এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম গল্পের জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

প্রশ্ন-০১। রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম কী ?

উত্তরঃ রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম সােহরাওয়ার্দি উদ্যান।

প্রশ্ন-০২। আরটিটিস এর পূর্ণরূপ কী ?

উত্তরঃ আরটিসি এর পূর্ণরূপ রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স বা গােলটেবিল বৈঠক।

প্রশ্ন-০৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে কার ভাষণের সাথে তুলনা করা হয় ?

উত্তরঃ ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

প্রশ্ন-০৪। ব্যারাক কী ?

উত্তরঃ ব্যারাক হচ্ছে-সেনাছাউনি।

প্রশ্ন-০৫। কত সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ?

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ।

প্রশ্ন-০৬। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন ?

উত্তরঃ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইয়াহিয়া খান অ্যাসেম্বলি ডেকেছিলেন ।

প্রশ্ন-০৭। শেখ মুজিবুর রহমান কত সালে বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন ?

উত্তরঃ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন ।

প্রশ্ন-০৮। আইয়ুব খানের পতন হয় কত সালে ?

উত্তরঃ ১৯৬৯ সালে।

প্রশ্ন-০৯। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে কী পালন করতে বললেন ?
উত্তরঃ হরতাল পালন করতে বললেন।

প্রশ্ন-১০। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ রচনার ভাষটি কত তারিখে দেওয়া হয় ?

উত্তরঃ ৭ই মার্চ দেওয়া হয়।



প্রশ্ন-১১। কত সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬ দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেন?

উত্তরঃ ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৬ দফা কর্মসূচি ঘােষণা করেন।

প্রশ্ন-১২। ইয়াহিয়া খান কত তারিখে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন ?

উত্তরঃ ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেছিলেন।

প্রশ্ন-১৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবে জন্মগ্রহণ করেন ?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন-১৪। অস্থায়ী বাংলঅদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতির নাম কী ?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি।

প্রশ্ন-১৫। সামরিক বাহিনীর লােকদের কোথায় ফেরত যেতে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সামরিক বাহিনীর লােকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে বলা হয়েছে।

প্রশ্নঃ১৬। বাঙালি প্রথম রক্ত দিয়েছে কত সালে ?

উত্তরঃ বাঙালি প্রথম রক্ত দিয়েছে ১৯৫২ সালে ।

প্রশ্ন-১৭। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেন কত সালে ?

উত্তরঃ ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন।



এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন-০১। ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বলতে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাঙালির নানাভাবে নিপীড়িতি নির্যাতিত হওয়াকে বােঝানাে হয়েছে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শাসক গােষ্ঠী বাঙালিদের শােষণ করতে থাকে। এর বিরুদ্ধে বাঙালিরা বিভিন্ন

সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। প্রতিবারই বাংলার মানুষকে শাসকদের নির্দেশে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। তাদের

এই অন্যায় আচরণ ও শােষণের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার

রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। সেখানে তিনি বাঙালির ২৩ বছরের

করুণ ইতিহাস তুলে ধরে তাদেরকে স্বাধীনতার গ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।

 

প্রশ্ন-০২। “তােমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা” বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ “তােমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা-বলতে বাঙালি জাতির বােঝাতে চেয়েছে যে, নদীবিধৌত এ পূর্ব বাংলা তাদের ঠিকানা। বাংলার মানুষের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে বাংলা নদ-নদী। এই নদীবিধৌত পূর্ব বাংলা বাঙালির প্রকৃত ঠিকানা। এই পরিচয় বাংলার মানুষের শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ১৯৭১ সালে। প্রতিবাদী মানুষ এদেশের প্রকৃতি পরিবেশ ও নদীকে অস্তিত্বে গেঁথে নেয়। তাই তারা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে।

 

প্রশ্ন-০৩। আমরা যখন মরতে শিখছি, তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।’-উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।

উত্তরঃ ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।’-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ কথার মাধ্যমে বাঙালির আপসহীন সংগ্রামের দিকটিকে নির্দেশ করেছেন।

১৯৪৭ সালে পকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাঙালি জাতি নানাভাবে পশ্চিম-পাকিস্তান শাসক গােষ্ঠীর দ্বারা বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর তারা নতুনভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বঞ্চনার সাথে যুক্ত নিপীড়ন, অত্যাচার । এই পটভূমিতে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ১৮ মিনিটের ওই ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহ্বান জানান। এখানে তিনি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন। যার মাধ্যমে নিপীড়িত বাঙালি জাতির আপসহীন সংগ্রামী মনােভাবের দিকটি উঠে এসেছে।

প্রশ্ন-০৪। “মার্শাল-ল’ উইথড্র” বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ “মার্শাল-ল’ উইথড্র” বলতে সামরিক আইন প্রত্যাহারকে বােঝানাে হয়েছে।

‘মার্শাল ল’ হচ্ছে সামরিক আইন। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার জন্য ১৯৫৮ সালে সামিরক শাসন চালু করা হয়। এই সামরিক আইন চালুর মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন শাসকগােষ্ঠী বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে এই সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি করেন।

 

প্রশ্ন-০৫। “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’-উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।

উত্তরঃ “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”-বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বুঝানাে হয়েছে।

১৯৫২ সালের বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে এ দেশের ছেলেদের হত্যা করা হয়েছে । ১৯৬৯ সালে এ দেশের মানুষ স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের পতনের জন্য সংগ্রাম করেছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের সংগ্রামে সবকিছু ঝাপিয়ে প্রধান হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা;দীর্ঘদিনের পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বলেছিলেন-“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

 

প্রশ্ন-০৬। ‘আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কথাটি কেন বলেছিলেন?

অথবা, ‘আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’-বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সামিরক জান্তার শাসন-শােষণে তার মনের অবস্থা বােঝাতে এ কথাটি বলেছেন।

১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানের একনায়ক আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ক্ষমতায় আসেন ইয়াহিয়া খান ।এতে কেবল নেতৃত্বের বদল হয়েছিল। কিন্তু শাসন-শােষণের পদ্ধতিতে কোনাে পরিবর্তন আসে নি। ১৯৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করার পরও এই সরকার আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এর পরিবর্তে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ও গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব দেখে এবং তাদের চক্রান্ত বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে জনতার সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন।

 

প্রশ্ন-০৭। “ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােল” এ আহ্বান করা হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ স্বৈরাচারী শাসকগােষ্ঠী যাত এদেশের মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করতে না পারে সে জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােল’ কথাটি বলেছিলেন।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে শাসক গােষ্ঠী বাঙালিদের ওপর শােষণ করতে থাকে। এর বিরুদ্ধে বাঙালিরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে। প্রতিবারই শাসকদের নির্দেশ নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়। তাদের এই অন্যায় আচরণ আর শােষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করে শত্রুদের বিরুদ্ধে। সর্বাত্মক আন্দোলনের প্রস্ততি নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি এদেশের সর্বস্তরের মানুষকে বলেন-“প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তােল।

 

প্রশ্ন-০৮। “রক্তের দাগ শুকায় নাই।”-লাইনটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করার স্মৃতি মন থেকে এখনও মুছে ফেলতে পারেনি।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া বিজয় অর্জন করার পরও সামরিক বাহিনী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দেয়নি। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করার সময় মিলিটারি তাদের উপর গুলি চালায়। এরপর শাসকগােষ্ঠী অ্যাসেম্বলি ডাকলে শেখ মুজিব দুঃখভারাক্রান্তে মনে অপারগতা প্রকাশ করে বলে, “রক্তের দাগ শুকায় নাই।”

 

প্রশ্ন-০৯। ইয়াহিয়া খান কীভাবে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন ?



উত্তরঃ ইয়াহিয়া খান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নানা তালবাহানা করে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আইয়ুব খানের পতন হওয়ার পর ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হন। তিনি শাসনতন্ত্র ও গনতন্ত্র দেওয়ায় ঘােষণা দেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচন দেন। মেজরিটি পার্টির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদর অধিবেশন আহ্বানের অনুরােধ করেন। কিন্তু জুলফিকার আলী ভুট্টোর কথায় তা মার্চের প্রথম সপ্তাহে আহ্বান করলেন। আলোচনা হয়। কিন্তু ১ তারিখে অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদেশের মানুষ যখন তখন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলে তাদের ওপর গুলি করা হয়। পরবর্তীতে ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সের কথা বলা হয় বঙ্গবন্ধুর সাথে আলাপ না করেই। তিনটি শর্ত মেনে নিলে অধিবেশনে যােদান করার কথা জানিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু ।কিন্তু ইয়াহিয়া খান সেই শর্ত না মেনে গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

 

প্রশ্ন-১০। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৩ বছরের ইতিহাস ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৩ বছরের ইতিহাস হলাে-আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তের করুণ ইতিহাস, বাঙালি জাতির শােষণের ইতিহাস।

১৯৫৪ সালে বাঙালিরা নির্বাচনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা সে ক্ষমতা বাংলাদেশের মানুষের হাতে দেয় নি। এরপর পদে পদে বাঙালিদের তারা ঠকিয়েছে। ১৯৫২ সালে বাংলাদেশে ভাষার লড়াইয়ে ঝরিয়েছে প্রচুর রক্ত। এদেশে তাদের শােষণের ধারা আর্তমানুষের কণ্ঠে বেজেছে করুণ সুরে।।

 

প্রশ্ন-১১। “আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি, তখনই তারা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে”-কথাটি বুঝিয়ে লেখ।

উত্তরঃ এদেশের মানুষ যখন ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা এদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

অত্যাচারের কঠিন খড়গ। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর একচেটিয়া শােষণ চালাত। এদেশের মানুষ নিজের টাকা দিয়ে অস্ত্র। কিনেছিল এদেশকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচানাের জন্য। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা সেই অস্ত্র দিয়েই খালি করেছে এদেশের অসংখ্য মায়ের কোল। বাঙালি যতবারই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, যতবার ক্ষমতায় যেতে চেষ্টা করেছে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

 

প্রশ্ন-১২। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শীর্ষক ভাষণের দিকনির্দেশনাগুলাে লেখ।

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিদের মহান নেতা । ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে তিনি অনেক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের প্রথমাংশে বাঙালি জীবনের শােষণ ও বঞ্চনার একটি আনপূর্বিক বর্ণনা দেন। ভাষণে তিনি আদালত, ফৌজদারি , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ প্রদান করেন। কাজকর্ম বন্ধ রেখে ও ২৮ তারিখ কর্মচারীদের বেতন নিয়ে আসার নির্দেশ দেন এবং মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা ট্যাক্স বন্ধ ঘােষণা করেন। সর্বোপরি সর্বাত্মক প্রতিরােধ গড়ে তােলার জন্য তিনি আকুল আহ্বান করেন। পাকিস্তানিদের ভাতে-পানিতে মারার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। পেছন থেকে আত্মকলহ সৃষ্টির জন্য শত্রু ঢুকেছে বলেও তিনি জনগণকে সচেতন করে দেন। প্রত্যেক গ্রামে, মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তােলারও তিনি নির্দেশ দেন।

 

প্রশ্ন-১৩। ৭ই মার্চের ভাষণকে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয় ? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালিদের মুক্তির সংগ্রামে উদ্দীপত করেছিল। এ কারণে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ মিনিটের এক ভাষণ দেন। দ্বিতয়ি অংশে তিনি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তার আপসহীন মনােভাব দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ব্যক্ত করেন। পুরাে বাঙালি যখন কোণঠাসা হয়ে আসছিল তখন শেখ মুজিব এ ভাষণের মাধ্যমে প্রায় দশ লাখ মানুষকে সরাসরি উদ্দীপ্ত করেন। বক্তব্যের বলিষ্ঠতায় ও আবেগে এবং সঠিক দিকনির্দেশনায় ভাষণটি উজ্জ্বল ও দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছিল সেদিনের প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে । তিনি নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে আমাদের জন্য ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতার সূর্য। শেখ মুজিবের এই ভাষণ পুরাে জাতিকে সেদিন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছিল। তাই এ ভাষণটি এত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment