দুই বিঘা জমি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। গাজীপুর চৌরাস্তার কাছে মতিন মিয়ার ছােট্ট এক চায়ের  দোকান। আর দোকানের পাশেই ‘ক’ হাউজিং সােসাইটির বিশালাকার  অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে উঠেছে। একদিন সকালে মতিন দেখে, তার দোকান  অ্যাপার্টমেন্টের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে আটকে গেছে। সে বুঝে গেল আর কিছুই করার নেই। উপায়ন্তর না দেখে সে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করে সংসার চালায় আর উদাস দৃষ্টিতে গগনচুম্বী অট্টালিকাগুলাের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নােবেল পুরস্কার পান?

খ. রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? 

গ. ক’ হাউজিং সােসাইটির কার্যক্রমে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেব চরিত্রের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তার বর্ণনা দাও। 

ঘ. উদ্দীপকের মতিন ‘দুই বিঘা জমির শােষিত উপেনের সার্থক প্রতিনিধি কি না- এ বিষয়ে তােমার মতামত যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নােবেল পুরস্কার পান।

খ। উদ্ধৃত চরণটির মাধ্যমে বােঝানাে হয়েছে, সম্পদশালীরা আরও সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য গরিবের সর্ব হরণ করে।

ধনীর লালসা কেবল ধনের প্রতি। ধনসম্পদ পাওয়ার মাঝেই তার তৃপ্তি। ধন লাভের নিমিত্তে যেকোনাে অন্যায় কাজ করতেও তাদের বাধে না। কবিতায় উপেনের সামান্য জমির প্রতি নজর পড়ে জমিদারের। দরিদ্র কৃষক উপেনের সর্বশেষ সম্বল দুই বিঘা জমিও জমিদার মিথ্যা দেনার দায়ে দখল করে নেয়। 

গ। উদ্দীপকে ‘ক’ হাউজিং সােসাইটির কার্যক্রমে দুই বিঘা জমি’ কবিতার বাবু সাহেবের চরিত্রের আগ্রাসী মানসিকতার দিকটি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত। 

আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ বিত্ত-বৈভব অর্জনকেই জীবনের মূল লক্ষ্য বলে ধরে নিয়েছে। যেকোনাে উপায়ে সম্পদের মালিক হওয়াতেই তাদের তৃপ্তি। শক্তির দাপটে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে, অন্যায়কে ন্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এমনই এক বাস্তবতা ‘দুই বিঘা জমি কবিতা ও উদ্দীপকে উপস্থাপিত।

কবিতার বাবু সাহেবের মতােই ‘ক’ হাউজিং সােসাইটির লােকজন আগ্রাসী মানসিকতার অধিকারী। সাধারণ মানুষের সম্পদ জবরদখল করে ফুলে ফেঁপে ওঠাই যেন উভয়ের মূললক্ষ্য। গরিবের সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করা তাদের কাছে নেশার মতাে। ফলে নির্দ্বিধায় ক’ হাউজিং সােসাইটি দখলে নেয় মতিন মিয়ার ছােট্ট চায়ের দোকানের জায়গাটি। যেমনটি লক্ষ করা যায় আলােচ্য কবিতায় বাৰু সাহেবের আচরণে।

ঘ। উদ্দীপকের মতিন সর্বস্ব হারিয়ে দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনেরই সার্থক প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।

আলােচ্য কবিতায় উপেন একজন শশাষিত চরিত্র। অন্যায়ভাবে জমিদার তার দুই বিঘা জমি কেড়ে নিয়েছে। নিজ ভিটে ছেড়ে সে সন্ন্যাসী জীবন বেছে নিয়েছে। তার প্রতি জমিদারের শশাষণের মাত্রা এতাে বেশি ছিল যে তাকে শেষ সম্বল ডিটেবাড়িও হারাতে হয়।

উদ্দীপকের ‘ক’ হাউজিং সােসাইটি মতিন মিয়াকে কোনােরূপ দয়া দেখায়নি। তারা রাতের অন্ধকারে তার দোকানটি গ্রাস করেছে। উদ্দীপকের মতিন মিয়ার দোকানটি দখল হয়ে যাওয়ার পর চায়ের ফ্লাস্ক হাতে সে রাস্তায় নেমেছে। ধনীদের নিষ্ঠুর, শােষণে তার দুর্দশা উপেনের মতােই। অন্যায় সহ্য করেই তারা বাঁচে। হাউজিং সােসাইটির উদ্দীপকে উল্লিখিত চা-বিক্রেতা মতিন মিয়া, দখলদারিত্বে নিঃস্ব হয়ে দীর্ঘশ্বাস সম্বল করে বাঁচে। দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনও জমিদারের লােভী মনােভারে সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটে ছাড়তে বাধ্য হয়। দরিদ্র কৃষক উপেনের মতােই জীবনযাপন করে উদ্দীপকের মতিন মিয়া। সর্বস্ব হারিয়ে সে ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার দরিদ্র কৃষক উপেনেরই সার্থক প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে।



প্রশ্ন-২। হােসেন একজন বর্গাচাষি। অন্যের জমি চাষাবাদের মাধ্যমে তার সংসার চলে। একমাত্র মেয়ে রহিমাকে লেখাপড়া শেখানাের জন্য স্কুলে পাঠায় কিন্তু বিত্তবান রহমত আলী বিষয়টা ভালােভাবে নেয় না। ষড়যন্ত্র করে রহমত তাকে ভিটে-মাটিছাড়া করে। হােসেন নিরুপায় হয়ে দূর গ্রামে চলে যায়। রহমত আলীর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অমিত পিতার কর্মকাণ্ডে বিব্রত ও লজ্জিত হয় এবং পিতাকে এ ধরনের অমানবিক আচরণ থেকে বিরত করে হােসেনকে তার ভিটায় ফেরার ব্যবস্থা করে।

ক. দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন কত দিন পর ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলাে?

খ. তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ এ কথা বলার কারণ কী?

গ. উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি উদ্দীপকের হােসেনের অবস্থায় পড়তেন তাহলে উপেনকে ভিটে-মাটি হারাতে হতাে না।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন দেড় মাস পরে ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলাে।

খ। প্রশ্নোক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে উপেন অত্যাচারী ভূস্বামীর প্রতি পরিহসছলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

অত্যাচারী ও কপট ভূস্বামী উপেনের ভিটে-মাটিটুকু কেড়ে নেওয়ার পর বাধ্য হয়ে সে পথে নামে। এভাবে দীর্ঘদিন পথে পথে ঘুরে বেড়ানাের পর সে একদিন পুনরায় ভিটে-মাটিটুকু দেখতে আসে। সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার সময় গাছের দুটি আম তার পায়ের কাছে ঝরে পড়লে আম দুটিকে সে স্নেহের দান মনে করে গ্রহণ করে। বিষয়টি বাগানের মালি দেখে ফেলার পর জমিদার তাকে চোর বলে অপবাদ দেয়। ভিটে-মাটি দখলকারীর মুখে এমন অপবাদ শুনে ক্ষোভে পরিহাসছলে উপেন প্রশ্নোক্ত কথাটির অবতারণা করে।

গ। উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে দুই বিঘা জমি’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্র হলাে জমিদার।

‘দুই বিঘা জমি কবিতার জমিদার একজন স্বার্থপর ও হীন চরিত্রের মানুষ। নিজ স্বার্থকে চরিতার্থ করতে উপেনকে অন্যায়ভাবে ভিটে-মাটিছাড়া করতেও পিছপা হয় না। তার কারণেই সর্ব হরিয়ে উপেনকে পথে নামতে হয়।

উদ্দীপকের রহমত আলী বিত্তবান হলেও হীন মানসিকতার অধিকারী। এ কারণেই বর্গাচাষি হােসেন তার মেয়েকে স্কুলে পাঠালে সে হিংসায় ফেটে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে সে ষড়যন্ত্র করে হােসেনকে ভিটে-মাটি ছাড়া করে। অন্যদিকে, দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারও নিজ স্বার্থসিদ্ধির প্রয়ােজনে উপেনকে কৌশলে ভিটে-মাটিছাড়া করে। এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও কর্মকাণ্ডের দিকটি মােটামুটি একরকম। সে বিবেচনায়, উদ্দীপকের রহমত আলীর সাথে আলােচ্য কবিতার জমিদার চরিত্রটিই সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ঘ। “দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন যদি হােসেনের অবস্থায় পড়ত তাহলে উপেনকে ডিটে-মাটি হারাতে হতাে না।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার চরিত্রের মধ্যদিয়ে কবি স্বার্থপর ও কপট মানুষদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এ কবিতায় তিনি বিত্তবান জমিদারের মতাে লুটেরা শ্রেণির রােষানলে পড়ে অসহায় উপেনের সর্বস্ব হারানাের মর্মন্তুদ চিত্র উপস্থাপন করেছেন। আলােচ্য কবিতায় উল্লেখিত এই কাহিনি সমাজে বিরাজমান শ্রেণিবৈষম্যের দিকটিকেই নির্দেশ করে।

উদ্দীপকে উল্লেখিত বর্গাচাষি হােসেন তার কন্যাকে স্কুলে পাঠালে বিষয়টি বিত্তবান রহমত আলী ভালােভাবে নেয় না। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রহমত আলী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ভিটে-মাটিছাড়া করে। কিন্তু রহমত আলীর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে অমিত উদার প্রকৃতির। সংগত কারণেই বিষয়টি জানতে পেরে সে লজ্জিত হয় এবং হােসেন মিয়ার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় স্বার্থান্ধ জমিদার উপেনের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি দেখায়নি; বরং সবকিছু কেড়ে নেওয়ার দীর্ঘকাল পর উপেন গ্রামে ফিরে এলে তাকে চোর অপবাদ দেয়। পক্ষান্তরে, উদ্দীপকের হােসেন রহমত আলীর ষড়যন্ত্রে ভিটে-মাটি হারালেও তারই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে অমিতের সহায়তায় পুনরায় সবকিছু ফিরে পায়। এ ক্ষেত্রে উপেন হােসেনের মতাে সহায়তা পেলে তার পরিণতি এমন হতাে না। সেদিক বিবেচনায়, প্রশ্নোত উক্তিটি যথার্থ ।



প্রশ্ন-৩। ওসমান ওয়াজেদ চৌধুরীর বর্গাচাষি। সে জমির ফসলের তিন ভাগের দু-ভাগ পায়। একবার জমির বন্দোবস্তের কথা বলে জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ওসমানের টিপসহি নিয়ে রাখে। ফসল তােলার সময় ওয়াজেদ চৌধুরীর লােক দুই ভাগ দাবি করলে ওসমান এর কারণ জানতে চায়। মালিক পক্ষ মিথ্যা ঋণের প্রসঙ্গ এনে ওসমানের টিপসহি দেখায় ।।এতে ওসমান ক্ষিপ্ত হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বলে, “রক্ত চুইষ্যা খাইছে। অজম করতে দিমু না, যা থাকে কপালে।” ওসমানের সাথে বাকি নির্যাতিত চাষিরাও যােগ দেয়।

ক. দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য কী?

খ. “চেয়ে দেখাে মাের আছে বড়াে-জোর মরিবার মতাে ঠাই।” —উক্তিটির কারণ বর্ণনা করাে।

গ. উদ্দীপকে ওয়াজেদ চৌধুরীর ফসলের দুই ভাগ দাবি দুই বিঘা জমি’ কবিতার কোন বিষয়টির সাথে সম্পৃক্ত? ব্যাখ্যা দাও।

ঘ. “উদ্দীপকের ওসমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করলে উপেনকে ভিটে ছাড়া হতে হতাে না।” উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য হলাে— এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা শশাষকশ্রেণির নিষ্ঠুর শােষণ ও গরিবদের দুর্দশা সম্পর্কে জানতে পারবে এবং গরিবদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল হবে।

খ। দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন সামান্য পরিমাণ জমির কথা বােঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।

আলােচ্য কবিতায় উপেন একজন গরিব চাষি। জমিজমা বলতে তার সম্বল কেবল নিজের বসতভিটেটুকু। কিন্তু এই সামান্য জমিতেও নজর পড়ে জমিদারের । জমিদার এই জমি নিতে চাইলে উপেন জীবনের শেষ সম্বল জমিটুকুর কথা জমিদারকে বােঝাতে চায়। তাই সে জমিদারকে লক্ষ্য করে বলেছে, “চেয়ে দেখাে মাের আছে বড়ো-জোর মরিবার মতাে ঠাই।”.

গ। উদ্দীপকে ওয়াজেদ চৌধুরীর ফসলের দুই ভাগ দাবি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার কর্তৃক উপেনের জমি দখলের সাথে সম্পৃক্ত।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার শাষক শ্রেণির প্রতিনিধি। তিনি নিজের বিলাসিতার জন্য দরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল ভিটেটুকুও নিয়ে নিতে চান। এজন্য প্রয়ােজনে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতেও দ্বিধা করেন

উপেন পিতৃপুরুষের ভিটা ছাড়তে না চাইলে জমিদার মিথ্যে দেনার দায় দেখিয়ে জমি দখল করে নেয়। জমিদারের এই শােষণের কারণে উপেন সহায়-সম্বল হারায়। পথই হয় নিঃস্ব উপেনের শেষ ঠিকানা। উদ্দীপকে ওয়াজেদ চৌধুরী শশাষক শ্রেণির প্রতিভূ। তিনি নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্যায়ভাবে বর্গাচাষি ওসমানের ফসলের দুই ভাগ দাবি করেন। আর এজন্য প্রতারণার আশ্রয় নিতে দ্বিধা করেন না তিনি। জমি বন্দোবস্তের কথা বলে ওসমানের টিপসহি নিয়ে মিথ্যা দেনার দায় দেখায় ওয়াজেদ চৌধুরী। আর এভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ দখল করার প্রেক্ষিতে উদ্দীপকে ওয়াজেদ চৌধুরী দুই বিঘা জমি” কবিতার জমিদারের সাথে সম্পৃক্ত।

ঘ। উদ্দীপকের ওসমানের মতাে প্রতিবাদী হতে না পারায় দুই বিঘা জমি কবিতার উপেন পথে নামতে বাধ্য হয় বলে প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

‘দুই বিঘা জমি কবিতায় উপেন একজন অসহায় দরিদ্র কৃষক। জমিদার তার শেষ সম্বল জমিটুকু দখল করে নিতে চাইলেও সে তার প্রতিবাদ করতে পারে না। মিথ্যা দেনার দায় দেখিয়ে উপেনের জমি দখল করে সেখানে জমিদারের বিলাসী বাগান গড়ে ওঠে। অথচ উপেন সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে পথে নামে। প্রতিবাদহীন মানসিকতার কারণে জমিদারের এহেন অন্যায়ের কাছে উপেন অসহায় হয়ে পড়ে। তাই ভিটা ছেড়ে সন্ন্যাসী বেশে রাস্তায় বের হয় সে।

উদ্দীপকে বর্গাচাষি ওসমান একজন প্রতিবাদী মানুষ। সে ওয়াজেদ চৌধুরীর অন্যায় দাবির প্রতিবাদ করে। মিথ্যা দেনার দায় দেখিয়ে  ফসলের ভাগ দাবি করলে ওসমান তা মেনে নিতে পারে না। সে ক্ষিপ্ত হয়ে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ওসমানের এমন প্রতিবাদ দেখে অন্যান্য শােষিত ও নির্যাতিত চাষিরাও তার সাথে যােগ দেয়।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন অন্যায়ের প্রতিবাদ না করতে পারলেও উদ্দীপকের ওসমানকে দেখা যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। ওসমান প্রতিবাদ করার সময় অন্যান্য চাষিদের পাশে পেয়েছে। আলােচ্য কবিতার উপেন যদি প্রতিবাদ করত তাহলে সেও অনেককে পাশে পেতে পারত। আর তা করতে পারলে তাকে ভিটে ছাড়া হওয়া লাগত না।

তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের ওসমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করলে উপেনকে ভিটে ছাড়া হতে হতাে না।” প্রশ্নোক্ত এই মন্তব্যটি যথার্থ।



প্রশ্ন ৪। রমিছা,বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে অতি কষ্টে দুটো সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে সংসার চালায়। পাঁচ বছর আগে সে একটি স্থানীয় সমিতিতে ডিপিএস খুলেছিল। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর টাকা তুলতে গিয়ে দেখে ঐ সমিতির অফিসে তালা ঝুলছে। আশপাশের মানুষের মুখে শুনল, তারা টাকাপয়সা নিয়ে পালিয়েছে। রমিছা হাহাকার করে উঠল; কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

ক. ‘খত’ শব্দের অর্থ কী?

খ. “যত হাসাে আজ যত করাে সাল ছিলে দেবী, হলে দাসী” কেন বলেছিল?

গ. উদ্দীপকের রমিছা চরিত্রটি দুই বিঘা জমি’ কবিতার যে চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, তা বর্ণনা করাে।

ঘ. ‘উদ্দীপক ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সমাজের এক বিশেষ শ্রেণির প্রতি ইঙ্গিত করে তােমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘খত’ শব্দের অর্থ ঋণপত্র বা ঋণের দলিল।

খ। জননী জন্মভূমি ফুলে-ফলে সুশােভিত হয়ে জমিদারের মনােরঞ্জনের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ায় উপেন প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় জমিদার উপেনের শেষ সম্বল ডিটেটুকু মিথ্যে দেনার খতে নিয়ে নেয়। অথচ উপেন এই জমিকে পিতৃপুরুষের স্মৃতি হিসেবে জননী জ্ঞান করত। ভিটেহারা উপেন দীর্ঘদিন সন্ন্যাসলীবন পালন করে জন্মভূমিতে ফিরে তার রূপ দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জমি কৃত্রিম সৌন্দর্যে জমিদারের বাগানবাড়িতে, পরিণত হয়েছে। জন্মভূমির এই রূপ দেখে উপেন বলেছে, “যত হাসাে আজ যত করাে সাজ ছিলে দেবী, হলে দাসী”।

গ। নিজের শেষ সঞ্চয়টুকু হারানাের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের রমিছা দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

“দুই বিঘা জমি কবিতায় উপেন দরিদ্র কৃষক। তার শেষ সম্বল পিতৃপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত দুই বিঘা জমি। কিন্তু তার এই জমিতেও নজর পড়ে জমিদারের। জমিদার তার বাগানবাড়ির সৌন্দর্যের জন্য উপেনের এই শেষ সম্বল ভিটেটুকু কেড়ে নেয়। মিথ্যা দেনার খতে জমি হারিয়ে উপেন পথে বের হয়।

উদ্দীপকের রমিছা দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। গৃহকর্মীর কাজ করে অতি কষ্টে সংসার চালায় সে। এর মাঝেও অনেক কষ্টে রমিছা ডিপিএস খুলে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিল। কিন্তু রমিছার শেষ সক্ষয়টুকুও নিয়ে পালিয়ে যায় সমিতির লােকজন। ফলে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে রমিছা। আর এই সহায়-সম্বল হারানাের দিকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের সর্বস্ব হারানাের দিকটিকেই তুলে ধরে। ফলে সম্বল হারানাের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্দীপকের রমিছা ‘দুই বিঘা জমি কবিতার উপেনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ। উদ্দীপকটি ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় বর্ণিত সমাজের একশ্রেণির লুটেরাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

দুই বিঘা জমি কবিতায় কবি দেখাতে চেয়েছেন সমাজের একশ্রেণির লুটেরা বিত্তবানদের স্বরূপ। তারা কীভাবে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয়, তা কবি সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। এই শ্রেণির অর্থ ও ক্ষমতার জোরে ন্যায়কে অন্যায় আর অন্যায়কে ন্যায় বলে তিনি নিজের বাগানবাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি লুটে নিয়েছেন।

উদ্দীপকে দরিদ্র রমিছার শেষ সঞ্চয়টুকুও নিয়ে পালিয়েছে সমিতির লােকজন। রমিছা গৃহকর্মীর কাতা করে অতি কষ্টে ডিপিএস করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিল। কিন্তু সে টাকা রমিছা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর আর তুলতে পারেনি। সমিতির দুষ্কৃতকারী লােকজন রমিছার মতােই অনেকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সমিতির এই লােকেরা দরিদ্রের টাকা লুট করে নিজেরা সম্পদশালী হয়েছে।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় কবি জমিদার চরিত্রের অন্তরালে সমাজের লুটেরা বিত্তবান শ্রেণির পরিচয় তুলে ধরেছেন। আর উদ্দীপকের সমিতির লােকজন এই শ্রেণির মানুষদেরই বাস্তব প্রতিফলন। দরিদ্রের সম্পদ হরণ করার প্রেক্ষিতে তারা কবিতায় ইগিতকৃত লােকদের দিকটিকেই তুলে ধরেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি দুই বিঘা জমি’ কবিতায় বর্ণিত এক বিশেষ শ্রেণি তথা সমাজের লুটেরা শ্রেণির প্রতি ইঙ্গিত করে।



প্রশ্ন ৫। দিনমজুর সিরাজ মিয়া একমাত্র পুত্র হাসিবের দুরারােগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করতে গিয়ে প্রায় সর্বহারা। ছেলে বাঁচানাের সর্বোচ্চ চেষ্টা করার জন্য শেষ সম্বল বসতভিটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবেশী আলিম মাস্টারের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘তােমার বসতভিটা হারানাের দরকার নেই, বরং টাকা আমি দিচ্ছি। তুমি ধীরে ধীরে শোধ করে দিও। তােমার ছেলেতাে আমার ছেলের মতােই। এ কথা শুনে কৃতজ্ঞতায় সিরাজের চোখে জুল নামে।

ক. খত কি?

খ. উপেন সন্ন্যাসীবেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলাে কেন?

গ. উদ্দীপকের সিরাজ মিয়ার সাথে দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের বৈসাদৃশ্য বর্ণনা করাে।

ঘ. উদ্দীপকে আজিম মাস্টারের মানসিকতা ও দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদারের মানসিকতা যদি এক হতাে তাহলে উপেনের এমন করুণ পরিণতি হতাে না।”- মন্তব্যটি বিচার করাে।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘খত’ হচ্ছে ঋণপত্র বা ঋণের দলিল।

খ। বাবার ভিটা ও জমি হারিয়ে উপেন সন্ন্যাসী বেশে ঘুরে বেড়াতে লাগল।

দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন জমিদারের করালগ্রাসে পড়ে শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি হারায়। মিথ্যা মামলায় সব হারিয়ে উপেন বাধ্য হয়ে পথে নামে। নিজের ভিটে না থাকায় সে সন্ন্যাসীর বেশে সাধুর শিষ্য হয়ে দেশে দেশে, গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ায়।

গ। উদ্দীপকের সিরাজ মিয়া নিজ ইচ্ছায় জমি বন্ধক রেখে টাকা নিতে চান, কিন্তু দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের জমি জমিদার কর্তৃক জবরদখল হয়।

‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন ভাগ্যবিড়ম্বিত দরিদ্র কৃষক। অভাবঅনটনে বন্ধক দিয়ে সে তার প্রায় সব জমিই হারিয়েছে। শেষ সম্বল ছিল ভিটে-বাড়ির দুই বিঘা জমি। তাও জমিদার কূটকৌশলের মাধ্যমে উপেনের জমিটুকু জবরদখল করে নেয়।

উদ্দীপকের দিনমজুর সিরাজ মিয়া পুত্র হাসিবের চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বহারা হয়। শেষ সম্বল বসতভিটা সে ছেলের চিকিৎসা করাতে বন্ধক রাখতে চায় প্রতিবেশীর কাছে। কিন্তু প্রতিবেশী আজিম মাস্টার সিরাজ মিয়ার বসতভিটা বন্ধক না নিয়ে টাকা দেন এবং ধীরে ধীরে শােধ করতে বলেন। কিন্তু আলােচ্য কবিতার উপেনের শেষ সম্বল জমিটুকু জমিদার জোরপূর্বক দখল করে নেয়। যেখানে উদ্দীপকের সিরাজ মিয়া নিজ ইচ্ছায় জমি বন্ধক রেখে টাকা নিতে গিয়ে এমনিতেই ধার পেয়েছিল, সেখানে উপেন জমি বিক্রি করতে না চাইলেও ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। এদিক থেকে উদ্দীপকের সিরাজ মিয়ার সাথে দুই বিঘা জমি কবিতার উপেনের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের আজিম মাস্টারের মানসিকতা ও দুই বিঘা জমি” কবিতার জমিদারের মানসিকতা যদি এক হতাে তাহলে উপেনের এমন করুণ পরিণতি হতাে না”- মন্তব্যটি সঠিক।

দুই বিঘা জমি’ কবিতার জমিদার বিত্তবান শােষক শ্রেণির প্রতিনিধি। জমিদার তার বাগানের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বাড়ানাের কথা বলে উপেনের দুই বিঘা জমি চায়। উপেন তার ভিটে জমি ছাড়তে না চাইলে শেষ পর্যন্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে জমিদার উপেনের জমি দখল করে নেয়। উদ্দীপকের সিরাজ মিয়া একজন দিনমজুর। ছেলের দুরারােগ্য ব্যাধির চিকিৎসা করাতে গিয়ে সে প্রায় সর্বহারা। তাই সে তার বসতভিটা প্রতিবেশী আজিম মাস্টারের কাছে বন্ধক রাখতে চায়। কিন্তু আমি মাস্টার জমি বন্ধক না নিয়ে তাকে টাকা দিতে চান। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা শােধ করতে বলেন। এর মধ্য দিয়ে তার মহং ও উদার মনের পরিচয় পাওয়া যায়।

উদ্দীপকের দিনমজুর সিরাজ মিয়ার ভিটেবাড়ি আজিম মাস্টারের উদারতার কারণে বন্ধক রাখতে হয়নি। কিন্তু দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেনের ভিটেমাটি জমিদার কেড়ে নিয়েছে। আলােচ্য কবিতার জমিদার যদি উদ্দীপকের আজিম মাস্টারের মতাে হতাে তবে উপেনকে ভিটেমাটি ছাড়তে হতাে না। এক্ষেত্রে প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।       

Leave a Comment