তৈলচিত্রের ভুত গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। রফিক সাহেব শীতের ছুটিতে ভাগ্নি সাহানাকে নিয়ে গ্রামে বেড়াতে যান। রাতের আকাশ দেখার জন্য তারা খােলা মাঠে যান। অদূরেই দেখতে পান মাঠের মধ্যে হঠাৎ এক প্রকার আলাে জ্বলে উঠে তা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা কিসের আলাে তা জানতে চাইলে সাহানার মামা বলেন, ভূতের! সাহানা ভয় পেয়ে তার মামাকে জড়িয়ে ধরে। মামা তখন তাকে বুঝিয়ে বলেন যে, খােলা মাঠের মাটিতে এক প্রকার গ্যাস থাকে- যা বাতাসের সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে। সাহানা বিষয়টা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয়।

ক. তৈলচিত্রের ভূত’ কোন জাতীয় রচনা?

খ. নগেনকে পরাশর ডাক্তার ভৎসনা করলেন কেন?

গ. উদ্দীপকের সাহানা আর তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের বিশেষ মিল কোথায়? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “রফিক সাহেব আর তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়কে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায়?” উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ কিশাের উপযােগী একটি ছােটগল্প।

খ। নগেনের বােকামির কারণে পরাশর ডাক্তার নগেনকে ভৎসনা করলেন।

নগেন তার মামার তৈলচিত্রে হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার পরে কোনাে রকম যুক্তি দিয়ে বিচার না করে সে এটাকে ভূতের কাজ মনে করে। সে পরাশর ডাক্তারের কাছে এর সমাধানের জন্য যায়। কিন্তু তৈলচিত্রটি যে রুপার ফ্রেমে বাঁধা এবং বৈদ্যুতিক সংযােগ আছে তা সে বলে না। পরাশর ডাক্তার রাতের অন্ধকারে তৈলচিত্রটি স্পর্শ করলে তিনিও বৈদ্যুতিক শক খান। তখন তিনি সামান্য বৈদ্যুতিক শক না বােঝার জন্য এবং রুপার ফ্রেমে বৈদ্যুতিক সংযােগের কথা না বলার জন্য নগেনকে ভৎসনা করেন।

গ। অশরীরী শক্তির উপর বিশ্বাস এবং তা থেকে উত্তরণের দিক থেকে ।

উদ্দীপকের সাহানা আর তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের মিল রয়েছে। তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন তার মামার ছবিতে হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক শক খেয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে তার মনে ভ্রান্ত ধারণা ছিল। তাই সে ধরেই নিয়েছিল মামার মৃত্যুর পর তার প্রেতাত্মা তাকে ভয় দেখাচ্ছে। অবশেষে পরাশর ডাক্তারের সহায়তায় তার এ ভ্রান্তি দূর হয়।

উদ্দীপকে রাতে মাঠে ঘুরতে গিয়ে মামার কথায় বিভ্রান্ত হয়ে সাহানা ভয় পেয়েছে। ভূতের ভয়ে সে মামাকে জড়িয়ে ধরে। তবে শেষ পর্যন্ত তার মামার কথাতেই সে ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক হয়েছে। যেমনটি নগেনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। সাহানার মামা এবং গল্পের পরাশর ডাক্তার বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে সমস্যার কারণ তুলে ধরেছেন, ফলে সাহানা ও নগেন সঠিক ধারণা পেয়েছে। এদিক থেকে উদ্দীপকের সাহানা ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মধ্যে বিশেষ মিল লক্ষ করা যায় ।

ঘ। বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের রফিক সাহেব এবং তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারকে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায় ।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন ভূতের ভয় পেয়ে পরাশর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। তিনি তাকে ভয়ের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে অবহিত করেন। ফলে নগেন শঙ্কামুক্ত হয়।

উদ্দীপকের সাহানা ভূতের ভয় পেলে তার মামা তাকে মাঠে আগুন জ্বলে ওঠার প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করেন। এতে সাহানা আশ্বস্ত হয় এবং তার ভূতের ভয় কেটে যায়। উদ্দীপকের রফিক সাহেব ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়ই যুক্তিবাদী মানুষ। পরাশর ডাক্তার নগেনকে তার মামার ছবিতে কেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। রফিক সাহেবও সাহানার ক্ষেত্রে একই কাজ করেন। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে ভূত-প্রেতের মতাে কাল্পনিক কোনাে বিষয়ে বিশ্বাস করা রফিক সাহেব কিংবা পরাশর ডাক্তারের চরিত্রে নেই। তারা বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে এসব ঘটনা বিচার করেছেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তাদের দুজনকে আধুনিক মানসিকতার অধিকারী বলা যায়। বাংলা

প্রশ্ন ২। সদ্য বিবাহিত মনির সাহেব নতুন বাসায় উঠলে পাশের বাসার হাশেম সাহেব বললেন, এ ঘরে ভূত আছে, রাতে নানান রকম শব্দ হয়, আপনি এ বাসায় কীভাবে থাকবেন?’ এসব শুনে তিনি ভয় পেয়ে যান। রাতে ঘুমাতে গিয়ে হাশেম সাহেবের কথার সত্যতা মেলে। পরদিন কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারেন ওপরের তলায় নানা বয়সি তিনটি বাচ্চা গভীর রাত পর্যন্ত খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। এ শব্দগুলােকেই সবাই ভূত মনে করে ভয় পেত।

ক. কিছু পয়সা বাঁচানাের জন্য পরেশ বাপের ছবিতে কী এনে ছেড়েছে?

খ. “মিথ্যা গল্প বানিয়ে তাকে শােনাবার ছেলে যে নগেন নয়’ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের হাশেম সাহেবের সাথে তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকের মনির সাহেব এবং তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি।”- বিশ্লেষণ করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর



ক। কিছু পয়সা বাঁচানাের জন্য পরেশ রূপের ছবিতে ভূত এনে ছেড়েছে।

খ। পরাশর ডাক্তার নগেনকে ভালােভাবে চিনতেন এবং জানতেন বলেই তিনি বিশ্বাস করতেন নগেন মিথ্যে ও বানােয়াট গল্প শােনানাের ছেলে নয়— প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি দ্বারা এ বিষয়টিই বােঝানাে হয়েছে।

নগেন পরাশর ডাক্তারের পূর্ব পরিচিত ছিল। তিনি নগেনকে ভালােভাবে জানতেন বলেই নগেনের আচরণ সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা ছিল। তাই নগেন ভূতে ভয় পাওয়ার কথা বললে পরাশর ডাক্তার বুঝতে পারেন নগেন বানানাে কোনাে গল্প তাকে বলছে না। কেননা মিথ্যে ও বানােয়াট গল্প শােনাবার ছেলে নগেন নয়।

গ। উদ্দীপকের হাশেম সাহেবের সাথে তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন তার মৃত মামার ছবিতে প্রণাম করতে গিয়ে বৈঁতিক শক খায়। বৈদ্যুতিক শক সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সে এটিকে ভূতের কাজ ভেবে ভীষণ ভয় পায়। সে মনে করে মৃত মামার প্রেতাত্মাই তাকে ভয় দেখাচ্ছে।

উদ্দীপকের হাশেম সাহেব লােকসমাজে প্রচলিত ভূত সম্পর্কিত বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত। পাশের বাসায় রাতে নানা রকম শব্দকে তিনি ভূতের কাজ ভেবে ভুল করেন। এমনকি সেই বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়া মনির সাহেবকে ভূত সম্পর্কে সতর্ক করেন। আলােচ্য গল্পের নগেনও বৈদ্যুতিক শককে মামার প্রেতাত্মা বা ভূতের কাজ ভেবে ভয় পায়। অর্থাৎ ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসের দিক থেকে উদ্দীপকের হাশেম সাহেবের সাথে আলােচ্য গল্পের নগেন চরিত্রের মিল রয়েছে।

ঘ| “উদ্দীপকের মনির সাহেব এবং তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি”- মন্তব্যটি যথার্থ।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার একজন যুক্তিবাদী মানুষ। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারকে তিনি বিজ্ঞানের নিরিখে বিচার করেছেন। নগেন ভূতের ভয় পেয়ে তার শরণাপন্ন হলে তিনি নগেনকে ভয়ের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে অবহিত করেন। ফলে নগেন শকামুক্ত হয় ।

উদ্দীপকের মনির সাহেব নতুন বাসায় উঠলে পাশের বাসার হাশেম সাহেব তাকে ভূত সম্পর্কে সতর্ক করেন। এ কথা শুনে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও মনির সাহেব প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে প্রবৃত্ত হন। পরে তিনি আবিষ্কার করেন ওপরের তলার বাচ্চারা গভীর রাত পর্যন্ত খেলাধুলা করে। মূলত এই শব্দগুলােকেই মানুষ ভূতের কাজ মনে করে ভয় পেত। তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার এবং উদ্দীপকের মনির সাহেব উভয়ই যুক্তিবাদী মানুষ। প্রচলিত ধারণার স্রোতে তারা গা ভাসাননি; বরং ঘটনার মূল অনুসন্ধান করে তারা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করেছেন। আলােচ্য গল্পে দেখা যায়, পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানমনস্ক বিচারবুদ্ধি দিয়ে নগেনের ভূত বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণিত করেছেন। বিজ্ঞানের নিরিখে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে নগেনকে শঙ্কামুক্ত করেছেন। উদ্দীপকের মনির সাহেবও মানুষের দীর্ঘদিনের কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাসের সত্যতা উন্মােচন করেছেন। উপযুক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

প্রশ্ন ৩। অজপাড়া গাঁয়ের ছেলে সুবল জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়ে গ্রামের প্রচলিত টোটকা চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাড়ফুঁক ও অনুপান নেয়। তার ধারণা জন্ডিসের কোনাে আধুনিক চিকিৎসা নেই। কিন্তু ইতােমধ্যে জণ্ডিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সুবল আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পাশের বাড়ির ছেলে অনিমেষ তাকে শহরে নেওয়ার অনুরােধ জানায়। ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সুচিকিৎসায় সুবল একসময় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

ক. তৈলচিত্র কী?

খ. ‘তুমি একটি আস্ত গর্দভ নগেন।’- এ উক্তির কারণ ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের সুবল ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য বর্ণনা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের অনিমেষ যেন তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তারের প্রতিচ্ছবি।”- মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করাে।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। তৈলচিত্র হচ্ছে তেলরঙে আঁকা ছবি।

খ। নগেন ইলেকট্রিক শককে ভূতের কাণ্ড ভেবেছে বলে পরাশর ডাক্তার তাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

মামা মারা যাওয়ার পর নগেন একদিন উদ্ভ্রান্ত শুকনাে চোখে-মুখে পরাশর ডাক্তারের কাছে এসে জানায়, প্রতিদিন রাতে তার মামার প্রেতাত্মা তার মামার তৈলচিত্রে ভর করে। নগেন তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গেলেই মামার প্রেতাত্মা তাকে ধাক্কা মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। পরাশর ডাক্তার আসল ঘটনা উন্মােচনের জন্য তৈলচিত্রের কাছে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে, প্রতি রাতেই রুপার ফ্রেমের কারণে ইলেকট্রিক শক খেয়ে নগেন মাটিতে আছড়ে পড়ে। নগেন যে ইলেকট্রিক শকের বিষয়টি ভূত ভেবে গুলিয়ে ফেলেছে এজন্য পরাশর ডাক্তার তাকে উদ্দেশ্য করে উক্ত উক্তিটি করেন।

গ। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনােভাবের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের সুবল ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য রয়েছে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন তার মৃত মামার ছবিতে প্রণাম করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক খায়। বৈদ্যুতিক শক সম্পর্কে ধারণা না থাকায় সে এটিকে ভূতের কাজ ভেবে ভয় পায়। সে ভাবে, মৃত মামার প্রেতাত্মা তাকে ভয় দেখাচ্ছে।

উদ্দীপকের প্রচলিত পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করে। সে ভাবে ঝাড়ফুক ছাড়া জণ্ডিসের কোনাে আধুনিক চিকিৎসা নেই। ফলে সুবল দিন দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের এমন চিত্র আলােচ্য গল্পেও দেখা যায়। সেখানে নগেন ছবির মধ্যে তার মামার আত্মা আছে ভেবে ভয় পায়। এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনােভাবের দিকটিতে উদ্দীপকের সুবল ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য আছে।

ঘ। বিজ্ঞানমনস্ক চেতনায় উদ্দীপকের অনিমেষ এবং তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার সমদশী হওয়ায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন ভূতের ভয় পেয়ে পরাশর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। তিনি নগেনকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে বােঝাতে সক্ষম হন তৈলচিত্রের ভূতে শক লাগার প্রকৃত কারণ। ফলে নগেন শঙ্কামুক্ত হয়।

উদ্দীপকের সুবল জণ্ডিস রােগে আক্রান্ত হয়ে নানা ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা করে। কিন্তু তাতে সুস্থ না হলেও সে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করে না। তখন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনিমেষ তাকে শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সুচিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয় সুবল। মূলত অশরীরী শক্তির প্রতি, শক্তির প্রতি মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করে অজ্ঞতার কারণে। আলােচ্য গল্পে পরাশর ডাক্তার নগেনকে কেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে লেখক মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। উদ্দীপকের অনিমেষও বিজ্ঞানমনস্ক, তাই কবিরাজি চিকিৎসাকে নাকচ করে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় বিশ্বাস করেছে। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।



প্রশ্ন ৪। বাবুল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। বাবুলের মায়ের ধারণা তার ছেলেকে ভূতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। তাই তিনি সাধু বাবার কাছে নিয়ে যান। সাধু বাবা ঝাড়ফুক ও তাবিজকবচ দিয়ে বিদায় দেন। বাবুলের শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির পথে যেতে থাকে। এ অবস্থা দেখে বাবুলের চাচা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তারের চিকিৎসায় বাবুল ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।

ক. উইল’ শব্দের অর্থ কী?

খ. নগেন নিজেকে পাগল মনে করার কারণ ব্যাখ্যা করাে।

গ. উদ্দীপকের বাবুলের মায়ের ধারণায় তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উদ্দীপকের বাবুলের চাচা ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়ই আধুনিক মানসিকতার অধিকারী।” উত্তরের সপক্ষে তােমার যুক্তি উপস্থাপন করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘উইল’ শব্দের অর্থ- শেষ ইচ্ছেপত্র।

খ। ভূতের ভয় নগেনের সকল মানসিক শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছিল বলেই তার নিজেকে পাগল বলে মনে হয়েছিল।

মামার মৃত্যুর পর লাইব্রেরি ঘরে তার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গিয়ে নগেন ধাক্কা খায়। যদিও ঘটনাটি ছিল বৈদ্যুতিক শক; কিন্তু প্রথমাবস্থায় তা নগেনের মাথায় আসেনি। তাই ভূতের ভয়ে জর্জরিত হয়ে সে পরাশর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় এবং সেখানে সমস্ত ঘটনা বলার পূর্বে নিজেকে পাগল ভাবতে শুরু করে। মানসিক শক্তির অভাবেই তার ভেতরে এমন বােধ জন্ম নিয়েছিল।

গ। উদ্দীপকের বাবুলের মায়ের মানসিকতায় তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের ভূত বিশ্বাসের বিশেষ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে লেখক নগেন চরিত্রের মধ্যে ভূত বিশ্বাসের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয় এ রকম কুসংস্কার সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে বিশ্বাস করেছে। মামার মৃত্যুর পর নগেন মনে করে, টাকার লােভে মামাকে সে যে মিথ্যা ভক্তি-ভালােবাসার ভান করত, তা মৃত্যুর পর মামা জেনে গেছেন। আর তাই মামার ছবি ছোঁয়ামাত্র মামা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন।

উদ্দীপকে বাবুল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এ ঘটনাকে তার মা ভূতের ধাক্কা ভেবে উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকে সাধু বাবার কাছে নিয়ে যান। কারণ তার মায়ের হিল অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেনের ইলেকট্রিক শককে মামার প্রেতাত্মা বা ভূত ভেবে ভয় পাওয়ায় তার মধ্যে ভূতবিশ্বাসের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। উদ্দীপকের বাবুলের মায়ের মানসিকতায় হেলের হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়াকে ভূতের কাজ ভাবায় তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের ভূত বিশ্বাসের বিশেষ দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ। বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় উদ্দীপকের বাবুলের চাচা ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়ই আধুনিক মানসিকতার অধিকারী।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন তার মামাকে মিথ্যা ভক্তি-ভালােবাসার ভান করত। কিন্তু মামার মৃত্যুর পর যখন সে জানতে পারল মামা তাকে অনেক ভালােবাসতেন তখন সে অনুতপ্ত হয়। অনুতপ্ত হয়ে রাতের বেলা মামার ছবিকে প্রণাম করতে গেলে ছবির ফ্রেমে ইলেকট্রিক শক খায়। এই ইলেকট্রিক শককে সে

মামার প্রেতাত্মার ধাক্কা ভেবে ভয় পায়। ঘটনাটি পরাশর ডাক্তার জানতে পেরে বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধি দিয়ে দূর করেছেন নগেনের ভূত বিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাকে। ভূতে বিশ্বাস নিয়ে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার যে ভিত্তিহীন আলােচ্য গল্পে সেই শিক্ষণীয় দিকটিই পরাশর ডাক্তারের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।

উদ্দীপকের বাবুল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে হোঁচট খেয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার মা এটাকে ভূতের কাজ বলে ভাবেন। তাই বাবুলের মা তাকে সাধু বাবার কাছে নিয়ে যান। কিন্তু বাবুলের চাচা এমন কুসংস্কারাচ্ছন্ন কথা বিশ্বাস না করে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তিনি বাবুলের মায়ের মতাে ভূতে বিশ্বাস করেন না। তাই তিনি ডাক্তারের কাছে যান। বাবুলের চাচার এমন আচরণ তার বিজ্ঞানমনস্ক চেতনাকে প্রকাশ করে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধি দিয়ে নগেনের ভূত বিশ্বাসকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছেন। ছবির ফ্রেমে ইলেকট্রিক সংযােগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি প্রমাণ করেন ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কার ভিত্তিহীন। এটিই তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিক। এই দিকটি উদ্দীপকের বাবুলের চাচার চরিত্রেও ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাবুলের চাচা ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার উভয়ই আধুনিক মানসিকতার অধিকারী।

প্রশ্ন ৫। একজন লােক মেলায় লাল-সবুজ-হলুদ ইত্যাদি অনেক রঙের বেলুন বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। বিক্রি কমে গেলে সে হিলিয়াম গ্যাসে ভর্তি বেলুন আকাশে উড়িয়ে দিত এবং এতে করে তার বিক্রি বেড়ে যেত। একদিন একটি বাচ্চা ছেলে জিজ্ঞেস করল, “কালাে রঙের বেলুনও কি আকাশে উড়বে?” উত্তরে লােকটি বলল, “ভাই, রঙের জন্য বেলুন আকাশে ওড়ে না, ভেতরের গ্যাস বেলুনকে আকাশে ওড়ায়।”

ক. একটু থেমে পরাশর ডাক্তার আবার কী বললেন?

খ. “কপাল ভালাে তড়িতাহত হয়ে প্রাণে মরতে হয়নি।”- উক্তিটি কেন করেছিলেন তা বর্ণনা করাে।

গ. উদ্দীপকের ছেলেটির “কালাে রঙের বেলুনও কি আকাশে উড়বে?” উক্তিটি তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “ভাই, রঙের জন্য বেলুন আকাশে ওড়ে না, ভেতরের গ্যাস বেলুনকে আকাশে ওড়ায়।” —উক্তিটি তৈলচিত্রের ভূত গল্পের মূলভাবকে প্রতিনিধিত্ব করে কি? তােমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। একটু থেমে পরাশর ডাক্তার আবার বললেন, ভূত বলে কিছু নেই, নগেন।

খ| বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ায় পরাশর ডাক্তার প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছিলেন।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার কারণে বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে মনে করেছিল। আর বিজ্ঞানমনস্ক পরাশর ডাক্তার নগেনের এরূপ ভ্রান্ত ধারণার কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না বৈদ্যুতিক শকের কথা। তাই দেওয়ালে টানানাে ছবির রূপার ফ্রেমে হাত দিয়ে তড়িতাহত হন। বৈদ্যুতিক শকের এই বিষয়টি বুঝতে পেরে পরাশর ডাক্তার প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন।

গ।  উদ্দীপকের ছেলেটির “কালাে রঙের বেলুনও কি আকাশে উড়বে?” উক্তিটি তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতার অভাবের বিষয়টিকে নির্দেশ করে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মাঝে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাধারার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। সে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার অধিকারী। ফলে মামার তৈলচিত্র খুঁয়ে প্রণাম করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ ভেবে ভুল করে। বারবার তড়িতাহত হয়েও সে বুঝতে পারে না আসল রহস্য। তড়িতাহত হয়ে ভূতের কাজ বলে মনে করার মধ্য দিয়ে নগেনের মনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতা এবং বিজ্ঞানমনস্ক চেতনার অভাবের দিকটিই প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।

উদ্দীপকের ছেলেটির মাঝে বিজ্ঞানমনস্ক বিচারবুদ্ধির অভাব লক্ষ করা যায়। সে হিলিয়াম ভর্তি বেলুন আকাশে ওড়ার বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি। তার কাছে মনে হয়েছে বিভিন্ন রঙের বেলুন আকাশে উড়ে যাচ্ছে ভিন্ন কোনাে কারণে। তাই তাে ছেলেটি বেলুন বিক্রেতার কাছে জানতে চেয়েছে কালাে রঙের বেলুনও আকাশে ওড়ে কিনা। বেলুন বিক্রেতার কাছে শুনে সে বুঝতে পেরেছে বেলুন রঙের কারণে নয় বরং হিলিয়াম গ্যাসের কারণে আকাশে ওড়ে। উদ্দীপকের ছেলেটির এই ভুল ধারণার বশবর্তী হওয়ার দিকটি বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব, যা, তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মানসিকতার বিষয়টিকেই নির্দেশ করে।

ঘ। তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে প্রকাশিত বিজ্ঞানবুদ্ধি জয়ের দিকটি প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটিতেও ফুটে ওঠায় তা গল্পের মূলভাবকে প্রতিনিধিত্ব করে।

আলােচ্য গল্পে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞানবুদ্ধির জয় ঘটেছে। সেখানে নগেনের ভূত বিশ্বাসের রহস্য উন্মােচনের মাধ্যমে গল্পকার দেখিয়েছেন বিজ্ঞানচিন্তা মনের মধ্যে থাকলে তা কুসংস্কারকে দূর করতে পারে। গল্পের বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ পরাশর ডাক্তার নগেনের মনের ভূতের ভয় দূর করেছে। সে মনে করে ভূত বলে কিছু নেই। সবই মানুষের অলীক ধারণা। আর এই বিজ্ঞানচেতনার দিকটিই তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের প্রধান দিক।

উদ্দীপকে বেলুন বিক্রেতার মন্তব্যের মধ্যে বিজ্ঞানচিন্তার প্রকাশ লক্ষণীয়। সে ভুল ধারণার বশবর্তী ছেলেটির মনের ভ্রান্ত ধারণা দূর করে দিয়েছে। লােকটি হিলিয়াম গ্যাস ভর্তি বেলুন আকাশে উড়িয়ে দিত বিক্রি বৃদ্ধির জন্য। আর এই বেলুন উড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনাে অলৌকিকত্ব যে নেই তা কৌতূহলী ছেলেটি বুঝতে পারে না। সে ভাবে রঙের কারণেই বােধহয় বেলুন আকাশে ওড়ে। ছেলেটির এই ধারণার বিপরীতে প্রশ্নোত মন্তব্যটি বেলুন বিক্রেতার বিজ্ঞানচিন্তার দিকটিকে তুলে ধরেছে।

তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে পরাশর ডাক্তারের মাঝে যেমন বৈজ্ঞানিক চিন্তাচেতনার প্রকাশ লক্ষ করা যায়, তেমনি উদ্দীপকের বেলুন বিক্রেতার মাঝেও তার প্রকাশ লক্ষণীয়। আর এই বিজ্ঞানচিন্তার দিকটিই আলােচ্য গল্পের মূল প্রতিপাদ্য। বিজ্ঞানচিন্তার কারণেই বেলুন বিক্রেতা বলেছে, “ভাই, রঙের জন্য বেলুন আকাশে ওড়ে না, ভেতরের গ্যাস বেলুনকে আকাশে ওড়ায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূলভাবকে প্রতিনিধিত্ব করে।

Leave a Comment