তৈলচিত্রের ভুত গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-০১। পরাশর ডাক্তার কোথায় বসে চিঠি লিখেছিলেন ?
উত্তরঃ পরাশর ডাক্তার নিজের প্রকান্ড লাইব্রেরিতে বসে চিঠি লিখেছিলেন।
প্রশ্ন – ০২। তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?
উত্তরঃ ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পটি ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রশ্ন-০৩। লাইব্রেরির দেয়ালে কয়টি তৈলচিত্র ছিল।
উত্তরঃ লাইব্রেরির দেয়ালে তিনটি তৈলচিত্র ছিল।
প্রশ্ন-০৪। ‘ভূত’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ ভূত শব্দের অর্থ হলাে-প্রেতাত্ম ।
প্রশ্ন-০৬। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু সাল কত ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু সাল ১৯৫৬।
প্রশ্ন-০৭। নগেনদের বাড়ির লাইব্রেরিটি কার আমলের?
উত্তরঃ নগেনদের বাড়ির লাইব্রেরিটি নগেনের দাদামশায়ের আমলের ।
প্রশ্ন-০৮। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশাের-উপযােগী গল্পের সংখ্যা কত ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিশাের-উপযােগী গল্পের সংখ্যা ২৭।
প্রশ্ন-০৮। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ কোন জাতীয় রচনা ?
উত্তরঃ ‘তৈলচিত্রের ভূত’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কিশাের – উপযােগী ছােটগল্প।
প্রশ্ন-০৯। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জন্ম কত সালে ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ সালে জন্ম গ্রহণ করে।
প্রশ্ন-০৯। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাঝির ছেলে’ কী ধরনের রচনা ?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাঝির ছেলে একটি কিশাের উপন্যাস।
প্রশ্ন-১০। নগেনের মামার গায়ে কিসের পাঞ্জাবি ছিল ?
উত্তরঃ নগেনের মামার গায়ে মটকার পাঞ্চাবি ছিল ।
প্রশ্ন-১১। ‘উদভ্রান্ত’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর: উদভ্রান্ত’ শব্দের অর্থ-বিহবল , দিশেহারা, হতজ্ঞান।
প্রশ্ন-১২। পরাশর পেশায় কী ছিলেন ?
উত্তর : পরাশর পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
প্রশ্ন-১৩। রুপার ফ্রেমে বাল্ব দুটো লাগিয়েছিল কে ?
উত্তর : রূপার ফ্রেমে বাল্ব দুটো লাগিয়েছিল নগেনের মামাতাে ভাই পরেশ।
প্রশ্ন-১৪। পরাশর ডাক্তার চোখ বুজে ছিলেন কত মিনিট ?
উত্তরঃ পরাশর ডাক্তার পাঁচ মিনিট চোখ বুজে ছিলেন ।
প্রশ্ন-১৫। নগেনের মামার ছবি কোথায় ছিল ?
উত্তরঃ নগেনের মামার ছবি লাইব্রেরিতে ছিল।
তৈলচিত্রের ভুত গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-০১। নগেন শুয়ে শুয়ে ছটফট করতে লাগল কেন?
উত্তরঃ মামার প্রতি ভক্তি-ভালােবাসার ভান করে ঠকানাের অনুতাপ বেড়ে যাওয়ায় নগেন শুয়ে শুয়ে ছটফট করতে লাগল।
মামা নগেনকেও তার ছেলেদের সমান টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন জেনে নগেন স্তম্ভিত হয়ে যায়। মামার এমন উদারতায় পরলােকগত মামার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা-ভক্তিতে নগেনের মন ভরে যায়। অথচ এমন দেবতার মতো মানুষকে সারাজীবন ভক্তি-ভালােবাসার ভান করে ঠকিয়েছে ভেবে তার দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ হয়। মামার শ্রদ্ধের দিন অনুতাপটা বেড়ে যাওয়ায় নগেন বিছানায় শুয়ে শুয়ে ছটফট করতে লাগল।
প্রশ্ন-০২। ‘গাধাও তােমার চেয়ে বুদ্ধিমান’-কথাটি কে, কোন প্রসঙ্গে বলেছিলেন ?
উত্তরঃ উক্তিটি পরাশর ডাক্তার, নগেনের হতবুদ্ধি দেখে করেছিলেন।
তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেন তার মামার ছবি ধরে ধাক্কা খাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করে ছবিতে ভূত আছে। এই সমস্যাটি সে পরাশর ডাক্তারের কাছে তুলে ধরে । পরাশর ডাক্তার এ ঘটনার কারণ উদঘাটন করতে গিয়ে দেখেন ছবির ফ্রেমটি রুপার তৈরি এবং তার ভেতরে দুটি ইলেকট্রিক বাল্ব লাগানাে হয়েছে। যার ফলে নগেন ইলেকট্রিক শক খেয়ে বারবার মনে করত যে, ছবি ভেতরে ভূত আছে। তার এমন হতবুদ্ধিতার পরিচয় পেয়ে পরাশর ডাক্তার আলােচ্য উক্তিটি করেন।
প্রশ্ন-০৩। নগেনের অনুতাপ বেড়ে গেল কেন ?
উত্তরঃ নগেনের মামার কথা ভেবে নগেনের অনুতাপ বেড়ে গেল। মামা বেঁচে থাকতে নগেন তাকে তেমন একটা শ্রদ্ধা-সম্মান করত না। মনে মনে সে তাকে খুবই অপছন্দ করতে। এমনকি মৃত্যু কামনা করত। কিন্তু মামা মারা যাওয়ার পরে সে জানতে পারে যে, মামা তার ছেলেদের মতাে তাকেও প্রায় একই সমান সম্পত্তি দিয়ে গেছেন। মামা বেঁচে থাকতে মামার জন্য তার ভেতরে যে অশ্রদ্ধা ছিল, মৃত্যুর পরে তাকে সম্পত্তি দিয়ে যাওয়ার কারণে মনে মনে তার অনুতাপ বেড়ে যেতে লাগল।
প্রশ্ন-০৪। পরেশকে বাবার উপযুক্ত ছেলে বলার কারণ বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ পরেশকে বাবার উপযুক্ত ছেলে বলার কারণ সে নিজে তার বাবার ছবির সাথে দুটো ইলেকট্রিক বা ফিট করতে গিয়ে গন্ডগােল পাকিয়েছে।
নগেনের মামা বড়লােক হলেও কৃপণ ছিলেন। মামাত ভাই পরেশও হয়েছে তেমন। পিতার রূপার ফ্রেম দিয়ে বাঁধানাে ছবির সাথে সে দুটি বাল্ব ফিট করে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বলে কাজটা সে নিজেই করেছে। শুধু শুধু ইলেকট্রিক মিলিকে পয়সা দিতে চায়নি। কাচা হাতের কাজ হওয়ায় কাজটিতে ক্রটি থেকে গেছে। সুয়ােগ পেয়ে বিদ্যুৎ রূপার ফ্রেমের ভিতর দিয়ে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূলত পরেশ যে বাবার মতােই কৃপণ-এ কথা বােঝাতেই পরেশকে বাবার উপযুক্ত ছেলে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন-০৫। “তুমি একটি আস্ত গর্দভ নগেন।”-উক্তিটির কারণ কী?
উত্তরঃ ডাক্তার নগেনকে তার নির্বুদ্ধিতার জন্য তাকে আস্ত গর্দভ বলেছিলেন।
আমাদের সমাজের সচারাচর স্থলবুদ্ধির লােককেই গর্দভ বলা হয়। নগেনকে পরাশয় ডাক্তারের গর্দভ বলার কারণ, নগেন তার মামার তৈলচিত্র ধরে ধাক্কা খাওয়ার কার্যকারণ অনুসন্ধান না করে তাকে কোনাে অশরীরী আত্মার ধাক্কা বলে মনে করেছে। অথচ সেখানে ছবির সঙ্গে যে দুটি ইলেকট্রিক বা ফিট করা আছে, সেই তথ্য পরাশর ডাক্তারকে সে দেয়নি। এ কারণে ডাক্তার নগেনকে অম্ভি গর্দভ বলেছে।
প্রশ্ন-০৬। নগেন প্রায় তার মামাকে যমের বাড়ি পাঠাত কেন ?
উত্তরঃ নগেনের মামা ছিলেন খুব কৃপণ। তাই নগেন তাকে প্রায়ই যমের বাড়ি পাঠাত।
তার মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করত। তার মামা ছিল অত্যন্ত কৃপণ, যার কারণে নগণ তাকে খুব একটা পছন্দ করত না। আবার মামার আদর-ভালােবাসাও সে খুব একটা পায়নি। তাই বাইরে মামাকে খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি দেখালেও মনে মনে সে প্রায়ই তাকে যমের বাড়ি পাঠাত।
প্রশ্ন-০৭। নগেন কেন ভেবেছিল সে পাগল হয়ে গেছে?
উত্তরঃ অশরীরী শক্তি প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ভ্রান্ত হওয়ার কারণে নগেন ভেবেছিল সে পাগল হয়ে গেছে।
নগেন বাইরে মামাকে খুব শ্রদ্ধাভক্তি দেখালেও মনে মনে তাকে প্রায় যমের বাড়ি পাঠাত। কিন্তু মৃত্যুর আগে মামা তার নামে মােটা টাকা দিয়ে যান এতে নগেন অনুতপ্ত হয়ে রাতের বেলা লাইব্রেরিতে টাঙানাে মামার ছবির সামনে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ছবিতে হাত দেওয়া মাত্র তার শরীর ঝনঝন করে ওঠে, সে জ্ঞান হারায়। এভাবে বেশ কয়েকবার স্পর্শ করলে একই প্রতিক্রিয়া হলে সে ভাবে এটা তার মামার অপশরীরী শক্তি। মামা তার ওপর রেগে রয়েছে। সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তার শরীর ভেঙে পড়ে, চাউনি উদভ্রান্তের মতাে, কথা বলে। খাপছাড়া, মুখে হাসি নেই। নগেনের মনে হয় সে পাগল হয়ে গেছে।
প্রশ্ন-০৮। মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করার কথা নগেনের মনে হলাে কেন?
উত্তরঃ মামার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ও শ্রদ্ধায় মামার তৈলচিত্র প্রণাম করার কথা নগেনের মনে হলাে।
মামা মারা যাওয়ার পর নগেন জানতে পারে যে, নিজের ছেলেদের সমান অর্থ তিনি নগেনের জন্য রেখে গেছেন। নগেন বুঝতে পারে মামা বাইরে কঠোর ব্যবহার করলেও নগেনকে নিজের ছেলের মতােই ভালােবাসতেন। কিন্তু নগেন এতদিন তা বুঝতে না পেরে মামার প্রতি শ্রদ্ধার ভান করেছে। এখন বুঝতে পেরে মামার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করার কথা নগেনের মনে হলাে।
প্রশ্ন-০৯। নগেন তার মামাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধাভক্তি করেনি কেন ?
উত্তরঃ নগেন তার মামার কাছ থেকে আদর-ভালােবাসা তেমন একটা পায়নি বলে মামাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করেনি।
নগেন তার মামার বাড়িতে থেকে কলেজে পড়াশুনা করত। তার মামা অনেক বড়লােক ছিলেন। যথেষ্ট টাকা-পয়সা থাকার পরও নগেনের মামা ভীষণ কৃপণ ছিলেন। নগেন কখনাে আদর পায় নি তার মামার কাছ থেকে। অনেকটা অনাদরেই সে মামার বাড়িতে থেকেছে। এ কারণেই নগেন বাইরে থেকে মামাকে শ্রদ্ধা-ভক্তি দেখালেও অন্তর থেকে কোনাে দিনই মামাকে শ্রদ্ধাভক্তি করেনি।
প্রশ্ন-১০। নগেনের মনে দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ জেগেছিল কেন ?
উওরঃ মামাকে সারা জীবন ভক্তি-শ্রদ্ধার ভান করে ঠকিয়েছে ভেবে নগেনের মনে দারুণ লজ্জা আর অনুতাপ জেগেছিল।
নগেন তার মামার বাড়িতে থেকে কলেজে পড়ে। মামা বড়লােক কিন্তু কৃপণ। মামার কাছ থেকে খুব একটা স্নেহ -ভালােবাসা নগেন পায় নি। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে মামা নগেনকে নিজ ছেলেদের প্রায় সমান টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন। এটা জানার পর মামার প্রতি তার ভক্তি-শ্রদ্ধা বেড়েযায় আর সে মনে মনে দারুণ লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। কারণ সারা জীবণ মামাকে সে ভক্তি আর ভালােবাসার ভান করে ঠকিয়েছে।
প্রশ্ন-১১। নগেন কেন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল ?
উত্তরঃ ভূতের হাত থেকে বাচতে নগেন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল।
রাতের বেলা মৃত মামার ছবিতে প্রণাম করতে গেলে ধাক্কা খায় নগেণ । প্রায়ই ঘটা এ ঘটনাটিকে নগেন ভুতের কান্ড বলে মনে করে। এজন্য সে ডাক্তারের কাছে এর প্রতিকার চাইতে যায়।
প্রশ্ন-১২। নগেনের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে মুখ ফেকাসে হয়ে গেল কেন ?
উত্তরঃ ভয়ে ও বিস্ময়ে নগেনের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে মুখ ফেকাসে হয়ে গেল।
মামা যত দিন বেঁচে ছিলেন তিনি নগেনকে ভালােবাসতেন না। ফলে নগেন কখনাে মন থকে তাঁকে শ্রদ্ধাভক্তি করতে পারেনি। কিন্তু মামা মৃত্যুর আগে তার নামে মােটা টাকা উইল করে যান। এ ঘটনায় নগেনের মন মামার প্রতি আগুরিক শ্রদ্ধাভক্তিতে ভরে গেল। সে সিদ্ধান্ত নিল মামার ছবির গায়ে মাথা ঠেকিয়ে মাফ চেয়ে নেবে। সে লাইব্রেরি ঘরে মামার ছবিতে সপর্শ করা মাত্র ইলেকট্রিক শকের কারণে ধাক্কা। খেয়ে পড়ে যায়। তার বর্ণনা পরাশর ডাক্তারের কাছে করতে গিয়ে ভয়ে ও বিস্ময়ে নগেনের চোখ বিস্ফোরিত হয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।