থাইরয়েড রোগ কি? কারণ ও চিকিৎসা

আসসালামু আলাইকুম। আজ আমরা একটি কমন রোগ নিয়ে আলোচনা করবো। রোগটি হচ্ছে থাইরয়েড। 

আমাদের চারপাশে বেশির ভাগ সময়ই শোনা যায় যে অনেকেরই থাইরয়েড হয়েছে।  তো আজকের পোস্টে আমরা থাইরয়েড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। থাইরয়েড কি? থাইরয়েড হওয়ার কারণ কি, লক্ষণ কি, প্রতিকার ইত্যাদি – সব কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 

 

থাইরয়েড কি? 

-থাইরয়েড রোগটি মূলত হরমোন জনিত সমস্যা। এ থাইরয়েড হরমন কমে গেলে থাইরয়েড রোগটি হয়ে থাকে।

আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরণের গ্রন্থি থাকে। এগুলো থেকে হরমন রস নিঃসৃত হয়। তেমনি হচ্ছে থাইরয়েড গ্লান্ড। 

এটি গলার সামনে থাকে এবং প্রজাপতির মতো গ্লান্ড। এই গ্লান্ড থেকে বিভিন্ন ধরণের রস নিঃসৃত হয়ে গলের ভিতরে প্রবেশ করে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে।



থাইরয়েড রোগের প্রকারভেদঃ

থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি হলে রোগটি হয়? নাকি কমে গেলে রোগটি হয়?

মূলত থাইরয়েড হরমোনটি যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে, তাহলেই থাইরয়েড রোগটি দেখা যাবে। 

১. Hypo Tyroidisom: থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে তাকে বলা হয় হাইপো থাইরয়েডিজম।  

২. Hyper Thyroidisom: থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধি পেলে তাকে বলা হয় হাইপার থাইরয়েডিজম।

 

হাইপো থাইরয়েড রোগের লক্ষণঃ

থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হচ্ছেঃ অনেকের ওজন কমে যায়, অনেকের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, বেশি বেশি ঘুম পায়, অনেকের কাজ করতে গেলে কথা ভুলে যায়, অনেকের চুল পড়ে যায়। এগুলো সাধারণত দেখা যায় হরমোন কমে গেলে। এছাড়াও আরও বড় সমস্যা দেখা যায়। যা হচ্ছেঃ অনিয়মিত মাসিক ও বেশি মাত্রায় রক্তক্ষরণ এবং ইনফার্টিলিটি বা বন্ধ্যাত্বতা। 

আরও কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি। 

আরও পড়ুন, • হার্টের রিং কি? কেন? কিভাবে? বিস্তারিত আলোচনা

হাইপো থাইরয়েড রোগের চিকিৎসাঃ                     




যখন হাইপো থাইরয়েড নিয়ে কোন রোগী ডাক্তারের কাছে যান সাধারণত তখন ডাক্তাররা রোগীকে একটা চার্ট পড়তে দেন। সেইটা পড়ার পর তারা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেন।

থাইরয়েডের চিকিৎসাতে ডোজের একটা বিষয় থাকে রোগী যদি বাচ্চা হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা হবে একরকম। আবার রোগী যদি পূর্ণ বয়স্ক হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসা হবে আরেক রকম। 

থাইরয়েডের চিকিৎসার সময় প্রেগন্যান্ট মহিলারা থাইরয়েড চিকিৎসা করাতে চান না। তারা প্রশ্ন করেন যে যেহেতু প্রেগন্যান্সি টাইমে যেকোন ঔষুধ বাচ্চা বা মায়ের ক্ষতি করতে পারে, তাই তারা ট্রিটমেন্ট করাতে চান না!

তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারগণ বলে থাকেন, থাইরয়েড হরমোনের ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন মা সন্তান ধারণের পরে যদি থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসা না করায় তাহলে তাকে ৩০% ঔষুধের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। 

যদি তিনি ঔষধ ঠিক মতো না খান, তাহলে বাচ্চারও হরমোন জনিস সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি বাচ্চা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও হতে পারে। 

তাই যখনই কোন মহিলা রোগী ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তাররা তাদের পরামর্শ দেন যে তার যদি বাচ্চা নেওয়ার প্লান থাকে। তাহলে তিনি কনসিভ করার সাথে সাথে যেন একজন হরমোন বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেন।  

থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ঔষধ রয়েছে। এগুলো সেবনেরও আরও বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। 

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগী সকাল বেলা উঠে ওষুধ খেয়ে অফিসে চলে গেলো। কিন্তু এটা নিয়ম না। নিয়ম হচ্ছে ওষুধ খেয়ে সর্বনিম্ন ২ ঘন্টা বিরতি দিতে হবে। 



থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ খাওয়ার পরে পরবর্তী দুই ঘন্টা আর কোনো কাজ বা ওষুধ খাওয়া যাবে না। 

অনেকে বলে থাকেন যে তাদের সকাল বেলা অনেক কাজ থাকে, ঘুম থেকে উঠতে পারেন না। 

তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারগণ বলে থাকেন তারা সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ওষুধ খেয়ে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে, তারপরে আবার অফিসে চলে যাবেন বা পরবর্তী কাজ করবেন।

এটাও কারো পক্ষে সম্ভব না হলে, তিনি রাতের বেলা ওষুধটা খেতে পারেন। ওষুধ খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে তিনি অন্য ওষুধ খাবেন বা রাতের খাবার খাবেন।

অন্যান্য ঔষধ বা বিভিন্ন খাবার থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসার জন্য ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ঔষধ খাওয়ার এই নিয়ম।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে থাইরয়েড হরমোনের ওষুধ গুলো তাকে সারাজীবন খেতে হবে নাকি, এক সময় বন্ধ করে দিতে হবে! 

কারো কারো ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে একসময় গিয়ে বন্ধ করা যায়। তবে দুই ক্ষেত্রেই ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

ওজন কমাতে চান? বিস্তারিত পড়ুন, ওজন কমানোর কার্যকরী টিপস ২০২১

 

হাইপার থাইরয়েডের লক্ষণঃ

হাইপার থাইরয়েডে হরমোনের আধিক্য দেখা যায়। এতে করে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায় তা হচ্ছে অস্থির লাগে, অতিরিক্ত ঘামে, বুক ধড়পড় করে, হাতের তালু ঘামে, অতিরিক্ত পায়খানা হয়, খাওয়ার অনেক রুচি থাকার পরও ওজন কমে যাওয়া, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি। 

আবার অনেকের ক্ষেত্রে চুল পড়ে যায় এবং চোখ সামনের দিকে চলে আসে।



হাইপার থাইরয়েডের চিকিৎসাঃ

হাইপার থাইরয়েডের চিকিৎসায় অনেক ঔষধ ব্যবহার হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে কতদিন যাবত ওষুধ গুলো তাকে খেতে হবে।

ডাক্তাররা সাধারণত বলে থাকেন যদি কোন রোগী টানা দুই বছর এ রোগের চিকিৎসার ওষুধ নিয়ে থাকে, তাহলে এ রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যাবে। 

এ রোগের চিকিৎসায় প্রথমদিকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী তা কমানো হয়ে থাকে। 

অনেক ক্ষেত্রেই এতেই রোগটি নিরাময় হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সার্জারিরও প্রয়োজন হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে থেরাপিও দেওয়া হয়ে থাকে। 



 

শেষকথাঃ

থাইরয়েড হরমোনের চিকিৎসা হওয়ার পর এ রোগ থেকে নিরাময় পেলেও, আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

কেননা এ রোগ একবার নিরাময় হলেও আবার ফিরে আসতে পারে। এক্ষেত্রে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

থাইরয়েড হরমোনের কম বা বেশি হওয়ার কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

এবং এই রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন  একটি দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Leave a Comment