কৃষি উপকরণ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। কনক বড়ুয়া পশু পালনের জন্য চারণ ভূমি তৈরি করেছেন। বর্ষা মৌসুমে তার চারণ ভূমিতে ব্যাপক হারে ঘাস উৎপাদন হলেও শুষ্ক মৌসুমে ঘাসের চাহিদা মেটাতে পারেন না। এজন্য তার পশুগুলাের সারা বছরের প্রয়ােজনীয় খাদ্যের জন্য কাঁচা ঘাসের যথােপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেন। এরপর কনক বড়ুয়া তার প্রতিবেশী অনেককেই উক্ত পদ্ধতিতে গাে-খাদ্য সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করলেন।

ক. গাে-খাদ্য কাকে বলে?

খ. দানাজাতীয় খাদ্য কীভাবে পশুর উৎপাদন বাড়ায় ব্যাখ্যা করাে।

গ. কনক বড়ুয়ার গৃহীত পদ্ধতিটির তৈরি কৌশল ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. কনক বড়ুয়ার কার্যক্রমটি মূল্যায়ন করাে।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। গবাদিপশু যে সকল উপাদান খাদ্যরূপে গ্রহণ করে এবং পরিপাক, শােষণ ও বিপাকের মাধ্যমে দেহে শক্তি উৎপাদন করে তাকে গাে-খাদ্য বলে।

খ। যে খাদ্যে কম পরিমাণ আঁশ এবং বেশি পরিমাণে শক্তি পাওয়া যায় তাকে দানাজাতীয় খাদ্য বলে।

দুধাল বা মাংস উৎপাদনকারী গবাদিপশুর ক্ষেত্রে শুধু আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। কারণ দানাজাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থ থাকে যা গবাদিপশুর দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়ায়।

গ। উদ্দীপকে উল্লিখিত কনক বড়ুয়া কাঁচা ঘাস শুকিয়ে হে তৈরির মাধ্যমে যথােপযুক্ত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন।

তিনি হে তৈরির জন্য প্রথমে সঠিক পূর্ণতাপ্রাপ্ত গাছ (ফুল আসার আগে) কেটেছিলেন। কেননা গুণগত মানের হে তৈরির জন্য কম বয়সের গাছ বেশি উপযুক্ত। এরপর ঘাসগুলােকে সঠিকভাবে শুকিয়েছিলেন যাতে এটি মােন্ডমুক্ত ও অতিরিক্ত তাপমুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। অতিরিক্ত সূর্যের আলাে পরিহার করে ঘাসগুলােকে দ্রুত শুকিয়েছিলেন। ঘাসগুলােকে কেটে রৌদ্রে এমনভাবে উল্টাপাল্টা করে দিয়েছিলেন যেন এগুলাের পাতা ঝরে পড়ে না যায়। এরপর এগুলাে শুষ্ক অবস্থায় (১৫-২০% আর্দ্রতায়) সংরক্ষণ করেছিলেন। উল্লিখিত উপায়ে কনক বড়ুয়া কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করেছিলেন।

ঘ। কনক বড়ুয়া তার গবাদিপশুর সারাবছরের খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করেন।

খরা মৌসুমে মাটিতে রসের পরিমাণ কম থাকায় ঘাসের উৎপাদন কমে আসে। ফলে গবাদিপশুকে শুকনাে খড় জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে খাদ্যের অভাবে কনক বড়ুয়ার গবাদিপশুর মাংস ও দুধের উৎপাদন কমে যায় এবং পশুগুলাে দুর্বল হয়ে পড়ে। কনক বড়ুয়া তার চারণ ভূমিতে বর্ষা মৌসুমে উৎপাদিত অতিরিক্ত ঘাস হে তৈরির মাধ্যমে সংরক্ষণ করেছিলেন। এভাবে সবুজ ঘাস সংরক্ষণের মাধ্যমে সারাবছর গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মেটানাের পাশাপাশির পশুর জন্য প্রয়ােজনীয় প্রােটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা মেটানাে যায়। এতে করে গবাদিপশু পুষ্টিহীনতায় ভােগে না। মাংস ও দুধের উৎপাদনও হ্রাস পায় না। ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। যারা পশু পালনের সাথে জড়িত তাদের সবার উচিত এভাবে বর্ষা মৌসুমে উৎপাদিত অতিরিক্ত ঘাস সাইলেজ বা হে তৈরির মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, কনক বড়ুয়ার কার্যক্রমটি সঠিক ও সুদূরপ্রসারি ছিল।

প্রশ্ন ২। বকুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষক মকবুল স্যার মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতির বর্ণনা দেন। তিনি বলেন পুকুর প্রস্তুতির অন্যতম একটি ধাপ হলাে প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি বজায় রাখা। তিনি ক্লাসে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ণয়ের গ্লাস, পরীক্ষাটি করে দেখান।

ক. সাইলেজ কাকে বলে?

খ. পুকুরের পাড় ও তলদেশ মেরামত করা প্রয়োজন কেন?

গ. শিক্ষকের দেখানাে পরীক্ষাটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উক্ত পরীক্ষাটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করাে।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। রসালাে অবস্থায় ফুল আসার সময় সবুজ ও সতেজ ঘাসকে কেটে টুকরা করে সেগুলাে বায়ুরােধী অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে সাইলেজ বলে।

খ। মাছ চাষে কাঙ্ক্ষিত ফলন লাভের জন্য পুকুরের পাড় ও তলদেশ মেরামত করা প্রয়ােজন।

পুকুরের পাড় ভাঙা থাকলে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বা বর্ষাকালে বন্যায় মাছ ভেসে যেতে পারে বা রাক্ষুসে মাছ ঢুকতে পারে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকলে পুকুরে সূর্যের আলাে পড়তে পারে না এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হতে পারে না। তাই পাড় মেরামত করতে হবে এবং উঁচু করে বাঁধতে হবে। আবার, পুকুরের তলায় কাদা জমলে অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। সম্ভব হলে পুকুরের তলায় চাষ দিতে হবে। এতে করে পুকুরের তলা থেকে বিষাক্ত গ্যাস; ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও পােকামাকড় দূর হবে।

গ। উদ্দীপকে কৃষি শিক্ষক মকবুল স্যার তার ক্লাসে মাছ চাষের পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য নির্ণয়ের গ্লাস পরীক্ষা করে দেখান।

এ পরীক্ষাটি করার জন্য একটি সূর্যালােকিত দিনকে বেছে নিতে হবে। সূর্যালােকিত দিনে পুকুর পাড়ে গিয়ে একটি স্বচ্ছ কাচের গ্লাসে পুকুরের পানি নিয়ে সূর্যের আলাের দিকে ধরতে হবে। যদি দেখা যায় গ্লাসের পানির রং সবুজ বা বাদামি সবুজ এবং পানিতে অসংখ্য সূক্ষ্মণ ও ছােট পােকার মতাে আছে তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরিমাণমতাে তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় খাদ্য তৈরি হয়নি তবে আরাে ২-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

ঘ। উদ্দীপকে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য গ্লাস পরীক্ষা দেখানাে হয়েছে।

পুকুরে পােনা মজুদের পূর্বেই সার প্রয়ােগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এ ধরনের কয়েকটি পরীক্ষার মধ্যে গ্লাস পরীক্ষা অন্যতম। মাছ চাষে সফলতা লাভের জন্য সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়ােজন। শুধু সঠিকভাবে পুকুর খনন ও অন্যান্য গুণাগুণ যথাযথভাবে রক্ষা করে মাছ চাষে সফল হওয়া সম্ভব নয়। পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা মাছ চাষে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। চিত্রের গ্লাস পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে কিনা। যদি এ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য পুকুরে নেই, তবে সার প্রয়ােগের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদিত হয়ে পুকুরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

সুতরাং, পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখার ক্ষেত্রে পরীক্ষাটি সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা রাখে। তাই এ পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্ন ৩। ফুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণির কাজের অংশ হিসেবে হাঁস-মুরগির আবাসন তৈরির পদ্ধতি সরেজমিনে দেখল। পরে তারা এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখে ক্লাসে উপস্থাপন করল।

ক. হ্যাচারি ঘর কী?

খ. রােগিং করা হয় কেন?

গ. শিক্ষার্থীদের দেখা আবাসন তৈরি পদ্ধতির ক্ষেত্রে যে উদ্দেশ্যগুলাে সামনে রাখতে হয় তা ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “উত আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়ােজন” – বিশ্লেষণ করাে।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। হাঁস-মুরগির হ্যাচারি খামারের অন্তর্গত যে ঘরে বাচ্চা ফোটে তাকে হ্যাচারি ঘর বলা হয়।

খ। বীজ বপনের সময় যতই বিশুদ্ধ বীজ ব্যবহার করা হােক না কেন জমিতে কিছু কিছু অন্য জাতের উদ্ভিদ ও আগাছা দেখা যাবে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত উদ্ভিদ তুলে ফেলার জন্য রােগিং করতে হয়। বীজের বিশুদ্ধতা অর্জনের জন্য তিন পর্যায়ে রােগিং করা হয়ঃ

  1. i) ফুল আসার আগে
  2. ii) ফুল আসার সময়
  3. ii) পরিপক পর্যায়ে

গ। আধুনিক খামার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের দেখা হাঁস-মুরগির জন্য আবাসন তৈরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাঁস-মুরগির জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। যেখানে নিবিড়ভাবে যত্ন নেওয়া যেতে পারে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ভালাে হয়। খারাপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য ভালাে আবাসনের প্রয়ােজন। চোরের হাত থেকে এবং বন্য পশু-পাখির আক্রমণ থেকে যেন রক্ষা করা যায় এমন ব্যবস্থা করতে হবে। হাঁস-মুরগির আবাসন যেন সহজেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ডিম সংগ্রহ করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধিতে আবাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ। আধুনিক খামার পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য অনেক সতর্কতা, অবলম্বন করতে হয়।

হাঁস-মুরগির আবাসস্থল ভালাে না হলে হাঁস-মুরগির রােগবালাই নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং মাংস ও ডিমের উৎপাদনও হ্রাস পায়। হাঁস-মুরগির বাসস্থান বা ঘর এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে যেন উঁচু ও বন্যামুক্ত এলাকা হয়। বাজার, মহাসড়ক ও ‘বসতি থেকে দূরে হয়। ডিম ও মাংস বাজারজাত করার সুবিধা থাকে। ভালাে যাতায়াত ব্যবস্থা থাকে। বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সুবিধা থাকে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সুবিধা সম্পন্ন স্থান হবে। ভবিষ্যতে খামার বড় করার সুযােগ থাকতে হবে। হাঁস-মুরগির আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে উল্লিখিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

প্রশ্ন ৪। শিক্ষার্থীরা একটি বিশেষ ব্যবস্থায় রসাল অবস্থায় ফুল আসার সময় সবুজ ও সতেজ ঘাসকে টুকরা করে সেগুলােকে বায়ুরােধী অবস্থায় সংরক্ষণ করল এবং এ কাজের ধাপগুলাে ক্লাসে লিখে জমা দিল।

ক. আঁশ জাতীয় খাদ্য কাকে বলে?

খ. লিগিউম জাতের ঘাসে পুষ্টিমান বেশি কেন?

গ. উক্ত পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণের সুবিধা উল্লেখ করাে।

ঘ. উক্ত পদ্ধতিতে ভুট্টা সংরক্ষণের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করাে।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। যেসব খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকে এবং কম পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়, তাকে আঁশ জাতীয় খাদ্য বলে।

খ। লিগিউম জাতীয় ঘাসে রাফেজ জাতীয় ঘাসের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রােটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান থাকে। এর কারণ লিগিউম গাছের মূলে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন সরাসরি ধরে শিকড়ে নডিউল তৈরি করে যা প্রােটিন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই লিগিউম জাতের ঘাসের মধ্যে পুষ্টিমান বেশি থাকে।

গ| উক্ত পদ্ধতিতে ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতিটি হলাে সাইলেজ তৈরি।

রসালাে অবস্থায় ফুল আসার সময় সবুজ ও সতেজ ঘাসকে কেটে টুকরাে করে সেগুলাে বায়ুরােধী অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে সাইলেজ বলে। সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধাগুলাে নিচে উল্লেখ করা হলাে—

i.দীর্ঘদিন পুষ্টিমান অক্ষুন্ন থাকে।

ii.সঠিক সময়ে ঘাস কেটে সেগুলাে কার্যকরী খাবার হিসেবে গবাদিপশুকে সরবরাহ করা যায়।

iii.এতে হে-এর তুলনায় কম পুষ্টিমান অপচয় হয়।

iv.সাইলেজ তৈরির ফলে ঘাসের জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় ।

v.সাইলেজ ঠাণ্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়াতেও তৈরি করা যায়।

সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে গবাদিপশুর জন্য সারাবছর ঘাস সংরক্ষণ করা যায়।

ঘ। উক্ত পদ্ধতি তথা সাইলেজ তৈরি করে ভুট্টা সংরক্ষণ করা যায়ভুট্টার দানার গােড়ায় কালাে দাগ আসার সাথে সাথে সাইলেজ প্রস্তুতের জন্য ডুটা কাটার উপযােগী হয়। এ সময়ে ভুট্টা গাহের শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ ৩০-৩৫% হয়। ভুট্টা গাছগুলােকে ভূমি থেকে ১০-১২ সেমি উঁচুতে কাটা হয়। এরপর এগুলােকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। টুকরা করা ঘাস গর্তে বায়ুরােধী অবস্থায় রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বর্তমানে গর্তের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে তৈরি বড় আকারের ব্যাগে সংরক্ষণ করা যায়। টুকরা করা গাছগুলাে ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে বাতাস চলাচল করতে না পারে।

এভাবে ভুট্টা সংরক্ষণ করলে কোনাে পুষ্টি উপাদান না হারিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়ােজন অনুযায়ী যেকোনাে সময়ে পশুকে সরবরাহ করা যায়।

 

প্রশ্ন ৫। ফসল উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলাে ভালাে বীজ। বংশবিস্তারের জন্য আমরা দুই ধরনের বীজ যেমন- উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও কৃষিতাত্ত্বিক বীজ ব্যবহার করি। ফসল উৎপাদনে দুই ধরনের বীজের গুরুত্ব রয়েছে। কৃষিবিদদের মতে, “সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ কৃষিতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভুক্ত।

ক. মৌসুমি পুকুর কাকে বলে?

খ. বীজের অঙ্কুরােদগম পরীক্ষা করতে হয় কেন?

গ. উদ্দীপকের আলােকে কৃষিবিদদের মতামতটি ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দুই ধরনের বীজের তুলনামূলক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করাে।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক। যে পুকুরে বহরে একটি নির্দিষ্ট সময় (৩-৮ মাস) পানি থাকে তাকে মৌসুমী পুকুর বলে।

খ। বীজ থেকে চারা উৎপাদনের প্রক্রিয়াকেই বলে অঙ্কুরােদগম। আর নমুনা বীজের শতকরা কতটি বীজ গজায় তা বের করাই হলাে বীজের অঙ্কুরােদগম পরীক্ষা। অঙ্কুরােদগম পরীক্ষার মাধ্যমে ভালাে মানের বীজ বাছাই করা সম্ভব হয়। ভালাে বীজের অঙ্কুরােদগম ক্ষমতা থাকে ৮০% এর উপরে যা এই পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও অঙ্কুরােদগম পরীক্ষায় গজানাে চারা দেখে সেটি সুস্থ, সতেজ ও মিশ্রণহীন কিনা তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

গ। উদ্দীপকে কৃষিবিদদের মতামতটি হলাে- “সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ কৃষিতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভূক্ত।”

বীজ উদ্ভিদের বংশবিস্তারের প্রধান মাধ্যম। সাধারণভাবে উদ্ভিদ জন্মানাের জন্য যে অংশ ব্যবহার করা হয় তাকে বীজ বলে। উদ্ভিদতত্ত্ব অনুসারে, উদ্ভিদের নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে। এ ধরনের বীজকে ফসল বীজ বা প্রকৃত বীজ বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজও বলে। যেমন— ধান, গম, সরিষা, তিল, শিম, বরবটি, টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, জিরা, ধৈঞা, জাম, কাঁঠাল ইত্যাদি। কৃষিতত্ত্ব অনুসারে, উদ্ভিদের যেকোনাে অংশ (মূল, পাতা, কাণ্ড, কুঁড়ি, শাখা) যা উপযুক্ত পরিবেশে একই জাতের নতুন উদ্ভিদ জন্ম দিতে পারে তাকে বংশ বিস্তারক বা, কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বা অঙ্গজ বীজ বলে। যেমন- আমের কলম, আলুর কাণ্ড, মিষ্টি আলুর লতা, আখের কাণ্ড, পাথরকুচি গাছের পাতা, কাকরােলের মূল, গােলাপের ডাল ও কুঁড়ি, আনারসের মুকুট, কলাগাছের সাকার আদা, হলুদ, রসুন, কচু ও সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ। তাই সকল উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ কৃষিতাত্ত্বিক বীজের অন্তর্ভূক্ত।

অতএব বলা যায়, কৃষিবিদদের মতামতটি যথার্থ ছিল।

ঘ। উদ্দীপকে উল্লিখিত দুই ধরনের বীজ হলাে- উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ ও কৃষিতাত্ত্বিক বীজ। নিচে এই দুই ধরনের বীজের তুলনামূলক গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলােঃ

ফসল বীজ বা উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ ফসল উৎপাদনের মৌলিক উপকরণ। যেসব ফসল কেবল বীজের মাধ্যমেই ফলানাে সম্ভব সে ক্ষেত্রে উদ্ভিদের বংশরক্ষার্থে ফসল বীজের বিকল্প নেই। আবার, অনেক ফসলের বংশবিস্তার বীজ দ্বারা সম্ভব হয়না বা হলেও দীর্ঘসময়ের ব্যবধানে ফলন পাওয়া যায়।

উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজের মাধ্যমে উন্নত জাতের ফসল ফলানাে সম্ভব, ফলে উদ্ভিদের বংশধারা টিকে থাকে। কোনাে কোনাে বীজ ঔষধ ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, কৃষিতাত্ত্বিক বীজে উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, শাখা, পাতা, শিকড়, কুঁড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় বলে মাতৃগুণাগুণ বজায় থাকে। একই গাহে একাধিক জাতের সংযােজন ঘটানাে যায়। উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ রােগ, পােকামাকড় ও আগাছা বিস্তার রােধ করে এবং মানুষসহ পশুপাখির খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

অপরদিকে কৃষিতাত্ত্বিক বীজের মাধ্যমে বীজবাহিত রােগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, ফসল উৎপাদনে কৃষিতাত্ত্বিক ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।      

Leave a Comment