কম্পিউটার নেটওয়ার্ক অধ্যায়ের রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১। তােমার বিদ্যালয়ের দশটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার ইন্টারনেটে  ব্যবহারের নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য একটি টপােলজি যুক্তিসহ সুপারিশ কর।

উত্তর: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হলাে রিসাের্স শেয়ারিং। অর্থাৎ নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত প্রিন্টার বা স্ক্যানারগুলাে  নেটওয়ার্কভুক্ত প্রতিটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি  কম্পিউটারের জন্য আলাদা স্ক্যানার বা প্রিন্টারের প্রয়ােজন হয় না।  তেমনি আমাদের বিদ্যালয়ের দশটি কম্পিউটার ও একটি প্রিন্টার  ব্যবহার করে যদি একটি নেটওয়ার্ক গঠন করা যায় তবে সেই দশটি  কম্পিউটারের প্রতিটি দিয়ে সেই প্রিন্টার ব্যবহার করেই প্রিন্ট করা যাবে। দশটি কম্পিউটার প্রিন্ট করতে দশটি প্রিন্টারের প্রয়ােজন হবে।  এতে টাকা সাশ্রয় হবে এবং স্থান সংকুলান নিয়েও ঝামেলা হবে। আর এক্ষেত্রে আমরা স্টার টপােলজি ব্যবহার করতে পারি, যেখানে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারটির সাথে প্রিন্টারটি সংযুক্ত থাকবে। এই টপােলজি ব্যবহারের যুক্তি হলাে— এটি খুব দ্রুত তৈরি করা যায়। টপােলজির কোন কম্পিউটার নষ্ট হলেও নেটওয়ার্ক চালু থাকে। আর কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা হাব নষ্ট হলে সেটি ঠিক করলেই নেটওয়ার্ক সচল হয়ে যায় । 

প্রশ্ন-২।  রাউটারের কাজ করার পদ্ধতি বর্ণনা কর।

উত্তর: রাউটার (Router) শব্দটি এসেছে Route শব্দ থেকে। রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যা হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি। এটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে তৈরি। একই প্রটোকলের অধীনে কার্যরত দুটি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করার জন্য রাউটার ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে অসংখ্য রাউটার রয়েছে। রাউটারের প্রধান কাজ ডাটা বা উপাত্তকে পথ নির্দেশনা দেওয়া। ধরি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত কোনাে বন্ধুকে ই-মেইলের মাধ্যমে কেউ একটি ছবি পাঠাতে চায়। ছবিটি কয়েকটি ডাটা প্যাকেটে বিভক্ত হয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই বন্ধুর কম্পিউটারে পৌঁছাবে। প্রতিটি ডাটা প্যাকেটে গন্তব্যস্থলের ঠিকানা সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেট যেহেতু জালের মতাে গােটা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, তাই বিভিন্ন ডাটা প্যাকেট বিভিন্ন পথে গন্তব্যে পৌছাতে পারে। একটি ডাটা প্যাকেট কোনাে একটি রাউটার এ পৌছালে পরবর্তী কোন পথে অগ্রসর হলে ডাটা সহজে এবং দুত গন্তব্যে পৌছাবে তার পথনির্দেশ দেয় ঐ রাউটার।

প্রশ্ন-৩। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ডেটা স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বর্ণনা কর। 

উত্তর: ফাইবার অপটিক ক্যাবল তার মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। ফাইবার অপটিক ক্যাবলে কেন্দ্রের মূল তারটি তৈরি হয় সিলিকা, কাচ অথবা স্বচ্ছ প্লাস্টিক দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে আলােক সংকেতরূপে ডেটা পরিবাহিত হয় বা চলাচল করে। এটি ইলেকট্রিক্যাল সিগনালের পরিবর্তে লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে। এতে আলােকের পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন দুতগতি সম্পন্ন। বর্তমানে ব্যবহৃত ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ডেটা করে। আলাের গতিতে ডেটা স্থানান্তরিত হয় বলে অপেক্ষাকৃত অধিক ট্রান্সমিশন ব্যান্ডউইডথ ১০০ Mbps থেকে ২০০ Mbps পর্যন্ত হয়।

প্রশ্ন-৪। তােমার বিদ্যালয়ের কম্পিউটারগুলাের নেটওয়ার্কিং আওতায় আনার জন্য কী কী সাের্সের প্রয়ােজন বর্ণনা করাে।

উত্তর: দু বা ততােধিক কম্পিউটারে মধ্যে তথ, বিনিময় করার জন্য যে আত্ন:সংযােগ স্থাপন করা হয় তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে।

কাজেই একটি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাের্সের প্রয়ােজন হয়। নিম্নে সেগুলাের বর্ণনা দেওয়া হলাে:

সার্ভার: সার্ভার হচ্ছে একটি শক্তিশালী কম্পিউটার। নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটারকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। সার্ভার নেটওয়ার্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মূল কম্পিউটার।

ক্লায়েন্ট: নেটওয়ার্কের সার্ভার কম্পিউটার ছাড়া প্রতিটি কম্পিউটারকে ক্লায়েন্ট বলে। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনাে ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে।

মিডিয়া: নেটওয়ার্কে প্রতিটি কম্পিউটারকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করতে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগে। বৈদ্যুতিক তার, কো-এক্সিয়াল ক্যাবল, অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, তারবিহীন ওয়াই-ফাই পদ্ধতি ইত্যাদি।

নেটওয়ার্ক এডাপ্টার: বিভিন্ন মিডিয়া বা, মাধ্যমকে সরাসরি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা যায় না। সুতরাং কম্পিউটার সমূহের মধ্যে সংযুক্ত করতে নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা নিক (NIC) লাগাতে হয়। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ডকে বলা হয় নেটওয়ার্ক এডাপ্টার।

রিসাের্সঃ ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযােগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসাের্স।

ইউজার: যে ক্লায়েন্ট সার্ভার থেকে রিসাের্স ব্যবহার করে, সে-ই ইউজার বা ব্যবহারকারী।

প্রটোকল: যে সকল নিয়ম-কানুনে নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটারে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে, তাকে প্রটোকল বলে। যেমন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রটোকল হলাে hypertext transfer protocol (http)।

 

প্রশ্ন-৫. কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে কী বুঝ?

উত্তর: একাধিক কম্পিউটারকে পরস্পর সংযুক্ত করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। অর্থাৎ দুইটি কিংবা দুইটার বেশি কম্পিউটারকে যােগাযােগের কোনাে মাধ্যম দিয়ে এক সাথে জুড়ে দিলে যদি তারা নিজেদের ভেতর তথ্য কিংবা উপাত্ত দেওয়া-নেওয়া করতে পারে তাহলেই আমরা সেটাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে পারি। সত্যিকারের নেটওয়ার্কে আসলে দু-তিনটি কম্পিউটার থাকে না। সাধারণত অনেক কম্পিউটার থাকে। কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে যখন তথ্য দেওয়া নেওয়া হয়, তখন একটা অনেক বড় কাজ হয়। একজন ব্যবহারকারী তখন নেটওয়ার্কের অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারে। যে রিসাের্স তার কাছে নেই, সেটিও সে নেটওয়ার্ক থেকে ব্যবহার করতে পারে।

 

প্রশ্ন-৬। ক্লায়েন্ট বলতে কী বুঝ?

উত্তর: ক্লায়েন্ট (Clint) একটা ইংরেজি শব্দ। কেউ যদি অন্য কারাে কাছ থেকে কোনাে ধরনের সেবা নেয়, তখন তাকে ক্লায়েন্ট বলে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ক্লায়েন্ট শব্দটার অর্থ মােটামুটি সেরকম। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনাে ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে। যেমন- কোন কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইমেইল পাঠানাে হবে। তাহলে সেই কম্পিউটার হবে ক্লায়েন্ট। নেটওয়ার্কের যে কম্পিউটারটি ই-মেইল পাঠানাের কাজটুকু করে দেবে সেটা হবে সার্ভার”- এক্ষেত্রে ই-মেইল সার্ভার। নেটওয়ার্কের বিভিন্ন অংশকে সহজে চিহ্নিত করার জন্যই এই নামকরণগুলাে করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন-৭। রিসাের্স বলতে কী বুঝ? 

উত্তর: একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযােগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসাের্স। একটা কম্পিউটারের সাথে যদি একটা প্রিন্টার কিংবা একটা ফ্যাক্স লাগানাে হয় সেটা হচ্ছে রিসাের্স। কম্পিউটার দিয়ে কেউ যদি সার্ভারে রাখা একটা ছবি আঁকার সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটাও রিসাের্স। যারা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, তারা শুধু যে রিসাের্স গ্রহণ করে তা নয়, কারাে কাছে যদি কোনাে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে বা মজার ছবি থাকে এবং সেটা যদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যরাও ব্যবহার করতে থাকে তাহলে তার কম্পিউটারও একটা রিসাের্স হয়ে যাবে।

 

প্রশ্ন-৮। সার্ভার কম্পিউটার বলতে কী বুঝ?

উত্তর: যে serve করে – তাকেই সার্ভার বলা হয়। সার্ভার হচ্ছে একধরনের কম্পিউটার যা আকারে বড় এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন। যে কোনাে নেটওয়ার্কে অবস্থিত হাজার হাজার কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সার্ভার কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। সার্ভার কম্পিউটার তার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত সকল কম্পিউটারকে বিভিন্ন রকম সেবা দিয়ে থাকে। প্রয়ােজনে নেটওয়ার্কে কম্পিউটার সংযােজন বা বিয়ােজন করতে পারে। একটি নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের পরিমাণ বেশি হলে একাধিক সার্ভার কম্পিউটার ব্যবহৃত হতে পারে। সার্ভার কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দক্ষলােকের প্রয়ােজন হয়।

 

প্রশ্ন-৯। প্রটোকল বলতে কী বুঝ? 

উত্তর: প্রটোকল কম্পিউটার নেটওয়ার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ছাড়া একটি সফল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে তােলা অসম্ভব। ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারকে এক সাথে যুক্ত করে দিতে হলে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যােণাযােগ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তথ্য আদান-প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করেন তারা আগে থেকেই ঠিক করে নেন, ঠিক কোন ভাষায়, কোন নিয়ম মেনে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যােগাযােগ করবে। এই নিয়মগুলােই হচ্ছে প্রটোকল।



প্রশ্ন-১০। MAN কী? স্টার টপােলজির সুবিধা ও অসুবিধা লিখ। 

উত্তর: MAN এর পূর্ণরূপ Metropolitan Area Network। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে MAN বলে।

স্টার টপােলজির সুবিধা:

১. খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।

২. কেন্দ্রিয় ডিভাইস হিসেবে সুইচ/হাব ব্যবহারের ফলে দুত এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়।

৩. এ টপােলজির কোনাে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও অন্য সব কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সচল থাকে।

স্টার টপােলজির অসুবিধা:

১. এ টপােলজির কেন্দ্রিয় ডিভাইস হাব/সুইচ নষ্ট হলে পুরাে নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়বে।

২. স্টার টপােলজিতে অধিক ক্যাবল লাগে।

 

প্রশ্ন-১১। কম্পিউটারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে কি কি ভাগে ভাগ করা যায়? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

উত্তর: কম্পিউটারের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

 PAN : PAN-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Personal Area Network। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নেটওয়ার্ক তৈরির কৌশলকে বলা হয় PAN। যেমন- ব্লুটুথ হচ্ছে এক ধরনের PAN নেটওয়ার্ক।

LAN : LAN-এর পূর্ণরূপ হলাে Local Area Network। একই ভবনের বা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সকল নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকেইলােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলা হয় । যেমন- ঢাকা কলেজের নেটওয়ার্কটি LAN।

MAN : MAN-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Metropolitan Area Network। সচরাচর একটি নির্দিষ্ট অঞল বা শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে MAN বলা হয়। অর্থাৎ একাধিক LAN নেটওয়ার্কের সমন্বয়েও MAN নেটওয়ার্ক তৈরি হয়।

WAN; WAN-এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Wide Area Network। দেশজুড়ে বা পৃথিবীজুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয় তাকে বলা হয় ওয়াইড-এরিয়া নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ MAN নেটওয়ার্কের সমষ্টিকে WAN নেটওয়ার্ক বলে। যেমন– World Wide Web (wvvw), ইন্টারনেট ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন-১২। টপােলজি বলতে কী বুঝ? সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর: কম্পিউটারসমূহের মধ্যে নেটওয়ার্ক থাকলে তাদের মধ্যে তথ্য বিনিময় বা আদান-প্রদান করা যায়। নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলাে একটি আরেকটির হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার রিসাের্স শেয়ার বা ব্যবহার করতে পারে। তবে সবকিছুর জন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলাে কম্পিউটারসমূহের একটির সাথে অন্যটির সংযুক্তির বিষয়টি। কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কম্পিউটারসমূহ একটি অন্যটির সাথে সংযুক্ত থাকার পদ্ধতিকে টপােলজি বলে। নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলাে কীভাবে সংযুক্ত আছে। ক্যাবল কীভাবে একটি আরেকটির সাথে যুক্ত আছে। এটিই টপােলজির মূল বিষয়।

 

প্রশ্ন-১৩। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কী? বাস ও স্টার টপােলজির সুবিধা ও অসুবিধা লিখ।

উত্তর: দুই বা ততােধিক কম্পিউটারকে যােগাযােগের কোনাে মাধ্যম  দিয়ে একসাথে জুড়ে দিলে তাদের মধ্যে তথ্য কিংবা উপাত্ত আদানপ্রদান করতে পারে, তখন তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে।

বাস টপােলজির সুবিধা:

১. এ টপােলজির কম্পিউটারগুলাে একটি মূল ব্যাকবােন ক্যাবলের সাহায্যে যুক্ত থাকে।

২. ব্যয়ভার খরচ কম।

বাস টপােলজির অসুবিধা:

১. মূল বাস/ব্যাকবােন নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়।

স্টার টপােলজির সুবিধা:

১. খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।

২. কেন্দ্রিয় ডিভাইস হিসেবে সুইচ/হাব ব্যবহারের ফলে দুত এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে ডেটা আদান-প্রদান করা যায়।

৩.টপােলজির কোনাে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও অন্য সব কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সচল থাকে।

স্টার টপােলজির অসুবিধা:

১. এ টপােলজির কেন্দ্রিয় ডিভাইস হাব/সুইচ নস্ট হলে পুরাে নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়বে।

২.স্টার টপােলজিতে অধিক ক্যাবল লাগে।

 

প্রশ্ন-১৪। নেটওয়ার্ক ব্যবহারে কোন টপােলজি অধিক সুবিধাজনক? যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গঠনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টপােলজি রয়েছে যেমন- বাস, রিং, স্টার, ট্রি ও মেশ টপােলজি। এগুলাের মধ্যে স্টার টপােলজি অধিক সুবিধাজনক। কারণ, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিসে স্টার টপােলজি ব্যবহার করে। কেননা, এর মাধ্যমে কেন্দ্রিয় কম্পিউটারের মাধ্যমে অন্যান্য সকল কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্টার টপােলজির নেটওয়ার্কের সকল কম্পিউটার একটি কেন্দ্রিয় হাব/সুইচ এর সাথে যুক্ত থাকে। কেন্দ্রিয় হাব/সুইচকে সাভার কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা যায়। ফলে নেটওয়ার্কে নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হয়। তাছাড়া দুত গতিতে নির্দিষ্ট কম্পিউটারের সাথে তথ্য/ফাইল আদান-প্রদান করা যায়। যদি কোনাে একটি কম্পিউটার নস্ট হয় সেক্ষেত্রে অন্য সব কম্পিউটারের ওপর কোনাে প্রভাব পড়ে না। এ কারণে এর ব্যবহার অধিক ও জনপ্রিয়। এ সকল সুবিধার কারলে স্টার টপােলজি অধিক সুবিধাজনক।

 

প্রশ্ন-১৫। চিত্রসহ বাস টপােলজি বুঝিয়ে বলাে। 

উত্তর: বাস টপােলজি সবচেয়ে সহজ নেটওয়ার্ক টপােলজি। বাস টপােলজিতে একটা, মূল ব্যাকবােন বা মূল লাইনের সাথে সবগুলাে কম্পিউটারকে জুড়ে দেওয়া হয়। বাস টপােলজিতে কোনাে একটা কম্পিউটার যদি অন্য কোনাে কম্পিউটারের সাথে যােগাযােগ করতে চায়, তাহলে সব কম্পিউটারের কাছেই সেই তথ্য পৌছে যায়। শুধু সত্যি সত্যি যার সাথে যােগাযােগ করার কথা সেই কম্পিউটার তথ্যটা গ্রহণ করে। অন্য সব কম্পিউটার তথ্যগুলােকে উপেক্ষা করে।

 

প্রশ্ন-১৬। চিত্রসহ রিং টপােলজি বুঝিয়ে বলাে। 

অথবা, কোন টপােলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার অন্য দুটি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে? সেই টপােলজির চিত্রসহ বিবরণ দাও। 

উত্তর: রিং টপােলজি হবে গােলাকার বৃত্তের মতাে। এই টপােলজিতে প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। এই টপােলজিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য যায় একটি নির্দিষ্ট দিকে। তবে রিং টপােলজিতে সত্যি সত্যি কম্পিউটারগুলােকে কিন্তু বৃত্তাকারে থাকার দরকার নেই; সেগুলাে এলােমেলােভাবে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সবসময়েই কম্পিউটারগুলাের মাঝে বৃত্তাকার যােগাযােগ থাকে, তাহলেই সেটা রিং টপােলজি। এই টপােলজিতে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলে পুরাে নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যায়।

 

প্রশ্ন-১৭। চিত্রসহ স্টার টপােলজির বর্ণনা দাও। 

উত্তর: কোনাে নেটওয়ার্কের সবগুলাে কম্পিউটার যদি একটা কেন্দ্রীয় হাবের সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটাকে বলে স্টার টপােলজি। এ তুলনামূলকভাবে একটা সহজ টপােলজি এবং অনুমান করা যায়, কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটা কম্পিউটার নেওয়ার্ক তৈরি করতে চায়, তাহলে সে সম্ভবত স্টার টপােলজি ব্যবহার করবে। এই টপােলজিতে একটা কম্পিউটার নষ্ট হলেও বাকি নেটওয়ার্ক সচল থাকে। কিন্তু কোনােভাবে কেন্দ্রীয় হাব নষ্ট হলে পুরাে নেটওয়ার্কটাই অচল হয়ে পড়বে।

 

প্রশ্ন-১৮। চিত্রসহ ট্রি টপােলজি বুঝিয়ে বলাে।

উত্তর: স্টার টপােলজির সম্প্রসারিত রূপ হচ্ছে ট্রি টপােলজি। এই টপােলজিতে একাধিক কানেক্টিং ডিভাইস হিসেবে হাব বা সুইচ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটারকে একটি বিশেষ স্থানে সংযুক্ত করা হয়। একে বলাহয় সার্ভার বা বুট সংগঠনে এক।একাধিক স্তরে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলাে বুট-এর সাথে যুক্ত থাকে। নতুন স্তর তৈরি করে ট্রি টপােলজির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, বেশ সুবিধাজনক। অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ নেটওয়ার্কের গঠন বেশি উপযােগী। রুট বা সার্ভার কম্পিউটারে কোনাে তুটি দেখা দিলে ট্রি নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যায়। অন্যান্য টপােলজির তুলনায় ট্র টপােলজি অপেক্ষাকৃত জটিল।

 

প্রশ্ন-১৯। চিত্রসহ মেশ টপােলজি বুঝিয়ে বললাে।

উত্তর: মেশ টপােলজির ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কের অধীনস্থ প্রত্যেক কম্পিউটার অন্যসব কম্পিউটারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। এতে প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশনের মধ্যে আলাদা আলাদা লিংক বা বাস থাকে। তাই প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশন সরাসরি যেকোনাে ওয়ার্কস্টেশনের সাথে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। এই টপােলজিতে নেটওয়ার্ক ইনস্টলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল। সংযােগ লাইনগুলির দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ায় এতে খরচ বেশি হয়।

 

প্রশ্ন-২০। কোন টপােলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারের সাথে সরাসরি লিংক থাকে? সেই টপােলজির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ মেশ টপােলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারের সাথে সরাসরি লিংক থাকে। নিম্নে মেশ টপােলজির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলাে :

কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রতিটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে বলে একেই পরস্পর সংযুক্ত বা মেশ টপােলজি বলা হয়। এ টপােলজির কম্পিউটারগুলাে একাধিক পথে যুক্ত হতে পারে। এখানে কম্পিউটারগুলাে শুধু যে অন্য কম্পিউটার থেকে তথ্য নেয় তা নয় বরং সেই তথ্য নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারের মাঝে বিতরণ ও করতে পারে। এ ধরনের নেটওয়ার্কের কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হলে নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারের সথে তথ্য আদান-প্রদানে কোন অসুবিধা হয় না। সুতরাং মেশ টপােলজির নেটওয়ার্ক হচ্ছে সহজ নেটওয়ার্ক।



প্রশ্ন-২১. ল্যানকার্ড কী? বর্তমান তথ্য প্রযুক্তিতে নেটওয়ার্কের ব্যবহার বর্ণনা কর। 

উত্তর: দুটো বা অধিক সংখ্যক কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে যে যন্ত্রটি অবশ্যই প্রয়ােজন, তা হলাে ল্যানকার্ড। নেটওয়ার্কে এক কম্পিউটার থেকে আরেক কম্পিউটারে তথ্য প্রেরণ করতে চাইলে ল্যানকার্ডের প্রয়ােজন হয়। ল্যানকার্ড ইন্টারপ্রেটারের মতাে কাজ করে।

তথ্য প্রযুক্তিতে নেটওয়ার্কের ব্যবহার:

তথ্যপ্রযুক্তিতে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় ব্যবহার হচ্ছে তথ্যকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান বিশেষ বিশেষ তথ্যকে, নিজের জন্য আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে অন্য তথ্যগুলােকে সবার জন্য উন্মুক্ত করেন। এমনকি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যকে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। প্রয়ােজনে সেই তথ্য পূনরায় ব্যবহার করা যায়। বিমানের যাত্রীদের ই-টিকেটিং ব্যবস্থার ফলে এখন আর টিকেট হাতে নিতে হয় না। কারণ বিমানের কর্মকর্তা যাত্রীর পরিচয় থেকে তার টিকেটের সকল তথ্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জানতে পারেন। নেটওয়ার্কের আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি-সংক্রান্ত সকল প্রয়ােজনীয় সফটওয়্যার ভাগাভাগি করে নেওয়া। এক্ষেত্রে একটি মূল কম্পিউটার বা সার্ভারে সফটওয়্যার রাখা হয় এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য সব কম্পিউটার সার্ভারে রাখা সেই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে। এছাড়াও যে কেউ তার ব্যক্তিগত তথ্য ড্রপবক্স ব্যবহার করে রেখে দিতে পারে। পরে তা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থেকেও তা ব্যবহার করতে পারে।

 

প্রশ্ন-২২। কোন সফটওয়্যারের জন্য প্রত্যেকটি আলাদা কম্পিউটার প্রয়ােজন হয় না কেন? 

উত্তর: সার্ভারে রাখা সফটওয়্যারটির জন্য আলাদা কম্পিউটারের প্রয়ােজন হয় না। কারণ, একটি মূল কম্পিউটার বা সার্ভারে রাখা। সফটওয়্যারটি রিসাের্স হিসেবে ব্যবহতৃ হয়। যা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত প্রত্যেকটি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে। কাজেই প্রতিটি কম্পিউটারের জন্য আলাদাভাবে একই সফটওয়্যার না কিনেই একটি মাত্র সফটওয়্যার কিনে নেটওয়ার্কের সাভারে রেখে ব্যবহার করা যায়। এতে ব্যয়ও কম হয়।

 

প্রশ্ন-২৩, ক্লাউড কম্পিউটিং কী? “ইন্টারনেটের একটি জনপ্রিয় সেবা ড্রপবক্স”-উক্তিটির আলােকে মতামত দাও।

উত্তর: ইন্টারনেটে বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত রিসাের্স ব্যবহারের বিশেষ সেবাকে ক্লাউড কম্পিউটিং বলে।

ইন্টারনেটের জনপ্রিয় সেবা ড্রপবক্স: ড্রপবক্স এক ধরনের, ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা। বর্তমানে এটি বেশ জনপ্রিয়। কারণ, বাস্তব জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য/নথিপত্রের প্রয়ােজন হয়। কিন্তু সেগুলাে নিজের কাছে সব সময় তা বহন করা কষ্টকর। একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত তথ্য/নথিপত্র নিজের কাজে না রেখে ইন্টারনেটের কোনাে এক মাধ্যমে রেখে দিতে পারে। প্রয়ােজনে যেকোনাে সময় পৃথিবীর যেকোনাে জায়গা থেকে সেটি ব্যবহার করতে পারে। এরকম ব্যবস্থাকে বলে ড্রপবক্স। ড্রপবক্সের কারণে সময় ও শ্রম লাঘব হয়। এ কারণেই ড্রপবক্স একটি জনপ্রিয় সেবা

 

প্রশ্ন-২৪। ড্রপবক্স সম্পর্কে লেখ। 

উত্তর: নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহারটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ভাগাভাগি করে নেওয়ার সুযােগ। এক সময় সকল প্রয়ােজনীয় সফটওয়্যার প্রত্যেকটি কম্পিউটারেই আলাদাভাবে রাখার প্রয়ােজন হতাে। এখন আর সেটি রাখতে হয় না। একটি মূল কম্পিউটার বা সার্ভারে সেটি রাখা হয় এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য সব কম্পিউটার সার্ভারে রাখা সেই সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কাজেই ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষ কোনাে মূল্যবান সফটওয়্যার না কিনেই ব্যবহার করতে পারে তা নয়, একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত সবকিছুই নিজের কম্পিউটারে না রেখে অন্য কোথাও রেখে দিতে পারে। যেকোনাে সময় পৃথিবীর যেকোনাে জায়গা থেকে সেটি ব্যবহার করতে পারে, সেরকম ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এরকম একটি জনপ্রিয় সেবার নাম ড্রপবক্স (Dropbox)। এখানে যে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলে তার অ্যাকাউন্টে প্রয়ােজনীয় তথ্য রাখতে পারে

 

প্রশ্ন-২৫। ক্লাউড কম্পিউটিং কী? 

উত্তর: ইন্টারনেটে বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে কিছু গ্লোবাল সুবিধা ভােগ করার যে পদ্ধতি তাই হচ্ছে ক্লাউড কম্পিউটিং। এটি একটি বিশেষ পরিসেবা। এখানে “ক্লাউড” বলতে দূরবর্তী কোনাে শক্তিশালী সার্ভার কম্পিউটারকে বােঝানাে হয়।

বিশ্বের যেকোনাে প্রান্ত থেকে ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্লাউড’ প্রদত্ত সেবাসমূহ ভােগ করা যায়। আমরা hotmail, yahoo, Email প্রভৃতি ব্যবহার করে যে ই-মেইল আদান-প্রদান করে থাকি তা আসলে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করেই করা হয়।

 

প্রশ্ন-২৬। সামাজিক নেটওয়ার্ক কী? সামাজিক যােগাযােগের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুফল এবং কুফলগুলাে কী কী? 

উত্তর: সামাজিক নেটওয়ার্ক বলতে সামাজিক ওয়েবসাইটকে বােঝায়। এ মুহূর্তে পৃথিবীর জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে রয়েছে ও টুইটার। সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুফলের পাশাপাশি কুফলও রয়েছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলাে:

সুফলগুলাে:

১. মানুসের সঙ্গে মানুষের যােগাযােগ বৃদ্ধি। সামাজিক নেটওয়ার্কে একে অন্যের সঙ্গে ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিনিময় করতে পারবে।

৩. ই-মেইল পাঠাতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে, মেসেজ দেওয়ানেওয়া করতে পারে।

  1. এর মাধ্যমে ভিডিও চ্যাট করার ব্যবস্থা আছে।

কুফলগুলাে:

১. অধিক পরিমাণে সামাজিক নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতা সত্যিকারের যােগাযােগের অনুভূতিকে কমিয়ে দিচ্ছে। এর ব্যবহারকারীরা একেই সত্যিকারের সম্পর্ক ভাবতে শুরু করেছে। বাইরে ঘুরে বেড়ানাে, খেলাধুলা, মানুষের সঙ্গে মেলামেশার দক্ষতা ও ইচ্ছা কমে যাচ্ছে। এর ফলে মানসিকভাবে হতাশায় ভােগার সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।

 

প্রশ্ন-২৭।  সামাজিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বর্ণনা করাে।

উত্তর: সামাজিক নেটওয়ার্ক হলাে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যােগাযােগ। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে পৃথিবীর অন্যান্য ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের সাথে যােগাযােগ করতে পারি। নিজেদের মধ্যে ছবি, ভিডিও, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও বিভিন্ন লিংকসহ আরও অনেক কিছু শেয়ার করতে পারি। এই কমিউনিটি নেটওয়ার্কগুলাে পুরােপুরি ফ্রি, কিন্তু সেগুলাে ব্যবহার করার আগে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। বর্তমান বিশ্বে সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এখানে সমমনা লােকজন অনেকের সাথে বিভিন্ন লিংক ও নানান তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে সচেতনা বৃদ্ধি ও একত্রিত হতে পারে। এ মুহূর্তে পৃথিবীর জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কের মাঝে রয়েছে ফেসবুক ও টুইটার।

 

প্রশ্ন-৩০। হাব কীভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হাব ঐ নেটওয়ার্কের তথ্য ও উপাত্তসমূহকে নেটওয়ার্কের সকল কম্পিউটারে স্থানান্তরের সুযােগ করে দেয়। হাবের মধ্য দিয়ে যখন তথ্য বা উপাত্ত এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে যায়, হাব তখন সেগুলাে পড়তে পারে না। এক কম্পিউটার থেকে অন্য একটি কম্পিউটারে তথ্য বা উপাত্ত পাঠালে হাব তার সাথে সংযুক্ত সকল কম্পিউটারে ঐ তথ্য বা উপাত্ত পাঠিয়ে দেয়। এমনকি যে কম্পিউটার থেকে তথ্য পাঠানাে হলাে, তাকেও হাব আবার ঐ তথ্য পাঠিয়ে দেয়। অর্থাৎ হাব নির্দিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে পারে না। বর্তমানে কম গতি ও বেশি সুবিধা পাওয়া যায় না বলে হাবের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তবুও স্বল্পমূল্যের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই ছােট নেটওয়ার্ক গঠনের জন্য হাব ব্যবহার করে।



প্রশ্ন-৩১। সুইচ কাকে বলে? 

উত্তর: সুইচ হলাে নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট ডিভাইস বা যন্ত্র। বর্তমানে যেকোনাে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে বেশিরভাগ সময় সুইচ ব্যবহার করা হয়। হাবের সাথে সুইচের প্রধান পার্থক্য হলাে সুইচ তারের সাথে যুক্ত প্রত্যেকটি আইসিটি যন্ত্রকে পৃথকভাবে শনাক্ত করতে পারে কিন্তু হাব তা পারে না। ফলে সুইচ দিয়ে তৈরি নেটওয়ার্কের যেকোনাে আইসিটি যন্ত্র সরাসরি অন্য যন্ত্রের সাথে যােগাযােগ করতে পারে। সুইচের সাথে যুক্ত যন্ত্রগুলাে শুধু যাকে ডাটা বা উপাত্ত পাঠাতে চায় তাকেই উপাত্ত পাঠায়।

 

প্রশ্ন-৩২। সুইচ কীভাবে কাজ করে?

উত্তর: সুইচ তার সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি আইসিটি যন্ত্রের একট করে ঠিকানা বরাদ্দ করে এবং ঐ ঠিকানা অনুযায়ী তথ্যের আদান-প্রদান করে। অর্থাৎ কোনাে একটি ঠিকানা থেকে অন্য কোনাে ঠিকানায় উপাত্ত বা ডাটা পাঠাতে চাইলে সুইচ এক ঠিকানার তথ্য অন্য ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এ বরাদ্দকৃত ঠিকানাকে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ভাষায় MAC address নামে ডাকা হয়। আলাদা আলাদা ঠিকানা ব্যবহারের কারণে সুইচ হাবের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে। এজন্য নেটওয়ার্কে তৈরিতে সুইচই এখন সবার পছন্দ।

 

প্রশ্ন-৩৩। MAC address বলতে কী বুঝ?

উত্তর: MAC কে Media Access control বলা হয়। অর্থাৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কোনাে একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কোনাে কম্পিউটারের ঠিকানায় উপাত্ত বা ডেটা পাঠাতে চাইলে সুইচ এক ঠিকানার তথ্য অন্য ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এ বরাদ্দকৃত ঠিকানাকে তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির ভাষায় MAC address নামে ডাকা হয়। একেই MAC address বলা হয়। এটি প্রতিটি কম্পিউটারে আগে থেকে builtin অবস্থায় থাকে।

 

প্রশ্ন-৩৪। রাউটার কাকে বলে? 

উত্তর: এক নেটওয়ার্ক থেকে আরেক নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠানাের পদ্ধতিতে বলে রাউটিং। যে ডিভাইস রাউটিং-এর কাজ করে তাকে রাউটার বলে। রাউটার (Router) শব্দটি এসেছে Route শব্দ থেকে। রাউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র, যা হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি। এটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে তৈরি। একই প্রােটোকলের অধীনে কার্যরত দুটি নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করার জন্য রাউটার ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে অসংখ্য রাউটার রয়েছে।

 

প্রশ্ন-৩৫। রাউটার কীভাবে কাজ করে? ব্যাখ্যা করাে।

উত্তর: রাউটার এর প্রধান কাজ ডাটা বা উপাত্তকে পথ নির্দেশনা দেওয়া। ধরা যাক, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত কেউ বন্ধুকে ই-মেইলের মাধ্যমে তার একটি ছবি পাঠাতে চায়। ছবিটি কয়েকটি ডাটা প্যাকেটে বিভক্ত হয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার বন্ধুর কম্পিউটারে পৌছাবে। প্রতিটি ডাটা প্যাকেটে গন্তব্যস্থলের ঠিকানা সংযুক্ত থাকে। ইন্টারনেট যেহেতু জালের মতাে গােটা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, তাই বিভিন্ন ডাটা প্যাকেট বিভিন্ন পথে গন্তব্যে পৌছাতে পারে। একটি ডাটা প্যাকেট কোনাে একটি রাউটারে পৌছালে পরবর্তী কোন পথে অগ্রসর হলে ডাটা সহজে এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌছাবে তার পথনির্দেশ দেয় ঐ রাউটার। রাউটারের মধ্যে ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তা দেয়া থাকে, ফলে এটি এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডাটা কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ততম পথ খুঁজে বের করে।

 

প্রশ্ন-৩৬. মডেম সম্পর্কে আলােচনা করাে। 

অথবা, মডেম কী? মডেমের কাজ বর্ণনা কর।

উত্তর: সাধারণত টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলাে মডেম। Modulator-এর গড় এবং Demodulator হতে Dem-এই অংশ দুটির সমন্বয়ে Modem শব্দটি তৈরি হয়েছে। মডেম তার দ্বারা সংযুক্ত বা তারবিহীন (wireless) প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হতে পারে। এটি কম্পিউটারের ভেতরেও থাকতে পারে আবার বাইরেও থাকতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাটা বা উপাত্ত পাঠানাের জন্য বহনকারী সিগনাল দরকার হয়। মডেম এমন একটি নেটওয়ার্ক যন্ত্র (Network device), যা কম্পিউটার হতে প্রাপ্ত ডিজিটাল সিগনালকে এনালগ সিগনালে রূপান্তরিত করে Modulator Network কে প্রেরণ করে। আবার নেটওয়ার্ক হতে প্রাপ্ত এনালগ সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে পরিণত করে (Demodulation) কম্পিউটারে প্রেরণ করে। মডেম কম্পিউটার ও নেটওয়ার্কের সংযােগস্থলে অবস্থান করে।

 

প্রশ্ন-৩৭। ল্যান কার্ড সম্পর্কে আলােচনা করাে?

উত্তর: দুটো বা অধিকসংখ্যক কম্পিউটারকে এক সাথে যুক্ত করতে যে যন্ত্রটি অবশ্যই প্রয়ােজন হয়, তা হলাে ল্যান কার্ড। অর্থাৎ আমরা যদি কোনাে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাই, তবে অবশ্যই ল্যান কার্ডের প্রয়ােজন হবে।’নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এক আইসিটি যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে কোনাে তথ্য বা উপাত্ত পাঠাতে কিংবা গ্রহণ করতে ল্যান কার্ডের প্রয়ােজন হয়। এক্ষেত্রে ল্যান কার্ডের ভূমিকা ইন্টারপ্রেটারের। বর্তমানে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব কম্পিউটার বা ল্যাপটপ বা আইসিটি যন্ত্রের মাদারবাের্ডের সাথেই ল্যান কার্ড সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। তারপরও কিছু আইসিটি যন্ত্রে আলাদা করে ল্যান কার্ড সংযুক্ত করতে হয়। প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন তারবিহীন ল্যান কার্ড খুবই সাধারণ। আধুনিক অফিসগুলােতে তারবিহীন ল্যান কার্ডই এখন সবার পছন্দ।

Leave a Comment