প্রশ্ন ১। সুমন তার পরিবারের সাথে সাভারে বেড়াতে গিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধ দেখে অবাক হয়। সে মায়ের কাছে এ স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে জানতে চায়। মা তাকে বলে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিসৌধ তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ক. উপন্যসের আখ্যানভাগ কী?
খ. আলাে-আঁধার বুধার কাছে সমান কেন?
গ. উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ ‘কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের কোন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ ও ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাস উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল”- বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক। উপন্যাসের আখ্যানভাগ হচ্ছে- Plot বা কাহিনি-সমগ্র।
খ। বুধার জীবনাচরণ ও চলাফেরায় ভয়শূন্য এবং কোনাে সময়-অসময় নেই বলে তার কাছে আলাে-আঁধার সবই সমান।
বাবা-মা, ভাই-বােনদের হারিয়ে বুধা এই পৃথিবীতে বড় একা। সে ছন্নছাড়া, উদ্দেশ্যহীন জীবনযাপন করে। ঘুরতে ঘুরতে যে কোথায় যায় সেই হিসাব সে রাখে না। ওর কাছে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব সমান। মনে করে যেদিক দু চোখ যায় সেদিকেই ওর জন্য রাস্তা খােলা। হাটে মাঠে ঘুরে বেড়ায়। খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটায়। চলাফেরায় সে ভয়শূন্য। রাত পােহালেই দিনের আলাে, সূর্য ডুবলেই আঁধার। এ জন্য বুধার কাছে আলাে-আঁধার সবই সমান।
গ। উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের মুক্তিযুদ্ধ ও শহিদদের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহংকার, বাংলার ইতিহাসের এক গৌরবমণ্ডিত অধ্যায়। ১৯৭১ সালে বাংলার মুক্তিপাগল জনতা শত্রুধ্বংসের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এদেশের সাহসী সন্তানরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে স্বদেশকে শত্রুমুক্ত করেছে।
উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতীক। এটি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসের স্মারক। এর মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের দেশপ্রেমও প্রতিফলিত হয়। এই স্মৃতিসৌধ ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের মুক্তিযুদ্ধ ও শহিদদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়। কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা পাওয়া যায়। রাজাকার-শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, মিলিটারি ক্যাম্পে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা ও ব্যাংকারে মাইন পুঁতে মিলিটারি ক্যাম্প উড়িয়ে দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের অংশ। বুধা এসব কাজের কোনােটা করেছে নিজের বুদ্ধিতে আর কোনােটা করেছে মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার শাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে। বুধার গ্রামের অনেকেই পাকিস্তানিদের গুলিতে শহিদ হয়েছেন। তাদের এসব স্মৃতিই বহন করে চলেছে উদ্দীপকের স্মৃতিসৗধ।
ঘ। “উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ’ ও ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাস উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল”- মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। তাদের সেই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ভয়ে বাঙালি পিছপা না হয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে তাদের মােকাবিলা করে। অবশেষে তাদের পরাজিত করে অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করে।
উদ্দীপকের সুমন মায়ের সঙ্গে সাভারে গিয়ে স্মৃতিসৌধ দেখে অবাক হয়। স্মৃতিসৌধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তার মা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণে এই স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিসৌধ তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রামাণ্য দলিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। এক সাহসী কিশাের বুধা। গ্রামে মিলিটারি আসার পর থেকে তার ও মুক্তিযােদ্ধা শাহাবুদ্দিন, আলি ও মিঠুর কর্মকাণ্ড, আহাদ মুন্সি ও রাজাকারদের তৎপরতা, গ্রামবাসীর মৃত্যু, ধ্বংসলীলা, গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানুষের আত্মরক্ষার চেষ্টা, মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ, বুধাদের প্রতিশােধ গ্রহণ সবই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করে।
কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। আর সাভারের স্মৃতিসৌধ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ এবং ইতিহাস বহন করেছে। উভয় জায়গায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযােদ্ধাদের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। এসব দিক বিচারে উদ্দীপকের স্মৃতিসৌধ ও কাকতাড়ুয়া” উপন্যাস উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল।
প্রশ্ন ২। বিদেশি সেনার কামানে বুলেটে বিদ্ধ
নারী শিশু আর যুবক জোয়ান-বৃদ্ধ
শত্রু সেনারা হত্যার অভিযানে
মুক্তিবাহিনী প্রতিরােধ উথানে।
ক. ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের মিঠুর ভাইয়ের নাম কী?
খ. এমন খুশি আমার জীবনে আর আসেনি’- বুধার এ উক্তির কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে প্রথম দুই চরণে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বিষয়বস্তুর খণ্ডিত অংশমাত্র- মন্তব্যটির সপক্ষে তােমার যুক্তি দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক। কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের মিঠুর ভাইয়ের নাম মধু।
খ। “এমন খুশি আমার জীবনে আর আসেনি’- বুধার এ উক্তির কারণ উদ্দেশ্য সফলে তার উচ্ছ্বাস ও উৎফুল্লতা।
বুধা বাবা-মা, ভাই-বােন হারানাে আত্মভােলা এক কিশাের। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের অত্যাচার এবং রাজাকারদের বিশ্বাসঘাতকতা তাকে প্রতিশােধপরায়ণ করে তােলে। সে আলি, মিঠুদের পরিকল্পনা মতাে রাজাকার কমান্ডারের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আলি, মিঠুরা বুধাকে বাহবা দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়। বুধা তখন হাসতে থাকে। তার সেই হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করলে জানায় যে, সে খুশিতে হাসে। বুধার মতে এমন খুশি তার জীবনে আর আসেনি।
গ। উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের পাকিস্তানি মিলিটারির বুধার গ্রামের বাজার আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞের দিকটি ফুটে উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা নারী-পুরুষ, শিশুবৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়নি। তারা সারা দেশ আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণে পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন এবং বাঙালির অসীম সাহসিকতার দিকটি ফুটে উঠেছে। সেখানে বিদেশি সেনাদের কামানে-বুলেটে ছিন্নভিন্ন বাংলার নারী-শিশু, যুবক-বৃদ্ধ যা ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের একটি দিক। উপন্যাসেও পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা বুধার গ্রামে এসে নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ঘর-বাড়ি বাজার। তাই আমরা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের প্রথম দুই চরণে আলােচ্য উপন্যাসের পাকিস্তানিদের আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞের দিকটি ফুটে উঠেছে।
ঘ। উদ্দীপকটি ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বিষয়বস্তুর খণ্ডিত অংশমাত্র- মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অন্যায়ভাবে বাঙালিদের ওপর হামলা চালায়। তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা শুরু করে। তাদের সেই অন্যায়ের প্রতিবাদে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে শত্রুকে পরাজিত করে বাঙালি তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।
উদ্দীপকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ এবং তাদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিরােধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। শত্রুসেনার হত্যার অভিযানে মুক্তিবাহিনীর অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের দিকও উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়টি কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসেও বর্ণিত হয়েছে। এই বিষয়টি ছাড়াও উপন্যাসে আরও কিছু বিষয় রয়েছে। উদ্দীপকের বিষয়টি উপন্যাসে বর্ণিত অনেক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি।
‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বুধা নামের এক কিশােরের স্বদেশপ্রেম প্রতিফলিত হয়েছে। এই উপন্যাসে বুধার বাবা-মা, ভাই-বােন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তখন থেকেই সে একা একা বেড়ে ওঠে। তার ছন্নছাড়া জীবন, সাহসী হয়ে ওঠা, রাজাকারের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, বাংলার গ্রামে-গঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানাে, মুক্তিবাহিনীর গ্রামে প্রবেশ, দুধাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরােধ গড়ে তােলা ইত্যাদি বিষয় উপন্যাসে বর্ণিত হয়েছে। এই বিষয়গুলাে উদ্দীপকে সম্পূর্ণরূপে উপস্থাপিত হয়নি। এই দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যৌক্তিক।
প্রশ্ন ৩।
(i)স্বাধীনতা তােমার জন্য উজাড় হয়েছে কত গ্রাম-শহর বস্তি।
হারিয়েছি কত মায়ের বােনের সম্প্রম,
কেড়ে নিয়েছে হায়নারা কত তাজা প্রাণ
শিশু-কিশাের-যুবা আর বৃদ্ধের।
(ii)যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ
আর যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ।
ক. বুধা দুঃখকে কী ভাবে?
খ. “দিন যাপনে ওর কোনাে কষ্ট নেই।”- কথাটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথমাংশে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশের ভাবধারা কাকতাড়ুয়া উপন্যাসের বুধার চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক। বুধা দুঃখকে হিংস্র শকুন ভাবে।
খ। বুধা স্বাধীনভাবে যেখানে খুশি সেখানে ইচ্ছেমতাে ঘুরে বেড়ায় বলে তার দিন যাপনে কোনাে কষ্ট নেই। কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বাবা-মা, ভাই-বােনদের হারানাের পর বুধা একা হয়ে পড়ে। বিশ্বসংসারে তার কোনােকিছুতেই যেন কোনাে বাধা নেই। তার কাছে রাত আর দিন সবই সমান। কারণ সে যেখানে ইচ্ছে যায়, যা ইচ্ছে তাই করে। বুধা মনে করে ওর জন্য সব রাস্তা খােলা। তার আনন্দ-কান্না সব যেন এক। এভাবে মুক্ত দিন যাপনে ওর কোনাে কষ্ট নেই।
গ। উদ্দীপকের প্রথমাংশে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়নি। বর্বর হানাদার বাহিনী এদেশের সাধারণ মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
উদ্দীপক (i)-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তানি সেনারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করেছে। হরণ করেছে মা-বোনর সম্রম। কেড়ে নিয়েছে লাখ লাখ তাজা প্রাণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এমন নৃশংসতার চিত্র ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসেও দৃশ্যমান। পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশে যে নির্মম ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় তা ঔপন্যাসিক নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। বুধাদের গ্রামেও মিলিটারি ও রাজাকারুরা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। গ্রামে আগুন দেয়, নির্মমভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করে। উপন্যাসের এই নৃশংসতার দিকটিই উদ্দীপকের প্রথমাংশে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ। উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশের ভাবধারা কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধার চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।- মন্তব্যটি যথার্থ।
দেশকে স্বাধীন করার জন্য স্বাধীনতাকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তারা বীরবিক্রমে শত্রুর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনে বাংলার স্বাধীনতা।
উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশে ভয় ভুলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়ার কথা বলা হয়েছে কারণ ভয় পেলে কোনাে মহৎ কাজ ও অধিকার আদায় করা যায় না। শত্রুপক্ষ তােমাকে কখনাে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না। আর যদি রুখে দাঁড়াও তবে দেশকে স্বাধীন করতে পারবে। এই চেতনাটি যেন ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধার চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কেননা বুধা কিশাের হলেও অসীম সাহসিকতায় যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছে।
‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা এক এতিম কিশাের। সে কিশাের হলেও অসীম সাহস আর মানবিক গুণাবলির অধিকারী। দেশকে ভালােবাসে বলে সে মুক্তিযােদ্ধা হয়ে ওঠে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আর রাজাকার কমান্ডারের বাড়ি সে পুড়িয়ে দেয়। মিলিটারির বাঙ্কারে মাইন পুঁতে আসে। সে ভয় পায় না, অসীম সাহস নিয়ে এগিয়ে যায়। দেশকে শত্রুমুক্ত করেই সে থামতে চায়। এই বুধার চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উদ্দীপকের দ্বিতীয়াংশে।
প্রশ্ন ৪। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হােসেন। মা-বাবা ও দুই ভাইবােন মিলে ভালােই যাচ্ছিল দিন। বাবা ঢাকায় একটা কোম্পানির চাকরি করে। তাতে তাদের সংসার ও পড়ালেখার খরচ ভালােই চলে। একদিন সবাই মিলে বেড়াতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা ও ছােট বােনকে হারায় সে। সকলকে হারিয়ে পাগলের মতাে হয়ে যায় হােসেন। অনেকে তাকে কাজের বিনিময়ে রেখে দিতে চায়। কিন্তু সে রাজি হয় না। শােককে সামলে লেখাপড়ার ফাঁকে অল্প রােজগারে কাজ করে নিজের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে। এভাবে সে নিজের প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যায়।
ক. শাহাবুদ্দিন কার ছবি আঁকবে?
খ. “এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ।”- বাক্যটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের হােসেনের নিঃস্ব হওয়ার দিকটি ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের কোন ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হােসেনের চেয়ে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা চরিত্রটিই অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক। শাহাবুদ্দিন বুধার সাহসী ও হাস্যোজ্জ্বল ছবি আঁকবে।
খ। “এবার মৃত্যুর উৎপাত শুরু করেছে ভিন্ন রকমের মানুষ।”- বাক্যটি দ্বারা পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি বােঝানাে হয়েছে।
কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে গ্রামে কলেরার আক্রমণে বুধার মা-বাবা, ভাই-বােন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সেই সময় যে মৃত্যু বুধা দেখেছিল তা ছিল একটি বিশেষ রােগের কারণে। আর যুদ্ধের সময় সে যে মৃত্যু দেখছে তা ভিন্ন রকম মানুষের নির্মমতায় শুরু হয়েছে। বুধার চিরচেনা পথ ধরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে জিপে করে পাকিস্তানি সেনারা তার গ্রামে প্রবেশ করে, বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং অনেক মানুষকে হত্যা করতে থাকে। তাদের এই নৃশংস হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা প্রসঙ্গে বুধা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে।
গ। উদ্দীপকের হােসেনের নিঃস্ব হওয়ার দিকটি কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধার বাবা-মা-ভাই-বােনকে হারিয়ে অনাথ হয়ে যাওয়ার ঘটনার সাঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রত্যেক সন্তানই মা-বাবাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। মা-বাবা সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। পিতৃমাতৃহীন সন্তানের ব্যথা-যন্ত্রণা অবর্ণনীয়। সে সবার কাছে একটু স্নেহ-মমতা আশা করে। অসহায় জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করে।
উদ্দীপকে সড়ক দুর্ঘটনায় পিতৃমাতৃহীন এক কিশােরের কষ্ট-যন্ত্রণার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। কিশাের হােসেন মা-বাবা ও ছােট বােনকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। অনেকে কাজের বিনিময়ে তাকে রাখতে চায়। কিন্তু সে রাজি হয় না। নিজে আয়-রােজগার করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে। উদ্দীপকের হােসেনের এই অসহায় অবস্থা কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধার অসহায় অবস্থার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। কলেরায় আক্রান্ত হয়ে বুধার বাবা-মা, ভাই-বােন সবার মৃত্যু হলে সে চাচার বাড়িতে আশ্রয় লাভ করে। সেখানে তার চাচি তাকে আয়-রােজগার করে নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে বলে। তার খাওয়া-পরা-আশ্রয়ের ভার থেকে চাচিকে মুক্তি দিতে বলে। বুধাও তখন অসহায় বােধ করে। এভাবে বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঘ। উদ্দীপকের হােসেনের চেয়ে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা চরিত্রটিই অধিক তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যটি যথার্থ।
অনেক সময় আমরা বাহ্যিক আচরণ দেখে ভুল মনে করি। কারণ তারা হয়তাে আমাদের মতাে করে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। কিন্তু তাই বলে তাদেরকে ভুল বােঝার কোনাে অবকাশ নেই। সব মানুষের মধ্যকার অনুভূতি একই রকম, শুধু প্রকাশভঙ্গি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হােসেন দুর্ঘটনায় বাবা-মা ও ভাইবােনকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। পথে পথে পাগলের মতাে ঘুরে বেড়ায়। কেউ সাহায্য করতে চাইলে সেটা না নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াত চেয়েছে। হােসেন চরিত্রের এদিকটির সঙ্গে বুধা চরিত্রের সাদৃশ্য থাকলেও বুধা চরিত্রটি অধিক সক্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে পাকিস্তানি সেনারা যখন এ দেশে এসে মানুষের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করে, তখন বুধা এসব দেখে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হয়। শুধু তাই নয়, সে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কেউ তাকে শত্রু চিনিয়ে না দিলেও সে ঠিকই শত্রু চিনে নিয়েছে। একা তাদেরকে ধ্বংস করার প্রয়াস চালিয়েছে। সে একা আহাদ মুন্সির বাড়িতে আগুন দিয়েছে, ক্যাম্পে রেকি করতে পাঠালে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে রেকি করে এবং পরবর্তী সময়ে মাইন পুঁতে আসে। বুধা তার ক্রোধ ভেতরে যেমন পুষে রেখেছে তেমনই এর প্রকাশও ঘটিয়েছে।
উদ্দীপকের হােসেন চরিত্রে কোন প্রতিবাদী চেতনা লক্ষ করা যায় না। অন্যদিকে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেই থেমে থাকেনি। তাদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশােধ নিতে এগিয়ে গেছে, গােপনে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে যােগ দিয়ে শত্রুদের বাঙ্কারে মাইন পুঁতে তাদের ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়েছে। উদ্দীপকের হােসেনের মাঝে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখ যায় না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের হােসেনের চেয়ে কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা চরিত্র অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রশ্ন ৫।
উদ্দীপক অংশ-১: বাবা-মাকে কবে হারিয়েছে জানে না শফি। দূরসম্পর্কের কিছু আত্মীয়ও হয়তাে আছে বা নেই। তাই তাে তার কোনাে বন্ধন নেই, নেই কোনাে বাধা। মাঠ-ঘাট, বন-বাদাড়, হাট-বাজার এই সবই যেন তার। যখন যা পায় তা খেয়েই কাটিয়ে দেয় সারাদিন।
উদ্দীপক অংশ-২: শফির কেউ নেই কিন্তু সে যেন সবার। আজিজ চাচার বাজারের ব্যাগ টানা, সাবিত্রী মাসির ফুল বাগানে একটু পানি দেওয়া, আমেনা চাচির জন্য একটু বাজার করে আনা সবার কাজ যেমন হাসি মুখে করে, সবাই ভালােও বাসে তাকে।
ক. ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বর্ণিত মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার কে?
খ. আমরা তিনজন নই, একজন।’- কথাটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
গ. উদ্দীপক-২ অংশে শফির মধ্যে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক-১ অংশের শফির মধ্যে যে বুধাকে পাই তার স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক। ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বর্ণিত মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হলেন শাহাবুদ্দিন।
খ। ‘আমরা তিনজন নই, একজন।’- কথাটি দ্বারা ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে বােঝানাে হয়েছে।
বুধাদের গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা হানা দিলে প্রায় সবাই গ্রাম ছেড়ে পালায়। আহাদ মুন্সির মতাে কিছু লােক শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়ে রাজাকার হয়। কিন্তু সাহসী যুবক আলি, মিঠু, শাহাবুদ্দিন, বুধা গ্রামেই থেকে যায় এবং গােপনে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। এদের মধ্যে বুধা আত্মভােলা কিশাের। সে মিঠু ও আলিকে বলে তাদের দুজনকে মনে হচ্ছে একজন। বুধার ঐক্যপূর্ণ মনােভাব বুঝতে পেরে তারা বলে দুজন মিলে একজন নই, আমরা তিনজন মিলে একজন। এর মাধ্যমে মুক্তিযােদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে বােঝানাে হয়েছে।
গ৷ উদ্দীপক-২ অংশে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধা চরিত্রের পরােপকারী ও মানবিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
পৃথিবীতে একেকজন মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একেক রকম। কেউ অন্যকে উপকার করে আনন্দ পায়, কেউবা অন্যের কাজ এগিয়ে দিয়ে তৃপ্তি পেতে চায়। তাদের মতাে নিঃস্বার্থ মানুষের জন্যই সমাজ এখনও বসবাসযােগ্য।
উদ্দীপকের শফির কেউ নেই। কিন্তু সে সবার। অন্যের বাজারের ব্যাগ আনা, ফুলের বাগানে পানি দেওয়া, কারও বাজার করা ইত্যাদির মাধ্যমে অপরের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধাও এমন পরােপকারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। বুধাও অন্যের কাজ, করে তৃপ্তি পায়। ধান কাটা, গােবর কুড়ানাে, বাজার করা, মােট বইয়ে দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সে গ্রামের মানুষকে সহযােগিতা করে। নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কাজ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে বুধা চরিত্রের পরােপকারী দিকটি উদ্দীপকের শফি চরিত্রে প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ। উদ্দীপক-১ অংশের শফির মধ্যে যে বুধাকে পাই তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে সেখানে ঘর-সংস্ৰহীন এক এতিম কিশােরের সন্ধান পাওয়া যায়।
আমাদের সমাজে এমন অনেকে আছে যাদের আপন বলতে কেউ নেই। যারা সব হারিয়ে উদাসীনতায় নিমজ্জিত হয়েছে। তারা জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে না পেরে ছন্নছাড়ার মতাে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কোনাে বন্ধন নেই।
উদ্দীপকের শফির মধ্যে এক ছন্নছাড়া কিশােরের সন্ধান পাওয়া যায়। তার কোনাে বন্ধন নেই, কোনাে বাধা নেই। মাঠ-ঘাটে, বনে-বাদাড়ে সে নির্বিকার ঘুরে বেড়ায়। সমস্ত গ্রামটিই যেন তার আপন। কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের বুধাকেও এমনই জীবনযাপন করতে দেখা যায়। এক রাতের কলেরায় বাবা-মা, ভাই-বোেনদের হারিয়ে সে হয়ে পড়ে একা। দারিদ্রের কারণে চাচিও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। সে যা পায় তাই খায়। যেখানে ইচ্ছে হয় ঘুমায়। মূলত সে ছন্নছাড়া এক আত্মভােলা কিশোের ।
উদ্দীপকের ১-অংশে শফির মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় তার সঙ্গে বুধার ছন্নছাড়া ও উদাসী মনােভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। বুধা কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। সে ছেলেবেলায় বাবা-মা, ভাই-বােনকে হারিয়ে ঘর-সংসারহীন এক এতিম আত্মীয়-পরিজনহীন হয়ে গ্রামময় ঘুরে বেড়ায়। সবার কাজ করে দেয়। কেউ খেতে দিলে খায় নয়তাে শুধু পানি খেয়ে যেখানে সুযােগ পায় ঘুমিয়ে পড়ে। তাই বলা যায় যে, শফির মধ্যে যে বুধাকে পাওয়া যায় সে সংসার উদাসী এতিম কিশাের।