান বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এসব ভাষার প্রতি সবার মতাে কবিও পরম শ্রদ্ধাশীল। কবি মাতৃভাষার প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল তেমনি অন্য ভাষার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।
প্রশ্ন ৪। ধর্মীয় গোঁড়ামি কীভাবে মাতৃভাষা চর্চায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়?
উত্তর : ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে মধ্যযুগে বাংলা ভাষাকে হিন্দুর অক্ষর বলে মুসলমানরা ঘৃণা করত।
বাংলা ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার একটি গভীর যােগাযােগ আছে। এ কারণে অনেক ভাষাতাত্ত্বিক বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত ভাষার দুহিতা বলে থাকেন। এ কারণে একশ্রেণির ধর্মান্ধ মুসলিম লেখক বাংলাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলে অবজ্ঞা করত। তারা মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে আরবি ও ফারসি ভাষা ব্যবহার করে আত্মতৃপ্তি লাভ করত। কবি তার ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ‘হিন্দুর অক্ষর’ কথাটি উল্লেখের মাধ্যমে বাংলা ভাষা সম্পর্কে তৎকালীন মুসলমান লেখকদের অজ্ঞতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
প্রশ্ন ৫। মাতৃভাষার অবজ্ঞাকারীদের প্রতি কবির পরামর্শ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মাতৃভাষার অবজ্ঞাকারীদের প্রতি কবির পরামর্শ হলাে— তারা যেন স্বদেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যায়।
যারা স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তারা স্বদেশ ও মাতৃভাষার প্রতি মমত্বহীন। এসব লােকের প্রতি কবির পরামর্শ হলাে- যাদের মনে স্বদেশের ও ভাষার প্রতি অনুরাগ নেই, তাদের এদেশে বসবাসের অধিকার নেই। কারণ যারা স্বদেশানুরাগী নয়, তারা এ দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেলেই পারে।
প্রশ্ন ৬। বাংলা ভাষাকে যারা হিংসা করে তাদের জন্য সম্পর্কে কবির সন্দিহান হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : বাংলা ভাষাকে যারা হিংসা করে তাদের জন্ম সম্পর্কে কবি সন্দিহান।
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা তথা স্বদেশী ভাষা। এদেশে জন্মগ্রহণ করা মানুষ তার দেশ-ভাষা, সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা স্বদেশ, স্বদেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে হিংসা করে তারা আসলেই এদেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে কিনা সে বিষয়ে কবি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন ৭। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কাদের প্রতি কবির ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর : স্বদেশ ও স্বভাষাকে যারা অবজ্ঞা করত তাদের প্রতি কবির ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
এদেশে ধর্মীয় গোঁড়ামিসম্পন্ন বহু লােক আছে যারা নিজেদের ভাষাকে অবজ্ঞা করে। তারা বাংলা ভাষাকে হিন্দুর অক্ষর বলে অভিহিত করে। এসব ব্যক্তির স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি কোনাে শ্রদ্ধা নেই। দেশপ্রেমিক কবি তাদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তিনি এসব হীনম্মন্য লােককে বিদেশে চলে যেতে বলেছেন।