‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১। পল্লির সন্তান অমিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ফ্রান্স যায়। সেখানকার সুপ্রশস্ত রাজপথ, উদ্যান, নির্মল প্রকৃতি তার খুব ভালাে লাগে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজ সব জায়গায় দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে ফরাসিদের দেশপ্রেম দেখে সে বিস্মিত হয়। ওদের ক্যাফে, মিউজিয়াম সবকিছুই তাকে আকৃষ্ট করে। উচ্চশিক্ষা শেষ করে অমিত স্থায়ীভাবে সেখানে থেকে যায়। তার অতীত স্মৃতি ফরাসি সৌন্দর্যের মােহে ক্রমশ ধূসর হয়ে যায় ।

ক. উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায় কে?

খ. মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে জীবনানন্দ দাশ এদেশে ফিরতে চান কেন?

গ. আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় উদ্দীপকের ফরাসি জাতির কোন দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে? বর্ণনা করাে।

ঘ. অমিতের অনুভূতি আর জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন উক্তিটি মূল্যায়ন করাে।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। একটি শিশু উঠানে খইয়ের ধান ছড়ায়।

খ। বাংলার প্রকৃতির আরও কাছাকাছি থাকার বাসনায় জীবনানন্দ দাশ শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরতে চান।

জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসায় কোনাে মানুষই বিস্মৃত হয় না। কবিও এদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্যকে হৃদয় দিয়ে উপভােগ করেছেন আজীবন। তার বিশ্বাস, এ বন্ধন মৃত্যুর মধ্য দিয়েও ছিন্ন হবে না। তাই তিনি এদেশের নদী-মাঠ, প্রকৃতিকে ভালােবেসে মানুষ না হয়ে শঙ্খচিল, শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

গ। উদ্দীপকের ফরাসি জাতির দেশপ্রেম আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির দেশপ্রেমেরই অনুরূপ।

মাতৃভূমির প্রতি ভালােবাসা দেখানাে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এদেশের নদী-মাঠ-ভাটফুল, ভােরের কাক কিংবা ধবল বক সবই আমাদের চেতনায় সর্বদা জেগে থাকে আপন সৌন্দর্য নিয়ে। কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায়ও তেমন মনােভাবই ব্যক্ত করেছেন।

উদ্দীপকের অমিতের বর্ণনায় উঠে এসেছে ফরাসি জাতির সৌন্দর্য প্রীতির নানা দিক। তাদের রাস্তা-ঘাট, রেলস্টেশন, বাস-স্টপেজসহ প্রতিটি জায়গা দেশি-বিদেশি স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গের মূর্তি দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া ফরাসিদের স্বদেশপ্রেম দেখেও সে বিস্মিত হয়। ফলে সে সেদেশেই থেকে যায়। ঠিক এমনই চিত্র আমরা আলােচ্য কবিতাটিতেও লক্ষ করি। কবি বাংলার রূপ দেখে এতই মুগ্ধ যে মৃত্যুর পরও তিনি ক্ষুদ্র প্রাণী হয়েও এদেশে জন্মগ্রহণ করতে চান। প্রবল দেশপ্রেমের ফলেই তিনি এমনটি মনে করেন, যা উদ্দীপকের ফরাসি জাতির মধ্যে লক্ষ করা যায়। সুতরাং, আলােচ্য কবিতায় কবির দেশপ্রেমের দিকটি ফরাসি জাতির দেশেপ্রেমের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

ঘ। উদ্দীপকের অমিতের অনুভূতি আর আবার আসিব ফিরে’ কবিতার জীবনানন্দ দাশের অনুভূতি তাদের চেতনা ও দেশপ্রেমের বিচারে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের আশাবাদ জন্মজন্মান্তরেও এই বাংলার সঙ্গে তার বন্ধন ছিন্ন হবে না। নিজের দেশকে ভালােবেসে তার মনে হয় যখন তার মৃত্যু হবে, তখনও এদেশের সঙ্গে তার মমতার বাধন শেষ হবে না।

উদ্দীপকে উল্লেখিত অমিত বিদেশে পাড়ি জমাননার পর ধীরে ধীরে দেশকে ভুলে সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করে। আর কবি জীবনানন্দ দাশ মৃত্যুর পরও বার বার এই বাংলায় ফিরে আসার আকুতি ব্যক্ত করেন।

উদ্দীপকের অমিত বাংলার প্রকৃতির কোলেই ছােট থেকে বড়াে হয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্যে বিদেশ যাওয়ার পর স্বদেশ ও স্বদেশের প্রকৃতিকে মন থেকে মুছে ফেলে সহজেই। তার চিন্তা-চেতনায় বাংলার রূপ কখনােই এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি। কবি জীবনানন্দ দাশ ও উদ্দীপকের অমিতের অন্তরে স্বদেশ সম্পর্কে ভিন্ন চেতনা লক্ষণীয়। তাদের অনুভূতি ও চেতনা দেশপ্রেমের বিচারে একসূত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

প্রশ্ন ২। 

বাংলার হাওয়া বাংলার জল,

হৃদয় আমার করে সুশীতল

এত সুখ শান্তি এত পরিমল

কোথা পাব আর বাংলা না।

ক. ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে  নেওয়া হয়েছে?

খ. বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. উদ্দীপক অবলম্বনে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দাও।

ঘ. “কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া’- কথাটির সঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশের বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কীভাবে সম্পর্কিত আলােচনা করাে।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

খ। বাংলার সবুজ করুণ ডাঙা বলতে সবুজে আবৃত আর্দ্রভূমির বাংলাদেশকে  বােঝানাে হয়েছে।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাছাড়া এদেশের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকে সবুজের অপূর্ব সমারােহ চোখে পড়ে। নদীবিধৌত বাংলার পলিমাটি সব  সময় আর্দ্র ও উর্বর থাকে। ফলে চারিদিকে এত সবুজের ছড়াছড়ি। কবি বাংলার এমন মাটি ও প্রকৃতিকেই সবুজ করুণ ডাঙা বলেছেন।

গ। প্রদত্ত উদ্দীপক এবং ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

নদীমাতৃক বাংলার রূপ বর্ণনায় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। প্রকৃতির বিভিন্ন দিককে তিনি  তাঁর কবিতার প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন। এদেশের নদী, পাখি, মাঠ-ঘাট সবকিছুর মধ্যেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় যেমন চিরচেনা বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে, তেমনি উদ্দীপকের চরণগুলােতে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা উঠে এসেছে। পাশাপাশি উদ্দীপকের কবি ধারণা করেছেন, বাংলার এই মনােহরা ছায়া সুনিবিড় রূপ বাংলা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয়। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে ভােরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল, এমনকী সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনােকিছুই এড়ায়নি।

উদ্দীপকের কবিতাংশেও বাংলার হাওয়া, বাংলার জল অনন্যরূপে হাজির হয়েছে। অর্থাৎ উভয়স্থানেই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের ‘কোথা পাব আর বাংলা ছাড়া কথাটি কবি জীবনানন্দ দাশের, মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চাওয়ার চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলার রূপ বর্ণনায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জীবনানন্দ দাশ অদ্বিতীয়। তিনি তার মুগ্ধ দৃষ্টিকে সবসময় বাংলার প্রকৃতিতে নিবদ্ধ রেখেছিলেন। লমির গন্ধভরা জল কিংবা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় তিনি শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশের কবির বিশ্বাস বাংলার চিত্ত শীতল করা ছায়া সুনিবিড় প্রকৃতি বিশ্বে বিরল। এমনই অনুভূতি থেকে মৃত্যুর পরও আবার বাংলায় ফিরে আসতে চান আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ।

বাংলার সবুজ-শ্যামল মায়াময় রূপ মায়ের স্নেহের মতােই স্নিগ্ধ ও কোমল। এত সুখ-শান্তি বাংলার বাইরে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলেই উদ্দীপকে উল্লেখিত হয়েছে। আর এমন দেশপ্রেম লালন করেন বলেই কবি জীবনানন্দ দাশও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বাংলার বুকে ফিরতে চান।

উদ্দীপকের কবির এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের আকাঙ্ক্ষার কোনাে প্রভেদ নেই। তাই তাে তিনি মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।

প্রশ্ন ৩।

অংশ-১: “একি অপরূপ রূপে মা তােমায়

হেরিনু পল্লিজননী

ফুলে ও ফসলে কাদা-মাটি-জলে

ঝলমল করে লাবণি”

অংশ-২: “জন্মেছি মাগাে তােমার কোলেতে

মরি যেন এই দেশে।”

ক. লক্ষ্মীপেঁচা কোথায় ডাকছে?

খ. ‘রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে’—কথাটি বুঝিয়ে লেখাে।

গ. উদ্দীপকের অংশ-১ এ আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন  ভাবটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. উদ্দীপকের অংশ-২ আবার আসিব ফিরে’, কবিতার মূলভাবকেই প্রকাশ করেছে”- উক্তিটি মূল্যায়ন করাে। 

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় লক্ষ্মীপেঁচা শিমুলের ডালে ডাকছে। 

খ। বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির মধ্যে কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে-  উস্তৃত অংশটি দ্বারা কথাই তিনি বােঝাতে চেয়েছেন।

কবি মনে করেন জন্মভূমি বাংলার সঙ্গে তার আত্মার বাঁধন কোনােদিনও  শেষ হবে না। মৃত্যুর পর তিনি এদেশে আবার ফিরে আসবেন। ভােরের  কুয়াশা, ফসলের মাঠ, শঙ্খচিল, কলমির গন্ধভরা বিল কিংবা দিনের শেষে  রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে নীড়ে ফেরা সাদা বক— এদের মধ্যে কবি তাকে খুঁজে নিতে বলেছেন। কারণ এই বাংলার রূপময় এই প্রকৃতির মধ্যেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।

গ। প্রদত্ত উদ্দীপকের অংশ-১-এর বর্ণনায় আবার আসিব ফিরে কবিতার বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আড়ালে কবির দেশের প্রতি গভীর দেশপ্রেম প্রকাশ পেয়েছে।

নদীমাতৃক বাংলার রূপ বর্ণনায় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। প্রকৃতির বিভিন্ন দিককে তিনি তাঁর কবিতার প্রতিটি লাইনে তুলে ধরেছেন। এদেশের নদী, পাখি, মাঠঘাট সবকিছুর মধ্যেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। আলােচ্য কবিতায় চিরচেনা বাংলার রূপবৈচিত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে, যা তার অকৃত্রিম দেশপ্রেমের নামান্তর।

উদ্দীপকের চরণে বাংলার প্রকৃতির কথা এসেছে। এখানে দেশকে তিনি মা বলে সম্বােধন করেছেন। দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কবি পল্লিজননী হিসেবে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি উদ্দীপকের কবি বাংলার এই মনােহরা ফুল-ফসল, কাদা-মাটি-জলের রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের দৃষ্টিতে ভােরের কাক থেকে শুরু করে শালিক, শঙ্খচিল এমনকি সন্ধ্যার আকাশে উড়ন্ত সুদর্শন কোনােকিছুই এড়ায়নি। উদ্দীপকের কবিতাংশেও বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্যরূপে হাজির হয়েছে। উভয়স্থানে মূলত কবির দেশের প্রতি গভীর মমত্ববােধ প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। উদ্দীপকের অংশ-২ এর চরণে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চাওয়ার চেতনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলার রূপ বর্ণনায় বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে কবি জীবনানন্দ দাশ অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর, মুগ্ধ দৃষ্টিকে সবসময় বাংলার প্রকৃতিতে নিবন্ধ রেখেছিলেন। আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এতােটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, মৃত্যুর পরে তিনি আবার কলমির গন্ধভরা জল কিংবা বাংলার সবুজ করুণ ডাঙায় শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবির প্রত্যাশা তিনি যেন বাংলার বুকেই মৃত্যুবরণ করতে পারেন। এখানে কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করে এতটাই মুগ্ধ যে তিনি এখান থেকে কোথাও যেতে চান না, এমনকি এখানেই মৃত্যুবরণ করতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন বাংলার চিত্ত শীতল করা ছায়া সুনিবিড় প্রকৃতি বিশ্বে বিরল। এমনই অনুভূতি থেকে মৃত্যুর পরও আবার বাংলায় ফিরে আসতে চান ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ।

বাংলার সবুজ-শ্যামল মায়াময় রূপ মায়ের স্নেহের মতােই স্নিগ্ধ ও কোমল। এত সুখ-শান্তি বাংলার বাইরে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় বলেই উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবি দেশকে ভালােবেসে এখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চান। আর এমন দেশপ্রেম লালন করেন বলেই কবি জীবনানন্দ দাশও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বাংলার বুকে ফিরতে চান।

উদ্দীপকের কবির এ আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে জীবনানন্দ দাশের আকাঙ্ক্ষার কোনাে প্রভেদ নেই। তাই তাে তিনি মৃত্যুর পরও বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন। অর্থাৎ উদ্দীপকের অংশ-২ এর কবির মনােভাব ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মূলভাবকেই প্রকাশ করেছে।

প্রশ্ন ৪। দৃশ্যকল্প-১: বিস্তৃত মাঠে পাকা ধান। কৃষকের মুখে ফসলের হাসি। ক’দিন পর কৃষকের ঘরে আনন্দ উৎসব হবে। উৎসবে মেতে উঠবে বাংলার প্রতিটি কৃষকের ঘর। এ যেন চিরায়ত বাংলার অতি পরিচিত চেনা রূপ।

দৃশ্যকল্প-২: গােধূলি লগনে জগদীশে স্মরে

বিদায় লইব জনমের তরে

লুকাইব আমি সন্ধ্যার আঁধারে

বাংলা মায়ের ক্রোড়ে।

ক. ‘সুদর্শন’ কী?

খ. ‘জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা’— বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?

গ. দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করাে।

ঘ. “দৃশ্যকল্প-২ মূলভাব এবং আবার আসিব ফিরে কবিতার কবির মনােভাব অভিন্ন।”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করাে।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক। “সুদর্শন” এক প্রকার গুবরে পােকা।

খ। ‘জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা’ বলতে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে বােঝানাে হয়েছে।

কবি এখানে নদীকে জলাঙ্গী বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশে অসংখ্য নদনদী জালের মতাে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। তাই বাংলার সব স্থানের মাটিই যেন অসংখ্য নদীর জলে বিধৌত হয়েছে। এ কারণেই কবি বাংলাকে জলাশীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন।

গ। দৃশ্যকল্প-১ এর সাথে আবার আসিব ফিরে’ কবিতার নবান্ন উৎসবের দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি ভােরের কাক হয়ে কার্তিকের নবান্নের দেশে ফিরে আসতে চান। নবান্ন হচ্ছে একটি উৎসব। যা কার্তিক মাসে ধান কাটার পরে হয়ে থাকে। ঋতুবৈচিত্র্য ও পার্বণের দেশ বাংলাদেশে কার্তিক মাসে যে ধান হয়, সে ধানকে কেন্দ্র করে যে উৎসব তাকে বােঝায়।

উদ্দীপকে মাঠ জুড়ে পাকা ধান দেখে কৃষকের মুখে ফসলের হাসির কথা বুঝিয়েছেন। ধান তােলার পর কৃষকের ঘরে আনন্দ উৎসব হয়। বাংলার প্রতিটি ঘরের কৃষক আনন্দে মেতে উঠবে, এটা বাংলার পরিচিত একটি রূপ। আলােচ্য কবিতাতেও কবি নিজ দেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। যেখানে কবি ভােরের কাক হয়ে ফিরে আসতে চান। বাংলার কার্তিক মাসের ধান কাটার বিষয়টিই উদ্দীপক ও ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার সাদৃশ্য রচনা করেছে।

ঘ। “দৃশ্যকল্প-২ এর মূলভাব এবং আবার আসিব ফিরে’ কবিতার কবির মনােভাব অভিন্ন” উক্তিটি যথার্থ।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি প্রিয় জন্মভূমির তুচ্ছ অনুষগুলােও নিবিড়ভাবে অবলােকন করেছেন। কবি জন্মভূমির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মমতার বন্ধন ছিন্ন করতে চান না। বারবার এই বাংলার বুকে ফিরে এসে কবি এ দেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকতে চান।

উদ্দীপকের কবিতাংশেও জন্মভূমি মায়ের প্রতি কবির অনিঃশেষ ভালােবাসা প্রকাশিত হয়েছে। কবি এ দেশের প্রকৃতিকে ভালােবেসে বাংলার বুকেই রয়ে যেতে চান। এ দেশের মাঝে থেকেই তিনি চিরবিদায় নিতে চান। আবার সন্ধ্যার আকাশে বাংলা মায়ের কোলে ঠাই খোঁজেন।

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতা ও উদ্দীপকের কবিদ্বয়ের মাঝে মূলত দেশপ্রেমের অনুভূতিই সমানভাবে অবস্থিত। উভয় কবিতাতেই কবিরা দেশকে ভালােবেসে বাংলার প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে যেতে চান মৃত্যুর পরও। মূলত বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই তারা এমন মনােভাব প্রকাশ করেছেন। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

প্রশ্ন ৫।

স্তবক-১: এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র 

পাহাড় কোথায় এমন হরিৎক্ষত্র আকাশতলে মেশে। 

এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।

স্তবক-২: মধুর চেয়ে আছে মধুর

সে আমার এই দেশের মাটি

আমার দেশের পথের ধুলা

খাটি সােনার চাইতে খাটি।

ক. সুদর্শন কী?

খ. কবি এ দেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ’ বলেছেন কেন?

গ. স্তবক-১ এর মূলভাব আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রকৃতির যে দিকটি নির্দেশ করে তার বর্ণনা দাও।

ঘ. “স্তবক-২ এর মূলকথা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক। সুদর্শন হলাে এক ধরনের গুবরে পােকা।

খ। কার্তিকের ধানকাটা শেষে এদেশের কৃষকরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে বলে এদেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলা হয়েছে।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকরা হেমন্তকালে অর্থাৎ কার্তিক মাসে নতুন ফসল ঘরে তােলে। এ সময় তারা নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবে দুধ, গুড়, নারকেলের সঙ্গে মিশিয়ে নতুন আতপ চালের ভাত খাওয়া হয়। এ উৎসব গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। কবি তাই এদেশকে কার্তিকের নবান্নের দেশ বলেছেন।

গ। স্তবক-১ এর মূলভাব ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় প্রকাশিত দেশাত্মবােধ ও জন্মভূমির সৌন্দর্যের দিকটি নির্দেশ করে।

কবির চোখে বাংলার প্রকৃতি অনবদ্য ও অপূর্ব; তাই তিনি বারবার এ দেশের বুকে ফিরে আসতে চান। জন্মভূমির প্রতি ভালােবাসার কারণে। এর তুচ্ছ অনুষঙ্গগুলােও তার চোখে অপূর্ব হয়ে ধরা পড়েছে। বাংলার প্রকৃতিতে তিনি অনাবিল সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন। তাই এ দেশকে তার কাছে এতাে মােহময় বলে মনে হয়েছে। আজন্ম এই ভূমির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকবে বলে মনে করেন তিনি।

স্তবক-১ এর কবিতাংশে জন্মভূমি কবির রূপমুগ্ধতা প্রকাশিত হয়েছে। কবি মনে করেন তার দেশের সৌন্দর্য এতটাই মনােমুগ্ধকর যে তা সমগ্র পৃথিবীতে বিরল। কবি মনে করেন, এমন দেশ আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর মধ্য দিয়ে কবির দেশাত্মবােধের পরিচয় মেলে অর্থাৎ ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মতােই স্তবক-১ এ জন্মভূমিকে অনাবিল সৌন্দর্যের আকর বলা হয়েছে। তাই বলা যায়, স্তবক-১ এ আলােচ্য কবিতায় প্রকাশিত দেশাত্মবােধ ও জন্মভূমির সৌন্দর্যের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ। স্তবক-২ এর মূলকথা ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক মন্তব্যটি যথার্থ ।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি স্বদেশের প্রতি কবির গভীর মমত্ববােধ ও ভালােবাসার নিদর্শন। দেশকে গভীরভাবে ভালােবাসেন বলেই জন্মভূমির প্রতি কবি এতটা মুগ্ধ। তার কাছে জন্মভূমির তুচ্ছ জিনিসও আকর্ষণীয় হয়ে ধরা পড়েছে। তাইতাে মৃত্যুর পরও তিনি এ দেশের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না।

উদ্দীপকের কবিও দেশকে ভালােবাসেন। দেশের মাটিকে তিনি মধুর চেয়েও বেশি মধুর বলেছেন, দেশের পথের ধুলা তার কাছে সােনার চেয়েও দামি। তিনি বাটি সােনা বলতে দেশের ধুলা মাটিকে বুঝিয়েছেন। দেশের প্রতি কবির গভীর অনুভূতিতে তার দেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতা ও উদ্দীপকে গভীর দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আলােচ্য কবিতার কবি দেশকে ভালােবেসে মৃত্যুর পরও দেশের আলাে-ছায়ায় নানারূপে ফিরে আসতে চান। তিনি মনে করেন, রূপময় এই প্রকৃতির বুকে তিনি মিশে থাকবেন। উদ্দীপকের কবিও দেশকে ভালােবেসে সােনার চেয়েও খাটি বলে উল্লেখ করেছেন। দেশকে তিনি মধুর চেয়েও মধুর বলে দেশের প্রকৃতির ধুলাকে সােনা মনে করেছেন। দেশের প্রতি এই দেশপ্রেমের চিত্রই আবার আসিব ফিরে’ কবিতার এক বিশেষ চেতনার ধারক হয়ে উঠেছে।     

Leave a Comment