আশা কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা

আশা কবিতার মূলভাব

মানুষ স্বভাবতই ভাবনাহীন সুখী জীবন প্রত্যাশা করে। কবিও এর ব্যতিক্রম নন। তিনি অর্থবিত্তের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চেয়েছেন। তাদের মতােই নির্ভাবনাময় জীবনের প্রত্যাশা করেছেন। না পাওয়ার বেদনায় সেই জীবন ভারাক্রান্ত নয়। কবি তাঁর গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে নিরন্ন মানুষের জীর্ণ জীবনেও যে সুখ থাকে তাতে শরিক হতে চেয়েছেন। যারা সারাদিন কাজের পর ঘরে ফিরেই শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে, যাদের ধন সম্পদের লােভ নেই, যারা সােনা-রুপার পাহাড় গড়ার কথা ভাবে না, এমনকি বিত্ত-বৈভব অর্জনের জন্য দুর্ভাবনায় নিজের আয়ু কমায় না, বরং যারা তুচ্ছ বিষয়, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দানুভূতিকে বাঁচার অবলম্বন করে সুখ অনুভব করে, যারা কস্টের মধ্যে হাসতে পারে, দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত হয়েও মানুষকে ভালােবাসতে পারে কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্যে যেতে চেয়েছেন।

 

আশা কবিতার ব্যাখ্যা

» আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই,

যেথায় গভীর-নিশুত রাতে

জীর্ণ বেড়ার ঘরে

নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে তাই ॥

ব্যাখ্যাঃ গতানুগতিক জীবনের বাইরে এসে যারা সুখ প্রত্যাশা করে কবি তাদের কথা বলতে গিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তিনি নির্ভাবনাময় সুখের জীবন প্রত্যাশা করেছেন। জগতের অনেক মানুষ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও রাতে ঘুমাতে পারে না। আবার ভাঙা বেড়ার জীর্ণ ঘরেও অনেকে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে পড়ে। কবিও তাদের মতাে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে যেতে চান, তাদের মতাে সুখী হতে চান।

» যেথায় লােকে সােনা-রূপায়

পাহাড় জমায় না,

বিত্ত-সুখের দুর্ভাবনায়

আয়ু কমায় না;

যেথায় লােকে তুচ্ছ নিয়ে

তুষ্ট থাকে ভাই

ব্যাখ্যাঃ কবি প্রকৃত সুখের সন্ধানে সেখানে যেতে চান, যেখানে মানুষ বিত্ত-বৈভব অর্জন এবং অর্থ-সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু ক্ষয় করে না। সেখানে অতি সাধারণ জীবনযাপনের মধ্যেও তারা তুষ্ট থাকে। তারা অর্থ-বিত্তের শিকলে বাঁধা পড়তে চায়। দরিদ্র হলেও তারা বিত্তের পেছনে ছােটে না।

» সারা দিনের পরিশ্রমেও

পায় না যারা খুজে 

একটি দিনের আহার্য-সঞ্চয়,

তবু যাদের মনের কোণে

নেই দুরাশা গ্লানি,

নেই দীনতা, নেই কোনাে সংশয়।

ব্যাখ্যাঃ সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যারা একটি দিনের খাবারও জোটাতে পারে না তারাও জীবনের পথে চলতে গিয়ে থেমে যায়, হতাশ হয় না। তাদের কোনাে সংকীর্ণতা নেই। কোনাে দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। কবি এমন মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান। তার এ চাওয়ায় দরিদ্রশ্রেণির মানুষের জীবনবােধের প্রতি কবির সমবেদনা, শ্রদ্ধা, ভালােবাসা প্রকাশ পায়। কারণ এমন দুঃখ-দারিদ্র্যের মধ্যে তারা একে অন্যের প্রতি গভীর অনুরাগী, মানবিক এবং সহানুভূতিশীল।

» যেথায় মানুষ মানুষেরে

বাসতে পারে ভালাে

প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে

জ্বালতে পারে আলাে,

সেই জগতের কান্না-হাসির

অন্তরালে ভাই

আমি হারিয়ে যেতে চাই ॥

ব্যাখ্যাঃ কবি প্রকৃত মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্য পেতে চান। তিনি তাদের মধ্যে হারিয়ে যেতে চান। কবির কাছে এসব মানুষই সত্যিকারের মানুষ। কারণ তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালােবাসতে পারে। অতি সামান্যে তুষ্ট থাকতে পারে। অর্থবিত্তের মিথ্যা মােহে তারা জীবনের আয়ু ক্ষয় করে না ।     

Leave a Comment