দুই বিঘা জমি কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন-১। কার দুই বিঘা জমি ছিল?
উত্তর: উপেনের দুই বিঘা জমি ছিল।
প্রশ্ন-২। ভূস্বামী কার জমি কিনে নিতে চাইলেন?
উত্তর: ভূস্বামী উপেনের জমি কিনে নিতে চাইলেন।
প্রশ্ন-৩৷ জমিদার উপেনের দুই বিঘা জমি নিতে চাইল কেন?
উত্তর: বাগানের জমি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সমান করার উদ্দেশ্যে জমিদার উপেনের দুই বিঘা জমি নিতে চাইল।
প্রশ্ন-৪৷ উপেন কেমনভাবে জমিদারের কাছে তার ভিটেখানি রক্ষার কথা বলল?
উত্তর: উপেন সজল চোখে জমিদারের কাছে তার ভিটেখানি রক্ষার কথা বলল।
প্রশ্ন-৫৷ উপেনের কথা শুনে জমিদার কেমন হাসি হেসেছিলেন?
উত্তর: উপেনের কথা শুনে জমিদার কুর হাসি হেসেছিলেন।
প্রশ্ন-৬। রাজা কুর হাসি হেসে উপেনকে কী বলেছিলেন?
উত্তর: রাজা ক্রুর হাসি হেসে উপেনকে বলেছিলেন, “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’
প্রশ্ন-৭। এ জগতে কে বেশি চায়?
উত্তর: এ জগতে যার ভূরি ভূরি আছে সেই বেশি চায়।
প্রশ্ন-৮। রাজার হস্ত কার সমস্ত ধন চুরি করে বলে কবিতায় বলা হয়েছে?
উত্তর: রাজার হস্ত কাঙালের সমস্ত ধন চুরি করে বলে কবিতায় বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৯। উপেন দু’বিঘা জমির পরিবর্তে বিধাতার নিকট থেকে কী পেয়েছিল?
উত্তর : উপেন দু’বিঘা জমির পরিবর্তে বিধাতার নিকট থেকে বিশ্বনিখিল পেয়েছিল।
প্রশ্ন-১০। উপেন কী বেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছে?
উত্তর: উপেন সন্ন্যাসী বেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছে।
প্রশ্ন-১১, উপেন কত বছর পথে পথে ঘােরে?
উত্তর: উপেন পনেরাে-ষােলাে বছর ধরে পথে পথে ঘােরে।
প্রশ্ন-১২। পল্লবঘন আম্রকানন কোথায়?
উত্তর: পল্লবঘন আম্রকানন রাখালের খেলাঘরে।
প্রশ্ন-১৩। উপেন গ্রামে ফিরতে কোনটিকে বাম পাশে ফেলে আসে?
উত্তর: উপেন গ্রামে ফিরতে রথতলাকে বামপাশে ফেলে আসে।
প্রশ্ন-১৪৷ উপেন তৃষ্ণার্ত অবস্থায় কোথায় পৌছাল?
উত্তর: উপেন তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নিজ বাড়ির কাছে পৌছাল ।
প্রশ্ন-১৫৷ আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া কী?
উত্তর: আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া ফল-ফুল শাক পাতা।
প্রশ্ন-১৬৷ পাঁচরঙ্গ পাতা অঞলে গাঁথা —, শূন্যস্থানে কী বসবে?
উত্তর: উত্ত শূন্যস্থানে বসবে ‘পুষ্পে খচিত কেশ’।
প্রশ্ন-১৭৷ আমগাছের নিচে বসে উপেনের কীসের কথা মনে পড়ল?
উত্তর: আমগাছের নিচে বসে উপেনের বাল্যকালের কথা মনে পড়ল।
প্রশ্ন-১৮৷ কখন চোখে উপেনের ঘুম থাকত না?
উত্তর: জ্যৈষ্ঠের ঝড়ের রাতে উপেনের চোখে ঘুম থাকত না।
প্রশ্ন-১৯৷ কতটি আম উপেনের কোলের কাছে পড়ল?
উত্তর: দুটি আম উপেনের কোলের কাছে পড়ল।
প্রশ্ন-২০৷ যমদূতের মতাে কে উপেনের কাছে হাজির হয়েছিল?
উত্তর: যমদূতের মতাে বাগানের মালি উপেনের কাছে হাজির হয়েছিল।
প্রশ্ন-২১৷ জমিদার মাছ ধরার সময় তার সাথে কারা ছিল?
উত্তর: জমিদার মাছ ধরার সময় তার সাথে পারিষদ দল ছিল।
প্রশ্ন-২২৷ ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন কত দিন পর ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলাে?
উত্তর: ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় উপেন দেড় মাস পরে ভিটে-মাটি ছেড়ে পথে বের হলাে।
প্রশ্ন-২৩৷ দরিদ্র মাতা আঁচল ভরে কী ধরে রাখত?
উত্তর: দরিদ্র মাতা আঁচল ডরে ফল ফুল শাক পাতা ধরে রাখত।
প্রশ্ন-২৪৷ কাকে ভূমী’ বলা হয়?
উত্তর: অনেক জমির মালিক যিনি তাকে ভূস্বামী বলা হয়।
প্রশ্ন-২৫৷ পাণি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পাণি’ শব্দের অর্থ হাত।
প্রশ্ন-২৬৷ কুর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: কুর’ শব্দের অর্থ নিষ্ঠুর।
প্রশ্ন-২৭৷ ‘ডিক্রি’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ডিক্রি শব্দের অর্থ আদালতের হুকুম বা নির্দেশনামা।
প্রশ্ন-২৮৷ আদালতের হুকুম বা নির্দেশনামাকে কী বলে?
উত্তর: আদালতের হুকুম বা নির্দেশনামাকে ডিক্রি বলে।
প্রশ্ন-২৯৷ ‘খত’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: খত’ শব্দের অর্থ ঋণপত্র বা ঋণের দলিল।
প্রশ্ন-৩০। ‘খত’ কী?
উত্তর: ‘খত’ হচ্ছে ঋণপত্র বা ঋণের দলিল।
প্রশ্ন-৩১৷ ‘ললাট’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ললাট’ শব্দের অর্থ কপাল।
প্রশ্ন-৩২। ‘পঁহুছিনু’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: পহুছিনু’ শব্দের অর্থ পৌছে গেলাম।
প্রশ্ন-৩৩, পারিষদ কারা?
উত্তর: পারিষদ’ হলাে রাজার সহচররা।
প্রশ্ন-৩৪, ‘পারিষদ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘পারিষদ’ শব্দের অর্থ মােসাহেব বা পার্শ্বচর।
প্রশ্ন-৩৫. দুই বিঘা জমি’ কবিতায় ‘ঘটে’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: দুই বিঘা জমি’ কবিতায় ‘ঘটে’ শব্দটি ভাগ্যে’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রশ্ন-৩৬, দুই বিঘা জমি’ কী ধরনের কবিতা?
উত্তর: ‘দুই বিঘা জমি’ একটি কাহিনি কবিতা।
প্রশ্ন-৩৭, দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তর: দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি চিত্রা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
প্রশ্ন-৩৮, উপেন আম দুটিকে কী মনে করে গ্রহণ করে?
উত্তর: উপেন আম দুটিকে জননীর স্নেহের দান মনে করে গ্রহণ করে।
প্রশ্ন-৩৯, ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সমাজে কাদের প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সমাজে এক শ্রেণির লুটেরা বিত্তবানদের প্রবল প্রতাপ নিয়ে বাস করার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-৪০. দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয় কারা?
উত্তর: ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে সম্পদশালী হয় কারা।
প্রশ্ন-৪১. দুই বিঘা জমি’ কবিতায় লুটেরা বিত্তবানরা কীসের জোরে অন্যায়কে ন্যায় বলে প্রতিষ্ঠিত করে?
উত্তর: ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় লুটেরা বিত্তবানরা অর্থ, শক্তি ও দাপটের জোরে অন্যায়কে ন্যায় বলে প্রতিষ্ঠিত করে।
প্রশ্ন-৪২. দুই বিঘা জমি’ কবিতায় কবি কাদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন?
উত্তর: দুই বিঘা জমি’ কবিতায় কবি লুটেরা শ্রেণির বিত্তবানদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন-৪৩, ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: “দুই বিঘা জমি’ কবিতাটি পাঠের উদ্দেশ্য হলাে— এ কবিতা পাঠ করে শিক্ষার্থীরা শশাষকশ্রেণির নিষ্ঠুর শােষণ ও গরিবদের দুর্দশা, সম্পর্কে জানতে পারবে এবং গরিবদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল হবে।
প্রশ্ন-৪৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন-৪৫. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত বগাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন-৪৬. ছােটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন প্রতিভার উন্মেষ ঘটে?
উত্তর: ছােটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবি-প্রতিভার প্রতিভার উন্মেষ ঘটে।
প্রশ্ন-৪৭, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিষ্টাব্দে নােবেল পুরস্কার পান?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নােবেল পুরস্কার পান।
প্রশ্ন-৪৮, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন কাব্যের জন্য নােবেল পুরস্কার পান?
উত্তর: গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নােবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন-৪৯, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা কে?
উত্তর: বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রশ্ন-৫০: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত সালে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মৃত্যুবরণ করেন?
প্রশ্ন-৫১, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোথায় মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
দুই বিঘা জমি কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন-১। মনে ভাবিলাম মােরে ভগবান রাখিবে না মােহগর্তে – ব্যাখ্যা করে।
উত্তর: জমিদারবাবু উপেনের সর্বস্ব কেড়ে নিলে উপেন নিজের মনকে মিথ্যা সান্তনা দিতে আলােচ্য কথাটি বলেছে।
জমিদার বাবু নিজের বাগানের শােভা বৃদ্ধির জন্য কূটকৌশল অবলম্বন করে উপেনের শেষ সম্বল সাতপুরুষের ভিটেমাটি এক প্রকার জোর করে কেড়ে নেয়। সব হারিয়ে পথে নামে নিঃস্ব-দরিদ্র উপেন। জমিদারের এ কূটচালকে উপেন ভেবেছে এটা সৃষ্টিকর্তারই কোনাে লীলা। সংসার, সম্পদ মানেই তাে মােহ। উপেনকে সৃষ্টিকর্তা সকল মােহ থেকে মুক্তি দিতেই তাকে আজ পথে নামিয়েছেন। তাই সে আলােচ্য কথাটি বলেছে।
প্রশ্ন-২। পনেরাে-ষােলাে বছর পর উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হলাে কেন?
উত্তর: ভিটেমাটির প্রতি প্রবল টানে পনেরাে-ষােলাে বছর পর উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হলাে।
একমাত্র সহায়-সম্বল দুই বিঘা জমি হারিয়ে উপেন সন্ন্যাসীবেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু প্রায় পনেরাে-ষােলাে বছর পর নিজ দেশে ফেলে যাওয়া পৈতৃক ভিটের স্মৃতির কথা মনে করে উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হয়েছিল।
প্রশ্ন-৩। “স্নেহের যে দানে বহু সম্মানে বারেক ঠেকানু মাথা”- কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: অনেকদিন পর গ্রামে ফেরা উপেন ভিটের আমগাছ থেকে ঝরে পড়া দুটি আমকে জননীর স্নেহের দান মনে করে গ্রহণ করে।
ভিটে থেকে উচ্ছেদ হওয়া উপেন অনেক দিন পর গ্রামে ফিরে নিজের ভিটেয় গিয়ে পূর্বের কোনাে স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাচ্ছিল না। হঠাৎ পুরনাে আমগাছটি তার নজরে আসে। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আমগাছটির নিচে বসে থাকা অবস্থায় বাতাসের ধাক্কায় তার সামনে দুটি পাকা আম ঝরে পড়ে। উপেন সেই আম দুটিকে জননীতুল্য মাতৃভূমির স্নেহের দান মনে করে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে।
প্রশ্ন-৪। ‘শুধু বিঘা দুই ছিল মাের ভূঁই’- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: ঋণে জর্জরিত উপেনের শেষ সম্বল হিসেবে সামান্য দুই বিঘা জমিই অবশিষ্ট ছিল।
উপেন দরিদ্র হলেও সে তার মাতৃসম বসত ভিটেটুকু বিক্রি করতে বা চায়নি। সব সম্পদ হারিয়েও তাই পূর্বপুরুষের শেষচিহ্ন অবশিষ্ট দুই বিঘা জমি সে বুকে আগলে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু জমিদার মিথ্যা মামলা দিয়ে তার জমি কেড়ে নিলে সে ভিটেছাড়া হলেও দুই বিঘা জমির কথা ভুলতে পারেনি।
প্রশ্ন-৫। রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল কেন?
উত্তর: দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বাগানের সবদিক সমান করতেই রাজা উপেনের দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চেয়েছিল।
উপেনের শেষ সম্বল ছিল দুই বিঘা জমি। কিন্তু সে জমিও, তার হাতে থাকেনি। কারণ রাজা সে জমি কিনে নিতে চায়। সে যে বাগান তৈরি করছে তাতে উপেনের দুই বিঘা পেলেই তার বাগানটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে সমান হবে।
প্রশ্ন-৬। ‘সে মাটি সােনার বাড়া’— বলতে কী বােঝায়?
উত্তর: সাত পুরুষের সেখানে বসতি, সেই ভিটা সােনার চেয়েও দামি এ দিকটিই বােঝানাে হয়েছে আলােচ্য কথাটির মাধ্যমে।
জমিদার নিজের শখ পূরণের উদ্দেশ্যে উপেনের ভিটেমাটি কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু এই ভিটে উপেনের সাত পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত। তাই তার কাছে এর মূল্য সােনার চেয়েও বেশি। এ কারণেই উপেন বলেছে, সে মাটি সােনার বাড়া।
প্রশ্ন-৭। ‘কহিলেন শেষে কুর হাসি হেসে আচ্ছা সে দেখা যাবে’ বুঝিয়ে লেখাে।
উত্তর: শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি রক্ষার জন্য উপেনের প্রার্থনা শুনে জমিদার নিষ্ঠুর ও কুটিল হাসি হেসে উল্লিখিত উক্তিটি করেছিলেন, সে কথাই এখানে বােঝানাে হয়েছে।
জমিদার অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক। কিন্তু তিনি বাগানের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান করার অজুহাতে উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি কেড়ে নিতে চান। উপেন জমিদারকে তার জমি কেড়ে না নিতে অনুরােধ জানায়। জমিদার তখন মুখে কুটিল হাসি হেসে বলেন- আচ্ছাসে দেখা যাবে। জমিদারের সেই হাসিতে নিষ্ঠুরতার পূর্বাভাসই প্রকাশ পেয়েছিল।
প্রশ্ন-৮। উপেনকে পৈতৃক ভিটে ছাড়তে হয় কেন?
উত্তর: জমিদার তার বাগান বাড়ি বাড়ানাের জন্য জোর করে উপেনের জমি দখল করায় উপেনকে তার পৈতৃক ভিটে ছাড়তে হয়।
‘দুই বিঘা জমি কবিতায় উপেন, অভাবে পড়ে সব জমি বিক্রি করলেও বসত-ভিটার দুই বিঘা জমি কখনাে হাতছাড়া করেনি। কিন্তু জমিদার তার বাগান বাড়ি বাড়ানাের উদ্দেশ্যে সেই জমিখানি কিনে নিতে চায়। কিন্তু উপেন সাতপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত সেই জমি বিক্রি করতে না চাইলে স্বার্থপর জমিদার কৌশলে মিথ্যে মামলা দিয়ে সে জমি দখল করে নেয়। তাই বাধ্য হয়ে উপেনকে পৈতৃক ভিটা ছাড়তে হয়।
প্রশ্ন-৯। ‘মিথ্যা দেনার খতে’— বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: ‘মিথ্যা দেনার খতে’— বলতে আদালতে মিথ্যা দেনার স্বাক্ষরসহ দলিল দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে রায় নেওয়াকে বােঝানাে হয়েছে।
জমিদার বাগান বাড়ানাের জন্য উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি কিনে নিতে চায়। কিন্তু উপেন কোনােভাবেই তার পিতৃপুরুষের ভিটা ছাড়তে রাজি নয়। এমন অবস্থায় জমিদার উপেনের ওপর মিথ্যা ঋণের বােঝা চাপিয়ে আদালতকে প্রভাবিত করে তার দুই বিঘা জমি গ্রাস করে। প্রশ্নোত্ত উক্তিটি দ্বারা এ বিষয়টিই বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন-১০। তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল দু’বিঘার পরিবর্তে – ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: আলােচ্য চরণটিতে উপেনের বৈরাগ্য জীবনের মনােভাব ব্যক্ত।
উপেন লােভী জমিদারের কোপানলে ভিটে বাড়িটুকু পর্যন্ত হারায়। আপন বাস্তুভিটা হারিয়ে সে সন্ন্যাসী জীবন বেছে নেয়। সর্বস্ব হারিয়ে উপেন মনে মনে ভাবে, ভগবান তাকে সংকীর্ণতার মােহে আবদ্ধ করে রাখবেন না, তাই দুই বিঘার পরিবর্তে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানাের জন্য পুরাে জগৎ তাকে লিখে দিলেন। এখানে উপেনের বৈরাগ্য জীবনে সান্তনা লাভের একটি প্রয়াস ব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন-১১। উপেন,তার দুই বিঘা জমির কথা ভুলতে পারেনি কেন?
উত্তরঃ পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত দুই বিঘা জমি উপেনের শেষ সম্বল হওয়ায় উপেন তার জমির কথা ভুলতে পারেনি।
উপেন দরিদ্র হলেও সে তার মাতৃসম বসত ভিটেটুকু বিক্রি করতে চায়নি। ঋণের দায়ে সব সম্পদ হারিয়েওঁ তাই পূর্বপুরুষের শেষ চিহ্ন অবশিষ্ট দুইবিঘা জমিটুকু সে বুকে আগলে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু জমিদার মিথ্যা মামলা দিয়ে তার জমি কেড়ে নিলে সে ভিটেছাড়া হলেও জমির কথা ভুলতে পারেনি।
প্রশ্ন-১২। ‘নমাে নমাে নমাে সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি’— বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: বঙ্গভূমিকে মাতৃজ্ঞানে সুন্দরী হিসেবে উল্লেখ করে উক্ত চরণে বন্দনা করেছে উপেন ।
ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে উপেন পনেরাে-ষােল বছর বঙ্গভূমির বাইরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ালাে। অবশেষে একদিন তার স্বস্থানে গ্রামে ফিরতে ইচ্ছে হলাে। গ্রামে ফেরার মূহুর্তে বঙ্গভূমি সম্পর্কে উপেনের মনে অসম্ভব ভক্তিভাব উদয় হলাে। সে বঙ্গভূমিকে মাতৃজ্ঞানে সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করে তার স্তব করলাে।
প্রশ্ন-১৩। উপেন কেন তার জমিকে নিলাজ-কুলটা বলেছিল?
উত্তর: বাস্তুভিটার দুঃখরহিতভাব ও চাকচিক্য দেখে উপেন তাকে নিলাজ-কুলটা বলেছিল।
পনেরাে-ঘােল বছর পর উপেন ভিটে মাটিতে ফিরে এসে তার চাকচিক্য দেখে খুবই ব্যথিত হয়। জমিদারের হরেক রঙের ফুল ও পাতাবাহারের গাছে ছেয়ে গেছে উপেনের ভিটে। উপেনের জন্য তার বিন্দুমাত্র মমতা নেই। এ কারণে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে সে ভিটেমাটিকে নিলাজ-কুলটা বলে ভৎসনা করেছে।
প্রশ্ন-১৪। ‘কোনােখানে লেশ নাহি অবশেষ সেদিনের কোনাে চিহ্ন।’ – ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: বহু বছর পর গ্রামে ফিরে নিজ ভিটাকে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে দেখতে পেয়ে উপেন আলােচ্য উক্তিটি করে দরিদ্র উপেনের শেষ সম্বল দুই বিঘা জমি জমিদার কেড়ে নেয়। উপেন যখন এই জমিতে বাস করত, তখন চারদিকে ফুল-ফল, শাক-পাতার গাছ ছিল। কিন্তু জমিদারের হস্তগত হওয়ার পর তা রঙিন ফুল, পাতাবাহার গাছের সমাহারে ভিন্নরূপ ধারণ করে। দীর্ঘদিন পর ফিরে উপেন তার ভিটায় সাতপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত কোনাে চিহ্নই দেখতে পায় না। তখন ব্যথিত হয়ে উপেন আলােচ্য উক্তিটি করে।
প্রশ্ন-১৫৷ আমগাহের নিচে বসে উপেনের ব্যথা প্রশমিত হলাে কেন?
উত্তর: শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত আমগাছটিকে অপরিবর্তিত অবস্থায় পেয়ে তার নিচে বসে চোখের জলে উপেনের ব্যথা প্রশমিত হলাে।
নিজ ভিটেতে ফিরে এসে উপেন দেখে তার ভিটে নিশ্চিহ্ন। কিন্তু তার ছােটবেলার স্মৃতিবিজড়িত আমগাছটিকে সে খুঁজে পায়। তাই সেই আম গাছের ছায়াতলে বসে ক্লান্তশ্রান্ত উপেনের ব্যথা শান্ত হলাে।
প্রশ্ন-১৬। ‘বেটা সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়’-বাবু কেন এ কথা বলেছে?
উত্তর: ঝরে পড়া আম তুলে নেওয়াতে উপেনকে ভৎসনা করে জমিদার বাবু উক্তিটি করেছেন।
ভিটেমাটি হারিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যায় উপেন। কিন্তু মাতৃভূমির টানে ফিরে এসে সে চিরচেনা আমগাছের নিচে বসে থাকার সময় বাতাসে তার সামনে আম পড়ে এবং সে আম জননীর স্নেহের দান মনে করে সে নিয়ে নেয়। কিন্তু মালি তাকে ধরে নিয়ে গেলে জমিদার তাকে চোর বলে আখ্যা দেয়। এর মধ্য দিয়ে মূলত উপেনের প্রতি জমিদারের ভৎসনা প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন-১৭। ‘মনে ভাবিলাম মােরে ভগবান রাখিবে না মােহগর্তে’- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: জমিদারবাবু উপেনের সর্বস্ব কেড়ে নিলে উপেন নিজের মনকে মিথ্যা সানা দিতে আলােচ্য কথাটি বলেছে।
জমিদারবাবু নিজের বাগানের শােভা বৃদ্ধির জন্য কূটকৌশল অবলম্বন করে। উপেনের শেষ সম্বল সাতপুরুষের ভিটেমাটি এক প্রকার জোর করে কেড়ে নেয়। সব হারিয়ে পথে নামে নিঃস্ব-দরিদ্র উপেন। জমিদারের এ কূটচালকে উপেন ডেবেছে এটা সৃষ্টিকর্তারই কোনাে লীলা। সংসার, সম্পদ মানেই তাে মােহ। উপেনকে সৃষ্টিকর্তা সকল মােহ থেকে মুক্তি দিতেই তাকে আজ পথে নামিয়েছেন। তাই সে আলােচ্য কথাটি বলেছে।
প্রশ্ন-১৮। পনেরাে-ষোলাে বছর পর উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হলাে
উত্তর: ভিটেমাটির প্রতি প্রবল টানে পনেরাে-ষােলাে বছর পর উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হলাে।
একমাত্র সহায়-সম্বল দুই বিঘা জমি হারিয়ে উপেন সন্ন্যাসীবেশে দেশে দেশে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু প্রায় পনেরাে-ষােলাে বছর পর নিজ দেশে ফেলে যাওয়া পৈতৃক ভিটের স্মৃতির কথা মনে করে উপেনের দেশে ফেরার বাসনা হয়েছিল।