আমার পরিচয় কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। বাংলাদেশের শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ কে?
উত্তর : বাংলাদেশে শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।
প্রশ্ন ২। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন কী?
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘চর্যাপদ’।
প্রশ্ন ৩। চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?
উত্তর : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
প্রশ্ন ৪। ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ কার বিরুদ্ধে হয়েছিল?
উত্তর : কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল মহীপালের বিরুদ্ধে।
প্রশ্ন ৫। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর : পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় সৈয়দ শামসুল হক রচিত বিখ্যাত কাব্যনাটক।
প্রশ্ন ৬। মহুয়ার পালা কী?
উত্তর : ‘মহুয়ার পালা’ মৈমনসিংহ গীতিকার অন্যতম একটি পালা।
প্রশ্ন ৭। কবি কোন যুগের চিত্রকলা থেকে আসার কথা বলেছেন?
উত্তর : কবি পালযুগের চিত্রকলা থেকে আসার কথা বলেছেন।
প্রশ্ন ৮। ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ সৈয়দ শামসুল হকের কোন ধরনের রচনা?
উত্তর : বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ সৈয়দ শামসুল হকের একটি উপন্যাস।
প্রশ্ন ৯। দেউল’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর : ‘দেউল’ শব্দের অর্থ ‘দেবালয়।
প্রশ্ন ১০। ‘মহুয়ার পালা’ কী?
উত্তর : ‘মহুয়ার পালা’ হলাে মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা।
প্রশ্ন ১১। ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় উদ্ধৃত কমলার দীঘি কী?
উত্তর : মৈমনসিংহ গীতিকার একটি পালা।
প্রশ্ন ১২। আমার পরিচয়’ কবিতায় কোন যুগের চিত্রকলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : আমার পরিচয়’ কবিতায় পালযুগের চিত্রকলার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন ১৩। সৈয়দ শামসুল হক কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ১৪। আমার পরিচয়কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর : আমার পরিচয় কবিতা ‘কিশাের কবিতা সমগ্র’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ১৫। চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি কে উদ্ধার করেন?
উত্তর : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করেন।
প্রশ্ন ১৬। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য কোন ধরনের কাহিনি?
উত্তর : চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য হলাে লােককাহিনি।
প্রশ্ন ১৭। কত খ্রিস্টাব্দে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়?
উত্তর : আনুমানিক ১০৭০-১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়।
প্রশ্ন ১৮। পালযুগের সূচনা কত খ্রিষ্টাব্দে?
উত্তর : পালযুগের সূচনা ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে।
প্রশ্ন ১৯। পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
উত্তর : পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার ১৮৭৯ সালে আবিষ্কৃত হয়।
প্রশ্ন ২০। সােনামসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : সােনামসজিদ রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত।
প্রশ্ন ২১। বড় সােনামসজিদ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : বড় সােনামসজিদ ভারতের গৌড়ে অবস্থিত।
প্রশ্ন ২২। তিতুমীর কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর : তিতুমীর ১৭৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন ২৩। ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা কে?
উত্তর : হাজী শরীয়তউল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা।
প্রশ্ন ২৪। কত সালে ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেওয়া হয়?
উত্তর : ১৯০৮ সালে ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ২৫। সূর্য সেনকে কী বলে ডাকা হয়?
উত্তর : সূর্য সেনকে মাস্টার দা’ বলে ডাকা হয়।
প্রশ্ন ২৬। কত সালে সূর্য সেনের ফাঁসি হয়?
উত্তর : ১৯৩৪ সালে সূর্য সেনের ফাঁসি হয়।
আমার পরিচয় কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। “এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে” বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : “এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে বলতে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামী চেতনার পথ ধরে কবির আত্মপরিচয়ের পথ তৈরি করাকে বােঝানাে হয়েছে।
‘আমার পরিচয় কবিতায় বাঙালির সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পটভূমি চিত্রিত হয়েছে। কবি আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির বহু পুরনাে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর আত্মপরিচয়ের সঙ্গে চর্যাপদের, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, চাঁদ সওদাগরের আত্মমর্যাদাবোেধ, পালযুগের চিত্রকলা, বৌদ্ধবিহারে জ্ঞানচর্চা, জমিদারিপ্রথা, মৈমনসিংহ গীতিকার জীবন, কৈবর্ত বিদ্রোহ থেকে শুরু করে তিতুমীর, হাজী শরীয়তউল্লাহ, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম প্রমুখের বিদ্রোহ-বিপ্লবের পথনির্দেশ করেছেন।
প্রশ্ন ২। ‘এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে’- কথাটি দ্বারা কী বােঝােনাে হয়েছে?
উত্তর : ‘এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে’- কথাটি দ্বারা ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসকে বােঝানাে হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী জোর করে এদেশের মানুষের ওপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙালি সন্তানরা তা করতে দেননি। তারা প্রতিবাদ করেছেন, আন্দোলন করেছেন। ফলে ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এদেশের মানুষের বুকের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। আর সেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাঙালি তাদের ভাষার মর্যাদার লড়াইয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে’ বলতে কবি ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগকে মহিমান্বিত করে তুলেছেন।
প্রশ্ন ৩। একসাথে আছি একসাথে বাচি বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : একসাথে আছি, একসাথে বাচি’ বলতে কবি নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে টিকে থাকাকে বুঝিয়েছেন।
বাঙালি সংগ্রামী জাতি। বহু সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার দেখা পেয়েছে। এই অর্জনের পেছনে ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোেধ ও একাত্মতা। একতাবদ্ধ হওয়ার কারণেই শত সংগ্রাম, দুর্যোগের পরও বাঙালির অস্তিত্ব টিকে আছে। বাঙালির এই অটুট বন্ধনের কথা বলতে গিয়েই কবি প্রশ্নোত্ত কথাটি বলেছেন।
প্রশ্ন ৪। ‘আমি তাে এসেছি সার্বভৌম বারাে ভূঁইয়ার থেকে’ – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : “আমি তাে এসেছি সার্বভৌম বারাে ভূঁইয়ার থেকে।”চরণটি দ্বারা কবি বাংলার বারাে ভূঁইয়াদের স্বাধীনচেতা মনােভাবের বিষয়টিকে বুঝিয়েছেন।
“আমার পরিচয়’ কবিতায় কবি আত্মপরিচয় নির্দেশ করতে গিয়ে বাঙালির বহু পুরনাে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসকে তুলে ধরেছেন। বাংলায় পাঠান করানী বংশের রাজত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে খুলনা, বরিশাল, সােনারগাঁও, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞলে স্বাধীন জমিদারদের উত্থান ঘটে। ১৫৭৫ সালে মােগল সম্রাট আকবর বাংলা জয় করার পর ঈশা খাঁর নেতৃত্বে বাংলার জমিদাররা তথা চাদ রায়, কেদার রায়, প্রতাপাদিত্য, লক্ষ্মণ মাণিক্য প্রমুখ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মােগল শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ইতিহাসে এরা বারাে ভূঁইয়া’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ৫। ‘আমার পরিচয় কবিতায় কবি সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকার দৃঢ় মনােভাব প্রকাশ করেছেন কেন?
উত্তর : শশাষণ-বঞ্চনাহীন অসাম্প্রদায়িক স্বদেশের প্রত্যাশায় কবি আমার পরিচয় কবিতায় সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
যে দেশে এক শ্রেণি অপর শ্রেণির মানুষ দ্বারা শােষিত, লাঞ্ছিতবঞ্চিত হয় সে দেশ কখনাে সাফল্যের ঘরে পৌছাতে পারে না। আর সাম্প্রদায়িক মনােভাব সমাজের অধঃপতনের মূল কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠা। এ কারণে কবি আলােচ্য কবিতায় সাম্যের ছবি আঁকার মনােভাব প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন ৬। “আমি জন্মেছি বাংলায়”- এখানে ‘আমি’ দ্বারা কী নির্দেশ করা হয়েছে?
উত্তর : “আমি জন্মেছি বাংলায়”- এখানে ‘আমি’ দ্বারা বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করাকে নির্দেশ করা হয়েছে।
আমি জন্মেছি বাংলায় বলতে সাধারণ অর্থে বাংলায় জন্মগ্রহণ করাকে বােঝায়। কবি ‘আমি’ দ্বারা নিজেকে বাঙালি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে নির্দেশ করেছেন। কবি সমগ্র বাঙালির প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে আলােচ্য লাইনে উপস্থাপন করেছেন। বস্তুত বাঙালি বা বাংলা ঐতিহ্যগত দিক থেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও গৌরবমণ্ডিত।
প্রশ্ন ৭। “আমি বাংলায় কথা বলি”- এ লাইনে কবি বাংলা ডাষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন কেন?
উত্তর : “আমি বাংলায় কথা বলি”- এ লাইনে কবি বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
বিশ্বের প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা আছে। বাঙালির নিজস্ব ভাষা হলাে বাংলা। পৃথিবীর অন্যসব ভাষা থেকে এ ভাষা অনেক বেশি তাৎপর্যময়। বাঙালি ভাষার জন্য আন্দোলন করেছে, যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছে এবং ভাষার অধিকার আদায় করেছে। ফলে বাংলা ভাষার সঙ্গে বাঙালির মধুর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ভাষায় বাঙালি তার জাতিসত্তাকে অনুভব করে। বাংলা ভাষা বাঙালির মনে স্থায়ী আসন লাভ করেছে। এজন্যই কবি প্রশ্নোক্ত লাইনে বাংলা ভাষাকে এত গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৮। “আমি তাে এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে এখানে গীতাঞ্জলি আর অগ্নিবীণা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : “আমি তাে এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে”এখানে ‘গীতাঞ্জলি আর অগ্নিবীণা’ বলতে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি ও সংগ্রামী চেতনাকে বােঝানাে হয়েছে।
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় সাহিত্যচর্চা অব্যাহত। সাধারণভাবে চর্যাপদ থেকে এর পথচলা শুরু। সাহিত্যের অঙ্গনে যে স্বর্ণযুগ সৃষ্টি হয় সে স্বর্ণযুগের সারথি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। গীতাঞ্জলি’ কাব্য লিখে রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষে প্রথম নােবেল অর্জন করেন। আর ‘অগ্নিবীণা’র মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্যে রাজনৈতিক বিদ্রোহের সূচনা করেন। প্রশ্নোক্ত লাইনে ‘গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণা’ বলতে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল সময়কে বােঝানাে হয়েছে।
প্রশ্ন ৯। ‘জয় বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : জয় বাংলাকে বজ্রকণ্ঠ’ বলার কারণ হলাে এই ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের মধ্য দিয়েই এদেশের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতা লাভের আকাক্ষা বিশাল শক্তিতে পরিণত হয়েছিল।
‘জয় বাংলা’ শব্দদ্বয় বাংলার জয় কামনা করে। এই শব্দদ্বয় বাংলার মানুষের প্রাণে অসামান্য সাড়া জাগিয়েছিল। তাদের স্বাধীনতার চেতনাকে সমুদ্র সমান করেছিল আর বুকে অসীম সাহস এনে দিয়েছিল। এই স্লোগানের টানেই মানুষ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। বাংলার মানুষ এ শব্দদ্বয় শুনেছিল এমন এক কণ্ঠ থেকে, যে কণ্ঠ সবসময় বজ্রকণ্ঠ হিসেবে খ্যাত। এই বজ্রকণ্ঠের অধিকারী হলেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।