তৈলচিত্রের ভুত গল্পের উৎস
তৈলচিত্রের ভূত’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি কিশাের উপযােগী ছােটগল্প। ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ‘মৌচাক’ পত্রিকায় এ গল্পটি প্রকাশিত হয় ।
তৈলচিত্রের ভুত গল্পের পাঠের উদ্দেশ্য
ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার বিরাজমান, তা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অন্তঃসার শূন্য । বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে এই কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস সহজেই দূর করা সম্ভব। গল্পটি পড়ে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ভয়মুক্ত, কুসংস্কারমুক্ত ও সচেতন হবে।
তৈলচিত্রের ভুত গল্পের মূলবক্তব্য
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার ‘তৈলচিত্রের ভূত’ ছােটগল্পটি অতিপ্রাকৃত ঘটনার আশ্রয়ে রচনা করেছেন। এটি কিশাের উপযােগী রচনাসমুহের অন্তর্ভূক্ত একটি ছােটগল্প। সমাজে ভূত প্রেতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার যে ভিত্তিহীন সেই বিষয়টি এ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
গল্পে নগেন কলেজ পড়ুয়া কিন্তু সে ভূত প্রেতে বিশ্বাস করে। সে বড়লােক মামার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করে। তবে মামার কৃপণ স্বভাবের কারনে তার প্রতি নগেনের কখনই অন্তর থেকে শ্রদ্ধাভক্তি ছিল না। যেটুকু ছিল তা নিতান্তই দায়ে পড়ে। অথচ মৃত্যুর আগে কী যেন ভেবে মামা তার নিজের ছেলেদের ভাগের সমান অংশের টাকা তার নামেও উইল করে গেছেন কিন্তু জীবিত অবস্থায় মামা তার সংগে যেমন ব্যবহারই করুন না কেন, মৃত্যুর পর মামার এ রকম উদারতার কথা ভেবে পরলােকগত মামার প্রতি শ্রদ্ধভক্তিতে তার মন ভরে ওঠে। সারাজীবন শ্রদ্ধাভক্তির ভান করে আমাকে সে ঠকিয়েছে।
তাই লাইব্রেরী ঘরে মামার তৈলচিত্রের পায়ে নগেন অন্ধকারে প্রণাম করতে যায়। রূপার ফ্রেমে বাঁধানাে মামার তৈলচিত্রে মাথা স্পর্শ করামাত্রই মামা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ রকম ঘটনা অন্ধকার রাতে অসংখ্যবার ঘটেছে। অথচ দিনের বেলা বা অন্ধকারে আলাে হাতে থাকলে তা ঘটে না। দুশ্চিন্তায় নগেন শুকিয়ে যেতে থাকে। শেষমেশ পরাশর ডাক্তারের কাছে সবিস্তারে বর্ণনা করল সে। অবশেষে পরাশর ডাক্তার তৈলচিত্রটিকে ভালাে করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন যে, তার মামার তৈলচিত্রের রূপার ফ্রেমে বৈদ্যুতিক সংযােগ থাকায় এ রকম ভুতড়ে কান্ডটি ঘটেছে। আসলে এটা ভূতের কোনাে বিষয় নয়।
তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে লেখক কুসংস্কারের বিপরীতে বিজ্ঞানবুদ্ধির জয়কে প্রকাশ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা বিশেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে অন্ধবিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধার পড়ে। লেখক এ গল্পে নগেন চরিত্রের মধ্যে ভূত বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তারের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক বিচার বুদ্ধি। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয় এরকম বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভুতের কাজ বলে সহজেই বিশ্বাস করেছে। পরাশর ডাক্তার সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করেন বলে তাঁর কাছে। বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টি ধরা পড়েছে এবং তাঁর মাধ্যমেই নগেনের বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
তৈলচিত্রের ভুত গল্পের লেখক পরিচিতি
* মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে সাঁওতাল পরগণার দুমকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁ পিতৃপুরুষের বসতি ছিল বাংলাদেশের বিক্রমপুর অঞ্চলে।
* তিনি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
* মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ঔপন্যাসিক ও ছােট গল্পকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন । মানুষের মন বিশ্লেষনের দিকেই ছিল তাঁর ঝোঁক। তিনি শ্রমিক কৃষকের কল্যানের কথাও ভেবেছেন।
* শােষণ থেকে শ্রমিক কৃষকের মুক্তির জয়গান গেয়েছেন – গল্প উপন্যাসের মাধ্যমে।
* তাঁর রচিত উপন্যাস ও দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মানদীর মাঝি, পুতুলনাচের ইতিকথা।
* তাঁর রচিত ছােটগল্প ঃ প্রাগৈতিহাসিক , সরীসৃপ, সমুদ্রের স্বাদ, টিকটিকি, হলুদ পােড়া , হারানের নাতজামাই।
* তাঁর রচিত কিশাের উপন্যাস ও মাঝির ছেলে।
* তাঁর রচিত কিশাের উপযােগী গল্পের সংখ্যা ২৭। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে – কোথায় গেল, জব্দ করার প্রতিযােগীতা, তিনটি সাহসী ভীরুর গল্প , ভয় দেখানাের গল্প , সনাতনী, দাড়ির গল্প, সুর্যবাবুর ভিটামিন সমস্যা।
* তাঁর নিত্য সঙ্গী ছিল – দারিদ্র্য।
* ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তৈলচিত্রের ভুত গল্পের পাঠ বিশ্লেষন
* নগেন পড়াশুনা করত – কলেজে।
* নগেন মানুষ হয়েছে – মামা বাড়িতে
* পরাশর ডাক্তার চিঠি লিখছিলেন – লাইব্রেরীতে বসে সকাল বেলা ।
* নগেনকে দেখে পরাশর ডাক্তার ভেবেছেন – অসুস্থ।
* নগেন কলেজে পড়াশােনা করে – মামাবাড়ি থেকে।
* নগেনের দৃষ্টিতে তার মামা ছিলেন – কৃপণ।
* নগেন তার মামাকে শ্রদ্ধা করত – বাইরে থেকে।
* নগেনের মামা নগেনকে টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন – প্রায় নিজের ছেলেদের সমান।
* মামার উদারতা কোনােদিন কল্পনা করতে পারেনি – নগেন।
* আত্মগ্লানি অর্থ – নিজের ওপর ক্ষোভ ও ধিক্কার, অনুতাপ, অনুশােচনা ।
* নগেনের মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে যাওয়ার কারণ – আত্মগ্লানি।
* অন্ধকারে তৈলচিত্র ছোঁয়ামাত্রই – নগেন ধাক্কা খায়।
* তৈলচিত্রের ছবিটা শখ করে আঁকিয়েছিলেন – নগেনের মামা।
* অতিশয় বড় কিছুকে বলা হয় – প্রকান্ড।
* হতজ্ঞান শব্দের অর্থ – উদভ্রান্ত।
* মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য করা হয় – শ্রাদ্ধ
* যে দানপত্র মৃত্যুর পর বলবৎ থাকে – উইল।
* মৃতের আত্মাকে বলা হয় – প্রেতাত্মা।
* কৃতকর্মের জন্য অনুশােচনা – অনুতাপ।
* তৈলচিত্র বলতে বােঝায় – তেলরঙে আঁকা ছবি।
* হৃৎপিন্ডের স্পন্দনকে বলে – হৃল্কম্প।
* অশরীরী বলতে বােঝায় – নিরাকার।
* রেশমের মােটা কাপড়কে বলে – মটকা।
* ভূত নিয়ে মানুষের বিশ্বাস – ভিত্তিহীন।
* তৈলচিত্রের ভূত গল্পে জয় হয়েছে – বিজ্ঞানবুদ্ধির
* মানুষ ভূত বিশ্বাস করে – কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ায়।
* কুসংস্কার অন্তঃসার শূন্য হয়ে পড়ে – বিজ্ঞানের কাছে।।
* মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয় এটি – সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস।
* নগেন চরিত্রের মাধ্যমে তৈলচিত্রের ভূত গল্পে প্রকাশ পেয়েছে – ভূত বিশ্বাসের স্বরূপ।
* পরাশর ডাক্তারের বিচারবুদ্ধি – বিজ্ঞানসম্মত।
* তৈলচিত্রের ভূতের রহস্য উন্মােচন করেন – পরাশর ডাক্তার।
* মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে জয়গান গাওয়া হয়েছে – শ্রমিক, কৃষকের শােষণমুক্তির।
* অশরীরী অর্থ – শরীরহীন, নিরাকার
* কস্মিনকালে অর্থ – কোনাে কালে ।
* মনে মনে নগেন তার মামাকে প্রায়ই পাঠাতাে – যমের বাড়ি।
* পাগল সহজে টের পায় না – সে পাগল হয়ে গেছে কিনা।
* নগেন মরিয়া হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিল – সত্যই প্রেতাত্মা আছে কিনা।
* নগেনের কাহিনি কেমন ছিল – অবিশ্বাস্য ও চমকপ্রদ।
* নগেন কোনদিনও কল্পনা করতে পারেনি – মামার অকৃত্রিম উদারতা
* নগেন তার মামাকে ঠকিয়েছিল – শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার ভান করে ।
* নগেন তার মৃত মামাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করতে চেয়েছিল – পায়ে মাথা ঠেকিয়ে।
* নগেনের মামার বিশেষ মাথাব্যাথা ছিল না – লাইব্রেরী সম্পর্কে।
* লাইব্রেরীতে বড় বড় তৈল চিত্র ছিল – ৩টি ।
* তৈলচিত্রের ছবি তিনটি ছিল – নগেনের দাদামশায়ের, দিমির আর মামার।
* দেয়ালের ছবিতে নগেনের মামা দাঁড়িয়ে আছেন – মটকার পাঞ্জাবির উপর দামি শাল গায়ে দিয়ে।
* তৈলচিত্রের তেজ বাড়ে – রাত্রে ।
* তৈলচিত্রের ভূত গল্পের মূখ্য উদ্দেশ্য হলাে – শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করা ।
* পরিতাপ অর্থ – অনুতাপ।
* তৈলচিত্রের ভূত গল্পটিতে কোন্ মাসের উলেখ আছে – চৈত্র মাসের ।
* নগেনের বর্ণিত কাহিনিকে পরাশর ডাক্তার চমকপ্রদ অবিশ্বাস্য কাহিনি বলেছেন – বাস্তববর্জিত বলে।
* পরাশর ডাক্তারের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য – বুদ্ধিমান ও আধুনিক।
* নগেন ঘরে ঢুকল – নিঃশব্দে চোরের মতাে ।
* নগেনের মামা নগেনের নামে উইল করে রেখে গিয়েছিল – মােটা অংকের টাকা।
* নগেনের লাইব্রেরীটি – দাদামশায়ের আমলের ।।
* পরাশর ডাক্তার নগেনকে বাইরের ঘরে অপেক্ষা করতে বলল – রাত্রি বারােটার সময়।
* নগেনের মামার তৈলচিত্রটি নিস্তেজ থাকে – দিনের বেলায় ।
* নগেনের মামার তৈলচিত্রটি এঁকেছিলেন – তার মামা নিজে।
* ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিল – নগেনের মামাতাে ভাই।
* তৈলচিত্রটির ফ্রেম ছিল – রূপার তৈরী।
* নগেনের মনে দারুন লজ্জা আর অনুতাপ জেগেছিল – মামরি উদারতার পরিচয় পেয়ে।