নারী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। নারীদের প্রেরণাদায়ক একটি নাম আনােয়ারা। একজন নারী হয়ে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজ করেছেন। সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতাে বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেছেন। রিটার্নিং অফিসার হিসেবে তিনি অন্য পুরুষ সহকর্মীদের কাছ থেকে যথাযথ সাহায্য-সহযােগিতা পেয়েছেন। নারী বলে কোথাও তাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?

খ. কবি বর্তমান সময়কে ‘বেদনার যুগ” বলতে কী বুঝিয়েছেন?

গ. আনােয়ারার কার্যক্রমে নারী’ কবিতার যে দিকটি উদ্ভাসিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও।

ঘ. উদ্দীপকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও নারী’ কবিতায় কবি আরও বেশি বাঙ্ময় বক্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ। অধিকারের দিক থেকে নারী ও পুরুষের সমতা বিধানের জন্য কবি, বর্তমান সময়কে বেদনার যুগ বলেছেন।

বর্তমান যুগ নারী-পুরুষের সমঅধিকারের যুগ। একসময় নারীরা ছিল পুরুষের দাসী। পুরুষ নারীর ব্যথা-বেদনার প্রতি কোনাে গুরুত্বই দিত না। কিন্তু সময় এখন পাল্টেছে। এ সময়ে এসে নর-নারী পরস্পরের ব্যথার সমভাগী হবে এটাই কবির প্রত্যাশা। আর এ ভাবনা থেকেই কবি এ যুগকে বেদনার যুগ বলেছেন।

গ। বর্তমান সময়ে নারীরা ঘরে বসে নেই। তাদেরকে দুর্বল, দায়িত্ব পালনে অক্ষম ভাবার কোনাে অবকাশ নেই। সুযােগ পেলে ও দায়িত্ব দিলে যেকোনাে কঠিন কাজও তারা যথার্থভাবে সম্পাদনের ক্ষমতা রাখে নারী’ কবিতায় কবি এমনই মতামত পােষণ করেছেন।

প্রয়ােজনে যেকোনাে কঠিন দায়িত্বের কাজও নারীরা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারে নারী’ কবিতার এই বক্তব্যটিই উদ্দীপকের আনােয়ারার কার্যক্রমে ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতাে বিশাল এক দায়িত্ব পালন করেছেন আনােয়ারা। সফল এক নারী হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাছাড়া জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তিনি বিভিন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী বলে ভয়ে তিনি দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসেননি। আলােচ্য কবিতার কবিও নারীকে এভাবেই উপস্থাপন করেছেন। উদ্দীপকের আনােয়ারা যেন কবির প্রত্যাশিত নারী। অর্থাৎ তার মাঝে কবির আকাঙ্ক্ষিত নারীর সক্ষমতার দিকটি উদ্ভাসিত হয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকে কাজী নজরুল ইসলামের অনুভূতির প্রতিফলন ঘটলেও ‘নারী’ কবিতায় কবির বক্তব্য আরও বেশি বিস্তৃত ও স্পষ্ট।

নারী’ কবিতায় বর্ণিত নজরুলের বক্তব্যকে যথার্থরূপে প্রমাণ করে উদ্দীপকের আনােয়ারার দায়িত্বপূর্ণ ও সাহসী আচরণ। কবি নারীকে উপস্থাপন করেছেন ত্যাগী, প্রেরণাদায়ী ও শক্তির উৎস হিসেবে। তিনি আরও বলেছেন, নারীর প্রতি পুরুষশাসিত সমাজের বঞ্চনার কথা। এরপর সমাজে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দিকটিও তুলে ধরেছেন।

উদ্দীপকে উল্লিখিত নির্বাচনি কর্মকর্তা আনােয়ারার কাজকর্মে নারীর দায়িত্বশীল ভূমিকাটি স্পষ্ট হয়েছে। নারী যে সকল ধরনের কাজে সক্ষম তা তার চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। তবে নারী’ কবিতায় এর পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজে নারীর সার্বিক অবদানকে চিহ্নিত করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতায় নানা উদাহরণের সাহায্যে দেখিয়েছেন, নারীরা কোনাে বিচারেই পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে ছিল না, আজও পিছিয়ে নেই। সুযােগ পেলেই তারা তাদের যােগ্যতার প্রমাণ রেখেছে নানাভাবে। ইতিহাস সে ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়। উদ্দীপকের আনােয়ারা সে ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। তিনি সকলের সহযােগিতা নিয়ে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছেন। তবে, ‘নারী’ কবিতায় সভ্যতায় নারীর অবদান সম্পর্কে নজরুলের বক্তব্য অনেক বিস্তৃত ও বিচিত্রমুখী। উদ্দীপকে তার একটি অংশের ছায়া পড়েছে মাত্র। 



প্রশ্ন ২। জনৈক সমালােচকের মতে ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গীয় মুসলমান নারীসমাজ ছিল অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধি-নিষেধের নিগড়ে আবদ্ধ। নিরক্ষরতা, অশিক্ষা ও সামাজিক ভেদ-বুদ্ধিও ছিল তাদের জন্য নিয়তির মতাে সত্য। অবরুদ্ধ জীবনযাপনে অভ্যস্ত এক অসহায় জীকে তারা পরিণত হয়েছিলেন। এদেরকে আলাের জগতে আনার জন্য রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেন আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তার বক্তব্য আমরা সমাজেরই অর্ধাঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীভাবে? কোন এক পা বাধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে— একই।

ক. “বিজয়-লক্ষ্মী নারী’ অর্থ কী?

খ. ‘সাম্যের গান’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

গ. জনৈক সমালােচকের মতটি ‘নারী’ কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. বেগম রােকেয়ার বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের নারী’ কবিতারই প্রতিধ্বনি—উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। বিজয়-লক্ষ্মী নারী অর্থ হলাে— জয়ের নিয়ন্তা দেবী রূপ নারী।

খ। সাম্যের গান’ বলতে কবি নারী-পুরুষের সমঅধিকারের চেতনাকে বুঝিয়েছেন।

মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কোনাে অংশেই কম নয়। কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাছে নর-নারীর প্রধান পরিচয় মানুষ হিসেবে। তিনি নর-নারীর সমঅধিকারের প্রতি বিশ্বাসী। এখানে কোনাে ভেদাভেদ রাখতে তিনি আগ্রহী নন। সাম্যের গান বলতে কবি এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।

গ। নারী ও পুরুষ উভয়েই সমাজের জন্যে সমান নারী’ কবিতার এ ভাবনার সঙ্গে উদ্দীপকের সমালােচকের মতটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘নারী’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বর্তমান পরিস্থিতিতে নারীর যথাযথ মূল্যায়নের কথা তুলে ধরেছেন। তেমনই উদ্দীপকে উল্লিখিত সমালােচক রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে দেখিয়েছেন নারী সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অর্ধাংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে কিংবা বঞ্চিত রেখে সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

উদ্দীপকের সমালােচকও তার বক্তব্যে ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত নারীর  পরাধীনতার কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু আজ সময় পাল্টেছে। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় নারীর যথার্থ মর্যাদা প্রদানের সময় এসেছে। 

উদ্দীপকের জনৈক সমালােচকের এ মতটিই কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  কারণ নারী-পুরুষ উভয়েই সমাজের জন্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ঘ। ‘নারী’ কবিতায় বর্ণিত কাজী নজরুল ইসলামের কথারই প্রতিধ্বনি শােনা যায় উদ্দীপকে উদ্ধৃত বেগম রােকেয়ার বক্তব্যে ।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম নারী’ কবিতায় নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীসমাজের অবদানের কথা বলেছেন। তার মতে, সমাজের উন্নতির মূলসূত্র হচ্ছে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ।

উদ্দীপকে উদ্ধৃত রােকেয়ার বক্তব্যের মূলকথাই হচ্ছে সমাজের অর্ধেক অংশ হিসেবে নারীদের প্রাপ্য মর্যাদা দান। নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রসঙ্গে নারী’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম একই সত্য উচ্চারণ করেছেন। এদেশের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় নারীরা যুগে যুগে অবহেলিত থেকেছে। কাজী নজরুল ইসলাম ও রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেন উভয়ই তাদের লেখায় নারীর যথার্থ মূল্যায়নের প্রয়ােজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছেন। পাঠ্যভুক্ত ‘নারী’ কবিতা এবং উদ্দীপকে উদ্ধৃত রােকেয়ার বক্তব্য, একথাই প্রমাণ উন্নতির রােকেয়ার বক্তব্যই যেন কাজী নজরুলের বক্তব্যের মধ্যে প্রতিধিনিত্ব হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতির স্বার্থে অগ্রসর ভূমিকা রাখা জরুরি।



প্রশ্ন ৩। মুক্তার ও মৌসুমি দুজনই শ্রমিকের কাজ করে। সারাদিন কাজ করার পর মালিক তাদের বেতন দেন, সেই টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলে। মুত্তার বেতন পায় ৫০০ টাকা আর মৌসুমি বেতন পায় ৩০০ টাকা। একই পরিমাণ কাজ করে কম বেতনের কথা বলতে গেলে মালিক তাকে জানিয়ে দেন, নারী বলেই তার বেতন কম। আমাদের সমাজে নারীদের ক্ষেত্রে এরূপ বৈষম্য বিদ্যমান। পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা অধিকারবতি।

ক. ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?

খ. কবির চোখে পুরুষ-রমণী কোনাে ভেদাভেদ নেই কেন?

গ. উদ্দীপকের সাথে নারী’ কবিতার কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের ভাবনা নারী’ কবিতার মূল চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি।”- মন্তব্যটির সত্যতা নির্ণয় করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘নারী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

খ। কবি সাম্যবাদী মানসিকতার অধিকারী বলেই তাঁর দৃষ্টিতে পুরুষরমণীতে কোনাে ভেদাভেদ নেই। সাম্যবাদী কবি নারী-পুরুষ উভয়কেই মানুষ হিসেবে দেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী-পুরুষের অবদান সমান। তাই তাে নারী-পুরুষে কোনাে ভেদাভেদ দেখন না তিনি।

গ। উদ্দীপকের সাথে নারী’ কবিতায় প্রকাশিত নারীদের বঞ্চনার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

নারী’ কবিতায় কবি নারীদের অধিকারের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। তিনি লক্ষ করেছেন, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হলেও নারীরা তাদের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তারা তাদের প্রাপ্য সম্মান কখনােই পায়নি।

উদ্দীপকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের বঞ্চনার চিত্র উঠে এসেছে। এ কারণেই মুক্তার এবং মৌসুমি দুজনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও মৌসুমি মুক্তারের চেয়ে অনেক কম বেতন পায়। শুধু তা-ই নয়, এ নিয়ে মালিকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি জানিয়ে দেন, মৌসুমি নারী বলেই তার বেতন কম। একইভাবে আলোচ্য ‘নারী’ কবিতায় কবি নানা উদাহরণ টেনে নারীদের অধিকারবঞ্চিত হওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ নারীদের বঞ্চনার চিত্র উপস্থাপনের সূত্রে উদ্দীপকের সাথে আলােচ্য কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের ভাবনা ‘নারী’ কবিতার মূলচে ধারণ করতে পারেনি”- মন্তব্যটি সম্পূর্ণরূপে।

নারী’ কবিতায় কবি নারী সমাজের বনার চিত্র তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছেন। তিনি মনে করেন, মানবসভ্যতার উন্নয়নে নারী ও পুরুষের ভূমিকা সমান হলেও নারীরা এর যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি। সমাজ সচে কবি তাই তাদের অধিকারের পক্ষে লেখনী ধারণ করেছেন।

উদ্দীপকে লেখক একটি ঘটনার অবতারণা করে সমাজে বিরাজমান নারীপুরুষ ভেদ-বৈষম্যের দিকটি উন্মােচন করেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বৈষম্যমূলক মানসিকতার কারণেই উদ্দীপকের মৌসুমি সমান পরিশ্রম করার পরও কম পারিশ্রমিক পায়। এর মধ্য দিয়ে মূলত আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি নেতিবাচক মনােভাব পােষণের দিকটি ফুটে উঠেছে। নারী’ কবিতায় কবি সুদীর্ঘকাল ধরে নারীদের ওপর চলমান বনার চিত্র তুলে ধরেছেন। উদ্দীপকের ঘটনাবর্তের মধ্য দিয়েও এ দিকটি প্রতিভাত হয়। তবে এটিই এ কবিতার একমাত্র দিক নয়। কেননা আলেচ্য কবিতাটিতে এ ছাড়াও কবি নারীদের বঞ্চনার কারণ তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি কবিতাটিতে তিনি এমন বনার অবসান কামনা করেছেন এবং নারীদের অধিকারের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। উদ্দীপকে এসব বিষয় সেভাবে উঠে আসেনি। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি পূর্ণরূপে সত্য।



প্রশ্ন ৪। উচ্চশিক্ষিত হাসনা বেগম গৃহিণী। সকাল থেকে প্রতিদিন সাংসারিক সকল কাজ নিজেই করেন। তার স্বামী রহমান সাহেব প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে স্ত্রীর বানানাে চা খেতে খেতে টেলিভিশন দেখে সময় কাটান। আর কথায় কথায় স্ত্রীকে বলেন, তােমার তাে কোনাে কাজই নেই। সারাদিন ঘরে বসে সময় কাটাও। এমন অবজ্ঞামূলক কথার জবাবে হসনা বেগম বলেন, তােমারগুলো কাজ আর আমারগুলাে কাজ না। তুমি কাজ করে টাকা পাও, কিন্তু আমি পুরাে সংসার পরিচালনা করেও আমার কাজের কোনাে স্বীকৃতি নেই।

ক. মহীয়ান শব্দটি নারী’ কবিতায় কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

খ. ‘পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তােমাকেই’ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের রহমান সাহেবের মনােভাব নারী’ কবিতার কোন দিকটিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের হাসনা বেগম চরিত্রে নারী’ কবিতার কবির মনােভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মূল্যায়ন করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। মহীয়ান শব্দটি নারী’ কবিতায় মহিমান্বিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

খ। নারীর প্রতি অত্যাচার করলে, সে অত্যাচারজনিত ক্ষতির শিকার সমানভাবে হতে হবে পুরুষকেও।

বর্তমান যুগ সাম্যের, বর্তমান যুগ বেদনার যুগ। জনগণের সমান অধিকার স্বীকার করে নেওয়ার যুগ। এ যুগে নারী-পুরুষ সবাই সব ক্ষেত্রে সমান মর্যাদার অধিকারী। এখন আর নারীদের প্রতি পূর্বেকার সময়ের মতাে অত্যাচার, নির্যাতন করা চলবে না। নারী-পুরুষ মিলে সমতার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্রে কাজ করে সভ্যতাকে অগ্রগামী করতে হবে। সমাজে শান্তিশ্রী বৃদ্ধি করতে হবে। আর এ সময় যদি কোনাে পুরুষ নারীর প্রতি পীড়ন বা অত্যাচার করে, তার জন্য ওই পুরুষও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন সময় সমতার ভিত্তিতে নারী-পুরুষের প্রীতিপূর্ণ সহ অবস্থানের। এ কথাই প্রশ্নোত্ত চরণে বােঝানাে হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের রহমান সাহেবের মনােভাব ‘নারী’ কবিতার নারীর প্রতি বৈষম্যের দিকটিকে নির্দেশ করে।

‘নারী’ কবিতায় পুরুষ ও নারীকে সমান চোখে দেখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কবি। কিন্তু এ সমাজ সর্বদাই পুরুষ ও নারীর মধ্যে একটি পার্থক্যের রেখা তৈরি করে রেখেছে। তাই নারীরা বনার শিকার হচ্ছে সর্বত্র। প্রতি ক্ষেত্রে পুরুষকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় পুরুষের অবদান যেভাবে স্বীকার করা হচ্ছে সেভাবে নারীর অবদান স্বীকৃত হচ্ছে না।

উদ্দীপকেও উচ্চশিক্ষিত হাসনা বেগম গৃহিণী হয়ে বাড়ির সকল কাজ নিজ হাতে করেন। তার স্বামী রহমান সাহেব অফিস থেকে ফিরে টিভি দেখেন আর বলেন স্ত্রী সারাদিন ঘরে বসে বসে সময় কাটায়। অথচ তিনি যখন অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম করেন, তখনাে হাসনা বেগম সংসারের কাজ করেন। এত কাজের পরও তিনি কাজের স্বীকৃতি না পেয়ে অবজ্ঞামূলক কথা বলেন। এ বিষয়টির প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের রহমান সাহেবের মনােভাব ‘নারী’ কবিতার নারীদের প্রতি বৈষম্যের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

ঘ। উদ্দীপকের হাসনা বেগম চরিত্রে নারী’ কবিতার কবির মনােভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে- উক্তিটি সঠিক।

‘নারী’ কবিতার কবি নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদে বিশ্বাসী নন। তিনি মনে করেন, মানবসভ্যতা নির্মাণে নারী-পুরুষের অবদান সমান, কিন্তু ইতিহাসে পুরুষের অবদানকে যেভাবে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে নারীকে সেভাবে ফুটিয়ে তােলা হয়নি। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই পৃথিবী সুন্দর হবে।

উদ্দীপকে নারী-পুরুষ বৈষম্যের দিকটি বলা হয়েছে। উদ্দীপকের হসনা বেগম শিক্ষিত গৃহিণী। তিনি সারাদিন ঘরের সব কাজ করেন। অথচ তার স্বামী অফিস থেকে এসে বলেন, সে কোনাে কাজই করে না। তখন হাসনা বেগম তার স্বামীর অবজ্ঞামূলক কথার প্রতিবাদ করেন। ঘরের অনেক কাজ করার পরও যে নারীদের কোনাে স্বীকৃতি হয় না, সে কথাই উদ্দীপকের হাসনা বেগমের কথায় ফুটে ওঠে।

নারী’ কবিতার কবি ও উদ্দীপকের হাসনা বেগম দুজনই নারীদের সমঅধিকারের বিষয়টি বােঝাতে চেয়েছেন। কবির মতে, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে। উদ্দীপকের হাসনা বেগমও বলেন, নারীরা তাদের কাজের স্বীকৃতি পায় না। পুরুষদের মতাে নারীদের কাজেরও মূল্যায়ন হওয়া উচিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।



প্রশ্ন ৫। সুমন সাহেবের ছেলেমেয়ে একই বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। হেলের জন্য গৃহশিক্ষক রেখে দিলেও মেয়ের ব্যাপারে তিনি উদাসীন। মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করলে প্রধান শিক্ষক অভিভাবককে ডেকে বলেন, ‘ছেলেমেয়ের প্রতি বৈষম্য করা আপনার ঠিক হচ্ছে না। ছেলেমেয়ে দু’জনই সমান গুরুত্বপূর্ণ।’

ক. কাজী নজরুল ইসলাম নর-নারী উভয়কে কী হিসেবে দেখেন?

খ. ‘পীড়ন করিলে সে-পীড়ন এসে পীড়া দেবে তােমাকেই’ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের সুমন সাহেবের মধ্যে নারী’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে, তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যই যেন ‘নারী’ কবিতার প্রতিধ্বনি”— যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। কাজী নজরুল ইসলাম নর-নারী উভয়কে মানুষ হিসেবে দেখেন।

খ। নারীর প্রতি অত্যাচার করলে, সে অত্যাচারজনিত ক্ষতির শিকার সমানভাবে হতে হবে পুরুষকেও।

বর্তমান যুগ সাম্যের, বর্তমান যুগ বেদনার যুগ। জনগণের সমান অধিকার স্বীকার করে নেওয়ার যুগ। এ যুগে নারী-পুরুষ সবাই সব ক্ষেত্রে সমান মর্যাদার অধিকারী। এখন আর নারীদের প্রতি পূর্বেকার সময়ের মতাে অত্যাচার, নির্যাতন করা চলবে না। নারী-পুরুষ মিলে সমতার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্রে কাজ করে সভ্যতাকে অগ্রগামী করতে হবে। সমাজে শান্তিশ্রী বৃদ্ধি করতে হবে। আর এ সময় যদি কোনাে পুরুষ নারীর প্রতি পীড়ন বা অত্যাচার করে, তার জন্য ওই পুরুষও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন সময় সমতার ভিত্তিতে নারী-পুরুষের প্রীতিপূর্ণ সহ অবস্থানের। এ কথাই প্রশ্নোত্ত চরণে বােঝানাে হয়েছে।

গ। উদ্দীপকের সুমন সাহেবের মধ্যে নারী’ কবিতার নারীর প্রতি বৈষম্যের দিকটি উঠে এসেছে।

‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা উঠে এসেছে। কবি মত প্রকাশ করেছেন, মানবসভ্যতায় নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কোনাে অংশেই কম নয়। অথচ সর্বদা নারীদের ক্ষুদ্ৰজ্ঞান করা হয়, যদিও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবদান অগ্রাহ্য করার কোনাে উপায় নেই।

উদ্দীপকটিতেও লক্ষ করা যায় একই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সুমন সাহেবের মেয়ে তার ছেলের সমান অধিকার পাচ্ছে না। তিনি তার ছেলের জন্য গৃহশিক্ষক রাখলেও মেয়ের জন্য তা করেননি। কিন্তু সমাজে সমান অবদান রাখতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও শিক্ষায় সমানভাবে পারদশী হতে হবে। নারী’ কবিতায় নারীদের একইভাবে বনার কথা তুলে ধরে তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই নারীদেরকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দিতে নারাজ। নারীর প্রতি, নারীর অধিকারের প্রতি সহানুভূতিহীন এই আচরণই উদ্দীপকের সুমন সাহেবের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

ঘ। ‘নারী’ কবিতায় কবি যেমন নারী-পুরুষের সমান অধিকারের বিষয়ে তার বলিষ্ঠ, মত প্রকাশ করেছেন, তেমনি উদ্দীপকের প্রধান শিক্ষকও একই ধারণায় বিশ্বাসী। 

নারী কিংবা পুরুষ সকলেরই আসল পরিচয় মানুষ। কিন্তু শারীরিকভাবে দুর্বল বলে নারীকে অবহেলা করা হয়। অথচ সামাজিক উন্নয়নে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কোনাে অংশে কম নয়। আলােচ্য কবিতায় কবি বিভিন্ন উদাহরণের সাহায্যে সমাজে নারীর অবদানের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে নারীর সম-অধিকারের দিন এসেছে। তাই নারীর ওপর নির্যাতন চলবে না, তার অধিকারকে ক্ষুন্ন করা চলবে না। অর্থাৎ তিনি নারী জাগরণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

উদ্দীপকে সুমন সাহেব তার মেয়ের চেয়ে ছেলের পড়াশােনার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। আর এ কারণে তিনি ছেলের জন্য গৃহশিক্ষক রাখলেও মেয়ের ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন। মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করলে প্রধান শিক্ষক তাকে ডেকে বােঝান যে, ছেলে ও মেয়েতে বৈষম্য করা ঠিক নয়। কেননা, সামাজিক সমৃদ্ধিতে উভয়ের গুরুত্ব সমান। ‘নারী’ কবিতাতেও কবি তাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন, যারা নারী-পুরুষে পার্থক্য করে এবং নারীকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

নারী’ কবিতায় কবি নারীর যথাযথ মূল্যায়নের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জগতে নর ও নারীর সাম্য বা সমান অধিকারে আস্থাবান। কারণ মানবসভ্যতা নির্মাণে কখনােই পুরুষ একা জয়ী হয়ে উঠতে পারেনি। যদিও নারীর অবদান জনসম্মুখে তুলে ধরা হয়নি কখনাে, তবুও নারী কোনােকালেই পিছিয়ে ছিল না। তাদেরকে দুর্বল, দায়িত্ব পালনে অক্ষম ভাবার কোনাে অবকাশ নেই। উদ্দীপকটিতে বর্ণিত প্রধান শিক্ষকও পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর অবমূল্যায়ন করাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি সুমন সাহেবকে তাঁর ছেলেমেয়ে দুজনকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন। অতএব বলা যায়, প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য যেন কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার প্রতিধ্বনি মন্তব্যটি যথার্থ।      

Leave a Comment