বর্তমানে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন লেখ।
অথবা, মনে কর, তুমি বকুল। দৈনিক সমকাল পত্রিকার স্টাফ রিপাের্টার। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
অথবা, মনে কর, তুমি সাজিদ। দৈনিক প্রথম আলাে পত্রিকার জেলা সংবাদদাতা। নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
অথবা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে জনজীবন বিপন্ন এই শিরােনামে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : জনজীবন বিপর্যস্ত
স্টাফ রিপাের্টার ‘দৈনিক যুগান্তর’- ঢাকা ॥ ১৭ আগস্ট, ২০২১ঃ জীবজগতের প্রতিটি জীব তথা প্রাণীকেই খেয়েপরে জীবনধারণ করতে হয়। মানুষ জন্মের পর থেকেই বাচার তাগিদে তার প্রয়ােজনীয় দ্রব্য স্থিতি করতে শিখেছে। সভ্যতার অগ্রগতি হয়েছে আর দ্রব্যের প্রয়ােজনীয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলােকে পণ্ডিত মানুষেরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছেন। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা মােটামুটি পাঁচ ভাগে চাহিদাগুলােকে ভাগ করা হয়েছে। আর এ চাহিদাগুলাে পূরণের জন্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যই হচ্ছে নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্য। যা না হলে মানুষের একদণ্ডও চলে না। তাহলে খুব সহজেই অনুমেয় এর কোনাে একটি দ্রব্যের মূল্য যদি ক্রেতার সাধ্যের বাইরে চলে যায় তাহলে তার জীবন অনেকাংশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের দিকে একটু সচেতন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই দেখা যায় নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যের কী রকম উর্ধ্বগতি। খাওয়াপরার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি দ্রব্যসামগ্রীর দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে অবস্থান করছে দ্রব্যের মূল্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন দ্রব্যের এ মূল্য বৃদ্ধি। খুব সহজেই এর কারণগুলােকে চিহ্নিত করা যায়। ব্যবসায়ী শ্রেণির মুনাফালােভী মনােভাবকেই এর জন্য দায়ী করা যায়। এছাড়া আরও ছােট ছােট কিছু কারণ রয়েছে, তবে সেগুলাে গৌণ। মজুদদাররা দ্রব্য গুদামজাত করে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেল কিনা সে দিকে তাদের খেয়াল খুব কমই। তাদের ধারণা যেহেতু দ্রব্যটি মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম সেহেতু যেকোনাে উপায়ে দ্রব্যটি তারা ক্রয় করতে বাধ্য। দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধ্বগতিতে কেবল মজুদদার শ্রেণি নয় বিভিন্ন এনজিও, সাম্রাজ্যবাদী চক্র ও পুঁজিপতি শ্রেণিরও হাত রয়েছে। আর সরকারের অর্থবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে কোনাে জোড়ালাে পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আর একটি কারণ হচ্ছে—সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি। সরকারি চাকরিজীবীরা যে হারে মহার্ঘ ভাতা পেয়ে থাকেন দ্রব্যের মূল্য সে হারে না বেড়ে বরং জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে। ফলে তাদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি কেবল স্বপ্নের জাল বােনার মতাে। তাছাড়া বেসরকারি বা আধা সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা থেকে বঞিত। ফলে বাজারে গেলেই তাদের নাভিশ্বাস ওঠে। তাই সরকার, সচেতন শ্রেণি ও সর্বস্তরের জনসাধারণের উচিত এর প্রতিকারের জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালেই দেখা যায়, যে দেশেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে সে দেশেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। দেশে নামেমাত্র গণতন্ত্র না থেকে যদি সত্যিকারের জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে এর আশু প্রতিকার সম্ভব হবে। মুনাফালােভী, দুনীতিবাজ কালােবাজারি-ব্যবসায়ী শ্রেণি, ঘুষখাের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কবতে হবে, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী মুনাফাচক্রকে রােধ করতে হবে। তাহলেই দ্রব্যের মূল্য হ্রাস পাবে। জনমনে হতাশা, ক্ষোভ দূর হয়ে শান্তি ফিরে আসবে। বাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে জনমানসের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করতে হবে। আর এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সদাশয় সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আ.হ.ম কামাল
প্রতিবেদক