পূর্ব বাংলার আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদের উত্থান অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। ১৯৬১ সালে আসামের শিলচর শহরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা  দাবির আন্দোলনে এক তরুণীসহ ১১ জন নিহত হয়। তাদের আন্দোলনের দরুন বাংলা ভাষা শুধু আসামের রাজ্যভাষা হিসেবেই নয় পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ভাষা ও ভারতবর্ষের প্রধান ৫টি ভাষার একটি হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়।

ক. পাশের দশকব্যাপী বাঙালিদের কী প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিকাল ছিল?

খ. আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের কারণ ব্যাখ্যা কর।

গ. আসামের ঘটনার মতাে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া আন্দোলনটির পটভূমি ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটির মতাে বাংলাদেশে সংঘটিত আন্দোলনই ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম আন্দোলন”- বক্তব্যটির সপক্ষে যুক্তি দেখাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। পাশের দশকব্যাপী বাঙালিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিকাল ছিল।

খ। মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে সংস্কারপন্থিরা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগের পশ্চিম পাকিস্তানি মদদপুষ্ট প্রতিক্রিয়াশীল অংশ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও সংস্কারপন্থি অংশটির ওপর নানাভাবে দমনপীড়ন চালাতে থাকে। ফলে সংস্কারপন্থিরা মুসলিম লীগের দ্বিজাতি তত্ত্বের ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে।

গ। উদ্দীপকে ১৯৬১ সালে আসামের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সামঞ্জস্য রয়েছে। 

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে রয়েছে বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস।

পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই এ রাষ্ট্রের ভাষা কী হবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে এপ্রিল মাসে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যখন প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়, তখনই বিতর্কটি পুনরায় শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ১৭ই মে চৌধুরী খলীকুজ্জামান এবং জুলাই মাসে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব দিলে ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও ড. মুহাম্মদ এনামুল হকসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এর প্রতিবাদ করেন।

১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত এক শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পূর্ব বাংলায় তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘােষণা দিলে ছাত্রসমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। সর্বশেষ ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানে জিন্নাহর অনুকরণে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘােষণা করলে আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়। এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ।

অতএব বলা যায়, আসামের আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রয়েছে এক গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস।

গ। উদ্দীপকের ঘটনাটির মতাে বাংলাদেশে সংঘটিত আন্দোলনটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলন; যা বাঙালি জাতির মুক্তির প্রথম আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বাঙালি জাতিকে সুনজরে দেখেনি। বাঙালি জাতির ওপর আধিপত্য বিস্তারের বিশেষ পায়তারা চলছিল। তারা চেয়েছিল বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে। ফলে পূর্ব বাংলায় সুসংগঠিত আন্দোলন শুরু হয়। এমতাবস্থায় ১৯৪৮ সালে ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন। পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক পর্যায়ে শাসকগােষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু গণবিস্ফোরণের কাছে শাসকগােষ্ঠী মাথানত করতে বাধ্য হয়। তারা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে মেনে নিতে বাধ্য হয়। অবশেষে ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের প্রথম সংবিধানে বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলন মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। এ আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির প্রথম সফল আন্দোলন, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক স্বাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। বাঙালি জাতির মনে রাজনৈতিক সচেতনতা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এ আন্দোলন পরবর্তী আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তােলে। জাতীয়তাবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়। উপরিউক্ত আলােচনার আলােকে পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের ঘটনাটির মতাে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির প্রথম মুক্তি আন্দোলন। কারণ এ আন্দোলনের পথ ধরে পরবর্তী নৈতিক আন্দোলনগুলাে সংঘটিত হয় এবং জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।

 

প্রশ্ন ২।

দৃশ্যকল্প-১: পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার নির্বাচন নিয়ে একটি নিবন্ধে জনাব কালাম বলেন, পাশের দশকে এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে চারটি দল সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে।

দৃশ্যকল্প-২: বাংলাদেশের অ্যুদয় শীর্ষক বক্তৃতায় জনাব মামুন বলেন, এক ব্যক্তির এক ভােটের ভিত্তিতে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে পূর্ব বাংলার প্রধান রাজনৈতিক দল বিপুল ভােটে বিজয় অর্জন করে।

ক. উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কী?

খ. ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় কেন?

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার কোন নির্বাচনের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.“দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লিখিত ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের অ্যুদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান”- তুমি কি একমত? যুক্তি দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর 

ক। ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা ও ছাত্রসমাজের ১১ দফার প্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালে যে অ্যুত্থান ঘটেছিল তাকে তাই উনসত্তরের গণঅভুত্থান।

খ। ৬ দফা দাবিনামায় পূর্ব বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরা হয় বলে একে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।

ছয় দফা কর্মসূচি বাঙালির জাতীয় চেতনামূলে বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এ ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এ ছয় দফা দাবির পথ ধরে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। এ কারণে ছয় দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বলা হয়।

গ। উদ্দীপকে দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সাদৃশ্য রয়েছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসক দল মুসলিম লীগ দীর্ঘদিন নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের কোনাে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রাদেশিক সরকার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের শােচনীয় পরাজয় ঘটানাের লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগ সমমনা চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। চারটি দল হলাে- আওয়ামী লীগ, কৃষক-শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রতীক ছিল নৌকা। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, সে নির্বাচনের সাথে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের সাদৃশ্য দেখতে পাই।

ঘ। হ্যা, দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লিখিত ঘটনাটি ছিল ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদের নির্বাচন। উক্ত নির্বাচন বাংলাদেশের অ্যুদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগত কারণেই এ বিষয়ে আমি একমত পােষণ করি।

১৯৪৭ সালে পাস্তিান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭০ সালের পূর্বে কোনাে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম এক ব্যক্তি এক ডােটের ভিত্তিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সরকার ও স্বার্থান্বেষী মহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। তারা বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিরােধিতা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ‘অ্যুদয়ের পিছনে নির্বাচনের অপরিসীম গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রদানে বিশাল ভূমিকা রাখে। পরিণতিতে।স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। উপরিউক্ত আলােচনার আলােকে প্রতীয়মান হয় যে, দৃশ্যকল্প-২ এ উল্লিখিত ঘটনাটি ছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং এ নির্বাচনের গুরুত্ব বিবেচনায় এ নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসংগত। অতএব, প্রশ্নোত উক্তিটি যথার্থ।

 

প্রশ্ন ৩। 

কতিপয় ছাত্র পুলিশের গুলিতে শহিদ

        X

নিজের মতাে করে কথা বলার অধিকার আদায়

 

১৯৬৯-১৯৭১-এর মধ্যবর্তী সময়ের নির্বাচন

        Y

অধিকার আদায়ের যুদ্ধ

ক. বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি কী?

খ. যুক্তফ্রন্ট কেন গঠন করা হয়? ব্যাখ্যা কর।

গ, ‘X’ কোন আন্দোলনকে ইঙ্গিত করছে? ব্যাখ্যা কর। ঘ. ‘X’ এর নির্দেশিত ঘটনার ফলাফল ‘Y’ ঘটনার মধ্যে নিহিত। উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচিকে আইয়ুব সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ বলে আখ্যায়িত করেন।

খ। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তারা নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার গঠনের কোনাে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এছাড়া প্রাদেশিক সরকার নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের টালবাহানা পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে শাসক দল মুসলিম লীগের শােচনীয় পরাজয় ঘটানাের লক্ষ্যে ১৯৫৩ সালের নভেম্বর আওয়ামী লীগ সমমনা চারটি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।

গ। চিত্র ‘x’ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ইঙ্গিত করছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মলাভের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বাঙালির মায়ের ভাষা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। আর তখন থেকেই শুরু হয় আন্দোলন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারি এক ঘােষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১০ জন করে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে, মিছিলে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহিদ হন। অনেকে আহত হন। ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি জাতি মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার লাভ করে। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে চিত্র ‘x’ ভাষা আন্দোলনকে ইঙ্গিত করেছে।

ঘ। চিত্র ‘x’ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ‘Y’ দ্বারা ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। “ভাষা আন্দোলনের ফলাফল ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্যে নিহিত।”উক্তিটি যথােপযুক্ত।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মূলত সাংস্কৃতিক আন্দোলন হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম ও সুদূরপ্রসারী। এ আন্দোলন ছিল বাঙালি, জাতির, প্রথম সফল আন্দোলন, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক স্বাধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়। বাঙালি জাতির মনে রাজনৈতিক সচেতনতা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। এ আন্দোলন পরবর্তী আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তােলে। জাতীয়তাবাদ বিকাশের পথ সুগম , হয়। এ আন্দোলনের পথ ধরে পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলাে সংঘটিত হয়। যেমন- ১৯৫৪ সালে বাঙালিদের যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন সংঘটিত হয়। এসব আন্দোলনের পথ ধরেই পূর্ব বাংলার জনগণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ করে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে ‘x’ দ্বারা ভাষা আন্দোলনকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে পরবর্তী আন্দোলনের বীজ নিহিত হয়। এ আন্দোলন পরবর্তী আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তােলে। ফলে জাতীয়তাবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে ‘Y’ ঘটনা, অর্থাৎ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে।

 

প্রশ্ন ৪।  ‘A’ রাষ্ট্র তার অধীনস্থ ‘B’ এলাকাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ‘B’ অলের জনগণের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে ‘A’ রাষ্ট্র উদাসীনতা দেখায়। ‘B’ অঞ্চলের জনগণ তাদের অধিকারের জন্য সচেতন হতে থাকে। তারা একজন মহান নেতা জনাব ‘M’ এর নেতৃত্বে দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবিগুলাে জনাব ‘M’ রাষ্ট্রের নিকট পেশ করেন। ফলে ‘A’ রাষ্ট্রের শাসক জনাব ‘M কে বন্দি করে যড়ষন্ত্রকারী হিসেবে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে জনাব ‘M’ কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

ক. বাঙালি জাতীয়তাবাদ কী?

খ. ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দাবিগুলাের সাথে তােমার পঠিত কোন দাবির সাথে মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.“জনাব ‘M’ এর মুক্তির জন্য আন্দোলন অপরিহার্য ছিল” পাঠ্যবইয়ের আলােকে বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হলাে বাঙালি জনগােষ্ঠীর ঐক্য ও সংহতি।

খ। পৃথিবীতে ৬০০০-এর অধিক ভাষা রয়েছে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলা অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমাদের পূর্বসূরিগণ আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য জীবনদানের এরূপ দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এজন্য এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করে।

গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত দাবিগুলাের সাথে আমার পঠিত ছয় দফা দাবির মিল রয়েছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর হাতে। শাসকগােষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। তারা এ অঞ্চলের জনগণের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখায় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণ করে। অধিকন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শাসকগােষ্ঠীর নিকট ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করেন। ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সকল অধিকারের কথা তুলে ধরে। ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলনের স্তিমিত করার জন্য শাসকগােষ্ঠী দমনপীড়ন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে এবং তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে আন্দোলন গণঅভ্যুথানে রূপ নিয়ে সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। উদ্দীপকের ঘটনার সাথে আমরা উপরিউক্ত ঐতিহাসিক ঘটনার মিল দেখতে পাই। অর্থাৎ উদ্দীপকে A দ্বারা পাকিস্তান, B দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান M দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বােঝানাে হয়েছে। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত দাবিগুলাের সাথে আমার পঠিত ৬ দফা দাবির মিল রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব ‘M’ দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বােঝানাে হয়েছে। তার মুক্তির জন্য আন্দোলন অপরিহার্য ছিল- প্রশ্নোত্ত এ উক্তিটি যথার্থ।

পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি পেশ করেন। পাকিস্তান সরকার ৬ দফা দাবি গ্রহণ না করে দমনপীড়ন শুরু করলে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলন শুরু হয়। এক পর্যায়ে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে আন্দোলন স্তিমিত করার চেষ্টা চালানাে হয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছাড়া যেমন ৬ দফা দাবি আদায় অসম্ভব। তেমনি তার নেতৃত্ব ছাড়াও বাঙালি জাতির মুক্তি অসম্ভব। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রসমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ লাভ করে। গণআন্দোলনের ফলে এক পর্যায়ে শাসকগােষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। পরিশেষে বলা যায়, বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। এ বিবেচনায় ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন সংঘটিত হয়। অতএব, প্রশ্নোত্ত উক্তিটি যথার্থ ও তাৎপর্যবহ।

 

প্রশ্ন ৫। 

দৃশ্যকল্প-১: ‘x’ এবং ‘Y’ দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেন। তারা একই দেশের ভিন্ন দুটি অঞ্চলের বাসিন্দা। দেশের শাসনক্ষমতায় ‘Y’ এর অঞলের প্রাধান্য রয়েছে। যে কারণে ‘Y’ যত সুযােগ পায় ‘x’ তত সুযােগ পায় না। এ ধরনের বৈষম্য ‘x’ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।

দৃশ্যকল্প-২ : ‘x’ এর এলাকার নেতা ঐ বৈষম্যসমূহ দূর করার জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা করেন। তার পরিকল্পনাগুলাে কোনাে না কোনােভাবে শাসকগােষ্ঠীর নিকট পৌছে যায়। ফলে নেতাসহ অনেককে মিথ্যা অভিযােগে গ্রেফতার করা হয়। এলাকার লােকজন তীব্র প্রতিবাদ করলে শাসকগােষ্ঠী তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

ক. ২১ দফার প্রথম দফাটি কী?

খ. ‘বিশ্বদরবারে আজ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত? ব্যাখ্যা কর।

গ. দৃশ্যকল্প ১ দ্বারা তােমার পাঠ্যবইয়ের কোন ধারণার ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “দৃশ্যকল্প ২ এর ঘটনাটি পূর্ব বাংলার জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে প্রেরণা যুগিয়েছিল” – বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক। ২১ দফার প্রথম দফাটি হলাে-“বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা।”

খ। মাতৃভাষা রক্ষা আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকত, জব্বার, রফিক, সালামসহ আরও অনেকে শহিদ হন। মাতৃভাষার জন্য এরূপ জীবনদান পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ কারণে জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো বাংলাদেশের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বদরবারে এক অনন্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।

গ। দৃশ্যকল্প-১ দ্বারা আমার পাঠ্যবইয়ের পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যের ধারণার ইঙ্গিত রয়েছে।

পাকিস্তান সৃষ্টির আগে পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে অগ্রসর ছিল। কিন্তু ১৯৪৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসনশােষণ প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ব পাকিস্তান দ্রুত পিছিয়ে যেতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে দুই অঞলের মধ্যকার বৈষম্য। সে সময় পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তান অনেক বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করেছিল। পূর্ব বাংলার পাট, চা, চামড়া প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতাে, তার সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় হতাে। ফলে ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, কৃষিসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল। সে সময় প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বৈষম্য ছিল চরমে। এমতাবস্থায় পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরূদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে ওঠে। 

উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ ‘x’ ও ‘Y’ এর অঞল দুটির মধ্যেও একই চিত্র দেখতে পাই। যা আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনুরূপ। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প ১ দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যের ধারণার ইঙ্গিত রয়েছে।

ঘ। দৃশ্যকল্প-২ এর ঘটনাটি অর্থাৎ ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা পূর্ব বাংলার জনগণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে প্রেরণা

যুগিয়েছিল- প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ও তাৎপর্যপূর্ণ। পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তার বিশ্বাস ছিল শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র , সংগ্রাম ব্যতীত বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। তাই তিনি সে সময়ে গােপনে গঠিত বিপ্লবী পরিষদের তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্মতি দিয়েছিলেন। পরিকল্পনাটি হয়েছিল ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায়। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বেই তা ফাঁস হয়ে যায়। এরপর পাকিস্তান সরকার ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা দায়ের করে এবং বঙ্গবন্ধুসহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এমতাবস্থায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়।

ছাত্রসমাজের ১১ দফার ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গণআন্দোলনের রূপ লাভ করে। আন্দোলনের মুখে সরকার বঙ্গবন্ধুসহ সকল আসামিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। বাংলার জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত হয়।

উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এর x এর ঘটনাটি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাংলার জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেরণা জোগাতে এ মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতএব, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

Leave a Comment