কৃষি ও জলবায়ু অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। সুজিত বাবুর বাড়ি সমুদ্র উপকূলবর্তী সাতক্ষীরা জেলায়। তিনি আবাদি জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করে উৎপাদনে ব্যর্থ হন। এরপর কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে বিনা ধান-৮ চাষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একদিন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদর্শিত তথ্য চিত্র দেখে সুজিত বাবু লবণাক্ততা সহায়ক বিভিন্ন ফসলের চাষ সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানতে পারলেন।

ক. লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসল কাকে বলে?

খ. তাপমাত্রা কীভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করে? ব্যাখ্যা করাে। 

গ. সুজিত বাবুর সিদ্ধান্তটি সঠিক কি না তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. সুজিত বাবুর এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কার্যক্রম মূল্যায়ন করাে।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক। যেসব ফসল বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে সেসব ফসলকে লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসল বলে।

খ। তাপমাত্রা হলাে ফসল উৎপাদনে প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম জলবায়ুগত উপাদান।

বীজ বপনের পর মাটির তাপমাত্রা হ্রাস পেলে বীজের অঙ্কুরােদগম ভালাে হয় না। ফসলের দৈহিক বৃদ্ধির সময় তাপমাত্রা হ্রাস পেলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়াও তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিতে ফসল বিভিন্ন পােকা ও রােগে আক্রান্ত হয়। এভাবে তাপমাত্রা কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে।

গ। সুজিত বাবুর সিদ্ধান্ত ছিল বিনা ধান-৮ চাষ করা ।

সুজিত বাবুর বাড়ি সমুদ্র উপকূলবর্তী সাতক্ষীরা জেলায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞলের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়, জলােচ্ছাস এবং প্রবল জোয়ারের ফলে সৃষ্ট বন্যায় সরাসরি লবণাক্ত পানি দ্বারা জমি ডুবে যাওয়ায় মাটিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মাটির নিচের লবণ উপরে উঠে আসে। উপকূলীয় এলাকায় ধান উৎপাদন করতে হলে উন্নত জাতের ধান চাষ করতে হবে যা লবণাক্ততা সহিষ্ণু। এসব জাতের ধান গাহ কোষের রসস্ফীতি বজায় রেখে মাটি থেকে প্রয়ােজনীয় পানি শশাষণের মাধ্যমে লবণাক্ত পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে। এসব লবণাক্ততা সহনশীল জাতের মধ্যে একটি হলাে বিনা ধান-৮। এ জাতটির জীবনকাল ১৩০-১৩৫ দিন। লবণাক্ত এলাকায় এ জাতটি চাষ করে হেক্টর প্রতি প্রায় ৫ টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব। কাজেই সুজিত বাবুর বিনা ধান-৮ চাষের সিদ্ধান্তটি সঠিক।

ঘ। সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত।

এ অঞলের মাটিতে লবণাক্ততার প্রভাব খুব বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কম বৃষ্টিপাতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ধারা আরও বাড়ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে আরও অনেক এলাকায় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ফসল সম্পর্কে ধারণা নেই বলে তারা স্থানীয় জাতের ফসল চাষ করে। ফলশ্রুতিতে তারা ভালাে ফলন পেতে ব্যর্থ হয় এবং লাভবান হতে পারে না। লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসলের চাষ উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রিয় করতে সেসব ফসলের চাষ পদ্ধতি চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শনের কার্যক্রমটি বেশ কার্যকরী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুজিত বাবুর এলাকায় আমন মৌসুমে লবণাক্ত সহিষ্ণু বিআর ২৩, ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান ৪১, বােরাে মৌসুমে ব্রি ধান ৪৭, বিনা ধান -৮ এবং বারি আলু -২২, বারি মিষ্টি আলু ৬ ও ৭, আখের জাত-ঈশ্বরদী ৩৯ ও ৪০ ইত্যাদি বিভিন্ন ফসলের চাষ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে। এতে এলাকাবাসী নিজে উৎসাহিত হয়ে এসব নতুন জাতের ফসল চাষ করে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এবং অন্যকেও উৎসাহিত করতে সক্ষম হবে। তাই বলা যায়, সুজিত বাবুর এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সঠিক ছিল।

 

প্রশ্ন ২। চিত্রার বাবা নিয়মিত চট্টগ্রামে হালদা নদী থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করে বিক্রি করে আসছেন। কিন্তু এ বছর চিত্রার বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন নির্দিষ্ট সময়ে কার্প জাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। ফলে আয়-রােজগার কমে যাবে। তিনি এলাকায় মৎস্য সপ্তাহ চলাকালে শােভাযাত্রায় ও তথ্য চিত্রের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদ কমে যাওয়ার কারণ জানতে পারেন।

ক. আবহাওয়া কাকে বলে?

খ. পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার একটি ক্ষতিকর দিক ব্যাখ্যা করাে। 

গ. চিত্রার বাবার ডিম সংগ্রহ করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শশাভাযাত্রাটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কিরূপ প্রভাব ফেলবে বিশ্লেষণ করাে।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। কোনাে স্থানের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ, বায়ুর চাপ, কুয়াশা প্রভৃতির দৈনিক সামগ্রিক অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

খ। পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার একটি ক্ষতিকর দিক হলাে খরা।

শুষ্ক মৌসুমে একটানা ২০ দিন বা তার অধিক দিন কোনাে বৃষ্টিপাত না হলে তাকে খরা বলে। এটি একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে উদ্ভিদ দেহে প্রয়ােজনীয় পানির ঘাটতি দেখা যায় । ফলে শতকরা ১৫৯০ ভাগ ফলন ঘাটতি হয়ে থাকে। খরার ফলে মাটির উর্বরতা কমে এবং পরিবেশ বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ে।

গ। চিত্রার বাবার নিয়মিত হালদা নদী থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি কমে যাচ্ছে। ফলে ছােট-বড় প্রজননক্ষম মাছ ধরা পড়ছে। বড় মাছের ডিমের পরিপক্কতা এগিয়ে আসছে। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সময় দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। এতে করে মাছের শারীরবৃত্তীয় অবস্থার সাথে বৃষ্টিপাতের সময়ের অমিল হচ্ছে। ফলে ডিম পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, ফলে লবণাক্ততাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে স্বাদুপানির মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং কমে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় যেমন- নদীতে জলবায়ুর এ সকল পরিবর্তনের কারণে মাছ চাষ, স্বাভাবিক প্রজনন ও বিচরণ ব্যাহত হচ্ছে। অতএব, উপরিউক্ত কারণে চিত্রার বাবার পক্ষে মাছের ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

ঘ। উদ্দীপকে চিত্রার বাবার এলাকায় মৎস্য সপ্তাহ চলাকালে শােভাযাত্রা ও তথ্য চিত্রের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদ যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকীর মুখে তা জানানাে হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মৎস্য চাষিদের বিভিন্ন অভিযােজন কলাকৌশল সম্পর্কে জানা প্রয়ােজন।

উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত অঞ্চলে লবণাক্ততা  সহনশীল মাছ যেমন- ডেটকি, বাটা, পারশে ইত্যাদি চাষে উৎসাহিত করতে হবে। লবণাক্ততা বেড়ে চলেছে এমন জলাশয়ে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষে উৎসাহিত করতে হবে। খরা প্রবণ এলাকায় খরা সহনশীল মাছ যেমন— তেলাপিয়া, কই ও দেশি মাগুর চাষ করতে হবে। বন্যা প্রবণ এলাকায় পুকুরের পাড় উঁচু করে সমাজভিত্তিক মৎস্য পােনা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ও বন্যাকালীন সময়ে উক্ত পােনা পুকুরে মজুদকরণে উৎসাহিত করতে হবে। বন্যা প্রবণ এলাকায় বন্যাকালীন সময়ে খাচায় মাছ চাষ করতে হবে। মৎস্য সংরক্ষণ আইন ও মাছ চাষ বৃদ্ধি সম্পর্কিত প্রচলিত আইন সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করতে হবে।

অতএব, উল্লিখিত বিষয়সমূহ মৎস্য চাষি ও সাধারণ মানুষকে উত শােভাযাত্রার মাধ্যমে জানাতে পারলে মৎস্য উৎপাদনের হার আশানুরূপভাবে বৃদ্ধি পাবে।

 

প্রশ্ন ৩। মাজহার স্যারের শিক্ষার্থীরা তার নির্দেশে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ফসল উৎপাদনে খরার প্রভাব সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখে আনল। প্রতিবেদনে তারা উক্ত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়সমূহ উল্লেখ করল। এছাড়া শিক্ষার্থীরা খরায় তাদের এলাকায় সৃষ্ট বিরূপ প্রভাব বিশ্লেষণ করল। 

ক. খরা প্রতিরােধ কাকে বলে?

খ. উপকূলীয় এলাকায় যেকোনাে ফসল চাষ করা যায় না কেন?

গ. প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের উল্লেখ করা করণীয় বিষয়গুলাে ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ করা বিষয়টি মূল্যায়ন করাে।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। খরাকবলিত অবস্থায় ফসলের টিকে থাকার কৌশলকে খরা প্রতিরােধ বলে।

খ। উপকূলীয় এলাকার মাটিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে মাটি থেকে ফসলের পানি সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয়। মাত্রা বেশি হলে ফসল জন্মাতে পারে না। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির বাষ্পীভবনের মাধ্যমে মাটির নিচের লবণ উপরে উঠে আসে। ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়। এসকল কারণে উপকূলীয় এলাকায় যেকোনাে ফসল চাষ করা যায় না।

গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতি হলাে খরা পরিস্থিতি। আর এ পরিস্থিতিতে ভালােভাবে ফসল উৎপাদনে করণীয় বিষয়গুলাে হলাে—

i.খরা সহিষ্ণু ফসল চাষ করা। যেমন, ধানের জাত ব্রি ধান ৫৬ ও ব্রি ধান ৫৭; গমের জাত- বিজয়, প্রদীপ ও সুফি; আখের জাত- ইশ্বরদী ৩৩ ও ঈশ্বরদী ৩৫, ইত্যাদি হলাে খরা সহিষ্ণু জাত। 

ii.পানি কম লাগে এমন ফসল চাষ করা। যেমন- যব, বাজরা 

iii.মাটিকে আঁচড়িয়ে কিংবা জাবড়া প্রয়ােগ করে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা। 

  1. চাষ পদ্ধতির পরিবর্তন করে মাটিতে পানির সাশ্রয় করা। 
  2. জৈব সার ব্যবহার করা।

সুতরাং উল্লিখিত বিষয়াদি অবলম্বন করলে খরায় ফসল চাষ করা সম্ভব।

ঘ। উত্ত প্রতিবেদনে জমিতে খরার প্রভাব উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবছর আমাদের দেশে ৩০-৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় কবলিত হয়। খরার ফলে সামগ্রিকভাবে ফসলের বৃদ্ধি কমে যায়। ফসলের ক্ষতির মাত্রার ওপর নির্ভর করে খরাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—

i.তীব্র খরা (৭০-৯০% ফলন ঘাটতি হয়)।

ii.মাঝারি খরা (৪০-৭০% ফসল ঘাটতি হয়)।

iii.সাধারণ খরা (১৫-৪০% ফসল ঘাটতি হয়)।

মার্চ-এপ্রিল মাসে খরা জমি তৈরিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে। মে-জুন মাসে খরা দণ্ডায়মান বােনা আমন, আউশ ও পাট ফসলের ক্ষতি করে। আগস্ট মাসে খরা রােপা আমন চাষকে বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর| অক্টোবর মাসে খরা বােনা ও রােপা আমন ধানের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে দেরি করিয়ে দেয়। এভাবে খরা বিভিন্ন ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।

 

প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। এ সম্পর্কে কৃষিশিক্ষা স্যার ক্লাসে ছাত্রদের বিস্তারিত ধারণা দেন। অতঃপর স্যার শিক্ষার্থীদের একটি মানচিত্রে লবণাক্ততা বৃদ্ধির প্রবণতা প্রদর্শন করতে বলেন।

ক. গ্রীন হাউস ইফেক্ট কী?

খ. লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসল বা ফসলের জাতের আবাদ এলাকা বাড়াতে হবে কেন?

গ. মানচিত্রে শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনকৃত অঞ্চলে উদ্ভিদের অভিযােজন কলাকৌশল ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনকৃত এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে তা বিশ্লেষণ করাে।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। তাপ শােষণের মাধ্যমে গ্রীন হাউস গ্যাসগুলাের (কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি) বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে তােলার প্রভাব হলাে গ্রীন হাউস ইফেক্ট।

খ। লবণাক্ত মাটি থেকে সাধারণ জাতের ফসল পানি সংগ্রহ করতে পারে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণাঞলের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সমস্যা মােকাবেলার জন্য উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসলের জাতের আবাদ এলাকা বাড়াতে হবে।

গ। মানচিত্রে শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনকৃত অঞ্চল হলাে উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা।

মানচিত্রে দেখানাে এলাকার উছিদকে টিকে থাকতে হলে উদ্ভিদের কোষরসের ঘনত্ব মৃত্তিকা পানির ঘনত্ব থেকে বেশি হতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশলই হলাে অভিযােজন।

উদ্ভিদ কোষের রসস্ফীতি বজায় রাখার জন্য মাটি হতে বিভিন্ন প্রকার আয়ন (k, Na) আহরণ করে লবণাক্ততার এ বাধা অতিক্রম করে। কিছু প্রজাতির পাতায় এক ধরনের লবণ জালিকা থাকে যার মাধ্যমে অতিরিক্ত আয়ন বের করে দিতে পারে। আবার কোনাে কোনাে প্রজাতির উদ্ভিদ পাতার আয়তন বাড়িয়ে শরীরে লবণের ঘনত্ব কমিয়ে নেয়। কিছু গাছের পাতার কোষে অতিরিক্ত’আয়ন জমিয়ে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে যার মূলের কোষের রসস্ফীতি বজায় রাখার জন্য কোষগহ্বরে বিভিন্ন প্রকার জৈব দ্রাব জমা করে রাখে। এভাবেই মানচিত্রে শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনকৃত এলাকার বিভিন্ন উদ্ভিদ বিভিন্ন অভিযােজন কলাকৌশল অবলম্বন করে প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখে।

ঘ। উদ্দীপকে শিক্ষার্থীরা মানচিত্রে উপকূলীয় অঞ্চল নির্দেশ করে।

পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, বরগুনা ইত্যাদি জেলা বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কম বৃষ্টিপাতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ধারা আরও বাড়ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে আরও অনেক এলাকায় লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর ফসল উৎপাদনে লবণাক্ততার ভয়াবহ প্রভাবের বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে জানাবে। উপকূলীয় অঞ্চলে আমন মৌসুমে বিআর ২৩, ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান৪১ এবং বােরাে মৌসুমে ব্রি ধান ৪৭, বিনা ধান ৮ জাতের লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান এবং অন্যান্য লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের চাষ জনপ্রিয় করতে এসব ফসলের চাষ পদ্ধতি চিত্রের মাধ্যমে এলাকাবাসীকে প্রদর্শনের কার্যক্রম খুব কার্যকরী। এতে এলাকাবাসী নিজে উৎসাহিত হয়ে এসব নতুন জাতের ফসল চাষ করে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখবে এবং অন্যকেও উৎসাহিত করবে। সুতরাং বলা যায় যে, উল্লিখিত লবণাক্ত প্রবণ অঞলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের ভালাে ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

 

প্রশ্ন ৫।  জুয়েল ও তার সহপাঠীরা তাদের শিক্ষকের নির্দেশ মতে মৎস্য ক্ষেত্রের ওপর জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখল। এই প্রতিবেদনে তারা সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাবের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছে। এছাড়া তারা জেলেদেরকে শেখানাের জন্য কিছু অভিযােজন কৌশল উল্লেখ করল।

ক. হ্যালােফাইটস উদ্ভিদ কী?

খ. মাছকে অধিক গরমের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে?

গ. প্রতিবেদনে জেলেদের শেখানাের জন্য যে কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. শিক্ষার্থীরা কী কারণে উক্ত বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছে বলে তুমি মনে করাে? মতামত দাও।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। যেসব উদ্ভিদ লবণাক্ত পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে সেখানেই জীবনচক্র সম্পন্ন করতে পারে তারাই হ্যালােফাইটস জাতীয় উদ্ভিদ।

খ। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে তাতে টোপাপােনা রাখা যেতে পারে। এছাড়া পুকুরের পাড়ে পানির উপর কিছু লতানাে উদ্ভিদ জন্মানাের সুযোেগ দেওয়া যেতে পারে। প্রয়ােজনে বাইরে থেকে কিছু পানি সেচ দিয়েও মাছকে গরম থেকে রক্ষা করা যায়।

গ। প্রতিবেদনে জেলেদের শেখানাের জন্য যে অভিযােজন কৌশল দেওয়া হয়েছে তা হলােঃ

i.লবণাক্ততা সহনশীল ভেটকি, বাটা, পরশে ও চিংড়ি সহ কাঁকড়া চাষ করা।

ii.বন্যাপ্রবণ এলাকায় পুকুরের পাড় উঁচু করে সমাজভিত্তিক মৎস্য পােনা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা এবং বন্যাকবলিত সময়ে ঐ পােনা পুকুরে মজুদ করা ।

iii.উপকূলীয় অঞলে বাঁধ ভেঙে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও জনদুর্ভোগের এলাকাগুলােতে পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ, খাঁচায় মাছ চাষ ও কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে সেই পানিকে কাজে লাগানাে।

iv.দিন দিন পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে পুকুরের পানি গরম হয়ে গেলে মাছকে গরম থেকে রক্ষা করার জন্য পুকুরে টোপাপানা রাখার ব্যবস্থা করা। এছাড়াও তাপমাত্রা সহনশীল মাছ যেমন মাগুর, রুই, শিং ইত্যাদি চাষ করা। জেলেদের শিখানাের জন্য মৎস্য চাষে, উল্লিখিত অভিযােজন কৌশল উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রভাব পড়েছে।

i.বায়ুমণ্ডলে দিন দিন কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বেড়ে গেছে বাতাসের ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। ফলে সমুদ্রের কোনাে অংশে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার মাছের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র বলে খ্যাত কিছু এলাকা মাছশূন্য হয়ে গেছে।

ii.বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে মাছ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞল থেকে মেরু অঞ্চলের সাগরের দিকে সরে গেছে। অনেক মাছ তার অভিপ্রায়ন পথ, প্রজননক্ষেত্র এবং বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করে ফেলেছে।

iii.কোরাল রীফ বা প্রবাল সামুদ্রিক মাছের উৎকৃষ্ট আবাসস্থল, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ বাস করে এবং প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে। পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঢেউয়ের তারতম্য, সমুদ্রের অম্লত্ব বৃদ্ধি, দূষণ, স্রোতের গতি পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে প্রবাল ধ্বংস হয়ে পড়েছে। এর ফলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য তথা মৎস্য বৈচিত্র্যের ওপর অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতিবেদনে সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাব বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।     

Leave a Comment