প্রশ্ন ১। গাঁয়ের মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকে কেন?
উত্তর : গাঁয়ের মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকে মিলিটারির ভয়ে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করে। তারা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, আগুন দিয়ে ঘরবড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে দেয়। বুধাদের গ্রামেও মিলিটারি ঢুকে পড়ে। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে সেই গ্রামে প্রবেশ করে। তারা গ্রামের ঘরবাড়ি-দোকানপাট জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে থাকে। তখন তাদের ভয়ে গ্রামের মানুষ জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে থাকে।
প্রশ্ন ২। যে মানুষের দৃষ্টিতে ভাষা নেই, বুধার মতে সে মানুষ কেন মানুষ নয়?
উত্তর : যে মানুষের দৃষ্টিতে ভাষা নেই বুধার মতে সে মানুষ নয়। সেই ব্যক্তি মানবতাহীন, নরাধম প্রাণী।
প্রশ্নোক্ত কথাটি বর্বর হানাদারদের নির্জীব চোখের দিকে তাকিয়ে ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বুধার অভিব্যক্তি। পাকিস্তানি সেনাদের চোখে চোখ পড়লে বুধা বুঝতে পারে ওদের দৃষ্টিতে ভাষা নেই। মানুষের মনের সঙ্গে দৃষ্টির যে গভীর যােগ সেটি ওদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। তাদের চোখে প্রাণ নেই, সাহস নেই। নির্মম হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠা এ রকম দৃষ্টিহীন মানুষকে বুধার মানুষ বলেই মনে হয় না।
প্রশ্ন ৩। গণকবর বলতে কী বােঝ?
উত্তর : গণকবর বলতে একসঙ্গে অনেক লােককে কবর দেওয়াকে বােঝায়।
১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশে নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায়। পরবর্তী নয় মাস তাদের এ হত্যাকাণ্ড ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তারা নিজেদের এ অপকর্ম ঢাকতে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে তাতে অনেক মানুষকে একসঙ্গে মাটিচাপা দিয়েছে। ধর্ম অনুসারে তাদেরকে আলাদা আলাদা কবর দেওয়া হয়নি। এ ধরনের মাটিচাপা দেওয়াই হলাে গণকবর।
প্রশ্ন ৪। বুধা শাহাবুদ্দিনকে স্যালুট করে কেন?
উত্তর : শাহাবুদ্দিন মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হওয়ায় বুধা তাকে স্যালুট করে।
১৯৭১ সালে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে। তাদের সম্মিলিত চেষ্টাতেই দেশ স্বাধীন হয়। ঢাকার আর্ট কলেজের ছাত্র শাহাবুদ্দিন দেশ ও দেশের প্রতি ভালােবাসায় মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। যােগ্যতাবলে তিনি মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার হন। বুধা দেশপ্রেমিক সাহসীদের শ্রদ্ধা করে। তাই সে শাহাবুদ্দিনকে স্যালুট করে।
প্রশ্ন ৫। বুধার কাছে দিন-রাত সবই সমান কেন?
উত্তর : কেউ না থাকায় বুধা নিজের ইচ্ছামতাে ঘুরে বেড়াতে পারে, যখন যা জোটে তা দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে, যখন যেখানে খুশি রাত কাটায়।
কোনােকিছুর পিছুটান নেই বলে বুধার কাছে দিন-রাত সবই সমান। মা-বাবা, ভাই-বােনদের হারিয়ে বুধা একা হয়ে যায়। তার খোঁজখবর নেওয়ারও কেউ নেই। দিনের আলাে কিংবা রাতের আঁধার দুটোই ওর কাছে সমান। কারণ দিনের বেলা যেমন ও খােলা আকাশের নিচে কাটায়, মাঠে-ঘাটে কোথাও যাওয়ার নিষেধ নেই তেমনই রাত হলেও ওর ঘুমানাের জায়গার অভাব নেই। এ রকম স্বাধীন জীবনে অভ্যস্ত হওয়ায় বুধার কাছে দিন-রাত সবই সমান। কারণ সে দিন-রাতের পার্থক্য না করে যেখানে সেখানে ঘুমাতে পারে। দোকানের বারান্দায়, হাটের চালায়, ঘাটের নৌকায়, গৃহস্থের উঠোনের খড়ের গাদায় সে ঘুমাতে পারে, তার কোনাে অসুবিধা হয় না।
প্রশ্ন ৬। বুধা অনেক রকম মানুষ হতে চায় কেন?
উত্তর : নিজের মধ্যে নিজেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখার অনুভূতি অনুভব করতে পারে বলেই বুধা অনেক রকম মানুষ হতে চায়।
পিতা-মাতা, ভাই-বােন সবাইকে হারিয়ে বুধা ছন্নছাড়া জীবনযাপন করতে থাকে। তবে সে উপকার ছাড়া কারও কোনাে অপকার করে না। সে সবাইকে ভালােবাসে। এ কারণে গ্রামের সবাই তাকেও ভালােবাসে। বুধা সবার কাজ করে দেয়। তাই খুশি হয়ে গ্রামের সবাই তাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে। এতে সে বিরক্ত না হয়ে খুশি হয়। নিজেকে তার ভিন্ন ভিন্ন মানুষ বলে মনে হয়। এজন্য সে চায় তাকে সবাই বিভিন্ন নামে ডাকুক, যাতে সে নিজের মধ্যে অনেক রকম মানুষ হওয়ার অনুভূতি লাভ করতে পারে।
প্রশ্ন ৭। লােহার টুপি ওদের মগজ খেয়েছে’-ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : লােহার টুপি ওদের মগজ খেয়েছে।’- উক্তিটিতে লেখিকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর লােহার টুপি পরে বর্বর হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে কিশাের বুধার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষকে নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তাদের মাথায় থাকত লােহার টুপি। মানুষ হত্যা, নির্যাতন, জ্বালাও-পােড়াও এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালানাের হীন স্কিাই যেন তাদের মাথায় ছিল। কোনাে মানবিক বােধ ছিল না। তাদের হীন চিন্তা ও বর্বরতার ক্ষেত্রে তাদের মাথা নষ্টের পেছনে ঐ লােহার টুপি অনেকাংশে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে বুধার মনে হয়েছে।
প্রশ্ন ৮। বুধা চাচির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে কেন?
উত্তর : বুধা চাচির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে তার মুখে মুক্তির কথা শুনে।
কল্পনার পঙ্খিরাজ ঘােড়ায় ভর করে বুধার দিন ভালােই কাটে। বুধা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চায়। সে নিজে কামাই করতে চায়। এটা শুনে তার চাচি খুব খুশি হয়। চাচির মুখে মুক্তির কথা শুনে বুধার খুব ভালাে লাগে। সে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। স্বাধীন মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর এ কারণেই বুধা চাচির প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৯। আলি কেন বলেছিল, “তােকে দেখেই বুঝতে পারছি দেশটা স্বাধীন হবে।”
উত্তর : দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য বুধার আগ্রহ ও সাহসিকতা দেখে আলি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিল।
বুধা মুক্তিযােদ্ধা আলির কাছ থেকে এক শিশি কেরেসিন তেল চেয়ে নিয়ে এসে রাজাকার আহাদ মুন্সির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তার সাহস ও কর্মদক্ষতায় আলি ও মিঠু মুগ্ধ হয়। তারা বুধাকে সাথে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে চায়। কিশাের বুধাও তাদের বলে তাদের ফিরে আসার জন্য সে অপেক্ষা করবে। যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকবে। তার সেই কথা শুনে আলি বলে, শাবাশ, তােকে দেখেই বুঝতে পারছি দেশটা স্বাধীন হবে।
প্রশ্ন ১০। মতিউর কেন বুধাকে কান ধরে টেনে তােলে?
উত্তর : মতিউর বুধাকে কান ধরে টেনে তুলেছিল তাদের বাড়িতে কে আগুন দিয়েছে তা জানার জন্য।
কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বুধা এক অনাথ কিশাের। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুধাদের গ্রামে ঢুকে ঘরবাড়ি, বাজারের দোকানপাট আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তাদের এ কাজে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান।আহাদ মুন্সি প্রকাশ্যে সহযােগিতা করে। কিশাের বুধা এর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য মুক্তিযােদ্ধা আলি ও মিঠুর কাছ থেকে কেরােসিন নিয়ে রাজাকার আহাদ মুন্সির বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এ কারণে আহাদ মুন্সির বড় ছেলে বুধার কাছে কথা জানতে চায় এবং বুধাকে কান ধরে টেনে তুলে শাসায় তাদের বাড়িতে কে আগুন দিয়েছে তা জানার জন্য। বুধা এর উত্তর না দিয়ে মতিউরের দিকে তাকিয়ে জিভ বের করে ভেংচি কাটে।
প্রশ্ন ১১। ছেলেটি চারদিকে ভােলা চোখে তাকাতে পারে কেন? – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ছেলেটি চারদিকে খােলা চোখে তাকাতে পারে। কারণ কোনাে ভয়েই তাকে চোখ বুজতে হয় না।
কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে বুধা এক অনাথ কিশাের। মহামারীতে বাবামা, ভাই-বােনদের হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। চাচার সংসারে সে অনাদরে, কষ্ট-যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। একা একা থাকার কারণে কেউ ওকে ভূতের গল্পও শােনায়নি। কেউ কখনাে জুজুর ভয়ও দেখায়নি। এ কারণে বুধা ভয়শূন্য হয়েই নিজের মতাে বড় হয়েছে। ভয়ের সঙ্গে বুধার কোনাে সাক্ষাৎ হয়নি। পৃথিবীর সমস্ত ভয় তার আড়ালেই থেকে যায়। তাই ও চারদিকে খােলা চোখে তাকাতে পারে। কোনাে ভয়ই ওর চোখ বন্ধ করতে পারে না। আর এ কারণেই কোনাে ডয়েই বুধা কাবু হয় না।
প্রশ্ন ১২। আমিও তােমার সঙ্গে যুদ্ধ করব। কে কেন বলে এই কথা?
উত্তর : আমিও তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করব। এ কথা কুন্তি বলেছে বুধাকে।
‘কাকতাড়ুয়া” উপন্যাসে বুধা একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযােদ্ধা। রাজাকারদের অমানবিক আচরণ তাকে প্রতিশােধপরায়ণ করে তােলে। সে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় রাজাকারদের বাড়ি। সে দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার শাহাবুদ্দিনের দলে যােগ দিয়ে গেরিলা যুদ্ধেও অংশ নেয়। মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডারের নির্দেশে বুধা মিলিটারি ক্যাম্পে যায়। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এসব কাজের জন্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে কুন্তির সঙ্গে দেখা করতে পারে। একদিন শাপলা তুলে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে কুন্তির সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় বুধার । বহুদিন তাদের বাড়িতে না যাওয়ার অভিযােগ করলে বুধা তাকে বলে যে, তার অনেক কাজ, তাই সময় পায় না। বুধার এ কথার উত্তরে কুন্তি বলে, আমি জানি তােমার অনেক কাজ। আমিও তােমার সঙ্গে যুদ্ধ করব।
প্রশ্ন ১৩। মরণের কথা ভাবলে যুদ্ধ করা যায় না’- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : “মরণের কথা মনে করলে যুদ্ধ করা যায় না”- লাইনটি দ্বারা যুদ্ধে মানসিক দুর্বলতাকে প্রশ্রয় না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যুদ্ধ মানেই বাঁচা-মরার লড়াই। জিততে হলে বাঁচতে হবে, হেরে গেলে মারা যাবে। কিন্তু বাঁচা-মরা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য। যেকোনাে সময় মরতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর কথা মনে করে যুদ্ধ করতে গেলে সৈন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ মৃত্যু সবসময় মনােবলকে দুর্বল করে দেয়। তাই মৃত্যুর কথা মনে করে যুদ্ধ করা যায় না। আলােচ্য লাইন দ্বারা এটাই বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন ১৪। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই ওর জন্যে রাস্তা খােলা’ কথাটি দ্বারা কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই ওর জন্য রাস্তা খােলা’- কথাটি দ্বারা বুধার ব্যক্তিস্বাধীনতাকে বােঝানাে হয়েছে।
কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বুধা। এক চাচি আর চাচাত ভাই-বােন ছাড়া তিন কুলে আপন বলতে কেউ নেই। হাটে-মাঠে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরতে ঘুরতে যে কোথায় যায় সে হিসাব রাখে না। ওর কাছে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব সমান। আলােচ্য কারণেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৫। কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসের সালাম চাচা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল কেন?
উত্তর : কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসে সালাম চাচা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল, কারণ মিলিটারি তাকে গুলি করেছিল।
১৯৭১ সালে সারা দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন করতে থাকে। একদিন তারা বুধার গ্রামও আক্রমণ করে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে গ্রামে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনারা বাজারে আগুন লাগিয়ে দেয়। গ্রামের মানুষ কেউ মরে আগুনে পুড়ে, কেউ মরে গুলিতে। সালাম চাচাও গুলির আঘাতে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। অর্থাৎ মারা যায়।
প্রশ্ন ১৬। “যুদ্ধের জন্য আমাদের কত কী সইতে হয়”- কেন বলা হয়েছে?
উত্তর : “যুদ্ধের জন্য আমাদের কত কী সইতে হয়”- কথাটি বলা হয়েছে এ কারণে যে, যুদ্ধের সময় চারপাশে ধ্বংস আর মৃত্যুর মিছিল নামে।
যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর মৃত্যু। প্রিয়জনের মৃত্যু ও চারপাশের ধ্বংসলীলা মানুষকে শশাকে বিহ্বল করে তােলে। কিন্তু যুদ্ধের সময় সেই ধ্বংস ও মৃত্যু যন্ত্রণাও সহ্য করতে হয়। চারপাশের মৃত্যু ও ধ্বংসলীলা মনকে কাতর করে তােলে, ভীত করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় আমাদের এসব সহ্য করতে হয়।
প্রশ্ন ১৭। দেশের মানুষ বিদেশিদের মতাে আচরণ করছে কেন?
উত্তর : দেশের মানুষ বিদেশিদের মতাে আচরণ করছে, কারণ তারা বিদেশিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
দেশের কিছু কুলাঙ্গার পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যােগ দেয় ১৯৭১ সালে। তারা রাজাকার। তারা গা থেকে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, মাছ, ডিম, দুধ পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে যায়। মুক্তিযােদ্ধাদের খবর পাকিস্তানি সেনাদের জানিয়ে দেয়। তাদের এ আচরণ দেখে বুধার কষ্ট হয়। বুধা ভাবে, পাকিস্তানি সেনারা তাে বিদেশি, কিন্তু দেশের মানুষরা নিজেদের মানুষ হয়েও কেন বিদেশিদের মতাে আচরণ করছে? কেন এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করছে?
প্রশ্ন ১৮। ঘুমের ভেতরে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুধাকে এক আশ্চর্য দেশে নিয়ে যায় কেন?
উত্তর : ঘুমের ভেতরে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুধাকে এক আশ্চর্য দেশে নিয়ে যায়।
কারণ দেশ স্বাধীন হলে বুধা ভাবে ফুলকলির আর দুঃখ থাকবে না। বুধা ফুলকলিকে পছন্দ করত। রাজাকার কমান্ডার ফুলকলিকে মারলে বুধা অনেক কষ্ট পেয়েছে। রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাচার, নির্যাতন আর হত্যাকাণ্ড দেখে বুধার মনে দেশকে স্বাধীন করার জোশ জেগে ওঠে। সে দেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে। রাজাকাররা তাকে প্রশ্ন করলেও সঠিক কোনাে তথ্য সে দেয় না। কুদুস রাজাকার তাকে তাড়া করলে সে কচুরিপানাভরা পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ে এক ডুবে ওপাড়ে গিয়ে ওঠে। তাঁর মাথায় কচুরিপানা লেগে থাকে। এ অবস্থায় ফুলকলি তাকে দেখলে খুব হাসত বলে সে কল্পনা করে। ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতরে সে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। সেখানে সে আর ফুলকলি হাত ধরাধরি করে হাঁটে। তাদের চারদিকে ফুল-পাখিতে ভরা। হাজারাে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। ও ধরতে পারে না। ফুলকলি বুধার কাছে এসে বলে, এসব প্রজাপতি তাের জন্য, তুই যে আমার জন্য একটা যুদ্ধ জিতেছিস।
প্রশ্ন ১৯। বুধার কান্না দেখে কুন্তি অবাক হয় কেন?
উত্তর : কুন্তি বুধার কান্না দেখে অবাক হয়, কারণ সে আগে কখনাে বুধাকে কাঁদতে দেখেনি।
বুধা’ কুন্তির চাচাত ভাই। কুন্তি বুধাকে ছােটবেলা থেকেই দেখে আসছে। সে বুধাকে সাহসী হিসেবেই জানে। সে জানে বুধা তার পরিবারের সবাইকে হারিয়েও কাঁদেনি। তাই হঠাৎ করে বুধা ডুকরে কেঁদে উঠলে কুন্তি অবাক হয়। ভাবে, আজ বুধার কী হয়েছে, ওকে তাে আগে কখনাে কাঁদতে দেখিনি।
প্রশ্ন ২০। বুধার কাছে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব সমান কেন? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বুধার কাছে পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব সমান। কারণ মাবাবা, ভাই-বােন সবাইকে হারিয়ে সে একা স্বাধীন মানুষ, যেখানে খুশি যেতে পারে, যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
‘কাকতাড়ুয়া উপন্যাসে এক কিশাের মুক্তিযােদ্ধার স্বাধীনতার স্বপ্ন ও দেশপ্রেম রূপায়িত হয়েছে। দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববােধ এবং সেনাদের প্রতি চরম ঘৃণা তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দেশকে ভালােবাসে বলেই সে ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। শৈশবে সে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে ছন্নছাড়া জীবনযাপনের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠেছে। মাঠের মাঝখানে সে কাকতাড়ুয়া সেজে দাঁড়িয়ে থাকে। এটাকে সে এক ধরনের খেলা মনে করে। তার কাছে রাত-দিনের হিসাব নেই। তা সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় হিসেবেই চিহ্নিত। সে মনের আনন্দে দুই পায়ে পথের ধুলাে মেখে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। বুধার কিসে হাসি, কিসে কান্না কেউ বুঝতে পারে না। এ বিষয়টি বােঝাতেই লেখিকা প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
প্রশ্ন ২১। বুধার আনন্দ আর কান্না কেউ বুঝতে পারে না কেন?
উত্তর : বুধার দুর্বোধ্য আচরণের কারণে কেউ ওর আনন্দ আর কান্না বুঝতে পারে না।
বাবা-মা, ভাই-বােনদের হারানাের পর বুধা কোনাে শােক প্রকাশ করেনি। কারণ অধিক শােকে ও শক্ত হয়ে গেছে। ফলে তার স্বাভাবিক আচরণে এক ধরনের খাপছাড়া ভাব সৃষ্টি হয়েছে। বুধা কাকতাড়ুয়া, সেজে দাঁড়িয়ে থাকে। গায়ে ধুলাে মাখে। অকারণেই হাসে। ফলে ওর আচরণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে। আর এ কারণেই বুধার আনন্দ আর কান্না মানুষ বুঝতে পারে না।
প্রশ্ন ২২। মানুষের বােকামির সীমা নেই”- বুধা কেন এরূপ ভাবে?
উত্তর : মানুষের বােকামির সীমা নেই”- বুধার এরূপ।ভাবার কারণ হলাে মানুষ বুধার মতাে ভাবতে পারে না।
বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা বঞ্চিত হয়েও বুধা জীবনে আনন্দ উপভােগ করে। যেখানে ইচ্ছা যায়। কারও কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না। রাতে যেখানে ইচ্ছা ঘুমায়। ইচ্ছেমতাে খেলা করে, খায়। তাই খােলা এই প্রকৃতির বুককে বুধার কাছে সােনার ঘর মনে হয়। কিন্তু সবাই বুধার মতাে বুঝতে পারে না। তাই বুধা ভাবে, ‘মানুষের বােকামির সীমা নেই।
প্রশ্ন ২৩। “তিনুর জন্য কি একটা গান গাইবে?”- কেন?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা ছােট ভাইয়ের জন্য বুধার অন্তরের তীব্র বেদনার ভাব প্রকাশ পেয়েছে।
তিনু ছিল বুধার ছােট ভাই। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল দেড় বছর। বুধা ওকে অনেক ভালােবাসত। বুধাকে দেখলেই তিনু হাত বাড়িয়ে দিত কোলে চড়ার জন্য। বুধা তিনুকে বুকে করে গান গাইত। ঘুমপাড়ানির গান শুনে তিনু ঘুমাত। সদ্যমৃত তিনুর কথা মনে আসতেই বুধা গভীর রাতে গান গাইতে চেয়েছে। বস্তুত এর দ্বারা বুধার মনের গভীর দুঃখই প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন ২৪। কীভাবে বেঁচে গেলাম?’-বুধা কেন নিজেকে এরূপ প্রশ্ন করে?
উত্তর : বুধার নিজেকে এরূপ প্রশ্ন করার কারণ হলাে- বেঁচে যাওয়ার ব্যাপারটায় সে খুবই অবাক।
কলেরার মহামারীতে বুধা তার পরিবারের সবাইকে হারায়। সে সময় কলেরা দারুণ সংক্রামক রােগ ছিল। রােগীর কাছাকাছি গেলেই আক্রান্ত হতে হতাে। এক রাতে বুধার বাবা-মা, ভাই-বােন সবাই মারা যায়। কলেরার সেই মহামারীতে বুধার কিছুই হয়নি। তাই বেঁচে থাকাটা বুধার কাছে দারুণ আশ্চর্যের বিষয়।
প্রশ্ন ২৫। ‘কামাই’ শব্দটা শক্ত হয়ে থাকা মগজের গায়ে ঠোর খায় কেন?
উত্তর : বুধা চাচির সংসারে কোনাে রােজগার ছাড়াই খাওয়ার কারণে কামাই’ শব্দটা শক্ত হয়ে থাকা মগজের গায়ে ঠোক্কর খায়।
পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দারুণ শােকগ্রস্ত বুধা চাচির সংসারে আশ্রয় নেয়। সেখানে খাবার ও আশ্রয় পায়। চাচির অভাবের সংসারে তাকে আহার দেওয়া কষ্টকর। তাই চাচি বুধাকে রােজগারের কথা বলে। তখন নিজের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ফলে বুধার মগজে ‘কামাই’ শব্দটা দারুণ আলােড়ন তােলে। বস্তুত এর দ্বারা বুধার আত্মনির্ভরশীলতার বােধ জাগে।