পাছে লোকে কিছু বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। ১.আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে

আসে নাই কেহ অবনী পরে,

সকলের তরে সকলে আমরা

প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’

২. নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালাে

যুগ-জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলাে।

সবাই মােরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে।

নিন্দুক সে ছায়ার মতাে থাকবে পাছে পাছে।

নিন্দুক সে বেঁচে থাকুক বিশ্বহিতের তরে,

আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে। (সংক্ষেপিত)

ক. প্রশমিতে’ শব্দটির অর্থ কী?

খ. ‘সংশয়ে সংকল্প সদা টলে’- উক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্য ‘পাছে লােকে কিছু বলে কবিতার কোন স্তবকের বিপরীত ভাব ধারণ করেছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশের নিন্দুক ও ‘পাছে লােকে কিছু বলে কবিতার নিন্দুকের তুলনামূলক আলােচনা করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। প্রশমিতে’ শব্দটির অর্থ-উপশম ঘটাতে বা নিবারণ করতে।

খ। অন্যের সমালােচনার ভয়ে সংশয়ে সংকল্প টলে। সমাজে কোনাে কাজ করতে গেলে নানা জন নানারকম সমালােচনা করে থাকে। এটি আমাদের মনে দ্বিধা ও. সংকোচ তৈরি করে। ফলে আমরা ঠিকভাবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি না। দৃঢ় মনােবল না থাকলে অন্যের সমালােচনা আমাদের কাবু করে ফেলে। আর এজন্যই আমরা আমাদের মনের সংকল্প থেকে বিচ্যুত হই।

গ। উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্য ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকের বিপরীত ভাব ধারণ করেছে।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার প্রথম স্তবকে অন্যের সমালােচনার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত ও সংকুচিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে কেউ কোনাে মহৎ কাজ করতে গেলে কিছু লােকের সমালােচনা শােনার ভয় করে। এজন্য কোনাে কাজেই তারা নিজেদের সংকল্প স্থির রাখতে পারে না।

উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্যে বলা হয়েছে নিজেকে বিব্রত করার জন্য কারাে জন্ম হয়নি। প্রত্যেক ব্যক্তিই তার কাজের মাধ্যমে অন্যের কল্যাণ সাধন করতে পারে। বিপদে-আপদে একে অন্যের সহযােগিতায় কোনাে লজ্জা বা সংকোচ থাকার কথা নয়। সুতরাং বলা যায়, পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় সমালােচনার নেতিবাচক দিক দেখানাে হয়েছে, কিন্তু উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্যের মাঝে এর বিপরীত ভাব প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের দ্বিতীয় অংশ এবং ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার নিন্দুকের প্রভাবকে পুরােপুরিভাবে একসূত্রে গাঁথা যায় না।

উদ্দীপক হিসেবে প্রদত্ত কবিতাংশে উল্লিখিত নিন্দুকের প্রভাবে মানুষ নিজের ভুল সংশােধন করার প্রেরণা পায়। কিন্তু কবিতায় উল্লিখিত নিন্দুকের কারণে মানুষ কাজের উৎসাহই হারাতে পারে।

নিন্দুক ও তার কথাবার্তা আমাদের জীবনেরই এক অপরিহার্য অংশ। নিজের ইচ্ছে থেকেই নিন্দুকেরা অন্যের সমালােচনা করে থাকে। এর ফলে কখনাে ভালাে আবার কখনাে খারাপ অবস্থা তৈরি হয়। উদ্দীপক ও ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় যে দুই প্রকার নিন্দুকের কথা বলা হয়েছে তাদের কাজও এই অর্থে আলাদা ধরনের। সমাজের জন্য বা অন্যের জন্য কিছু করতে গেলে নানারকম বাধা-বিপত্তি আসে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সেসব বাধা ও সমালােচনার ফলে আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারি। উদ্দীপকে তেমন নিন্দুকদের কথাই শ্রদ্ধাভরে বলা হয়েছে। অন্যদিকে পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের সমালােচনার ভয়ে অনেক সময় আমরা কর্তব্য থেকে পিছিয়ে আসি। এসব বিচারে এ দুই প্রকার নিন্দুকের প্রভাব সম্পূর্ণ আলাদা।



প্রশ্ন ২। নিপুণ শারীরিক প্রতিবন্ধী। পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা পাস করেছে। লেখাপড়া করে এইটুকু আসতে তাকে অনেক বাধা পার হতে  হয়েছে। মা-বাবার সহযােগিতা ছাড়া যা কখনােই সম্ভব ছিল না। সমাজের  কিছু মানুষের মুখের কথা শুনলে তার হয়তাে পড়ালেখাই হতাে না। পাস করার পর নিপুণ অতি আনন্দে কেঁদে কেঁদে বলেছিল, “আমাদের মতাে মানুষদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করুন।”

ক. কীসে কবির ব্যথা প্রশমিত হয়?

খ. আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি’ কেন?

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত সমাজের কিছু মানুষের আচরণে ‘পাছে  লােকে কিছু বলে’ কবিতার যে বিশেষ দিকটি ফুটে উঠেছে,  তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “নিপুণের মতাে দৃঢ়চেতা মনােভাব সৃষ্টিই পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাব” —মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। একটি স্নেহের কথায় কবির ব্যথা প্রশমিত হয়।

খ। লােকলজ্জা ও সমালােচনার ভয়ে কবি আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখেন। পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি সমালােচনার ভয়ে ভীত। তাই তিনি কোনাে কাজ করতে গেলে দ্বিধাবিভক্ত হন। কোনাে ভালাে কাজ করতে গিয়ে কে কী মনে করবে বা কে কী বলবে ভেবে কবি পিছু হটে যান। সমালােচকদের ভয়ে কবির আর সে কাজ করা হয়ে ওঠে না। তাদের ভয়েই মূলত কবি নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে রাখেন।

গ। উদ্দীপকে উল্লেখিত সমাজের কিছু মানুষের আচরণে ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার সমালােচকদের স্বরূপ ফুটে উঠেছে।

আলােচ্য কবিতায় কবি সমালােচকদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এই শ্রেণির মানুষের কাজই হলাে সমালােচনা বা নিন্দা করা। তাদের এই মানসিকতার কারণে অনেক সময় ভালাে কাজ করতে গিয়েও অনেকে পিছিয়ে যায়। কেউ সমাজের জন্য কোনাে অবদান রাখতে চাইলে এ ধরনের মানুষ তাদের সমালােচনা করে। ফলে লােকলজ্জা ও সংকোচের কারণে ভালাে কাজ করতে গিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়।

উদ্দীপকে সমাজের কিছু মানুষের আচরণে নিন্দুকের স্বভাব প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে নিপুণ শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। কিন্তু নিপুণের এই উদ্যমী মানসিকতাকে সমাজের একশ্রেণির মানুষ দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। তারা সমালােচনা করে নিপুণের উদ্যমে ব্যঘাত ঘটাতে চায়। আর এরূপ মানসিকতা পাছে লােকে কিছু বলে কবিতায়ও পরিলক্ষিত হয়। সেখানে সমালােচক শ্রেণির মানুষের মাঝে এই বৈশিষ্ট্য প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে উদ্দীপকের কিছু মানুষের আচরণ পাহে লােকে কিছু বলে’ কবিতার সমালােচক শ্রেণির মানুষের দিকটিকেই ধারণ করেছে।

ঘ। পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কবির প্রত্যাশা দৃঢ় মনােভাব নিয়ে ভয়ভীতি ও লােকলজ্জাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া, যা উদ্দীপকের নিপুণের মাঝে প্রকাশ পাওয়ায় প্রশ্লোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি সমালােচকদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। সমাজের জন্য ভালাে কাজ করতে গেলে এই সমালােচক শ্রেণির মানুষদের উপেক্ষা করা প্রয়ােজন। তাদের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। তাই সব ভয়ভীতি সংকোচ উপেক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সবাই অবদান রাখতে পারবে। কবিতায় প্রচ্ছন্নভাবে কবি সেই প্রত্যাশাই প্রকাশ করেছেন।

উদ্দীপকে নিপুণের মাঝে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে তার মা-বাবার অবদানও কম নয়। সমাজের একশ্রেণির মানুষের সমালােচনা উপেক্ষা করে নিপুণ পা দিয়ে লিখেই এইচএসসি পাস করেছে। কারাে কথায় দমে না গিয়ে সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে নিপুণ দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে গিয়েছে। আর এই দৃঢ়চেতা মনােভাবই নিপুণকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি সবার মাঝে দৃঢ় মনােভাব সৃষ্টির আকাক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রত্যাশা করেছেন সৰ ভয়ভীতি সংকোচ উপেক্ষা করে সবাই দৃঢ় মনােভাব নিয়ে লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। আর এই মনােভাব উদ্দীপকের নিপুণের মাঝেও সমভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মূলত কবি সমাজ বিনির্মাণে উদ্দীপকের নিপুণের মতােই মানুষের কামনাই করেছেন। তাই বলা যায়, “নিপুণের মতাে দৃঢ়চেতা মনােভাব সৃষ্টিই পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার মূলভাব” -প্রশ্নোত, এই মন্তব্যটি যথার্থ।



প্রশ্ন ৩। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিম। ক্লাসে শিক্ষক যখন পাঠদান করেন, তখন সে চুপচাপ শুনে থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, কিন্তু সে কোনাে প্রশ্ন করে না, লজ্জা পায়। সব সময় ভয়ে তটস্থ থাকে এবং যেকোনাে কাজে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। অপরদিকে, সােহেল শিক্ষকের পাঠদানের ফাঁকে প্রয়ােজনীয় প্রশ্ন করে বিষয়টি ভালােভাবে বুঝতে চেষ্টা করে।

ক. শক্তি কীসের কবলে মরে?

খ. স্নেহের কথা কীভাবে ব্যথা প্রশমন করতে পারে? ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের মুনিমের মধ্যে ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করাে

ঘ. “উদ্দীপকের সােহেলই পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কবির প্রত্যাশিত ব্যক্তি।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। শক্তি ভীতির কবলে মরে।

খ। মানুষের জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণা নেমে এলে একটু স্নেহপূর্ণ কথাই মনের ব্যথাকে প্রশমিত করতে পারে।

মানুষের জীবন সরলরৈখিক নয়। জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত আসবে, আসবে দুঃখ-যন্ত্রণা। বিষাদময় এই সময়ে মানুষ শুনতে চায় কারাে স্নেহপূর্ণ কথা, সে পেতে চায় একটুখানি মমতা, যা তাকে মানসিকভাবে একটুখানি শান্তি দিতে পারে। আলােচ্য অংশে এ বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের মুনিমের মধ্যে ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার দ্বিধা ও সংকোচের দিকটি ফুটে উঠেছে।

দ্বিধা ও সংকোচ মানুষকে যেকোনাে কাজ থেকে দমিয়ে রাখে। এ কারণে মনের মধ্যে অনেক সুন্দর চিন্তা ও ভালাে কাজের অনুপ্রেরণা এলেও তা বাস্তবায়িত হয় না। পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি এমন এক শ্রেণির মানুষের কথা বলেছেন যারা সমালােচনার ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু দ্বিধা ও সংকোচ নিয়ে কখনাে সফলতা পাওয়া যায় না।

উদ্দীপকের মুনিম ক্লাসে শিক্ষকের পাঠদানের সময় নিপ থাকে। তার মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হলেও লজ্জা ও দ্বিধায় কিছু বলতে পারে না। ভয়ে তটস্থ হয়ে সব সময় নিজেকে গুটিয়ে রাখে। মুনিমের আচরণের মধ্যে যে দ্বিধার পরিচয় পাওয়া যায়, তা কবিতার ভাববস্তুতেও ফুটে ওঠে। কবিতায় কবি বলেন, লােকলজ্জা ও দ্বিধা থাকলে কোনাে কাজে সফলতা আসবে না। ভয় ও সংকোচ দূর করে সামনে এগােতে হয়। কিন্তু উদ্দীপকের মুনিম সংকোচ ও ভয়কে উপেক্ষা করতে পারেনি। আর পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার এই দ্বিধা ও সংকোচের দিকটিই উদ্দীপকের মুনিমের মাঝে ফুটে উঠেছে।

ঘ। “উদ্দীপকের সােহেলই পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কবির প্রত্যাশিত ব্যক্তি”- মন্তব্যটি সঠিক।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় বলা হয়েছে সংশয়াপন্ন ও দুর্বল মানসিকতার মানুষের কথা। এসব মানুষ সব সময় নিন্দা ও সমালােচনার ভয়ে তটস্থ থাকে। কিন্তু সমাজে অবদান রাখতে গেলে মনে দ্বিধা রাখা যাবে না। লােকলজ্জা, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মানুষের কল্যাণের পথে চলার কথা আলােচ্য কবিতার কবি বলেছেন।

উদ্দীপকের শিক্ষকের পাঠদানের সময় লজ্জা ও সংকোচে মুনিমের প্রশ্ন করার কথা বলা হয়েছে। আবার ওই ক্লাসেরই সােহেল তার প্রয়ােজনীয় প্রশ্নগুলাে শিক্ষককে করে বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করে। কোনাে বিষয় ভালােভাবে বুঝতে হলে সংকোচ না করে তা জানার আগ্রহ থাকতে হয়।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি মানুষের মাঝে বিদ্যমান দ্বিধা ও সংকোচের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি এগুলাে থেকে উত্তরণের কথা বলেছেন। দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে কখনাে কোনাে কাজে সফলতা পাওয়া যায় না।

তাই কবি মনে করেন, সমাজে অবদান রাখতে হলে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া যাবে না। দৃঢ় মনােবল নিয়ে লােকলজ্জা ও সমালােচনাকে উপেক্ষা করতে হবে। উদ্দীপকেও দেখানাে হয়েছে সােহেল তার মনের দ্বিধা দূর করে শিক্ষকের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় বিষয়টি জেনে নিয়েছে। সংকোচ উপেক্ষা করে প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলাে না জানলে সে সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারবে না। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি সঠিক।



প্রশ্ন ৪। মিলনের অমায়িক ব্যবহারে সকল মানুষ মুগ্ধ। সে ধনী-গরিব, ছােটো-বড়াে সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করে। শ্রমজীবীদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে দেখে তার বন্ধু শিপন বলে ‘হােটো লােকদের এত আস্কারা দিতে নেই। কিন্তু মিলন শিপনকে বলে, ‘সকল মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলে সম্মান কমে না, বরং বাড়ে।

ক. হৃদয়ে বুদবুদের মতাে কী ওঠে?

খ. একটি স্নেহের কথা প্রশমিতে পারে ব্যথা’- ব্যাখ্যা করাে।

গ. শিপনের মধ্যে ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেমেহে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের মিলনের মানসিকতা ও ‘পাছে লােকে কিছু বলে কবিতার কবির মানসিকতা একসূত্রে গাঁথা”- মূল্যায়ন করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। হৃদয়ে বুদবুদের মতাে শুভ্র চিন্তা ওঠে।

খ। মানুষের জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণা নেমে আসলে একটু স্নেহপূর্ণ কথাই মনের ব্যথাকে প্রশমিত করতে পারে।

মানবজীবন পুষ্পসজ্জা নয়। জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত আসবে, আসবে দুঃখ-যন্ত্রণা। নিজের অসহায় মুহূর্তে মানুষ শুনতে চায় কারাে স্নেহপূর্ণ কথা। সে পেতে চায় মমতা, যা তাকে মানসিকভাবে একটুখানি শান্তি দিতে পারে। আলােচ্য অংশে এ বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের শিপনের মধ্যে পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার দ্বিধা ও সংকোচবােধের দিকটি উঠে এসেছে। পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় সমাজের একশ্রেণির মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যারা কোনাে কাজ করতে গেলে মানুষের সমালােচনার ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে কাজ এগােয় না। ফলে তাদের দ্বারা সমাজের কোনাে উন্নতি সাধিত হয় না।

উদ্দীপকে দ্বিধাহীন ও দৃঢ় মনােবলসম্পন্ন মিলনের আচরণের কথা প্রতিফলিত হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের সাথে তার সুন্দর ব্যবহার মুগ্ধ করে সকলকে। কিন্তু মিলনকে তার বন্ধু

শিপন ছােটোলােকদের সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক নয় বলে উল্লেখ করে। শিপন মনে করে শ্রমজীবী মানুষদের বেশি আস্কারা দিতে নেই। তার মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা ও সংকোচবােধ কাজ করে বলেই সে এমন ধারণা পােষণ করে। আলােচ্য কবিতায় সংশয়গ্রস্ত মানুষের ভীতু স্বভাবের দরুন জীবনে উন্নতি না হওয়ার কথা ব্যক্ত হয়েছে। নিন্দুকের ভয়ে কাজ করতে না পারা দুর্বলচিত্তের অধিকারী মানুষের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্দীপকের শিপনের মধ্যে আলােচ্য কবিতার ভাবগত ঐক্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ। ভয়-ভীতি সমালােচনাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানের দিক থেকে উদ্দীপকের মিলনের মানসিকতা ‘পাছে লােকে কিছু বলে কবিতার কবির মানসিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে এসেছে।

আলােচ্য কবিতায় কবি দুর্বলচিত্তের মানুষের কথা ব্যক্ত করেছেন যারা সমালােচনার ভয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কে কী মনে করবে, কে কী সমালােচনা করবে এই ভেবে তারা শঙ্কিত থাকে। এর ফলে অনেক সুন্দর চিন্তার অপমৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে কবি মূলত এসব ভীতিকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

উদ্দীপকের মিলনের মানসিকতার মাঝে দৃঢ়চিত্তের পরিচয় পাওয়া যায়। সে সকলের সমালােচনাকে উপেক্ষা করে সর্বস্তরের মানুষের সাথে সুন্দর ব্যবহার করে। এতে সকলে তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়। সে দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে সকলের ভালােবাসার পাত্র হয়। সে তার বন্ধুকে বােঝায় শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে ভালাে ব্যবহার করলে সম্মান কমে না, বরং বাড়ে।

আলােচ্য কবিতায় কবির মানসিকতা ও উদ্দীপকের মিলনের মানসিকতা একই ধারায় প্রবাহিত। কবি আহ্বান করেছেন দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে সমালােচনা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার। তার মতে, দৃঢ় মনােবল নিয়ে লোকলজ্জাকে দূর করতে পারলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের কল্যাণে মহৎ কাজ করতে হলে ভয়-ভীতি-সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। উদ্দীপকের মিলনও বিশ্বাস করে যে, সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মর্যাদাহানি হয় না, বরং বাড়ে— যা কবির মানসিকতার অনুরূপ। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের মিলন ও কবি কামিনী রায়ের মানসিকতা একই সূত্রে গাঁথা।



প্রশ্ন ৫। স্টিভ জবস নিজে কখনাে কলেজের পাঠ চুকোতে পারেননি। রিড কলেজে ভর্তি হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তিনি ড্রপ আউট হয়ে যান। তারপর কোকের বােতল কুড়িয়ে পাঁচ সেন্টের বিনিময়ে খাওয়ার খরচ জোটানাে শুরু করেন। বন্ধুবান্ধব ও তার পরিবারের সদস্যদের আচরণ তাঁকে দারুণভাবে আহত করে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে রাতে বন্ধুদের রুমের মেঝেতে মরার মতাে ঘুমানাে স্টিভ জবসই আজ অ্যাপল কোম্পানির মালিক, যেখানে চার হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছে।

ক. “একটি স্নেহের কথা” -এর পরের চরণটি লেখাে।

খ. ‘শুভ্র চিন্তা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত স্টিভ জবস-এর বন্ধুবান্ধব ও তার পরিবারের সদস্যদের আচরণ ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কোন দিককে ফুটিয়ে তােলে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ, “উদ্দীপকের স্টিভ জবসই কামিনী রায়ের কাঙ্ক্ষিত মানুষ।” —উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। “একটি স্নেহের কথা” -এর পরের চরণ “প্রশমিতে পারে ব্যথা।”

খ। ‘শুভ্র চিন্তা বলতে মহৎ কাজের জন্য মানুষের মনে উদ্ভূত শুভ চিন্তার বিষয়টিকে বােঝানাে হয়েছে।

সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা অপরের কল্যাণচিন্তায় সময় ব্যয় করেন। তাদের মনে মহৎ কাজের জন্য অসংখ্য শুভ বুদ্ধির উদ্ভব ঘটে। দ্বিধা ত্যাগ করে এসব শুভ বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারলে সমাজের মঙ্গল হয়। আর সমাজের কল্যাণে মানুষের মনে, উদ্ভূত এসব মহৎ চিন্তাকে বােঝাতে কবি শুভ্র চিন্তা কথাটি বলেছেন।

গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত স্টিভ জবস-এর বন্ধুবান্ধব ও তার পরিবারের সদস্যদের আচরণ ‘পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার সমালােচকদের স্বরূপ ফুটিয়ে তােলে।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি সমালােচকদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। আমরা কোনাে কাজ করতে পারি না সমালােচকদের ভয়ে। কেননা, যেকোনাে কাজ করতে গেলে আমাদের মনে সংকোচ তৈরি হয়। কে কী মনে করবে এটা ভেবেই মনের যত শুভ্র চিন্তা উবে যায়। উদ্দীপকে স্টিভ জবস-এর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের আচরণ সমালােচকদের সমতুল্য। তারা স্টিভ জবসের কোকের বােতল কুড়িয়ে খাওয়ার খরচ জোটানাের দিকটি ভালােভাবে নেয়নি। ফলে স্টিভ জবসকে সমালােচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে। নিকট আত্মীয়দের এরূপ আচরণ উদ্দীপকের স্টিভ জবসকে হতাশ করেছে। আর স্টিভ জবসের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের এরূপ সমালােচনাপ্রবণ মানসিকতার দিকটি পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার সমালােচকদের দিকটিকেই ফুটিয়ে তুলেছে।

ঘ। ভয়ভীতি ও সংকোচকে উপেক্ষা করে সফল হওয়ার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের স্টিভ জবস আলােচ্য কবিতার কবির কাক্ষিত মানুষ বলেই প্রতীয়মান।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতায় কবি কামিনী রায় সমালােচক শ্রেণির পরিচয় তুলে ধরার অন্তরালে সংকোচ উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। দৃঢ় মনােবল নিয়ে লােকলজ্জা ও সমালােচনাকে উপেক্ষা করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেলে সফল হওয়া যায়। আর মনের মধ্যে শঙ্কা ও ভয়ভীতি থাকলে মহৎ কাজেও দ্বিধান্বিত হতে হয়। আলােচ্য কবিতার কবি এই ভয়কে উপেক্ষা ব্রার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।

উদ্দীপকের স্টিভ জবস সমালােচনাকে উপেক্ষা করেছেন। তিনি বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নেতিবাচক মানসিকতায় কষ্ট পেলেও দমে যাননি। নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে কাজ করে গেছেন তিনি। আর সে কারণেই স্টিভ জবস অ্যাপল কোম্পানির মালিক হতে পেরেছেন। তিনি যদি সমালােচকদের কথায় দমে যেতেন তাহলে কখনােই এ অবস্থানে আসতে পারতেন না।

পাছে লােকে কিছু বলে’ কবিতার কবি ভয়ভীতি ও সংকোচকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করেছেন। সমাজে অবদান রাখতে গেলে সংকোচকে উপেক্ষা করার বিকল্প নেই। আর উদ্দীপকের স্টিভ জবস সেই কাজটিই সফলভাবে করতে পেরেছেন। ফলে উদ্দীপকের স্টিভ জবস আলােচ্য কবিতার কবি কামিনী রায়ের প্রত্যাশিত মানুষেরই বাস্তব প্রতিফলন। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের স্টিভ জবসই কামিনী রায়ের কাঙ্ক্ষিত মানুষ।” উক্তিটি যথাযথ।       

Leave a Comment