প্রতিবেদনঃ সাম্প্রতিক ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর

মনে কর, তুমি নাজিম/নাজমা। তুমি একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধি। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়” শিরােনামে পত্রিকায় প্রকাশ উপযােগী একটি প্রতিবেদন রচনা কর।

অথবা, মনে কর, তুমি পরাগ। দৈনিক প্রথম আলাে পত্রিকার একজন প্রতিনিধি। সাম্প্রতিক ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ দৈনিক সত্যবাণী ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ঃ বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই দেখা দেয় ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব। কখনাে কখনাে এই জ্বর মহামারীরূপে দেখা দেয়। তবে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে ভয়ংকর আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গুজ্বর। এই মহামারী জ্বরে ঢাকাসহ সমগ্র দেশে মৃত্যুবরণ করেছে অনেক মানুষ। সারা দেশে মানুষের মনে ছড়িয়ে পড়েছে ডেগুজ্বরের আতঙ্ক। এর ভয়ে ঢাকার অনেক স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে গােটা বিশ্বে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় দুই কোটি মানুষ।

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একধরনের তীব্র জ্বর। ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বর ও হেমােরেজিক ডেঙ্গুত্বর। ডেঙ্গু দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা দ্বারা ছড়ায়। এর একটি হচ্ছে এডিস এজিপটাই ও অন্যটি এডিস এলকোপিপটাস। এডিস এজিপটাই স্ত্রী মশা কোনাে ব্যক্তিকে কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এরা দিনের বেলায় কামড়ায়। এই মশা ডিম পাড়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পাত্রের পানিতে যেমন- ফুলদানি, ফুলের টব, হাঁড়ির ভাঙা অংশ, পরিত্যক্ত টায়ার, মুখ খােলা পানির ট্যাংক, জলকাদা, ডাবের খােসা ইত্যাদি। সাধারণত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে মাংপেশি ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রিতে উঠে যায়। মাথা ও চোখের মাংসপেশি ব্যথা, বমি বমি ভাব, বিষন্নতার ছাপ এবং দেহে এক ধরনের ফুসকুড়ি ওঠে। কখনাে কখনাে মাংসপেশির খিচুনিতে রােগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শিশু-কিশােররা এ জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি। ভয়াবহ ডেঙ্গুজ্বরের কোনাে চিকিৎসা নেই। নেই প্যাটেন্টকৃত কোনাে ওষুধ। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতে হয়। রােগীকে পুরােপুরি বিশ্রামে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলে রােগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। জ্বর কমানাের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে এসপিরিন বা এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। রােগীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করতে হবে। মারাত্মক আক্রান্ত রােগীর ক্ষেত্রে পানিস্বল্পতা এবং রক্তক্ষরণের চিকিৎসার জন্য আইভি স্যালাইন বা রক্ত সঞালনের প্রয়ােজন হতে পারে। তবে এডিস মশা যেহেতু ডেঙ্গুজ্বরের বাহক, তাই বাহক মশা দমন করাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরােধের প্রধান উপায়। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলাে- বাসগৃহে ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খােসা ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করা। অর্থাৎ রােগ ছড়ানাের আগেই এডিস মশা নির্মূল করে ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরােধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। স্কুল-কলেজের ছাত্রশিক্ষক এবং অভিভাবকসহ দেশের আপামর জনগণ সচেতন হলেই ভয়াবহ ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরােধ সম্ভব।

নাজিম/নাজমা : স্থানীয় প্রতিনিধি

Leave a Comment